দুধ খাবার উপকারিতা, অপকারিতা, উপাদান এবং কিছু সহজ রেসিপি
দুধ হল স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তন্যগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এক প্রকার সাদা তরল পদার্থ এবং দুধ মানুষের একটি প্রধান খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যগ্রহণে সক্ষম হয়ে ওঠার আগে এটিই হল স্তন্যপায়ীমানুষসহ যারা স্তন্যদুগ্ধপানকারী শাবকদের পুষ্টির প্রধান উৎস।
স্তন থেকে দুগ্ধ নিঃসরণের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলোষ্ট্রাম সমৃদ্ধ শাল দুধ উৎপন্ন হয়, যাতে মায়ের দেহ হতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শাবকের দেহে নিয়ে যায় এবং রোগাক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমায়।
এতে আমিষ ও ল্যাক্টোজ সহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। আন্তঃপ্রজাতির দুধ গ্রহণ করা অস্বাভাবিক নয়, বিশেষত মানুষের ক্ষেত্রে, যারা অন্য অনেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুধও গ্রহণ করে।
সমগ্র বিশ্বে ৬০০ কোটিরও বেশি দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গ্রাহক রয়েছে এবং এদের মধ্যে অধিকাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলির নাগরিক। প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ গোপালক পরিবারে বসবাস করে। ২০১০ সালে বিশ্বের গব্যখামারগুলি থেকে ৭২ কোটি টন দুধ উৎপন্ন হয়।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদক এবং গ্রাহক হয়েও দুধ আমদানি বা রফতানি করে না। নিউজিল্যান্ড, ই ইউ-১৫ এবং অস্ট্রেলিয়া হল বিশ্বের তিন বৃহত্তম দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য রফতানিকারী দেশ। চীন,জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, ইতালি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং জাপান হল বিশ্বের দশ বৃহত্তম দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য আমদানিকারী দেশ।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পুষ্টি বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় দুধের অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পালিত পশু, দুগ্ধ খামার প্রযুক্তি, দুধের গুণগত মান, ইত্যাদির উন্নতিসাধন সারা বিশ্বে দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
দুধের উপাদান
গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যানসার ও হূদেরাগ প্রতিরোধে দুধের শক্তিশালী ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে।
দুধের পুষ্টি উপাদান ও আমাদের দৈনিক চাহিদা পূরণ
নিচের টেবিলটিতে গরুর দুধের পুষ্টিগুণ এবং সেগুলি কী পরিমাণ আমাদের দৈনিক চাহিদা পূরণ করে সে সম্পর্কিত তথ্য দেখুন।
দুধের ধরন (e.g., ফুল ক্রিম, লো-ফ্যাট) এবং ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে এগুলি কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
২৪০ মিলিলিटर (১ কাপ) ফুল ক্রিম গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান (আনুমানিক) এবং দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (আনুমানিক)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (আনুমানিক) | দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (আনুমানিক)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১৪৯ | ৭.৪৫% |
মোট চর্বি | ৮ গ্রাম | ১২.৩% |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৪.৬ গ্রাম | ২৩% |
কোলেস্টেরল | ২৪ মিলিগ্রাম | ৮% |
প্রোটিন | ৮ গ্রাম | ১৬% |
কার্বোহাইড্রেট | ১২ গ্রাম | ৪% |
ভিটামিন ডি | ১২৪ আইইউ | ৩১% |
ক্যালসিয়াম | ২৭৬ মিলিগ্রাম | ২৭.৬% |
পটাশিয়াম | ৩৭২ মিলিগ্রাম | ৭.৮৬% |
ভিটামিন এ | ১১০ আইইউ | ২.২% |
*একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েট এবং গড় প্রাপ্তবয়স্কদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। শিশুদের জন্য এই অনুপাত অনেক বেশি হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
- দুধের ধরণ গুরুত্বপূর্ণ: স্কিম মিল্কে প্রায় কোনও চর্বি থাকে না, ফুল ক্রিম দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে ক্যালোরি এবং পুষ্টির পরিমাণ পরিবর্তিত হয়।
- সুষম খাদ্যের অংশ: দুধ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস। তবে, অন্যান্য খাবারের গ্রুপ থেকেও পুষ্টি লাভ করা গুরুত্বপূর্ণ।
- বয়স বিবেচনা: শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা এবং খাদ্যে নির্দেশনাগুলি আলাদা।
- অসহিষ্ণুতা: কিছু লোকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বা দুধের প্রতি এলার্জি থাকে।
দুধের উপকারিতা
দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ আসুন এবার জেনে নিই দুধের নানা উপকারিতা
চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে
দুধ চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের নানা প্যাক দুধ দিয়ে বানান।
পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়
পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে দুধ খুবই উপকারি একটি খাদ্য। দুধ যেহেতু পানীয় খাবার তাই এটি খুব সহজেই পাকস্থলী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যাদের হজমে সমস্যা তারা নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
দুধে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকার জন্য আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে যে দুধ নাকি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই দুধ নিয়মিত খাওয়া খুবই ভালো ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দুধের উপকারিতা অধিক। দুধে থাকা ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতে
ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখাতে নিয়মিত দুধ খান।
স্ট্রেস দূর করতে
রিসার্সে জানা যায় দুধ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা স্ট্রেসে ভুগছেন তারা প্রতিদিন অনতত এক গ্লাস করে দুধ পান করুন।
ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে
আপনি না জানলে জেনে রাখুন ত্বক ভালো রাখতে দুধের উপকারিতা আছে। নিয়মিত লো ফ্যাট দুধ খেলে নাকি ত্বক কম ফাটে, এর কারণ হল কম ফ্যাট যুক্ত দুধে থাকে ট্রাই-গ্লিসারাইড। নিয়মিত ত্বকে দুধ লাগালে ত্বকের থেকে অতিরিক্ত তেল কমে যায়।
রাতে ভাল ঘুম হয়
অনেকেরই রাতে ঘুম হয় না। রাতে ঘুম ভাল করতে গরম দুধ খুবই উপকারি একটি খাদ্য। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন দেখবেন ঘুম ভাল হচ্ছে।
দাঁত ভাল
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে। অনেকেরই আবার ছোট থেকেই ক্ষত শুরু হয়ে যা। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হারের পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁত ভাল রাখে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব
আমরা তো জানি যে দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম তাই নিয়মিত দুধ খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়ে যাবে নিমিশেই।
হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতে
দুধে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যাসলিয়াম ও ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীর হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেলে আমাদের হাড় মজবুদ ও শক্তিশালী হবে। এজন্য শিশুদের প্রতিদিন দুধ খাওয়াতে ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবারই দুধ খাওয়া উচিত কারন দুধের উপকারিতা অনেক।
ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখে
ফিটনেস ঠিক রাখতে আমরা কতকিছুই না করে থাকি। অনেকে জিম করে, কেই জগিং করে। আপনি কি জানেন শরীর সুস্থ রাখার একমাত্র উপায় হলো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে দুখ খুবই উপকারি। নিয়মিত দুধ খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং মন সতেজ থাকবে। তাই আমাদের প্রতিদিন একগ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।
শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দুর করে
শরীরে শক্তি যোগাতে দুধের উপকারিতা অনেক। আপনি হয়তো জানেন না দুধ খেলে আপনার শরীলে শক্তি সঞ্চয় হয় এবং আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আমরা প্রতিদিন কত কাজেই না ব্যস্ত থাকি। আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পরে।
আপনি যদি নিয়মিত দুধ খেতে পারেন তাহলে এই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। গরুর দুধে আছে ভিটামিন, প্রাটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাস সহ নানান পুষ্টিগুন।
মানসিক চাপ দূর করতে
দুধে থাকা পুষ্টিগুন আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। আমরা যখন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরি বা দুশ্চিন্তা করি তখন আমরা অনেক ক্লান্ত এবং ভেঙ্গে পরি।
আমরা যদি প্রতিদিন দুধ খাই তাহলে এই ক্লান্তিগুলো দূর হয়ে যাবে ফলে মন এবং শরীর তাজা থাকবে। তাই আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়া অভ্যাস করা উচিত।
শরীরের ওজন হ্রাস করে
প্রতিদিন দুধ খেলে শরীরের ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
প্রতিদিন দুধ খেলে হার্ট ভাল থাকে। কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেলে রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায় ও খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হার্ট ভাল রাখতে প্রতিদিন দুখ পান করুন।
ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে
দুধের উপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি দুধে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি তে ভরপুর। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি প্রতিদিন দুধ খায় তাহলে এই সমস্যা কমবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে।
পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমায়
পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমাতে দুধের উপকারিতা অনেক। দুধে থাকা ক্যাসলিয়াম ও ভিটিমিন ডি পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি দুর করে কিন্তু লো ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়া উচিত।
দুধ খাওয়ার অপকারিতা
অতি মাত্রায় দুধ খাওয়া উচিত না। দুধের উপকারিতা যেমন আছে অপকারিতাও আছে। তবে সকল দিক বিবেচনা করা দেখা যাচ্ছে উপকারিতাই বেশি।
- যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনি রোগীদের জন্য কম খাওয়া এবং রাতে দুধ না খাওয়াই উত্তম।
- যাদের শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া।
- এলার্জি থাকলে, দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। অকেনের আবার দুধে এলার্জি আছে বলে জানা যায়।
দুধ নিয়ে কিছু প্রচলিত প্রশ্ন
দুধ কলয়েড কেন?
দুধ হল কলয়েড। কলয়েড এর বিশেষত্ব হল এদের মধ্যে যে কণাগুলো থাকে তাদের মাঝে একটা বিকর্ষন বল কাজ করে। কোনভাবে এই বিকর্ষন বল নষ্ট হয়ে গেলে কণাগুলা কাছাকাছি চলে আসে এবং জমাট বাধা শুরু করে। দুধ জাল দিলে তাপের জন্য দুধের লিপিড কণাগুলোর মাঝে বিকর্ষন বল নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা জমাট বেধে সর তৈরি করে।
লো ফ্যাট দুধ খাওয়া কি ভালো?
কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং স্কিম দুধে পুরো দুধের তুলনায় কম ক্যালোরি এবং ভিটামিন বেশি পরিমাণে থাকে। এগুলিতে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটও রয়েছে, যা আপনার খারাপ কোলেস্টেরল বাড়াতে এবং আপনাকে হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রাখতে গবেষণায় দেখানো হয়েছে।
কোন দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি?
ছাগল ও গরুর দুধের তুলনায় ভেড়ার দুধে চর্বি ও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে শুধুমাত্র মহিষ এবং ইয়াকের দুধেই বেশি চর্বি থাকে। গরু, মহিষ এবং ছাগলের দুধের তুলনায় ভেড়ার দুধে সাধারণত ল্যাকটোজের পরিমাণ বেশি থাকে।
ওজন কমাতে কোন দুধ ভালো?
ওজন কমানোর জন্য কোন দুধ সবচেয়ে ভালো? একটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ স্টাডি অনুসারে, মিষ্টি ছাড়া বাদামের দুধে কম ক্যালোরি এবং কম কার্ব ডায়েটে সাহায্য করে। বাদামে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের উচ্চ উপাদান রয়েছে যা ওজন হ্রাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
কে প্রথম গরুর দুধ পান করেন?
প্রায় 10,000 বছর আগে বা তার আগে, খুব কমই কেউ দুধ পান করত, এবং তারপর শুধুমাত্র বিরল অনুষ্ঠানে। নিয়মিত দুধ পান করা প্রথম ব্যক্তিরা ছিলেন পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দিকের কৃষক এবং যাজক – কিছু মানুষ যারা গাভী সহ গৃহপালিত পশুদের সাথে বসবাস করে।
হোল মিল্ক কি ভালো?
দুধ প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজগুলির মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির উত্স। যদিও অনেক লোক স্কিম মিল্ক বেছে নেয়, বিশ্বাস করে যে এটি স্বাস্থ্যকর, সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত করে যে সম্পূর্ণ ফ্যাট দুধ স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নাও হতে পারে । খাদ্যতালিকাগত নির্দেশিকা লোকেদের পুরো দুধের পরিবর্তে স্কিম বা কম চর্বিযুক্ত দুধ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে কি হয়?
হলুদ মেশানো দুধে আন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে, যা বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন, ডায়রিয়া এবং পেটের আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলুদ-দুধ কার্যকরী।
হলুদ দুধ রেসিপি
উপাদান
- ১/২ কাপ দুধ
- ১ চা চামচ হলুদ
- একটি ছোট আদা অথবা ১/২ চা চামচ আদার পাউডার
- ১/২ চা চামচ দারুচিনি পাউডার
- সামান্য গোল মরিচ
- ১ চা চামচ মধু
হলুদ দুধ প্রস্তুত প্রণালী
একতি সস প্যানে সব উপাদান মিশিয়ে বলক আসা পর্যন্ত জ্বাল দিন। এখন তাপ কমিয়ে ১০ মিনিট রাখুন যতক্ষণ না এটার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
ছেঁকে মগে ঢালুন এবং উপরে সামান্য দারুচিনি ছিটিয়ে দিন। এটা ফ্রিজে ৫
দুধ দিয়ে তৈরি রেসিপি
দুধের বরফি
দুধের বরফি বানানোর উপকরণ
দুধ ২ লিটার, চিনি ৩ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ, এলাচগুঁড়া আধা চা-চামচ।
দুধের বরফি বানানোর প্রণালি
দুধ একবার জ্বাল দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। ধীরে ধীরে লেবুর রস দিতে হবে। সবুজ পানি বের হলে চুলা নিভিয়ে দিন। ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। সব দুধ ছানা হলে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিন। ছানার কাপড় ঝুলিয়ে রাখতে হবে যেন পানি পড়ে যায়। তারপর চিনির সঙ্গে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে,
যেন চিনি ভেজা ভেজা হয়। মৃদু আঁচে চুলায় দিয়ে নাড়লে চিনি গলে চটচটে শিরা হবে। তারপর চুলা নিভিয়ে দিন। ছানা ও এলাচগুঁড়া দিয়ে নেড়ে শিরায় মেশাতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে থালায় ঢেলে হাত দিয়ে হালকাভাবে চেপে বসিয়ে দিন।
চারদিকে সমানভাবে চেপে চারকোনা আকারে কেটে নিন। বরফি আকারে কেটে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
দুধ দিয়ে মিষ্টি
দুধ দিয়ে মিষ্টি বানানোর উপকরণ
- গুঁড়া দুধ- ১ কাপ
- ময়দা- ২ টেবিল চামচ
- সুজি- ১ টেবিল চামচ
- বেকিং পাউডার- ২/৩ চিমটি
- ঘি- আধা চা চামচ
- তরল দুধ- আধা কাপ
- ফুড কালার- কয়েক চিমটি
- তেল- ভাজার জন্য
- মাওয়া- ১ কাপ
- পানি- ৩ কাপ
- চিনি- ২ কাপ
- এলাচ- ৩টি
দুধ দিয়ে মিষ্টি বানানোর প্রস্তুত প্রণালি
একটি বাটিতে গুঁড়া দুধ, ময়দা, সুজি ও বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন। মিশ্রণে ঘি মেশান। অল্প অল্প করে তরল দুধ দিয়ে ডো তৈরি করুন এবার। ফুড কালার দিয়ে দিন। আঠালো ডো তৈরি হলে হাতে ঘি মাখিয়ে ডো থেকে সামানয অংশ নিয়ে হাতে চেপে গোল করুন। এরপর লম্বাটে কালোজামের আকৃতি দিন। মিষ্টি তৈরি হলে ঢেকে রাখুন।
চুলায় প্যানে পানি দিয়ে গরম করুন। গরম হলে চিনি দিয়ে দিন। চিনি গলে গেলে এলাচ ভেঙে দিন। সিরা ফুটে উঠলে জ্বাল কমিয়ে ঢেকে রাখুন।
এবার কালোজাম তেলে ভেজে নিতে হবে। প্যানে তেল দিয়ে মাঝারি আঁচে গরম করুন। গরম হলে একটি একটি করে মিষ্টি দিয়ে ডুবো তেলে ভাজুন। মিষ্টি ছাড়ার আগে দেখে নেবেন তেল বেশি গরম হয়ে গেছে কিনা। বেশি গরম তেলে মিষ্টি দিলে বাইরের অংশ তাড়াতাড়ি ভাজা হলেও ভেতরের অংশ ভাজা হবে না।
কিছুক্ষণ পর মিষ্টি তেলের উপর উঠে আসতে শুরু করলে সামান্য নেড়ে নিন। আরও কিছুক্ষণ ভাজার পর মিষ্টি লালচে হয়ে গেলে অনবরত নাড়তে থাকুন। কালচে হলে মিষ্টি উঠিয়ে চুলায় রাখা চিনির সিরায় দিয়ে জ্বাল বাড়িয়ে মাঝারি করে দিন।
১০ মিনিট এভাবে রাখুন। মাঝে একবার নেড়ে দেবেন। ১০ মিনিট পর মিষ্টি ফুলে উঠলে সিরার পাত্র নামিয়ে ঢেকে রাখুন ১ ঘণ্টা। মিষ্টি উঠিয়ে মাওয়ায় গড়িয়ে পরিবেশন করুন মজাদার কালোজাম।
দুধ এবং বাদামের শরবত
দুধ এবং বাদামের শরবত বানানোর উপকরণ
- দুধ -১ লিটার
- চিনি -আধাকাপ
- কাজুবাদাম বাটা -১৫ টা
- পেস্তাবাদাম বাটা -১৫টা
- কাঠবাদাম বাটা -১৫টা
- গোলাপ জলে ভেজানো জাফরান -১ চিমটি
- বরফ -২ কাপ
দুধ এবং বাদামের শরবত যেভাবে বানাবেন
প্রথমে সব উপকরণ ব্লেন্ড করার জন্য একটি পাত্রে নিতে হবে।
তারপর ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার পেস্তা বাদাম কুচি ছিটিয়ে দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন পুষ্টিকর দুধের সরবত।
দুই দিন পর্যন্ত রাখা যাবে এবং খাওয়ার আগে গরম করে নিতে হবে।
বাদাম দুধের রেসিপি
বাদাম দুধ বানানোর উপকরণ
দুধ ২ কেজি, রুহ আফজা ১ কাপ, চিনি ৪ টেবিল চামচ বা পরিমাণমতো, কাঠবাদামবাটা ৪ টেবিল চামচ, পেস্তাবাটা ২ টেবিল চামচ, কাঠবাদামকুচি ২ টেবিল চামচ, পেস্তাকুচি ২ টেবিল চামচ, বরফকুচি পরিমাণমতো।
বাদাম দুধ বানানোর প্রণালি
২ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ১ লিটার করে নিন। ঠান্ডা করে নিন। এবার সব উপকরণ একসঙ্গে মিলিয়ে পরিবেশন করুন।