লিভার ভালো রাখার উপায়
লিভার আমাদের শরীরের একটি অপরিহার্য অঙ্গ যা অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। এটি রক্তকে পরিশোধিত করে, বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে, পাচনে সাহায্য করে, রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং পুষ্টি ও শক্তি সঞ্চয় করে।
যাইহোক, আমাদের আধুনিক জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে, অনেক লোকই লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই প্রবন্ধটি লিভারকে সুস্থ রাখার উপায়গুলি অন্বেষণ করবে এবং এমন খাবারগুলোর উপর আলোকপাত করবে যা আপনার লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
লিভারের কাজ
লিভার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে, যার মধ্যে রয়েছে:
পরিশোধন: লিভার হল শরীরের প্রধান পরিস্রাবণ ব্যবস্থা। এটি রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ, বর্জ্য পণ্য, ওষুধের অবশিষ্টাংশ এবং জীবাণু অপসারণ করে। লিভার রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে আমাদের শরীরকে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করে।
পাচন: লিভার পিত্ত (bile) নামক একটি হলুদ-সবুজ তরল উৎপাদন করে যা ছোট অন্ত্রে নিঃসরণ করা হয়। পিত্ত চর্বি ভাঙতে এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
শক্তি সঞ্চয়: লিভার অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে সঞ্চয় করে। যখন শরীরের শক্তির প্রয়োজন হয়, তখন লিভার গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তর করে এবং রক্ত সরবরাহ করে।
প্রোটিন সংশ্লেষণ: লিভার রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, অ্যালবুমিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে।
ভিটামিন ও খনিজ সংরক্ষণ: লিভার ভিটামিন A, D, E এবং K, এবং আয়রন এবং তামা সহ খনিজগুলি সংরক্ষণ করে।
রক্ত নিয়ন্ত্রণ: লিভার রক্তে শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: লিভার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্ত থেকে জীবাণু এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণ করে।
অন্যান্য কাজ: লিভার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখা এবং পুরাতন রক্ত কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
লিভারের কার্যকারিতা কীভাবে উন্নত করা যায়
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চর্বি এবং চিনি এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- অ্যালকোহল পান সীমিত করুন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
- হেপাটাইটিস A এবং B ভ্যাকসিন নিন: হেপাটাইটিস A এবং B লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
- ওষুধের অপব্যবহার এড়িয়ে চলুন: কিছু ওষুধ লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
লিভারের কার্যকারিতা হ্রাসের লক্ষণ
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে, আপনি বিভিন্ন লক্ষণ অনুভব করতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- জন্ডিস: ত্বক এবং চোখের হলুদ রঙ I
- পেটে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া: বিশেষ করে পেটের উপরের ডানদিকে I
- বমি বমি ভাব এবং বমি: লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পেলে পেট বিরক্ত হতে পারে I
- ক্ষুধামান্দ্য I
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি I
- গাঢ় প্রস্রাব I
- ফ্যাকাশে মল I
- সহজে কালশিটে পড়া বা রক্তপাত I
- চুলকানি ত্বক I
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধ করবেন
লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য আপনি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- স্বাস্থ্যকর খাওয়া: একটি ভাল-ভারসাম্যপূর্ণ, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন:অ্যালকোহল সীমিত করুন (বা একেবারেই সরিয়ে দিন): অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল পান লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
- ভেষজ সাপ্লিমেন্ট সাবধানে ব্যবহার করুন: কিছু ভেষজ ওষুধ ও ভিটামিন লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
- রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: কীটনাশক এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে এলে সতর্ক থাকুন।
- আপনার লিভারের ঝুঁকি জানুন: আপনার যদি হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, বা লিভারের ক্ষতির পারিবারিক ইতিহাস থাকে তবে আপনার ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
লিভারের রোগ
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হল লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে লিভারের ক্ষতি। এটি দুটি প্রধান প্রকারে বিভক্ত:
- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD): অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের কারণে এটি হয়।
- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD): অ্যালকোহল পান না করেও এটি হয়। NAFLD মোটা মানুষ, ডায়াবেটিস রোগী এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজের লক্ষণগুলি
- ক্লান্তি I
- পেটে ব্যথা I
- ক্ষুধামান্দ্য I
- ওজন হ্রাস I
ফ্যাটি লিভার ডিজিজের চিকিৎসা
- ওজন কমানো: NAFLD-এর জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাবার খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- অ্যালকোহল পান সীমিত করা
- ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো অন্তর্নিহিত অবস্থার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লিখে দিতে পারেন।
হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালকোহল এবং ওষুধ সহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
হেপাটাইটিসের ধরন
- হেপাটাইটিস A: এটি দূষিত খাবার বা পানি থেকে ছড়ায়।
- হেপাটাইটিস B: এটি সংক্রামিত রক্ত বা শারীরিক তরলের সংস্পর্শে এসে ছড়ায়।
- হেপাটাইটিস C: এটি সংক্রামিত রক্তের সংস্পর্শে এসে ছড়ায়।
হেপাটাইটিসের লক্ষণ
- জন্ডিস: ত্বক এবং চোখের হলুদ রঙ I
- পেটে ব্যথা I
- বমি বমি ভাব এবং বমি I
- ক্ষুধামান্দ্য I
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি I
হেপাটাইটিসের চিকিৎসা
- হেপাটাইটিস A: এই ভাইরাসের জন্য কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। বিশ্রাম, তরল এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে লক্ষণগুলি উপশম করা হয়।
- হেপাটাইটিস B: এই ভাইরাসের জন্য ভ্যাকসিন এবং ওষুধ পাওয়া যায়।
- হেপাটাইটিস C: এই ভাইরাসের জন্য ওষুধ পাওয়া যায়।
সিরোসিস
সিরোসিস হল দীর্ঘস্থায়ী লিভারের ক্ষতি যার ফলে স্কার টিস্যু গঠন হয়। এটি লিভারের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
সিরোসিসের লক্ষণ
- জন্ডিস I
- ক্লান্তি I
- ক্ষুধামান্দ্য I
- ফ্যাকাশে মল I
- পায়ে এবং পেটে ফোলা (এডেমা এবং অ্যাসাইটিস) I
- দুর্বলতা I
- বমি বমি ভাব I
- ত্বকে চুলকানি I
- রক্তপাত ও কালশিটে পড়ার প্রবণতা I
সিরোসিসের জটিলতা
সিরোসিস গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- পোর্টাল হাইপারটেনশন: লিভারে দাগের টিস্যু রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয়, যার ফলে পোর্টাল শিরায় উচ্চ রক্তচাপ হয়। এটি জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে।
- লিভারের ব্যর্থতা: যখন লিভার তার কাজ করতে না পারে, তখন লিভারের ব্যর্থতা ঘটতে পারে। এটি মারাত্মক এবং প্রায়শই প্রাণঘাতী।
- হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি: লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে টক্সিনগুলো মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটি বিভ্রান্তি, মেজাজ পরিবর্তন এবং এমনকি কোমার সৃষ্টি করতে পারে।
- লিভার ক্যান্সার: সিরোসিস লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
সিরোসিসের চিকিৎসা
সিরোসিসের কোনো নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসা লিভারের আরও ক্ষতি দূর করতে এবং জটিলতাগুলি পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
- অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা: উদাহরণস্বরূপ, অ্যালকোহল পরিহার করা, হেপাটাইটিস B-এর জন্য ওষুধের ব্যবহার অথবা চর্বি কমানোর উদ্দেশ্যে ওজন কমানো।
- জটিলতার চিকিৎসা: যেমন পেটে তরল জমা হওয়া বা ভেরিসিল রক্তক্ষরণের ঝুঁকি রোধ করা।
- ওষুধ: যেমন পোর্টাল হাইপারটেনশন পরিচালনা বা রক্ত জমাট বাঁধা সাহায্য করার জন্য।
- লিভার প্রতিস্থাপন: মারাত্মক ক্ষেত্রে, মৃত দাতা বা জীবন্ত দাতা থেকে একটি লিভার ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধের গুরুত্ব
লিভারের ক্ষতির প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়শই কোন লক্ষণ থাকে না। যখন লক্ষণগুলি উপস্থিত হয়, তখন এটি প্রায়শই নির্দেশ করে যে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন সিরোসিস হতে না দেওয়ার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং লিভার-রক্ষাকারী জীবনধারা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
লিভার সুস্থ রাখার উপায়
আপনার লিভারকে সুস্থ ও দক্ষ রাখার জন্য আপনি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখানে প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল:
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার BMI (বডি মাস ইনডেক্স) 25 এর বেশি হলে, আপনার ওজন কমানো উচিত।
- ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- আপনার জন্য সঠিক ওজন কত তা জানতে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
সুষম খাবার খান
- ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য বেছে নিন।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অতিরিক্ত চর্বি এড়িয়ে চলুন।
- আপনার খাদ্যে পর্যাপ্ত ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে কথা বলুন যাতে আপনার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
নিমিতভাবে ব্যায়াম করুন
- শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ওজন কমাতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।
- প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটের মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখুন।
- ব্যায়ামের কিছু উদাহরণ হল হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা এবং নৃত্য।
- আপনার জন্য সঠিক ব্যায়ামের ধরন সম্পর্কে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
অ্যালকোহল সীমিত করুন
- অ্যালকোহলের অত্যধিক ব্যবহার লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- মহিলাদের জন্য প্রতিদিন এক গ্লাসের বেশি এবং পুরুষদের জন্য প্রতিদিন দুই গ্লাসের বেশি অ্যালকোহল পান না করাই ভালো।
- যদি আপনি অ্যালকোহল পান করেন, তবে পরিমিতভাবে পান করুন এবং আপনার পানীয়ের মধ্যে বিরতি নিন।
- আপনার যদি অ্যালকোহলের সমস্যা থাকে তবে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
ধূমপান পরিহার করুন
- ধূমপান লিভার সহ শরীরের সমস্ত অঙ্গের ক্ষতি করে।
- ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য সাহায্যের জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
- ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনেকগুলি উপায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং, ওষুধ এবং নিকোটিন প্রতিস্থাপন থেরাপি।
ওষুধের যথাযথ ব্যবহার করুন
- শুধুমাত্র নির্দেশিত হিসাবে ওষুধ গ্রহণ করুন। লিভারকে ওভারলোড করতে পারে এমন ওষুধের মাত্রা বা সংমিশ্রণ সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হোন।
- অনেক প্রেসক্রিপশন এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ লিভারের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যখন অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। এসিটামিনোফেন (টাইলেনল) একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।
- আপনার লিভারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো ওষুধ বা ভেষজ সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
হেপাটাইটিসের জন্য ভ্যাকসিন নিন
- হেপাটাইটিস এ এবং বি-এর জন্য টিকা পাওয়া যায়, যা এই ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষিত থাকতে পারে। সংক্রমণের ঝুঁকি বা যকৃতের সমস্যা আছে এমন সবার জন্য টিকাগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
- হেপাটাইটিসের জন্য আপনার কোন টিকা প্রয়োজন তা নিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
লিভারের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোন উদ্বেগ থাকে তবে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার
রসুন
- রসুনে এলিসিন এবং সেলেনিয়াম নামক দুটি যৌগ থাকে যা লিভারকে পরিষ্কার করতে এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- এলিসিন লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- সেলেনিয়াম একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- রসুন গুঁড়ো, রসুনের তেল, বা কাঁচা রসুন খাওয়া যেতে পারে।
গ্রিন টি
- গ্রিন টি-তে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা লিভারের প্রদাহ কমাতে এবং চর্বি জমে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- ক্যাটেচিন লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- দিনে 2-3 কাপ গ্রিন টি পান করা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ফ্যাটি মাছ
- স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল-এর মতো ফ্যাটি মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-এর সমৃদ্ধ উৎস, যা লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- সপ্তাহে অন্তত দুইবার ফ্যাটি মাছ খাওয়া লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বাদাম এবং বীজ
- বাদাম এবং বীজ ভিটামিন ই-এর একটি ভালো উৎস, একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারের কোষগুলিকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন ই লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- বাদাম, আখরোট, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, এবং কুমড়ার বীজ লিভারের জন্য উপকারী।
অ্যাভোকাডো
- অ্যাভোকাডোতে গ্লুটাথিয়ন থাকে, এটি একটি যৌগ যা লিভারকে টক্সিন অপসারণ করতে সাহায্য করে।
- গ্লুটাথিয়ন লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- অ্যাভোকাডো কাঁচা খাওয়া বা স্যালাডে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও, লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী আরও কিছু খাবার
- ফল: আপেল, আঙ্গুর, ব্লুবেরি, এবং ক্র্যানবেরি I
- শাকসবজি: ব্রকলি, পালং শাক, গাজর, এবং বিট I
- গোটা শস্য: ওটমিল, বাদামী ভাত, এবং quinoa I
- চর্বিহীন প্রোটিন: মুরগির মাংস, মাছ, এবং ডিম I
লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাবার
- অ্যালকোহল: অ্যালকোহলের অত্যধিক ব্যবহার লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, সিরোসিস এবং হেপাটাইটিসের মতো গুরুতর লিভারের রোগের কারণ হতেে পারে।
- অতিরিক্ত চিনিনি: প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং সোডায় অতিরিক্ত চিনির উপাওয়া যায়। এসব খাবার লিভারের অতিরিক্ত চর্বি জমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, যা লিভারের রোগের জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ।
- অস্বাস্থ্যকর চর্বি: ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরাপুর ফাস্ট ফুড, প্রসেসড মিট এবং তেল জাতীয় খাবার খাওয়াা সীমাবদ্ধ করা উচিত। অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ে।
- বেশি লবণ: প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রেস্টুরেন্টের খাবারগুলিতে লবণের মাত্রা অনেক বেশি হতেে পারে। অতিরিক্ত লবণ পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারে যার ফলে লিভার কাজের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
পরিশেোষণ
সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার লিভারকে রক্ষা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যতদূর সম্ভব অতিরিক্ত ক্ষতিকর খাবারগুলো এড়িয়ে চলোর চেষ্টা করা উচিত। পরিবর্তে, বেশি করে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চরবিহীন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া অব্যাস করা দরকার।
বিশেদত্তর জন্য একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অত্যাবশ্যক।
উপসংহার
লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। জটিলতা এড়াতে আমাদের লিভারের যত্ন নেওয়া উচিত। সুস্থ ও সক্রিয় জীবনধারা, ভালো খাদ্যাভ্যাস এবং অ্যালকোহল ও অন্যান্য টক্সিন এড়িয়ে চলা লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপনার যদি লিভারের রোগের লক্ষণগুলির কোনও উদ্বেগ বা অভিজ্ঞতা থাকে তবে চিকিত্সার পরামর্শের জন্য অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যাবশ্যক।
অস্বীকৃতি: এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনওভাবেই পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে না। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনও উদ্বেগ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বদা একজন যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।