ভিটামিন ই- এর উপকারিতা, অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
স্বাস্থবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ভিটামি-ই সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে এই ভিটামিন পেতে চাইলে রয়েছে অসংখ্য খাবার যেমন সয়া, অলিভ অয়েল, ভুট্টা ইত্যাদি।
ভিটামিন ই কি
ভিটামিন ই হলো এক ধরণের অত্যাবশকীয় ভিটামিন যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি চর্বিতে মিশে যেতে পারে। নানা রকমের খাবারে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। এসব খাবারের ভিতরে রয়েছে ভোজ্য তেল, মাছ-মাংস, ডিম এবং নানা রকমের ফল-মুল।
ভিটামিন ই এর উপকারিতা
ভিটামিন ই এর বেশ কয়েকটা উপকারিতা রয়েছে চলুন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা সমূহ।
- বয়সের ছাপ দূর করা: কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।
- অকালে পাকা চুল: চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুল পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’তে ভরপুর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি সহায়ক, যা শরীরে তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া-নাষক অ্যান্টিবডি।
- ক্ষত সারাতে: বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে এর রয়েছে নানান উপকারীতা। এরমধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ড: কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে শরীরে চাই অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা মেলে ভিটামিন-ই থেকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের জন্য ক্ষতিকারক মুক্তমৌলের সঙ্গে লড়াই করে। দূষণ এবং ধূপমান থেকে শরীরে মুক্তমৌল তৈরি হয়।
ভিটামিন ই এর অপকারিতা
যে ভিটামিন ই এর পরিমাণ আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে, সেই ভিটামিন ই এর অত্যধিক পরিমাণ আমাদের দেহকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেও পারে।
প্রয়োজনের থেকে বেশি এটি খাওয়া হলে, এটি শরীরের মধ্যে জমা হতে শুরু হয়। কারণ এটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয়।এটি কে মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করা যাবে না।
এটি ধীরে ধীরে শরীরে একটি বৃহৎ স্তরের সংশ্লেষ পায় এবং খাদ্যদ্রব্যর মাধ্যমে এই ভিটামিন সাধারণ ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু যখন আপনি এটিকে একটি খাদ্যতালিকা গত সম্পূরক মাধ্যমে গ্রহণ করেন, তখন এটি অনেক সমস্যা তৈরী করতে পারে।
অত্যধিক ভিটামিন ই থেকে উৎপন্ন অসুবিধাগুলি রক্ত জমাট এবং ক্লান্তির চিহ্নগুলি দেখায়। ভিটামিন ই অভাবের কারণে আপনি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা, কঙ্কাল মায়োপ্যাথি, অ্যাটাক্সিয়া, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি, ইমিউন প্রতিক্রিয়া এবং নার্ভ ক্ষতির অনেক ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যা ভিটামিন ই এর অভাবকে নির্দেশ করে।
তাই যখনই আপনি ভিটামিন ই খেতে চান, এটি শুধুমাত্র একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করুন। তাহলে আপনি কোন ধরনের কষ্টের সম্মুখীন হবেন না।
ভিটামিন ই ত্বকের কী কী উপকার করে
- ভিটামিন ই-এ আছে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট উপাদান। যা ত্বকের নানা সমস্যাই সমাধান করে। ভিটামিন ই-এর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট গুণের কথা একাধিক গবেষণাতেও উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান ডার্মাটোলজি অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এই গুণের উল্লেখ রয়েছে।
- ভিটামিন ই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই এই শীতে ভিটামিন ই প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য় করে। মুখে সহজেই বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। কারণ, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস।
- ভিটামিন ই-এর ব্যবহারে ত্বক থাকে নরম। তাই নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহার করতে পারেন।
ভিটামিন ই এর উৎস
আমাদের প্রতিদিনের নানা রকম খাবারই আমাদের ভিটামিন ই এর সবচেয়ে বড় উৎস। যেমনঃ বিভিন্ন রকম ভোজ্যতেল। এর ভিতরে রয়েছে সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, বাদাম তেল।
ফল এর মাঝে আমলকী, আম, এভোকাডো, বিভিন্ন রকমের বাদাম ইত্যাদি ফলে অত্যাধিক পরিমানে ভিটামিন ই আছে। সবজির ভিতরে কুমড়ো, পালং শাক, বিট ইত্যাদি উৎস হিসেবে বিবেচ্য। এছাড়া বিভিন্ন শারিরীক সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন ই ট্যাবলেট অথবা সাপ্লিমেন্ট নেওয়া হয়ে থাকে।
ভিটামিন ই ঘাটতি বুঝার উপায়
আগেই বলা হয়েছে ভিটামিন ই চর্বিতে মিশতে পারে৷ এবং আমাদের শরীরে গ্রহণের এটিই একটি উপায়। যাদের শরীর চর্বি শোষণ করতে পারে না দেখা যায় তারা এই ভিটামিন ও শরীরে নিতে পারে না। আবার জিনগত সমস্যার কারনেও এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়৷ এর কিছু লক্ষণ আছেঃ
- রেটিনোপ্যাথি বা চোখের রেটিনায় সংক্রমন
- পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি অর্থাৎ পেরিফেরাল বা সহায়ক নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষয়। যার ফলে হাত ও পায়ের পেশিতে ব্যাথা অনুভুত হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াএটাক্সিয়া বা চলাফেরা, নড়াচড়ায় নিয়ন্ত্রন না থাকা।
ভিটামিন ই এর কাজ কি
ভিটামিন ই একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন এবং মানবদেহ দ্বারা ব্যবহৃত একমাত্র আলফা-টোকোফেরল। ভিটামিন ই এর প্রধান কাজ হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করা।
এটি মুক্ত র্যাডিকেলগুলিকে ধ্বংস করে যা কোষের ক্ষতি করে, ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং হার্টের ধমনীতে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
ভিটামিন ই কেমন ভাবে কাজ করে
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সঠিক ভাবে কাজ করানোর জন্য ভিটামিন ই এর প্রয়োজন হয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও কাজ করে, ফলে কোশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
জেনেটিক মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার, যা অ্যাটাক্সিয়া নামে পরিচিত, শরীরে ভীষণ রকমের ভিটামিন ই এর অভাব তৈরি করে। এর চিকিৎসায় ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
শরীরে কোনো কারনে ভিটামিন ই এর অভাব তৈরি হলে, তখন ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট এর ট্যাবলেট কজেতে দেওয়া হয়।
ভিটামিন ই খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থা — প্রেগন্যান্সির প্রথম আট সপ্তাহে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ই গ্রহন করা উচিত নয়। যদিও প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে এটি একদম সেফ যদি দৈনিক 1000 m.g পরিমানে গ্রহণ করা হয় ১৮ বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রে।
ব্রেস্ট ফিডিং — যেসব মায়েরা শিশুদের স্তন দুগ্ধ পান করাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই খাওয়া একদম নিরাপদ, যদি তা দৈনিক 1000 m.g পরিমানে খাওয়া হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে — ভিটামিন ই শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত নিরাপদ, যদি তা সঠিক পরিমানে খাওয়া যায়। ১ থেকে ৩ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে 300 IU, ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে 450 IU, ৯ থেকে ১৩ বছরের বয়সীদের ক্ষেত্রে 900 IU, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে 1200 IU হল সঠিক পরিমান।
প্রিম্যাচিওর ইনফ্যান্ট দের ক্ষেত্রে ইন্ট্রাভেনাস ভিটামিন ই ক্ষতিকর এবং দৈনিক পরিমানের থেকে বেশি খেলে তাও ক্ষতিকর।
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি — অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির ঠিক আগে এবং পরে ভিটামিন ই এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন যেমন, ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। তা দ্রুত সুস্থতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ব্লিডিং ডিসঅর্ডার থাকলে ভিটামিন ই গ্রহন করা যাবে না।
ডায়াবেটিস থাকলে এবং তার সাথে ভিটামিন ই খেলে তা হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রতিদিন 400 IU এর বেশি ভিটামিন ই খাওয়া যাবে না।
হেড, নেক ক্যান্সার থাকলে ভিটামিন ই প্রতিদিন 400 IU এর বেশি খাওয়া যাবে না। এর বেশি খেলে ক্যান্সার আবার গিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
One Comment