তালমাখনার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাবার নিয়ম
তালমাখনা মূলত একটি গাছের নাম। এখান থেকে তৈরি হয় ফুল সেই ফুলের মধ্যে থাকে বিজ। তালমাখনা গাছের ব্যবহার্য অংশ হলো তালমাখনা বীজ। তালমাখনা চেনার উপায় হল তালমাখনা বীজ ছোট ছোট সরিষার দানার মতো হয়ে থাকে।
তাল কিংবা মাখনাফুল কোনো কিছুর সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়, অথচ নাম তালমাখনা! তবে স্থানীয়ভাবে কুলেখাড়া নামেও পরিচিত। গুরুত্বপূর্ণ এই ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জেনেছি অনেক আগেই।
দেখেছি অনেক পরে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে। সেখানকার ভেষজ উদ্যানে বিচিত্র উদ্ভিদের ভেতর ফুলসমেত সুদৃশ্য গাছগুলো নজর কাড়ল। এই উদ্ভিদ উদ্যানটি আমার দেখা আঞ্চলিক বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।
১০০ গ্রাম তালমাখনার প্রাপ্তপুষ্টি উপাদানএবং দৈনিক চাহিদার শতাংশ
তালমাখনা বা লটাসের বীজ একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। তবে, প্রাপ্য পুষ্টির পরিমাণ ও দৈনিক চাহিদার শতাংশের তালিকা তৈরির আগে কিছু বিষয় আমরা মাথায় রেখেছি:
- প্রকারভেদ: তালমাখনা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় – কাঁচা, শুকনো ও ভাজা। পুষ্ট উপাদানের মাত্রার ক্ষেত্রে এগুলোর মধ্যে পার্থক্য আছে।
- পরিবেশন পরিমাণ: সাধারণত তালমাখনা পরিবেশন পরিমাণ বেশ ছোট হয়, উদাহরণস্বরূপ ১ আউন্স বা ২৮ গ্রাম।
- প্রসেসিং: বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুতকৃত তালমাখনা প্যাকেটে অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং তেল মেশানো থাকতে পারে, যা পুষ্টির ভারসাম্য পরিবর্তন করে দেয়।
এমি উল্লেখিত বিষয়গুলো মনে রাখতে हुए, এখানে ১ আউন্স (২৮ গ্রাম) শুকনো এবং রোস্টেড তালমাখনার জন্য একটি সাধারণ পুষ্টির তালিকা দেওয়া হলো:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ২৮ গ্রাম) | দৈনিক চাহিদার শতাংশ (প্রায়) |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১০৬ | 5.30% |
মোট চর্বি | ০.৯ গ্রাম | ১.৩৮% |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ০.১ গ্রাম | ০.৫০% |
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম | ০% |
সোডিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম | ০.৩৫% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ২১ গ্রাম | ৭% |
ডায়েটারি ফাইবার | ১ গ্রাম | ৪% |
মোট চিনি | ৩ গ্রাম | – |
প্রোটিন | ৪ গ্রাম | ৮% |
ক্যালসিয়াম | 39 মিলিগ্রাম | 3.90% |
আয়রন | ০.৮ মিলিগ্রাম | ৪.44% |
পটাশিয়াম | 176 মিলিগ্রাম | 3.74% |
লক্ষণীয়:
- এই তালিকার পরিমাণ আন্দাজ মাত্র। বিভিন্ন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদের পুষ্টির প্রকৃত মান নির্ভর করে।
- দৈনিক চাহিদার নিরিখে এই শতাংশগুলি একটি 2000 ক্যালরি ডায়েটের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
তালমাখনার উপকারিতা
আমরা যদি তালমাখনার পুষ্টিগুণ বিবেচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই এটি বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী। তালমাখনা পুষ্টিকারক, শুক্রবর্ধক, প্রফুল্লতা আনয়নকারক।তালমাখনার উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হল।
শরীরের দুর্বলতা কমানোর জন্য তালমাখনা
বর্তমানে অনেকে আছেন যারা খাবার খেয়েও সঠিক পুষ্টি পান না এর ফলে শরীরে দুর্বলতা অনুভব করে। আবার অনেকেই শরীর দুর্বলতার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না এর ফলে ঘরে বসে থেকে শরীর আরো দুর্বল হয়ে যায়।
শরীর দুর্বল ব্যক্তিরা তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন শরীরের দুর্বলতা কমে যাবে। তালমাখনা সাধারণত সকালে খেতে হয়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য তালমাখনা
অনেকেই আছেন বাইরের খাবার খেয়ে বা বর্তমান সময়ের ফাস্টফুড খেয়ে গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন এর ফলে বুকে জ্বালাপোড়া হয়। অনেকেই আছেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে ঔষধ খেয়ে দ্রুত সমাধান করে ফেলেন।
কিন্তু ঔষধ খেয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত সমাধান হলেও একই গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেতেখেতে এটি আর কাজ করে না। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি বুকের জ্বালাপোড়া,
পেট ফোলা ভাব ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। তালমাখনার ভালো ফলাফল পেতে এটি সকালে ১৫-২০মিনিট পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে এরপর খেয়ে ফেলতে হবে।
কিডনির সমস্যা সমাধানে তালমাখনাঃ
বেশি বেশি বাইরের খাবার, বাইরের ভাজাপোড়া খাবার এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে অনেকেই অল্প বয়সে কিডনি সমস্যায় ভোগেন। আবার ব্যথার ওষুধ বেশি খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
যাদের এখনও কিডনির সমস্যা হয়নি তারা তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন তালমাখনা খাওয়ার ফলে আপনার হজম শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে একই সাথে কিডনির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।
হরমোনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তালমাখনা
অনেক মেয়ে আছে যারা হরমোনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। হরমোনের সমস্যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা যায়।আবার হরমোনের সমস্যার কারণে শরীর দুর্বল থাকে। অনেক মেয়ে আছে যাদের হরমোনের সমস্যার
কারণে সহবাসের ইচ্ছা কমে যায়। সহবাসের পর মেয়েরা অনেক দুর্বল অনুভব করেন এসব সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খেতে পারেন। তালমাখনা হরমোনের সমস্যা সহ শরীরের দুর্বলতা সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে তালমাখনা
যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন অথবা যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আগের মতন সমস্যা আছে তারা তালমাখনা বীজ খেলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও তালমাখনা পাকস্থলী সমস্যা সমাধানে এবং বায়ুঃ নিশ্বরক হিসেবে কাজ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য তালমাখনা অনেক উপকারী একটি জিনিস। ডায়াবেটিস রোগী যদি তালমাখনা দিয়ে মেডিসিন তৈরি করে খেতে পারে তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা তালমাখনা খেতে পারেন।
কিডনি এবং লিভার ভালো রাখে
আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার এবং কিডনি এই দুটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মানুষ মারা যাবে। তাই আপনার লিভার এবং কিডনি ভালো রাখার জন্য তালমাখনা অনেক উপকারী একটি জিনিস। সেজন্য তালমাখানা খেতে পারেন।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
অনেক পুরুষ রয়েছে বিভিন্ন কারণে তাদের যৌন শক্তি কমে যায়। আর এই যৌন শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অনেক কিছু করে থাকে। তাই বলবো যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে নিয়মিত তালমাখনা খেতে পরেন।
দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি করে
আমাদের ভেতর অনেক মানুষ রয়েছে যারা পুষ্টি হিনতায় ভুগে থাকেন। সেজন্য যারা পুষ্টি হিনতায় ভুগে থাকেন তারা পুষ্টি বৃদ্ধি করার জন্য দুধের সাথে তালমাখনা সকাল এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবেন।
বাত ব্যথা দূর করে
বাতের ব্যথা হলে প্রচুর কষ্ট হয় আর এই বাতের ব্যথা বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের হয়ে থাকে। তাই যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা যদি তালমাখনার পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে ব্যথা যায়গায় লাগাতে পারে তাহলে বাত ব্যথা কম হবে।
তালমাখনার অপকারিতা
তালমাখনার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে আমরা এখন তালমাখনার অপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো দেখে নেবো।
যেকোনো খাবার বা ঔষধ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে আমাদের দেহের জন্য উপকারী তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে উপকারের পরিবর্তে অনেক সময় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
ঠিক তেমনি তালমাখনাও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করা সমীচীন। তালমাখনার অপকারিতা তেমন খুব বেশি নয় তবে বেশি পরিমাণে খেয়ে নিলে পেটে বায়ু হতে পারে।
তাছাড়াও এটি যেহেতু হরমোনের সমস্যা ও শুক্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে সুতরাং পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে নিলে হরমোনজনিত আরো নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অবগত নই তাদের সুবিধার্থে এখন দেখে নেব তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম গুলো।
তালমাখনা একটি উপকারী ভেষজ ঔষধ।তবে এটি সঠিক নিয়মে খেলে খুবই ভালো কাজ করে। তালমাখনা বীজ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সেটি ধীরে ধীরে ফুলে উঠবে।
এখন এটি সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাওয়া যেতে পারে।এছাড়াও বিভিন্ন রোগের সমস্যা সমাধানে তালমাখনা দুধের সাথে অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আরো একটি তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম হল বীজ ছাড়াও এটি পাউডার করে খেতে পারেন।
তালমাখনা চেনার উপায়
তালমাখনা সাধারণত ৫০ সেমি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড থেকেই বহু শাখাপ্রশাখা বের হয়। ফুলের রং উজ্জ্বল বেগুনি লাল কিংবা বেগুনি সাদা। বীজ ছোট, গোলাকৃতির, দেখতে অনেকটা তিলের মতো, তবে বীজের রং গাঢ় খয়েরি।