দেশি মুরগির উপকারিতা, অপকারিতা এবং চেনার উপায়
আমাদের সমাজের মধ্যে আমিষ এবং নিরামিষ উভয় খাবার খেতে ভালোবাসেন এরকম মানুষ অনেক আছে। বেশ কিছু লোক ডায়েট এর জন্য কেবল শাক, সবজি, ফল ইত্যাদি খান। আবার বেশ কিছু লোক শাক-সবজির সাথে মাংসও খেতে পছন্দ করেন।
মুরগির মাংস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো একটি ডায়েট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কারণ মুরগির মাংসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান। যেটা আমাদের স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধানের করতে সাহায্য করে।
দেশি মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতা
মুরগির মাংস খেতে আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই ভালোবাসি। মুরগির মাংস যেমন দামে সস্তা তেমন খেতেও সুস্বাদু। মুরগির মাংস আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম উপকার করে। যেমন- মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ইত্যাদি।
মুরগির মাংস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
চিকেন আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করার সাথে সাথে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বেশ কিছু বিজ্ঞানী বলেছেন যে কিছু প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া মুরগির মধ্যে উপস্থিত থাকে,
যা দেহের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে। তাই যেসব ব্যক্তিদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে বা দুর্বল আছে, সেই সব ব্যক্তিরা তাদের খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে একদিন মুরগির মাংস রাখা উচিত।
মুরগির মাংস ত্বকের জন্য উপকারী
মুরগির মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, খাদ্য শক্তি, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী উপাদান। এছাড়াও এটি চুলকানি, ত্বকে লাল ভাবের মত ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সানবার্ন এবং অ্যাংলিং হওয়া প্রতিরোধ করতে মুরগির মাংস সাহায্য করে। তাই মুরগির মাংস আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী একটি উপাদান।
মুরগির মাংস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মুরগির মাংসের গসিপাল নামক একটি উপাদান আছে। মুরগির মাংস স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
মুরগির মাংস হার্টকে সুস্থ রাখে
মুরগির মাংস হোমোকিস্টাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাস্কুলার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। হোমোকিস্টাইনের হল একপ্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড উচ্চমাত্রায় এটি হাটের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মুরগির মাংস বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করে
মুরগির মাংসের মধ্যে আছে উচ্চ মাত্রায় ট্রাইফটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। এর ফলে এক বাটি চিকেন স্যুপ স্বস্তি এনে দিতে পারে আপনাকে। আপনার যদি বিষণ্নবোধ হল তাহলে কয়েকটি চিকেন উইংস খাওয়া যেতে পারে। যা মস্তিষ্কে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়াবে এবং চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
মুরগির মাংস ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে
প্রায়শই লোকেরা শীতকালে মুরগির স্যুপ পান করে থাকেন। মুরগি মাংসর স্যুপ পান করার ফলে শরীরে উষ্ণতা তৈরি হয় এবং যা আমাদের শরীর থেকে ঠান্ডা হ্রাস করতে সাহায্য করে। যদি কোন ব্যক্তি সর্দির সমস্যায় পড়ে থাকে তবে সে মুরগির স্যুপ খেতে পারে।
মুরগির মাংস হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে
বয়স্ক ব্যক্তিদের আর্থ্রাইটিট এবং হাড় সংক্রান্ত অন্য যেকোনো রোগের আশঙ্কা বেশি থেকে থাকে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই। তারা যদি তাদের খাদ্য তালিকায় মুরগির মাংস রাখে তাহলে তাদের শরীরে মুরগির মাংসের মধ্যে থাকা প্রোটিন হাড় ক্ষয় রোধ করবে।
মুরগির মাংস হার্টের জন্য উপকারী
হার্ট হল আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গ যা আমাদের পুরো শরীরে রক্ত প্রবাহ তৈরি করতে সাহায্য করে। হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। মুরগির মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন সি। যেটা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অল্প তেলে মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়ায় কোন ক্ষতি করে না। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্যাট এবং তেল যুক্ত মুরগি স্বাস্থ্য এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
মুরগির মাংস রক্তাল্পতাই উপকারী
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা একটি আয়রন ঘাটতি জনিত সমস্যা। যা একটি মারাত্মক রোগে পরিণত হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে মুরগির মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। তাই রক্তাল্পতায় ভোগা রোগীদের জন্য মুরগির মাংস খাওয়া উপকারী।
মুরগির মাংস হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
মুরগির মাংসের মধ্যে আছে ভিটামিন বি ৬ যা আমাদের শরীরে বিপাকের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। যা আমাদের শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে দেয় না এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। রক্তনালী সঠিক রাখতেও সাহায্য করে এটি।
মুরগির মাংস চোখ ভালো রাখে
অন্যান্য খাবার গুলোর মতোই মুরগির মাংস চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। মুরগির মাংসের মধ্যে আছে আলফা, রেটিনল, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন এগুলো সবই ভিটামিন এ এর মধ্যে পাওয়া যায়। যা চোখ খেয়ে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
দেশি মুরগির মাংসের অপকারিতা
দেশি মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতার সাথে এর কয়েকটি অপকারিতাও রয়েছে চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা গুলো।
- মুরগিকে অনেক সময় বেশি তাড়াতাড়ি বড় করার জন্য হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। মুরগির মাংসের মধ্যে থাকা এসব হরমোন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- মুরগির মাংসের মধ্যে বিষাক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। যা আমাদের মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। হরমোন এবং অন্যান্য বিভিন্ন রকম ওষুধ ব্যবহার করার ফলে মুরগির মাংসের আর্সেনিক পাওয়া যায়।
- অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত বিধি পাওয়ার জন্য সাধারণ মানব শরীরে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় সেই সব অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির শরীরেও দেওয়া হয়। এই সব মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই মুরগির মাংস কেনার আগে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করে তারপরে মুরগির মাংস কিনবেন।
- অতিরিক্ত মাত্রায় তেল এবং ফ্যাট যুক্ত মুরগি খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
- ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় মুরগির মাংস খাওয়া উচিত নয়।
- বেশি তাপে মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়ার ফলে ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
দেশি মুরগি চেনার উপায়
- দেশি মুরগির মাংস হালকা বাদামি বণের হয়।
- দেশি মুরগির মাথার ঝুটি গাঢ় লাল থাকে, হালকা হয়না।
- দেশি মুরগির পা মসৃণ হয় না। তবে শুধু মুরগির পা দেখে দেখে দেশি মুরগি চেনার চেষ্টা করাটা বোকামি কারন দেশি ও পাকিস্তানি উভয় ধরনের মুরগিরই হলুদ ও সাদা পা হয়ে থাকে।
দেশি মুরগি রান্না প্রয়োজনীয় উপকরণ
৬৫০ গ্রাম মুরগি
১ কাপ পরিমান পেয়াজ
২ টি মাঝারি সাইজের আলু
১ টি মাঝারি সাইজের টমেটো কিউব
৩ টেবিল চামচ সয়াবিন তেল
১ চা চামচ হলুদের গুড়া
১ চা চামচ লাল মরিচের গুড়া
১ চা চামচ ধনিয়া গুড়া
১ চা চামচ জিরার গুড়া
১/২ চা চামচ টালা জিরার গুড়া
৫/৬ টি কাচা মরিচ
১.৫ চামচ আদা বাটা
১.৫ চামচ রসুন বাটা
১ চা চামচ লবন
২ টি করে এলাচ , দারুচিনি, তেজপাতা
প্রস্তত প্রণালি
- প্রথমেই একটি গরম প্যানে তেল নিয়ে কিছুক্ষন গরম করে নিবো। এরপর এতে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা দিয়ে বুদবুদ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো, যখন বুদবুদ আসা শুরু করবে তখন এর মধ্যে পেঁয়াজ দিয়ে দিবো। পেঁয়াজ হালকা বাদামী হয়ে আসলে এর মধ্যে ট্মেটো ও আদা রসুন বাটা দিয়ে দিবো, খেয়াল রাখতে হবে আদা ও রসুন যেন আগে থেকে বাটা না হয়, রান্নার আগে কিছু পরিমাণ আদা, রসুন বেটে নিলে খুবই দারুন স্বাদ হয়।
- বেশ কিছুক্ষণ এই মশলা কষিয়ে নিতে হবে যাতে এর কাচা গন্ধ না থাকে প্রয়জোনে সামান্য পানি এড করে দিতে পারেন। এরপর এতে এক এক করে লবন, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া ও জিরার গুড়া দিয়ে অল্প একটু পানি দিয়ে কিছুক্ষন কষিয়ে নিবো। ৫/৭ মিনিট পরে এর মধ্যে মুরগির পিসগুলো দিয়ে দিবো এবং ১০ মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে সিদ্ধ করবো।
- ১০ মিনিট পর দেখা যাবে যে মুরগি থেকে পানি বের হয়েছে এই পর্যায়ে হালকা নাড়া দিয়ে কি পরিমাণ ঝোল রাখতে চান তার উপর চিন্তা করে পানি এড করতে হবে আমি ১.৫ কাপ গরম পানি দিয়ে দিলাম , আবারো ঢাকনা দিয়ে ৭/৮ মিনিট সিদ্ধ করে নিবো। মাঝে একে হালকা নেড়ে দিতে হবে ও কয়েকটি কাচা মরিচ মাঝে ভেঙ্গে দিয়ে দিবো।
- যখন দেখবো মুরগি প্রায় ৭৫% এর মতো সিদ্ধ হয়ে গেছে তখন এতে আলু দিয়ে আবারো ঢেকে দিয়ে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করবো। এরপর যখন দেখবো আলু সিদ্ধ হয়ে আসছে তখন এতে সামান্য টালা জিরার গুড়া দিয়ে দিবো এবং ৫ মিনিট পর চুলা থেকে নামিয়ে ফেলবো। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলো দেশি স্বাদে আলু দিয়ে মুরগির ঝোল। একে গরম গরম পরিবেশণ করুন।
দেশি মুরগির বৈশিষ্ট্য
দেশি মুরগি মাংস এবং ডিম অন্য জাতের তুলনায় স্বাদযুক্ত এবং বেশি মজাদার বলে দাবি করা হয়। সুতরাং, তাদের কম বৃদ্ধি এবং ছোট আকার সত্ত্বেও, দেশি মুরগী পালন করা ব্যয়বহুল। দেশি মুরগি ১ বছরে ৩০-৪০ টি ডিম দিয়ে থাকে। তাদের ডিম অন্য মুরগি ডিমগুলি থেকে ছোট। তবুও তাদের ডিম ও মাংশের দাম বেশি।
কম টাকা ইনভেস্ট করে বেশি আয় করতে পারবেন। লেখাপড়া বা যে কোন চাকরি করার পাশা পাশি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলা যায় এই দেশি মুরগির খামার। দেশি মুরগির রোগ বালাই ও কম তাই এটি পালনে তেমন কোন ঝুঁকি নেই। কিছু বিষয়ে ধারণা থাকলে সমস্যা বা রোগ বালাই দমন করা যায়।
দেশি মুরগির খাবারঃ বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া ভাত, তরকারি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায় এবং কিছু কেনা খাবার দিতে হয়। কারণ এতে মুরগির বিভিন্ন পুষ্টি পূরণ হয় এবং তারা সুস্থ্য থাকে।