কিডনি রোগী কি দুধ খেতে পারবে?
কিডনি রোগ হল একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যেখানে কিডনি রক্ত পরিশোধন, বর্জ্য নিষ্কাশন, তরলের ভারসাম্য রক্ষা এবং জরুরী হরমোন উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সঠিকভাবে করতে পারে না।
দুঃখজনকভাবে, কিডনি রোগ বাড়ছে এবং এখন জনস্বাস্থ্যের একটি উদ্বেগের বিষয়। যখন কিডনি রোগ আছে, তখন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টিকর এবং কিডনি-বান্ধব খাবারের পাশাপাশি কিছু খাবার সীমিত বা এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক কিডনি রোগীকেই দুধ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শোনা যায় – তারা কতটুকু এবং কী ধরণের দুধ পান করতে পারবেন।
কিডনি রোগীদের জন্য দুধের ভূমিকা
দুধ একটি সুষম খাদ্যের একটি অংশ এবং প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর একটি ভাল উৎস। যাইহোক, কিডনি রোগীদের দুধের গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করা বা কিছু পরিস্থিতিতে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন হতে পারে। কেন কিডনি রোগে দুধের গ্রহণের পরিমাণ প্রায়ই সীমিত হয় তার কারণগুলি নীচে রয়েছে:
- ফসফরাসের পরিমাণ: দুধে ফসফরাস বেশি থাকে, যা কিডনি রোগীদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। দুর্বল কিডনি রক্ত থেকে ফসফরাস ঠিকমতো ফিল্টার করতে পারে না, যার ফলে রক্তে ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে যায়। এটি হাড়ের সমস্যা, হৃদরোগ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- পটাশিয়ামের পরিমাণ: দুধে পটাশিয়ামও বেশি থাকে, যাও আবার কিডনি রোগীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। রক্তে উচ্চ পটাশিয়ামের মাত্রা হৃদরোগের জন্য একটি ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
- প্রোটিনের পরিমাণ: যদিও প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ, কিডনি রোগীদের প্রোটিনের গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন হতে পারে। খাদ্য থেকে প্রোটিন বিপাক করার সময়, কিডনি বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে যা দুর্বল কিডনি ঠিকমতো ফিল্টার করতে পারে না।
কিডনি রোগীদের কী করা উচিত?
আপনার কিডনি রোগ থাকলে, আপনি দুধ পান করতে পারবেন কিনা এবং কতটুকু নিরাপদ, তা নির্ধারণ করতে ডাক্তার বা নিবন্ধিত পুষ্টিবিদের (Registered Dietician) সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যের প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতভাবে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন।
কিডনি রোগীদের জন্য কম ফসফরাসের দুধের বিকল্প
চালের দুধ, বাদামের দুধ, এবং সোয়ার দুধের মতো কিছু গাছ-ভিত্তিক দুধের বিকল্প কম ফসফরাসযুক্ত। যদিও এগুলোর সাথে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, কিছু বাদামের দুধে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশী থাকতে পারে, যা কিছু কিডনি রোগীর জন্য আবার ঝুঁকি হতে পারে। সে কারণে নিজের কিডনি রোগের তীব্রতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী দুধের বিকল্প নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনি রোগীদের দুধ গ্রহণ
কিডনি রোগীদের জন্য দুধ গ্রহণ একটি জটিল বিষয়। দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে, এতে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামও থাকে, যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য দুধ গ্রহণ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা নিম্নরূপ
সীমিত পরিমাণ
- দুধ পান করার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আপনার কিডনি রোগের তীব্রতা অনুযায়ী দুধ পানের নিরাপদ পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন।
- সাধারণত, কিডনি রোগীদের প্রতিদিন ১-২ কাপের বেশি দুধ পান করা উচিত নয়।
প্রাণীজ প্রোটিনের পরিবর্তে
- দুধকে প্রধান প্রোটিন উৎস হিসেবে ব্যবহার না করাই ভালো।
- এর পরিবর্তে, স্বল্প-সোডিয়াম প্রোটিন উৎস, যেমন মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, ডাল ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত।
- দুধকে এই প্রোটিন উৎসগুলির সাথে পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ক্যালসিয়ামের অন্যান্য উৎস
- শক্ত হাড় বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।
- দুধ ছাড়াও, অনেক খাবার থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব।
- কিডনি রোগীদের জন্য ক্যালসিয়ামের ভালো উৎসগুলির মধ্যে রয়েছেI
- পাতাযুক্ত সবজি (যেমন, পালং শাক, লাউ শাক)
- ছোট মাছ (যেমন, পুঁটি, বেলে)
- বাদাম (যেমন, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম)
- ডাল (যেমন, মুগ ডাল, মসুর ডাল)
- একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আপনার জন্য উপযুক্ত ক্যালসিয়ামের উৎস নির্ধারণে সাহায্য করতে পারবেন।
ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মাত্রা
- কিডনি রোগীদের দুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মাত্রার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
- উচ্চ ফসফরাসের মাত্রা রক্তে ফসফরাসের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যা হাড়ের সমস্যা, হৃদরোগ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
- উচ্চ পটাশিয়ামের মাত্রা রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যা হৃৎস্পন্দনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- কিডনি রোগীদের জন্য নিম্ন-ফসফরাস এবং নিম্ন-পটাশিয়ামযুক্ত দুধের বিকল্পগুলি বাজারে পাওয়া যায়।
- একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আপনাকে এই দিকনির্দেশনা অনুসরণে সাহায্য করতে পারেন।
দুধের বিকল্প
- চালের দুধ, বাদামের দুধ এবং সোয়ার দুধের মতো কিছু গাছ-ভিত্তিক দুধের বিকল্প কম ফসফরাসযুক্ত।
- এই বিকল্পগুলি কিডনি রোগীদের জন্য ভালো হতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলোতে আবার ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম বা পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকতে পারে।
- তাই, আপনার জন্য উপযুক্ত দুধের বিকল্প নির্বাচনে একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত টিপস
- দুধের সাথে অন্যান্য খাবার গ্রহণ: দুধ পানের সাথে অন্যান্য খাবার গ্রহণ করা ফসফরাস শোষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ফসফেট বাইন্ডার: কিছু কিডনি রোগীকে ফসফরাস শোষণ কমাতে ফসফেট বাইন্ডার নিতে বলা হতে পারে।
- রক্ত পরীক্ষা: ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য এবং আপনার খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।
উপসংহার
কিডনি রোগী কি দুধ খেতে পারবে এবং কতটুকু খেতে পারবে তা ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হয়। কিডনি রোগের তীব্রতা, রক্তের ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মাত্রা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে একজন ডাক্তার বা নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ব্যক্তিগতভাবে সঠিক খাদ্য পরামর্শ দিতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- কিডনি রোগ হলে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সীমিত করতে হতে পারে।
- কিডনি রোগ থাকলে সকল ওষুধ বা ভেষজ সপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত তথ্যের জন্য নিম্নলিখিত ওয়েবসাইটগুলি দেখুন
- বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন: https://bkfbd.org/
- ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন: https://www.kidney.org/atoz