রমজানে সুস্থভাবে রোজা রাখার উপায়
পবিত্র রমজান মাস ঐতিহ্যগতভাবে নামাজ, রোজা এবং সংযমের মাস হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের রমজান রবিবার, ১২ই মার্চ, ২০২৪ এ শুরু হবে এবং মঙ্গলবার, ১১ই এপ্রিল, ২০২৪ এ শেষ হবে।
রমজানে রোজা রাখলে পানিশূন্যতা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, কারণ সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের পরে খাওয়া এবং পান করা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
উপরন্তু, রোজাদারদের সাহরি খাওয়ার জন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়, ফলে ঘুমের অভাবে মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং মনোযোগের অভাব হতে পারে।
রমজানের সময় সুস্থভাবে রোজা রাখা
সাহরি (ভোরের আগের খাবার) বাদ দেবেন না
যেমনটি প্রবাদ আছে, “ব্রেকফাস্ট দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার।” রমজানের সময়, এই প্রবাদটি আরও বেশি সত্য। ঘুমের সময় বাড়াতে সাহরি বাদ দেওয়া ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
সাহরি বাদ দেওয়া উপবাসের সময়কাল বাড়িয়ে দেয়, যার অর্থ হল ইফতার (সন্ধ্যার খাবার) পর্যন্ত আপনার শরীরকে পূর্বের খাবারের উপরই নির্ভর করতে হবে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার কারণে, পানিশূন্যতা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সাহরি বাদ দিলে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে অস্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন বেড়ে যাবে।
ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবেন না
ঠিক যেমন সাহরি বাদ দেওয়া উচিত নয়, তেমনি রোজা ভাঙ্গার সময় অতিরিক্ত খাওয়া আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। ইফতার সুষম, পুষ্টিকর খাবার হওয়া উচিত, ভোজ নয়।
অতিরিক্ত খাওয়া এবং বিশেষ করে অধিক চর্বিযুক্ত খাবারের বেশি গ্রহণের ফলে বদহজম এবং ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। এই ধরনের খাওয়ার অভ্যাস ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের মতো অন্তর্নিহিত দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর।
ভাজা খাবার, লবণাক্ত খাবার এবং অধিক মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন
রোজাদারদের জন্য খাবারের সময়ে তৈলাক্ত, ভাজা এবং মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি, চর্বিযুক্ত এবং মিষ্টি খাবার খাওয়া বদহজমের কারণ হতে পারে, যা পরের দিন রোজা রাখাকে প্রভাবিত করে।
এছাড়াও, আপনার লবণ গ্রহণ সীমাবদ্ধ করা উচিত, বিশেষ করে সাহরির সময়, কারণ এটি উপবাসের সময় তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। যতটা সম্ভব প্রধান সব ধরনের খাবার যেমন- ফল ও শাকসবজি, ভাত এবং অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার, মাংস এবং মাংসের বিকল্প খাবার (দুধ জাতীয় খাবারসহ) খাবারের তালিকায় রাখুন।
রমজানের সময় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও আদর্শ কারণ আমাদের শরীর এসব খাবার প্রক্রিয়াজাত খাবারের চেয়ে ধীরে হজম করে, তাই দীর্ঘসময় ধরে আপনি পূর্ণতা অনুভব করবেন।
যথাসম্ভব বেশি পানি পান করুন
ইফতার এবং সাহরির মধ্যে যতটা সম্ভব বেশি পানি পান করা উপবাসের সময় পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমায়। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের আগে প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস তরল পান করার চেষ্টা করুন।
তরল পদার্থের মধ্যে ফলের রস, দুধ এবং স্যুপ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যদিও পানিই সবচেয়ে ভালো পছন্দ। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি, চা এবং কোলা কম করে দিন। কারণ এসব পানীয় মূত্রত্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে শরীরে পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
রমজানের সময় কী খাবেন সাহরির জন্য
পর্যাপ্ত তরল পান করুন এবং পরের দিন আপনাকে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতেপানি সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন। শক্তির জন্য শ্বেতসার জাতীয় খাবার বেছে নিন, এবং সম্ভব হলে উচ্চ ফাইবার বা পূর্ণ শস্যজাতীয় বেছে নিন কারণ এগুলো আপনাকে বেশিক্ষণ পূর্ণতা অনুভব করাতে সাহায্য করবেএবং হজমে সাহায্য করবে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সাহায্য করে।
ফল এবং শাকসবজি
ফল এবং শাকসবজি রোজার সময় অপরিহার্য কারণ এগুলো ফাইবারে ভরপুর এবংপূর্ণতা অনুভব করাতে সাহায্য করেএবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। এগুলোতেএছাড়াওআছেপ্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইটোকেমিক্যাল যা ভালো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক।
উচ্চ ফাইবারযুক্ত কার্বোহাইড্রেট
এগুলোর মধ্যে বাদামী চাল, সম্পূর্ণ শস্যেররুটি, ওট, সিরিয়াল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এগুলো হজম হতে বেশি সময় নেয়এবং এইভাবে দীর্ঘসময় শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।