প্রোবায়োটিকের উপকারিতা এবং ব্যবহার
প্রোবায়োটিক কি?
প্রোবায়োটিক শব্দের অর্থ জীবনের উন্নয়ন করা। আমাদের শরীরের ভিতরে নানারকম জীবাণু বাস করে। এদের প্রোবায়োটিক বলা হয়। এরা ব্যাকটেরিয়া কিংবা ইস্ট। শরীরের ভিতরে যে সকল জীবাণু থাকে,
তাদের সবাই কিন্তু আমাদের ক্ষতি করে না। কিছু জীবাণু আমাদের বন্ধু। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের শরীরে এসব জীবাণুর উপস্থিতি বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। মূলত পরিপাক নালীতে এসব জীবাণু থাকলে আমাদের নানারকম উপকার হয়। শরীরের ভিতরে আনুমানিক ৪০০ রকমের জীবাণু বাস করে।
গড়পড়তা একজন মানুষের শরীরে ৩ থেকে ৪ কেজি আন্ত্রিক জীবাণু থাকে। অর্থাৎ খুব সহজে আন্দাজ করা যায় বিপুলসংখ্যক জীবাণু আমাদের শরীরে বাস করে। অবশ্যই বিনা কারণে এত জীবাণু শরীরে বাস করে না। এরা আমাদের সঙ্গে থাকে কারণ এদের প্রয়োজন রয়েছে।
এধরনের জীবাণু প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করলে আমাদের পরিপাক নালীর কাজকর্ম ভালো থাকে। প্রোবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে; এর ফলে পরিপাক নালীর কাজকর্মই শুধু ভালো হয়, তা নয়। সামগ্রিকভাবে তা শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রোবায়োটিক উপকারী কেন
ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়াল বললেন, ‘‘গাট ব্যাকটিরিয়ার সমতা বজায় রেখে প্রোবায়োটিক ইমিউনিটি বাড়ায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অনেক সময়ে ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরাও প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করে থাকেন। অন্ত্রে তা ভাল ব্যাকটিরিয়ার সমতা বজায় রেখে শরীর সুস্থ করে তোলে।’’
ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট সুস্থ থাকলে খাদ্য থেকে শক্তি সরবরাহও দ্রুত হয়। ফলে এনার্জি লেভেলও বেশি থাকে। শরীরে ক্যালশিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে প্রোবায়োটিক। ফলে ওরাল ক্যাভিটির মতো সমস্যাও দূরে থাকে। অনেকেরই হয়তো খিদে পায় না। কিন্তু প্রোবায়োটিকের জোগান ঠিক থাকলে অ্যাপেটাইট ঠিক থাকে। শরীর কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল… এই পাঁচটি স্তম্ভের উপরেই নির্ভরশীল। আর খাবার থেকে এই পুষ্টিগুণ শরীরে শোষণ করতে সাহায্য করে উপকারী ব্যাকটিরিয়া। আর তার ভারসাম্য বজায় রাখে প্রোবায়োটিক। ঘুরপথে হলেও সমগ্র শরীরকে সুস্থ ভাবে চালনা করতে এর অবদান অনস্বীকার্য।
কেন প্রোবায়োটিক প্রয়োজন ?
প্রোবায়োটিক আমাদের শরীরের জন্য দরকার। পরিপাক নালীর কাজ-কর্ম ভালোভাবে চলার জন্য আমাদের প্রচুর বন্ধু জীবাণু দরকার হয়। এসব বন্ধু জীবাণুই প্রোবায়োটিক। এদের মূল কাজ হলো:
- এরা পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে।
- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন তৈরি করে।
- বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নিষ্ক্রিয় করে।
- অন্য ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ক্ষতিকর জীবাণুর অতিরিক্ত বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
- কি কারনে প্রোবায়োটিক কমে যেতে পারে দেহে দেহে প্রোবায়োটিকের অভাব দেখা দেয় বিভিন্ন কারণে। যেমন।
- এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার।
- কোন রোগের কারণে।
- অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
- সুষম খাদ্যের অভাব।
- মদ্যপান।
- অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারI
- ফাস্টফুড গ্রহণ ও কম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াI
- শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিকের প্রভাবI
- কোথা থেকে আমরা প্রোবায়োটিক পেতে পারি?
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার আলোচনা করা হল :
টকদই
প্রোবায়োটিক এর অন্যতম উৎস হচ্ছে টকদই। এতে আছে ল্যাকটোব্যাসিলাস ও বিফিডোব্যক্টেরিয়া। এগুলো অন্ত্রের জন্য খুবই ভালো। এজন্য একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন এক কাপ টক দই খাওয়া উচিত।
আচার
বাঙালির খুব প্রিয় একটা খাবার হচ্ছে আচার। আচারে কিন্তু প্রচুর প্রোবায়োটিক আছে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মৌসুমি ফল ও সবজি দিয়ে আমাদের দেশে আচার বানানো হয়। ঘরে তৈরি আচার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে লবণ এড়িয়ে চলুন।
পনির
পনির খুব ভালো একটি প্রোবায়োটিক। এছাড়াও পনির এ আছে ভিটামিন এ, বি-১২, ফসফরাস,ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাবিন ইত্যাদি। প্রতিদিন সামান্য পনির খান।
সয়া দুধ
সয়াবিন থেকে তৈরি খাবারগুলোতে ল্যাকটোজ থাকে। এগুলো ভালো প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেট একটি ভালো মানের প্রোবায়োটিক। এছাড়াও এতে আছে আন্টিওক্সিডেন্ট ।
প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক
প্রিবায়োটিক এক ধরনের ফাইবার। সাধারণত আনাজপাতিতেই পাওয়া যায়। শরীর সরাসরি প্রিবায়োটিক হজম করতে পারে না। বরং প্রোবায়োটিকের খাবার জোগায় এই প্রিবায়োটিক। কাঁচা শাক, আনাজে এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বিশেষত কাঁচকলা, গাঁঠি কচু ও রসুনে প্রিবায়োটিক পাওয়া যায়। তবে তা কাঁচা অবস্থায় অনেক বেশি পরিমাণে মেলে।
প্রিবায়োটিকের জোগান বজায় রাখতে রোজ সকালে উঠে খালি পেটে রসুনের কোয়া খেতে হবে। রান্নায় রসুন দিয়ে খেলে কিন্তু হবে না। আর প্রিবায়োটিকের জোগান বজায় রাখতে পারলে প্রোবায়োটিকের ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়
ডা: রুদ্রজিৎ পাল জানান, আসলে কোন কোন ক্ষেত্রে এই এর ব্যবহার হবে তা চিকিৎসকের উপর নির্ভর করে। বহু ক্ষেত্রে হয়ে থাকে এর ব্যবহার। আসুন জানা যাক-
বারবার ক্রনিক আমাশা
পেটের সমস্যা
রোজ অম্বল
কোলাইটিস
আইবিএস
আইবিডি
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময় ভালো ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। তখন ব্যবহার হয় এই প্রোবায়োটিক। এভাবেই শরীরের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়াও এর নানা কাজে ব্যবহার রয়েছে।
প্রোবায়োটিক প্রতিদিন খাওয়া উচিত
বিশেষ করে ল্যাকটোব্যাসিলাস এবং বিফিডোব্যাকটেরিয়াম অনুসারে নিয়মিতভাবে প্রোবায়োটিক গ্রহণ করা নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে । সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল গ্যাস। সংক্রমণের কিছু ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক গ্রহণের পরে ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দেয়।
প্রোবায়োটিক খেলে কি মলের সাথে রক্ত আসতে পারে
কিছু গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে প্রোবায়োটিকগুলি অন্ত্রের রক্তপাত ঘটাতে পারে, বিশেষ করে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন । প্রোবায়োটিকগুলিও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।
সব আচারে কি প্রোবায়োটিক থাকে
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ভিনেগার দিয়ে তৈরি আচারে লাইভ প্রোবায়োটিক থাকে না । আচার হল শসা যা লবণাক্ত পানিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং গাঁজন করা হয়েছে। এগুলিতে ক্যালোরি কম এবং ভিটামিন কে বেশি। তবে ভিনেগার দিয়ে তৈরি আচারে প্রোবায়োটিক প্রভাব থাকে না।
প্রোবায়োটিক দই কি
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই যে কাজগুলো করে:
ক্ষতিকর জীবাণুর অতিরিক্ত বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। শরীরের ফ্যাট কমানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক যুক্ত দই অন্ত্রের উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে; এর ফলে পরিপাক নালীর কাজকর্মই এর পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে করে।