রোজা রাখার উপকারিতা, ফজিলত এবং সাবধানতা
মহান আল্লাহ বান্দাদের তাঁর ভালোবাসা ও সান্নিধ্য দানের জন্যই রমজান মাস দান করেন। এ মাসের রোজা শুধু আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ নিজেই রোজার প্রতিদান অথবা আল্লাহ নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন।
রোজার মাধ্যমে প্রতিদান লাভের জন্য রোজাকে নিখুঁত করতে হবে। প্রত্যেক ইবাদতকেই বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে সুন্দর ও নিখুঁত করতে হয়, তাহলেই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
রোজা রাখার উপকারিতা
রোজা রাখার উপরাকিতা , গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কি বলা হয়েছে তা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। রোজা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেও রোজার উপকারিতা অপরিসীম। আসুন আমরা দেখি রোজা শরীরের জন্য কতটা উপকারী-
- রোযা থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা যাবতীয় খানাপিনা বন্ধ থাকে। এ সময় পাকস্থলী, অন্ত্র-নালী, যকৃত, হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। তখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিজেদের পুনর্গঠনে নিয়োজিত হতে পারে। অন্যদিকে দেহে যেসব চর্বি জমে শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো রোযার সময় দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ছুটে যায়।স্বাস্থ্য-বিজ্ঞানী তার ‘সুপিরিয়র নিউট্রিশন’ গ্রন্থে ডা. শেলটন বলেছেন, উপবাসকালে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করা জাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর পুষ্টি বিধান হয়।
- নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঔষুধ ও শল্য চিকিৎসার প্রখ্যাত ডা. অ্যালেকসিস বলেছেন, উপবাসের মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশীর প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহ আন্দোলিত হয়।আভ্যন্তরীণ দেহ যন্ত্রগুলোর সংরক্ষণ এবং হ্নদপিণ্ডের নিরাপত্তার জন্য অন্য দেহাংশগুলোর বিক্রিয়া বন্ধ রাখে। খাদ্যাভাব কিংবা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়, রোজা তা পূরণ করে দেয়।”
- ডা. আইজাক জেনিংস বলেছেন, ‘যারা আলস্য ও গোড়ামীর কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনী শক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোযা তাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে।’
- বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী নাষ্টবারনার বলেন, ‘ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েকদিনের রোযার কারণেই নিরাময় হয়।’
- ডাক্তার দেওয়ান এ,কে,এম, আব্দুর রহীম বলেছেন, রোযাব্রত পালনের কারণে মস্তিস্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয়।
- স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা. আব্রাহাম জে হেনরি রোযা সম্পর্কে বলেছেন, ‘রোযা হলো পরমহিতৈষী ওষুধ বিশেষ। কারণ রোযা পালনের ফলে বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে মানুষ কম আক্রান্ত হয়।’
- গবেষণায় দেখা গেছে, রোযাদার পেপটিক আলসারের রোগীরা রোযা রাখলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোযা উপকারী।
- ডাক্তারদের মতে, রোযার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ার কারণে মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয়-যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য মঙ্গলজনক। বহুমূত্র রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোযা খুব উপকারী। ডাক্তারী পরীক্ষায় দেখা গেছে, একাধারে ১৫ দিন রোযা রাখলে বহুমূত্র রোগের অত্যন্ত উপকার হয়।
- কিডনী সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা রোযা রাখলে এ সমস্যা আরো বেড়ে যাবে ভেবে রোযা রাখতে চান না। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোযা রাখলে কিডনীতে সঞ্চিত পাথর কণা ও চুন দূরীভূত হয়।
- স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, রোজা রাখার উপকারিতা হলো , সারা বছর অতিভোজ, অখাদ্য, কুখাদ্য, ভেজাল খাদ্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে জৈব বিষ জমা হয় তা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক মাস রোজা পালনের ফলে তা সহজেই দূরীভূত হয়ে যায়।
রোজা রাখার সময় সাবধানতা
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে সিয়াম পালন করা ফরজ, রোজা রাখার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। ওজন কমায়, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণে রাখে – তারপরেও রোজার কিছু সাবধানতা রয়েছে । চলুন জেনে আসা যাক এর সাবধানতা গুলো –
দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা
সুস্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য পুষ্টিবিদেরা আমাদেরকে অল্প করে বারবার খাবার তাগিদ দেন। কিন্তু রোজায় আমরা করি উল্টোটা। রাতে দুই বা তিনবার খাই – এর মধ্যে সেহরী এবং ইফতারে সব ঢেলে দেই।
দীর্ঘক্ষণ পানি পান না করা
শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। কিন্তু রোজা রাখলে আমরা ১৩/২৪ ঘন্টা শরীরে কোন পানি সাপ্লাই দেইনা, উপরন্তু এসময় মূত্রত্যাগ এবং ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা সাথে সাথে পূরণ করার কোন উপায় থাকেনা। এতে কি শরীরের ক্ষতি হয়না?
ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি
রমজান মাস এসে আমাদের দেশে ওয়ার্কিং আওয়ার ২/৩ ঘন্টা কমে যায় – উৎপাদনও তার ফলে হ্রাস পায়, কিন্তু কর্মীদের বেতন মজুরী কিন্তু কমানো হয়না। উপরন্তু ঈদকে সামনে রেখে উৎসব ভাতা দেবার একটা চাপ মালিকপক্ষের উপর পরে, যা অযাচিত।
হোটেল রেস্তোরার ব্যবসায়ে লস
হোটেল রেস্তোরাগুলো তাদের আয়ের সিংহভাগ করে থাকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারে – রমজানে যে ট্রেন্ডে ব্যাপক ধ্বস নামে। এই লস পূরণ করার জন্য তারা ইফতারের নামে ২ টাকার জিনিস ১০ টাকায় বিক্রি করে নয়তো খাদ্যে ব্যাপক ভেজাল দেয়। এভাবে অনৈতিক কর্মকান্ডে এক রকম অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
কালোবাজারী
হোটেল রেস্তোরা এবং অফিসের ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় বাড়তি চাপ পড়ে ঘরের বাজারে যে কারণে ভোগ্য পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই পরিস্থতি সামাল দিতে পাইকারদেরকে অনেকটা বাধ্য হয়েই দাম বাড়াতে হয় অথবা কালোবাজারীর আশ্রয় নিতে হয়।
যানজট
সবাই বাসায় গিয়ে ইফতার করা এত জরুরী মনে করে যে একসাথে সবাই অফিস ত্যাগ করতে গিয়ে রাস্তায় বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয় – এতে মানুষের মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট হয়।
পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলা
রমজানের শেষ সপ্তাহে ঢাকার বাইরে সপরিবারে যাবার কারণে পরিবহণ খাতের উপর বিশাল প্রেশার পড়ে। এই সুযোগে পরিবহণ মালিকেরা যাত্রীদেরকে ইচ্ছামত হয়রানি করে।
রোজা রাখার কারণ কি
রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা। হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো”।
রোজা রাখার ফজিলত
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। যা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি। রোজা রাখার অসংখ্য ফজিলত কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
- রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে । রোজা আমার জন্যই, আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব ।
- আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে রোজার কারণে পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন।
- কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতিত অন্য কারো আগমন ঘটবে না।
- যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
- জান্নাতে একটি স্পেশাল ফটক রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। সেই গেইট দিয়ে কেবল রোজাদারগণই প্রবেশ করতে পারবে ।
- রোজাদারগণ রাইয়ান নামক গেইট দিয়ে প্রবেশ করে জান্নাতের পানীয় পান করবে। তারপর থেকে আর কখনো তাঁরা পিপাসার্ত হবে না।
- রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল। আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে।
- রোজা কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, অতঃপর তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
- ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
- ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে ও তারাবি পড়লে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।
- রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধময়।
- রোজাদারের জন্য স্পেশাল দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে; এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোজার পুরস্কার লাভের কারণে আনন্দিত হবে।
রোজার নিয়ত
যেকোনো কাজের সুস্পষ্ট নিয়ত বা উদ্দেশ্য থাকতে হবে। উদ্দেশ্যহীন কোনো কিছু করা আমল নয়। বরং জেনে, বুঝে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ও উদ্দেশ্য ঠিক করে কাজ করা হলেই সে কাজ বা আমল স্বচ্ছ হয়। রোজার জন্যও নিয়ত করতে হবে। রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ অন্তরের ইচ্ছা, উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা, সংকল্প গ্রহণ করা। দ্বিধাহীন চিত্তে নিয়ত করতে হয়।
দোদুল্যমানতার মাধ্যমে সহিহ-শুদ্ধ নিয়ত হয় না। নিয়ত মনে মনে করা যায়। নিয়তের সময় এ সংকল্প করতে হয় যে, আমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা রাখছি। মুখে কাউকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিয়ত করার দরকার নেই। নিয়ত নিজে নিজে স্পষ্টভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে করলেই হবে। হাদিম শরিফে আছে: ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশী
রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিন
জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের দিন। উক্ত পাঁচদিন সব ধরনের রোজা রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ। অবশ্য তামাত্তু বা কিরানকারী হাজিগণ যদি কোনো কারণে কোরবানি দিতে অপারগ হয় তাহলে এর পরিবর্তে মক্কায় জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে রোজা রাখবে। উল্লেখ্য, বিরামহীনভাবে সারাবছর রোজা রাখা নিষেধ।
রোজা রেখে যেসব কাজ করা যাবে না
রোজাকে নিখুঁত ও পরিপূর্ণ করতে নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ পরিহার
মিথ্যা কথার ব্যাপকতায় মিথ্যা শপথ, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা অপবাদ, গিবত-শেকায়েত, চোগলখুরিসহ মুখনিঃসৃত সব অপরাধই অন্তর্ভুক্ত। আবার মিথ্যা কাজের ব্যাপকতায় মিথ্যা সত্যায়ন, মিথ্যা প্রতিবেদন, প্রতারণা, ভেজাল দেওয়া, কাজ ও দায়িত্বে ফাঁকি দেওয়া এবং দুর্নীতিসহ অনৈতিক সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
কুদৃষ্টি পরিহার
চোখের কুদৃষ্টি পাপের প্রথম ধাপ। এটি শয়তানের তীর, যা সরাসরি অন্তরে আঘাত করে। ফলে অন্তরে তাকওয়ার আলো জ্বলে না। তাকওয়াই রোজার মূল উদ্দেশ্য। কাজেই রোজাকে নিখুঁত করতে রমজান মাসে নৃত্য, সিনেমা ও গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া এবং বেপর্দা চলাফেরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অবৈধ শ্রবণ পরিহার
যে কথা মুখে উচ্চারণ করা নাজায়েজ, তা শ্রবণ করাও নাজায়েজ। সুতরাং রোজা অবস্থায় গান-বাজনা, গিবত-পরনিন্দা ইত্যাদি শোনা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
সব অঙ্গের নাফরমানি পরিহার
আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি অঙ্গই মানুষের জন্য অমূল্য নিয়ামত। তিনি মানুষকে তা দান করেছেন সঠিক পথে ব্যবহার করার জন্য। যদি তা দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করা হয়, তাহলে কিয়ামতের দিনে সেসব অঙ্গ ওই ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। তাই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
অতিভোজন ও যৌনাচার পরিহার
অতিভোজনের ফলে কামভাব ও পশু প্রবৃত্তি দমিত হয় না। অথচ রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে—নফসের চাহিদা ও পশু প্রবৃত্তি দমন করা। তাই রমজান মাসে বেশি খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। আর অবৈধ যৌনাচার তো সর্বাবস্থায় পরিহার করতে হবে। রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও সব ধরনের যৌনাচার পরিহার করতে হবে। রোজা তো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারসহ যৌনাচার থেকে বিরত থাকারই নাম।
কোনো কিছুর স্ব্বাদ অনুভব পরিহার
রোজা অবস্থায় সতর্কতাবশত কোনো খাদ্যদ্রব্য মুখে নেওয়া বা কোনো কিছু জিহ্বায় নিয়ে স্ব্বাদ অনুভব করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসবের স্বাদ গলার ভেতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গলার ভেতর স্বাদ চলে গেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
এ আশঙ্কা থেকে রোজা অবস্থায় সতর্কতাবশত তরকারির স্বাদ পরীক্ষা করা, বাচ্চাদের খাবার চিবিয়ে দেওয়া, টুথ পাউডার ও পেস্ট ব্যবহার করা, পান-গুল-জর্দা-তামাক মুখে রাখা, নারীদের লিপস্টিক বা লিপজেল ব্যবহার করা, কুলি করার সময় গড়গড়া করা, নাকের নরম অংশের ওপর পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।