কিসমিসের উপকারিতা, অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
কে না জানে, কিসমিস খুবই উপকারী। এটা শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করে। কিসমিসে আছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। কিসমিস না-খেয়ে শুধু কিসমিসের পানি খেলেও ভিটামিন ও মিনারেল শরীরে প্রবেশ করে।
কিসমিসে আছে ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস। যা আপনাকে শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং আপনার চুল ও ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে।
কিসমিসের পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি 1/4 কাপ / প্রায় 40 গ্রাম)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদা মূল্য (%DV)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১২৯ কিলোক্যালোরি | ৬% |
মোট চর্বি | ০.২ গ্রাম | <1% |
সোডিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম | <1% |
পটাসিয়াম | ৩২০ মিলিগ্রাম | ৭% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ৩৪ গ্রাম | ১১% |
ডায়েটারি ফাইবার | ১.৬ গ্রাম | ৬% |
চিনি | ২৯ গ্রাম | ৩২% |
প্রোটিন | ০.৮ গ্রাম | 2% |
আয়রন | ১.৫ মিলিগ্রাম | ৮% |
দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যতটা উপকারী তেমনি মজাদার কিসমিস। আর এর উপকারিতা ও গনের শেষ করা যাবেনা।
চলুন জেনে আসা যাক কিসমিস এর উপকারিতা
হজমশক্তি বাড়ায়
সুস্থ থাকার জন্য ভালো হজমশক্তি জরুরি। এক্ষেত্রে কিসমিস হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রোজ রাতে এক গ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভোরে সেই কিসমিস খান। নিজেই তারপর তফাত খেয়াল করুন। দিন পনেরো পরেই ফলাফল বুঝতে পারবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আপনি যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়াতে চান। তাহলে ভেজা কিসমিস ও তার পানি নিয়মিত খান। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে লিভার ও ফুসফুস এর অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বিষমুক্ত শরীর
শরীরকে দূষণমুক্ত করতে কিসমিস খান নিয়মিত। চারিদিকের দূষণে আপনি যখন জেরবার তখন সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খেলে শরীর বিষমুক্ত হবে। ভেজানো কিসমিসের পাশাপাশি কিসমিস ভেজানো পানিও খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
নিয়মিত কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। আপনি যদি পেটের সমস্যায় নিয়মিত ভোগেন। তাহলে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ভেজানো কিসমিস খান। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পান। তারা ওষুধের বদলে নিয়মিত কিসমিস খেয়ে দেখুন। শিগগিরেই সুফল পাবেন।
ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি কিসমিস। এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হাই ব্লাড প্রেসার বশে রাখে।
রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতা কমায়
রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতা কমাতে কিসমিস যথেষ্ট উপকারি। নিয়মিত কিসমিস খেলে এর মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও এর মধ্যে আছে তামা যা রক্তে লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে
ঘুম ভালো হয়
ঘুম ভালো না হলে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে যাদুকরী ভূমিকা পালন করে কিসমিস। কিসমিসে যে আয়রন রয়েছে তা ভালো ঘুমে সাহায্য করে। আমরা সবাই জানি, আয়রন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা শুধুমাত্র হিমোগ্লোবিনের উত্পাদন বৃদ্ধি করে না বরং বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে।
ভেজানো কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় সারারাত কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভোরে সেটা খান। ভেজানো কিসমিসে থাকে আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। হাই ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা থাকলেও এটি তা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়
খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয়। কিসমিসে প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। কিসমিসে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকার জন্য এটি হার্টের জন্য ভালো। কিসমিসে থাকা কম্পাউন্ড হার্ট রোগের ঝুকি কমায় এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
কিসমিসের সম্ভাব্য ক্ষতি
প্রতিটা জিনিস এরই ভাল খারাপ দুটি দিদি রয়েছে। তেমনি কিসমিসের উপকারিতা সাথে বেশ কয়েকটি অপকারিতা রয়েছে।
চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা গুলো
1.কিসমিস এলার্জির সমস্যা বাড়াতে পারে, তাই যাদের এলার্জি আছে তারা কিসমিস খাবেন না।
2.যাদের ডায়বেটিস সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত পরিমানে কিসমিস খাবেন না, এতে ডায়বেটিস বেড়ে যেতে পারে।
3.যারা শরীরের ওজন কমাতে চান, তারা অতিরিক্ত কিসমিস খাবেন না, কারণ কিসমিস শরীরের ওজন বাড়ায়।
4.কিসমিস খাবার হজমে বিঘ্ন ঘটায় তাই অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
আপনি বিভিন্ন উপায়ে কিসমিস খেতে পারেন। নিচে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম দেওয়া হল-
1.আঙ্গুর ফলকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরী করা হয়। এই কিসমিস পায়েস, সেমাই, কোরমাসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে রান্না করে খাওয়া হয়।
2.কিসমিস কাঁচা অবস্থাতেও খাওয়া যায়। কিসমিসের গুনাগুন অনেক। কাঁচা অবস্থাতে কিসমিস খাওয়ার জন্য অবশ্যই কিসমিস ধুয়ে পরিষ্কার করে খাবেন।
3. কিসমিস রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে কিসমিস সহ কিসমিসের পানি খান এতে আপনার শরীর চাঙ্গা হবে এবং অনেক পুষ্টিগুন পাবেন।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
পুষ্টিবিদদের মতে, দিনে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া যায়।
কিসমিস সংরক্ষণের উপায়
কিশমিশ মোটা ও আর্দ্র রাখার চাবিকাঠি হল সঠিক স্টোরেজ। সবসময় কিশমিশ একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং ফ্রিজে রাখুন ।
এটি কিশমিশকে অনেক দিন তাজা থাকতে দেবে। আপনি যদি আপনার কিশমিশ ফ্রিজে রাখার পরিকল্পনা না করেন তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি সেগুলিকে একটি শীতল, অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করেছেন।