পীচ ফলের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
পিচ ফলটি শীতপ্রধান এলাকায় ভালো জন্মে। পীচ দেখতে সাদা বা হলুদ রঙের ছোট্ট মিষ্টি একটি ফল। যেটা সরাসরি ফল হিসেবে খাওয়া যায়, আবার বিভিন্ন রকম খাবারে যোগ করেও খাওয়া যায়।
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের শরীরে পুষ্টি যোগান দেওয়ার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে পীচ বা আদু ফল।
পীচ ফলের পুষ্টিগুণ
খাদ্যশক্তি ,জল ,প্রোটিন ,ফ্যাট ,কার্বোহাইড্রেট ,শর্করা ,ফাইবার,ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ,আয়রন,ফসফরাস ,সোডিয়াম ,পটাশিয়াম ,জিংক ,কপার ,সেলেনিয়াম ,ভিটামিন সি ,থায়ামিন ,নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন ,ভিটামিন বি ৬ ,ফোলেট , ভিটামিন এ ,ভিটামিন কে ,স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ,মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড , পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড।
পীচ ফলের পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি ১ টি মাঝারি আকারের পীচ, প্রায় ১৫০ গ্রাম)
নিচের তালিকাটি পীচ ফলের পুষ্টিগুণের মান উপস্থাপন করে, সেই সাথে কিছু অতিরিক্ত তথ্যও দেওয়া হল।
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদা মূল্য (%DV)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৫৮ কিলোক্যালোরি | ৩% |
মোট চর্বি | 0.5 গ্রাম | ১% |
সোডিয়াম | ০ মিলিগ্রাম | ০% |
পটাসিয়াম | ১৯০ মিলিগ্রাম | ৫% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ১৪ গ্রাম | ৫% |
ডায়েটারি ফাইবার | ২ গ্রাম | ৮% |
চিনি | ১৩ গ্রাম | ১৫% |
প্রোটিন | ১ গ্রাম | ২% |
ভিটামিন সি | ১০ মিলিগ্রাম | ১১% |
ভিটামিন এ | ১০% | ৩৩৩ (IU) |
ভিটামিন ই | 0.7 মিলিগ্রাম | ৫% |
দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।
পীচ ফলের উপকারিতা
পীচ ফল খেতে যতটা সুস্বাদু তার থেকে এর উপকারিতা রয়েছে বেশ অনেকটা।
চলুন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা সমূহ :
পীচ ফল ত্বকের জন্য উপকারী
পীচ ফল আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। কারণ এটি মধ্যে আছে অ্যান্টি-মাইক্রোওভেন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ান বৈশিষ্ট্য, যা ত্বকের সংক্রমণে হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও পীচ ফল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং আমাদের ত্বকের অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পীচ ফল অ্যালার্জি কমাতে সহায়ক
যদি কোন ব্যক্তির অ্যালার্জি সমস্যা থাকে, তাহলে এই পীচ ফল খেলে তা কিছুটা হলেও কমতে পারে। কারণ এটি অ্যালার্জি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পীচ ফল চুলের জন্য উপকারী
পীচ ফল খাওয়ার ফলে চুল পড়ার সমস্যা সমাধান হতে পারে। কারণ পীচ ফলের মধ্যে আছে ভিটামিন এ, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, নিয়েসিন এবং আয়রন। যা চুলের পুষ্টি জোগাতে সহায়ক।
পীচ ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পীচ ফল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড ইত্যাদি।
যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
পীচ ফল বিষন্নতা দূর করতে সহায়ক
পীচ ফল বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে কারণ এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অ্যান্টিডেটিভ স্ট্রেস এর মত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
পীচ ফল বার্ধক্য দূর করতে সহায়ক
পীচ ফল খাওয়ার ফলে অকাল বার্ধক্য জনিত সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করা যেতে পারে।
কারণ স্পীচ ফলের মধ্যে আছে ফ্ল্যাভনয়েড। যেটা অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি অকাল বাধ্যক্য প্রতিরোধ করতে পারে।
পীচ ফল কোলেস্ট্রেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক
যদি কোন ব্যক্তি উচ্চ রক্তে কোলেস্টরলের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে সেই ব্যক্তির প্রত্যেকদিন একটি করে পীচ ফল খাওয়া উচিত।
তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে কারণ পীচ ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।
পীচ ফল হার্ট সুস্থ রাখে
পীচ ফল হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড। যা লিপিড প্রোফাইল উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হৃদ রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পীচ ফল মস্তিষ্ক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
পীচ ফল মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। মুখের গন্ধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি করতে বোঝার শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে পিচু ফল।
পীচ ফল কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী
পীচ ফল কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। কারণ পীচ ফলের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার। যা মলত্যাগ করতে সাহায্য করে।
যদি কোন ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন তাহলে সেই ব্যক্তি পীচ ফল খেলে উপকার মিলবে।
পীচ ফল ওজন কমাতে সহায়ক
পীচ ফল আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ পিক ফলের মধ্যে আছে পলিফেনল, যা স্থূলতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পীচ ফল চোখের জন্য উপকারী:
পীচ ফল চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ পিচ ফলের মধ্যে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, এছাড়াও আছে ক্যারোটিনয়েড। যা চোখে স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
পীচ ফল ক্যান্সার এড়াতে সহায়ক
পীচ ফল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। পীচ ফলের মধ্যে আছে অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক প্রভাব যা ক্যান্সারের সমস্যা বৃদ্ধি হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
পীচ ফল হাড় মজবুত করতে সহায়ক
পীচ ফল আমাদের শরীরে হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। কারণ পীচ ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
পীচ ফল হজম শক্তি উন্নত করে
পীচ ফল খাওয়ার ফলে হজম শক্তি উন্নত হয় কারণ পীচ ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
পীচ ফলের অপকারিতা
পীচ ফলের বেশ কয়েকটি উপকারিতার সাথে এর কিন্তু অপকারিতাও রয়েছে বটে। চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা গুলো
- অতিরিক্ত মাত্রায় পীচ ফল খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় পীচ ফল খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
- যদি কোন ব্যক্তি কাঁচা পীচ ফল খেলে মুখের মধ্যে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে পীচ ফল খাওয়ার ফলে বার বার পায়খানা, বমি হতে পারে।
পীচ ফল খাওয়ার সময়
- পীচ ফল খাওয়ার সঠিক সময় হল সকাল বিকাল যে কোন সময়।
- এছাড়াও সকালবেলা অথবা সন্ধ্যেবেলায় গরম করে জল-খাবার হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
পীচ ফল কিভাবে খাবেন
- পীচ ফল ভালোভাবে ধুয়ে সাধারণ ফলের মতো খাওয়া যেতে পারে।
- আবার একটি মিক্সার এর দুধের সাথে পীচ ফল ভালো ভাবে পিছে নিয়ে কলা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- পীচ ফল কেটে দই এর সঙ্গে মিশিয়ে স্ন্যাকস হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
- পীচ ফল সস তৈরি করেও খাওয়া যেতে পারে।
- পীচ ফল সালাদ হিসেবেও খাওয়া যেতে।
পীচ ফল সংরক্ষণ
- পীচ ফল এক বা দুই দিনের জন্য লেবুর রস মিশিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
- পীচ ফল পাকা হলে কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
- পীচ ফল যদি আধ পাকা হয় তাহলে হলে কয়েক দিন ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা যেতে পারে।
পীচ বা আদু ফল আমাদের শরীরের জন্য ভালো।
পিচ ফলে আমাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা। এই ফল খনিজ এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ।
এছাড়াও পীচ ফলের মধ্যে আছে অ্যান্টি অ্যালার্জি, অ্যান্টি টিউমার, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়ান এবং আন্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাব।
পিচ ফল সংরক্ষণের উপায়
কেনা ফল পেকে গেলে ফ্রিজে রেখে দিলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। বেশি পাকা ফল ফ্রিজের আলাদা ড্রয়ারে কিংবা কাগজের প্যাকেটে রাখলে সেগুলোর আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় থাকে। ফলে সেগুলো বেশ কিছুদিন খাদ্যোপযোগী থাকে।