সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতা
সূর্যমুখী ফুল এর রূপ ও সূর্যমুখী বীজ এর গুন দুই দিকেই সে অতুলনীয়। সূর্যমুখীর তেলের গুন জানলেও অনেকেই সূর্যমুখীর বীজের উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ রুপে জানি না।
তাই আজকে আমরা জানবো রোজকার ডায়েটে ক্ষুদ্র এই বীজটি সংযুক্ত করলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কি অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।
সূর্যমুখী বীজেরপুষ্টিমান
অনন্য সুন্দর একটি ফুল সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর ক্ষুদ্র বীজগুলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান। এতে মজুত আছে 20% প্রোটিন, 35-42% তেল এবং 31% অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড।
এছাড়া ভিটামিন হিসেবে রয়েছে এ, বি 3, বি 5, বি 6, ই, ফোলেট। তামা, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম এর মত খনিজ উপাদান, ডায়েটি ফাইবার আর প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড লিনোলিক অ্যাসিড, ওলাইক অ্যাসিড পাওয়া যাবে এই বীজটিতে।
১০০ গ্রাম কাঁচা সূর্যমুখী বীজের প্রাপ্তিটি উপাদান এবং দৈনিক চাহিদার শতাংশ
নিচে সূর্যমুখী বীজের পুষ্টির তালিকা তৈরি করা হল। তবেে, একটা কথাা মাথায় রাখবেন যে, বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হলে সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
আমি এখানে ১০০ গ্রাম শেল (খোসা) ছাড়ানো, শুকনো রোস্ট করা সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণ দেখানোর চেষ্টা করবো:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদার শতাংশ (প্রায়) |
---|---|---|
ক্যালোরি | 584 | 29.20% |
প্রোটিন | 21 গ্রাম | 42.00% |
চর্বি | 51 গ্রাম | 78.46% |
ফাইবার | 9 গ্রাম | 36.00% |
ভিটামিন E | 35.17 মিলিগ্রাম | 234.47% |
ভিটামিন B1 | 1.48 মিলিগ্রাম | 123.33% |
ভিটামিন B5 | 6.75 মিলিগ্রাম | 135.00% |
ভিটামিন B6 | 1.34 মিলিগ্রাম | 79.41% |
ফোলেট | 227 মিক্রোগ্রাম | 56.75% |
কপার | 1.8 মিলিগ্রাম | 200.00% |
ম্যাগনেসিয়াম | 325 মিলিগ্রাম | 81.25% |
ম্যাঙ্গানিজ | 1.95 মিলিগ্রাম | 85.22% |
ফসফরাস | 660 মিলিগ্রাম | 94.29% |
সেলেনিয়াম | 53 মিক্রোগ্রাম | 96.36% |
জিংক | 5 মিলিগ্রাম | 62.50% |
আয়রন | 5.25 মিলিগ্রাম | 29.17% |
লক্ষণীয়:
- এই শতাংশগুলো একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটের উপরে নির্ধারিত। বয়স, লিঙ্গ, এবং শারীরিক কর্মতৎপরতার উপর ভিত্তি করে এই দৈনিক চাহিদা আলাদা হতে পারে।
সূর্যমুখীর বীজের উপকারিতা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সূর্যমুখী ফুলের বীজে রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ। শীতকালে এটি আরও বেশি উপকার করে স্বাস্থ্যের। এতে থাকা থিয়ামিন, রিবোফ্লেভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই, ফোলেট স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান
সূর্যমুখীর বিচিতে রয়েছে উন্নতমানের ভিটামিন ‘ই’ যা এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও শরীরের বিভিন্ন অংশের জ্বালাপোড়া কমায়।
নিয়মিত এটি খেলে অস্টিওআর্থারাইটিস, অ্যাজমা ও বাতরোগ নিরাময় হয়।
হাড় শক্তিশালী করে
হাড়ের সুস্থতার জন্য ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম দুটোই খুব জরুরি সূর্যমুখীর বিচি খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎস, তাই এটি সুস্থ হাড় গঠনে সহায়তা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
এই বীজে আছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। এসব উপাদান শরীরে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে দেয় না।
বয়সের ছাপ দূর করে
এতে আছে এন্টি-এজিং প্রপার্টিজ যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। এর মধ্যকার ভিটামিন ‘ই’ ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত করে ও ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে।
বিটা ক্যারোটিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে ও ভিটামিন ‘ই’ ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না।
চুল পড়া রোধ করে
সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ যা মাথার স্কাল্পে অক্সিজেন সাপ্লাই করে চুলপড়া রোধ করে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল নতুন চুল জন্মাতে সাহায্য করে।
এতে আরও রয়েছে কপার যা চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে।
ত্বক কোমল রাখে
সূর্যমুখীর বিচি ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস হওয়ায় ত্বকের এলাস্টিক ধরে রেখে ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখে।
দাগ দূর করে
এর মধ্যকার ফ্যাটি এসিড ত্বকে কোলাজেন ও এলাস্টিন তৈরি করে দাগ দূর করে। এতে আরও রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায়।
কোলেস্ট্রল কমায়
এই বীজে রয়েছে ফাইটোস্টেরল যা রক্তের কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমায়। যা হার্টযে রাখে সুস্থ।
স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে
এর মধ্যকার ম্যাগনেশিয়াম নার্ভ সেলের অতিরিক্ত ক্যালশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করাতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য
সূর্যমুখীর বিচিতে রয়েছে ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার এমিনো এসিড যা শরীরে সেরেটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সেরেটোনিন হচ্ছে এমন একটি উপাদান যা ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর করে।
সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজের অতিরিক্ত সেবনে বমি, পেটে ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের বমি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট, মুখের চারপাশে ফোলা এবং চুলকানি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজ ক্যালোরি সমৃদ্ধ। অত্যধিক খাওয়া ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। অতিরিক্ত খেলে হার্টের জন্য উপকারী খাবারও হার্টের ক্ষতির কারন হতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজে ক্যাডমিয়ামের চিহ্ন থাকে। খুব বেশি বীজ খাওয়া আমাদের কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- দূষিত অঙ্কুরিত বীজ খেলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সালমোনেলা হতে পারে।
সূর্যমুখী বীজ নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
সূর্যমুখী বীজ কত প্রকার ?
সূর্যমুখী বীজ যা আমরা খাই তা সাধারণত দুই প্রকার।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি কি?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্যুপ কিংবা স্যালাডে সূর্যমুখীর বীজ গুঁড়ো ছড়িয়ে খেতে পারেন। এর ফলে প্রচুর উপকার পায় শরীর। গাঁটে ব্যথা থেকে পেশির যন্ত্রণা দূর করতে সাহায্য করে। দীর্ঘ দিনের ব্যথা যন্ত্রণাও দূর হয়।
সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
বাজারে প্রতি কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজের দাম ২০০ টাকা এবং বীজ বপনের উপযোগী হিসেবে বিক্রি করলে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দিনে কয়টি সূর্যমুখী বীজ খাওয়া উচিত?
যেহেতু সূর্যমুখী বীজ ক্যালোরিগতভাবে ঘন, তাই সালাদ টপিংস বা গার্নিশের জন্য প্রতিদিন হুল করা বীজের – কয়েক চা চামচ – বা দুই টেবিল চামচ পর্যন্ত সীমিত করার পরামর্শ দেয়৷ একটি জলখাবার হিসাবে, ¼ কাপ ছিদ্রযুক্ত বীজ একটি ভাল অংশের আকার যা অবশ্যই আপনাকে তৃপ্ত রাখতে সাহায্য করবে।
সূর্যমুখী বীজের স্বাদ কি ভালো?
সূর্যমুখী বীজ একটি হালকা, বাদামের স্বাদ এবং একটি দৃঢ় কিন্তু কোমল গঠন আছে। এগুলি প্রায়শই স্বাদ বাড়াতে ভাজা হয়, যদিও আপনি সেগুলি কাঁচাও কিনতে পারেন।
সূর্যমুখী বীজ সূর্যমুখী উদ্ভিদের বড় ফুলের মাথা থেকে আসে। ভোজ্য জাতটির একটি হালকা, বাদামের স্বাদ রয়েছে।