গ্লুকোজের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাবার নিয়ম
জীবন্ত কোষ গ্লুকোজ শক্তি ও বিপাকীয় প্রক্রিয়ার একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। সালোকসংশ্লেষণ বা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান উৎপাদ হলো গ্লুকোজ ।
সাধারণত এই গ্লুকোজ প্রাণী ও উদ্ভিদ কোষের শ্বাসক্রিয়ায় অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মধু ও অধিকাংশ মিষ্ট ফলে গ্লূকোজ থাকে
গ্লুকোজের উপকারিতা
জীবন্ত কোষ গ্লুকোজকে শক্তির বিপাকীয় প্রক্রিয়ার একটি উৎস হিসাবে ব্যবহার করে থাকে।
শরীরের জন্য উপকারী এই গ্লুকোজ আমাদের জন্য কি কি উপকার করতে পারে তা যদি আপনারা জানতে চান তাহলে লিখাটি শেষ পর্যন্ত একবার পড়ুন।
আইবিএস এর সমস্যা সমাধানে গ্লুকোজের ভূমিকা
যাদের শরীরে আইবিএস এর সমস্যা পাওয়া যায় তাদের কে ডাক্তারেরা বেশি বেশি গ্লুকোজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
কারন সাধারণত এই সময় শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। তাই এই সময় ডাক্তারেরা গ্লুকোজ পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গ্লুকোজ প্রাণী ও উদ্ভিদ কোষের শ্বাসক্রিয়ার অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় গ্লুকোজের উপস্থিতি অবশ্যই রাখা দরকার আমাদের শ্বাসক্রিয়ার কার্যকারিতাকে স্বাভাবিক রাখতে হলে
শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে হলে প্রতিদিন যে খাবার খায় তার শতকরা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শর্করা রাখা উচিত। কিন্তু শর্করার প্রধান উৎস হিসেবে আমরা ভাত খায়।
যে সকল শর্করা জাতীয় খাবার রক্তে যত তাড়াতাড়ি মিশে যায়,এ ধরনের শর্করা জাতীয় খাবার শরীরের জন্য তত বেশী বিপদজনক। তাই বলতে গেলে আমরা যে ভাত খাচ্ছি তার প্রভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
তাই এমন ধরনের শর্করা আমাদের গ্রহণ করা উচিত, যা আমাদের শরীরে শর্করার অভাব পূরণ করার পাশাপাশি আমাদের শরীর কখনো খারাপ সাইডিফেক্ট আসবে না। এক্ষেত্রে গ্লুকোজ কিন্তু দারুণ ভাবে কাজ করে থাকে।
কারণ শর্করা হিসাবে গ্লুকোজ যদি আমরা গ্রহণ করে থাকি তার রক্তে তাৎক্ষণিকভাবে গ্লুকোজ এর চাহিদাকে পূরণ করে।
উদ্ভিদ এবং প্রাণীরটিস্যুর গঠনের উপাদান হিসেবে
রমজানে ইনস্ট্যান্ট এনার্জি পেতে গ্লকোজের উপকারিতা
রোজা রাখার পর আমাদের কর্ম উদ্দীপনা যখন একেবারে হারিয়ে যায় তখন ইফতারির সময় এক গ্লাস পানিতে ২ থেকে ৩ টেবিল-চামচ গ্লুকোজ পাউডার নিয়ে ভালো মতো মিশিয়ে যদি আমরা পান করি তাহলে আমাদের শরীর খুব দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠে এবং কাজ করার উদ্দীপনা আমরা ফিরে পায়।
কারণ গ্লুকোজ খুব দ্রুত রক্তের সাথে মিশে কর্মশক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
একটি বিষয় মনে রাখা উচিত গ্লুকোজ সবার জন্য ভালো। একটা হার্টের রোগী থেকে শুরু করে আইবিএস এর সমস্যায় যারা ভুগছেন সবাই কমবেশি গ্লুকোজ খেতে পারেন। কিন্তু যারা ডায়াবেটিস এর মতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের কিন্তু গ্লুকোজ খাওয়া বারণ। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
শিশুদের ক্ষেত্রে গ্লুকোজের চাহিদা
সকল ছোট বাচ্চারা খাবার খেতে চায় না অর্থাৎ তাদের শরীরে দৈনিন্দিন শর্করার অভাব থেকে যায়। তাদের ক্ষেত্রে গ্লুকোজ কিন্তু দারুন একটি পরিপূরক খাবার হিসাবে কাজ করে।
তাই মায়েদের উচিত ছোট বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় ভাতের পরিবর্তে গ্লুকোজ রাখা। এতে করে শর্করার অভাব পূরণ হবার পাশাপাশি শিশুদের মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।
দ্রুত এনার্জি মেলে
এই গরমে বাইরে বেরলেই শরীরের দফারফা হয়ে যাচ্ছে। ঘেমে-নেয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা। শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে জল ও প্রয়োজনীয় খনিজ। এই কারণে এনার্জির ঘাটতি হচ্ছে। ক্লান্তি গ্রাস করছে। কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গ্লুকোজ জল হতেই পারে আপনার অন্যতম সঙ্গী। এই পানীয় মুখে দিলে রক্তে দ্রুত মিশে যায় কার্ব। এই কার্ব হল কোষের খাবার। ফলে চটজলদি শরীরে এনার্জির জোয়ার খেলে যায়। সেই সঙ্গে জলের ঘাটতিও মেটে।
গ্লুকোজ খাওয়ার অপকারিতা
উপকারিতার মাঝে বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যেমন অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি ডেকে আনে।
শরীরে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি হলে তা ধীরে ধীরে মেদের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
- শরীরে অতিরিক্ত মেদ যেমন শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে তেমনি শরীরের ওজনও দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
- আপনি জানলে অবাক হবেন, বেশি গ্লুকোজ দাঁতের ক্ষয়রোগের জন্য দায়ী।
- নানা ধরনের জটিল রোগ যেমন ডিমেনশিয়া, হৃদরোগেরও কারণ হয়ে ওঠে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা বা গ্লুকোজ। চিকিৎসকরা বলছেন, কার্বোহাইড্রেটের অভাবে যেমন দেহের ওজন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শরীরের কর্মশক্তিও হ্রাস পেতে শুরু করে।
- তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত, শরীরে বেশি গ্লুকোজ যেমন ক্ষতিকর তেমনি কম গ্লুকোজও মারাত্মক হতে পারে। তাই গ্লুকোজ পাউডার পানীয় হিসেবে খাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। এ ধরনের পানীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ীই পান করা উচিত বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ পানীয় মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। যারা একটানা বসে কাজ করে তাদের জন্যও নিরাপদ নয় গ্লুকোজ পাউডার।
- শিশুদের ক্ষেত্রেও এ পানীয় অনিরাপদ। তাই গ্লুকোজ পাউডার এড়াতে ডায়েটে প্রাধান্য দিতে পারেন ফলের রস ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। যা চটজলদি এনার্জি দেয়ার পাশাপাশি দেবে গরমে স্বস্তির পরশ।
খালি পেটে গ্লুকোজ খেলে কি হয়
খালি পেটে গ্লুকোজ খেলে অবশ্যই তার উপকারিতা আপনি পাবেন। খালি পেটে গ্লুকোজ খেতে হলে সব সময় আপনাকে একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে একটি সঠিক নিয়ম মেনে আপনাকে খালি পেটে গ্লুকোজ খেতে হবে।
আমরা যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকে তাকায় তাহলে তাদের কথা অনুযায়ী মানব শরীরে প্রতি এক গ্রাম শর্করা থেকে প্রায় ৪ কিলো ক্যালরি তাপ ও শক্তি পাওয়া যায়
শর্করা আমাদের শরীরের শক্তির বড় উৎস এবং গ্লুকোজ পাউডার খাওয়া কতটা নিরাপত্তা হয়তো অনেকেই জানেন না।
সরকার আর শরীরে থাকার প্রোটিন কে রক্ষা করে কারণ শরীরে শর্করা প্রোটিনকে ভাঙতে দেয় না আর যার কারণে প্রোটিন ভেঙে তাপ উৎপাদন হতে চোরকে বাঁধা দেয় সেটা হচ্ছে গ্লুকোজ।
গ্লুকোজ খাবার নিয়ম
খাওয়ার আগে প্রতি লিটারে ৪.২-৭.২ মিলিমোল এবং খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ১০ মিলিমোলের নিচে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা রাখা উচিত।
তবে বয়স, অন্যান্য অসুখ, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, গর্ভাবস্থা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্নতর হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে নিতে হবে।
গ্লুকোজ জল সবাই খেতে পারবেন না। তাই এর বিকল্প দরকার। সেক্ষেত্রে ডাবের জল, ওআরএস মেশানো জল খেতে পারেন। এই দুই পানীয় কিন্তু গরমে শরীরকে সুস্থ রাখে।
তবে খাবেন না কোল্ড ড্রিংকস, বাইরের কাটা ফলের জুস, প্যাকেটজাত ফলের জুস ইত্যাদি। এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই অনায়াসে সুস্থ থেকে এই বছরের গরম কাটিয়ে দিতে পারবেন। কোনও রোগই ছুঁতে পারবে না।
গ্লুকোজ জাতীয় খাবার কি কি
শরীরে শর্করার চাহিদা মেটাতে চিনি, গুড়, মধুর পাশাপাশি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, চিয়া, ফ্লেক্স ইত্যাদি বীজ, মিষ্টি ফল ও ফলের রস খেতে পারেন।
ভাত, রুটি, পাঁউরুটিইত্যাদি খাবার থেকেও শর্করাপাওয়া যায়। খেতে পারেন নানা ধরনের ডাল, চিঁড়ে, সুজি।