মৌরির উপকারিতা এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া
মৌরি বীজ একটি সুস্বাদু মসলা যা জিরের বীজের মত দেখতে কিন্তু তার চেয়ে একটু বেশি মিষ্টি। মৌরি গাছ থেকে এই বীজ পাওয়া যায়। মৌরি গাছ আর গাজর একই পরিবারের গাছ।
ভারতবর্ষে এমন কোন পরিবার নেই যারা এর সুগন্ধ জানেন না। মৌরির একটি উষ্ণ সুগন্ধ আছে এবং সাধারণত সবুজ বা বাদামী
রঙের হয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে মৌরি ব্যবহার করা হয়। শুকনো ভাজা মৌরি মুখশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ভোজনের পর ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতে মৌরির জলকে হজমের পক্ষে উপকারী বলে মানা হয়।
পূর্ব ভারতে, পাঁচ ফোড়ন মশলার একটি প্রধান উপাদান। উত্তর ভারতে, বিশেষত কাশ্মীর এবং গুজরাটে এর ব্যবহার আছে।
মৌরির আদি বাসস্থান ভূমধ্য সাগর অঞ্চল। প্রথমে গ্রীকরা এর চাষ করতেন এবং তারপরে সমগ্র ইউরোপ মহাদেশে এটির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে।
মৌরি খাওয়ার উপকারিতা
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও সারাতে পারে মৌরি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, মৌরি শরীরের জন্য কতটা উপকারী-
- হজমের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য মৌরি এক কার্যকরী দাওয়াই। নিয়মিত মৌরি ভেজানো পানি বা চা পান করলে এ সমস্যা দ্রুত সারবে। মৌরি ভেজানো পানি গ্যাস্ট্রো এনজাইম তৈরি করতে ও নিঃসরণে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমতে শুরু করে।
- মৌরিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরকে খারাপ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। মৌরিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তের মলিকিউলে পৌঁছে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের সঙ্গে লড়াই করে।
- খারাপ নিশ্বাসের সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য মৌরি অত্যন্ত কার্যকরী। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানসমূহ থাকায় মৌরি খেলে মুখের ভেতরের প্যাথজেন জীবাণু ধ্বংস হয়। যার ফলে দুর্গন্ধও দূর হয়।
- যেকোনো সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে মৌরি। এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদানসমূহ। নিয়মিত মৌরি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মৌরিতে থাকা বিভিন্ন উপাদানসমূহ প্যাথজেনের জীবাণু আক্রমণ ঠেকায়।
- শরীরের টক্সিন বের করে দেয় মৌরি। রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে মৌরিতে থাকা উপাদানসমূহ। শরীরে তৈরি হওয়া টক্সিন দূষিত পদার্থ বের করতেও সাহায্য করে।
- পিরিয়ডের সময় তলপেটে ও কোমরে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব করেন অনেক নারী। এ সমস্যা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে অনেকেই ব্যথানাশক ওষুধ খান। যদিও বেশি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই পিরিয়ডের ব্যথায় মুক্তি পেতে প্রথমদিন থেকেই মৌরি খেতে শুরু করুন।
- অতিরিক্ত মেদ-ভুড়ি নিয়ে যারা চিন্তিত, তারা নিয়মিত মেথি খেতে পারেন। শরীরের মেটাবলিজম উন্নত করে মৌরি। কাজেই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মৌরি ভেজানো পানি পান করলে কিছুদিনের মধ্যেই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
মৌরির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মৌরিতে অবস্থিত কিছু কিছু যৌগের গঠন মহিলাদের এস্ট্রোজেন হরমোনের মতন। এই যৌগগুলি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে, ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। উমেনুগগ খাদ্যগুলি পেলভিক অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ হওয়ার নকল করে, ফলে মাসিক হতে পারে।
যেহেতু মৌরি বীজের এই ধর্ম আছে, তাই এতে গর্ভপাত হতে পারে। এর অ্যান্টি-স্প্যাস্মোডিক বৈশিষ্ট্য অকাল সংকোচনের কারণ হতে পারে। কাজেই গর্ভাবস্থায় সীমিত পরিমাণে অথবা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মৌরি বীজ খাওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।
আপনি যদি কোন ওষুধ নিতে থাকেন, তাহলে মৌরি বীজ এই ওষুধের সাথে থেকে দেহে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। মৌরি বীজের সাথে এই প্রতিক্রিয়া হয় অ্যান্টি-বায়োটিকের, গর্ভনিরোধকের, এস্ট্রোজেন’এর, হৃদপিন্ডের চিকিৎসার কিছু ওষুধের, ছত্রাক-বিরোধী ওষুধের।
সুপারিশ করা হচ্ছে যে এই ওষুধগুলি নেওয়া এবং মৌরি বীজ খাওয়ার ভিতরে অন্তত 2 ঘন্টা সময়ের তফাৎ রাখার। এ’ছাড়াও যখন আপনি কোন ওষুধ নিচ্ছেন, তখন মৌরি বীজ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।
মৌরি ভেজানো জলের উপকারিতা
মৌরি ভেজানো জল গ্যাস্ট্রো এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপার সমস্যা দূর হয়। মৌরি মিছরির জল এক প্রকার দেশি ডিটক্স ওয়াটার। এই জল শরীরে রক্ত পরিশুদ্ধির কাজ করে।
মৌরি নিয়ে কিছু প্রশ্ন
রোজ মৌরি খেলে কি হয়?
মৌরির মধ্যে যে সব পুষ্টি পাওয়া যায় সেগুলো ফ্যাট গলাতে সাহায্য করে। সুতরাং, রোজ মৌরি চিবিয়ে খেলে এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। মৌরি ফাইবারে সমৃদ্ধ। তাছাড়া এটা হজমে সাহায্য করে।
প্রতিদিন মৌরি খাওয়া কি ভালো?
মৌরি বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে। তারা মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে এবং বিপাক উন্নত করে। একটি সুষম খাদ্য এবং ওয়ার্কআউটের সাথে প্রতিদিন মৌরি বীজ খাওয়া আপনাকে দ্রুত অতিরিক্ত পাউন্ড ঝরাতে সাহায্য করে ।