টক দই খাবার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাবার নিয়ম
পৃথিবীতে বেশ কিছু খাদ্য আছে, যা একই সাথে শত গুণের আধার। তেমনই একটা খাদ্য হচ্ছে ‘টক দই’। এই টক দই আমাদের শরীরের জন্য নানা ধরনের কাজ করে থাকে। নিয়মিত টক দই খেলে তা দেহকে নানাভাবে উপকার করে।
টক দইয়ে আছে আমিষ, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি। টক দইয়ে থাকে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া যা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। এতে দুধের চেয়েও বেশী ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও পটাশ আছে নিয়মিত টক দই খাওয়া শুরু করলে তার ফল পাওয়া যায় তড়িৎ গতিতে।
সেকারণ ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা সবসময়ই টক দই খেতে পরামর্শ দেন। বাইরের দেশগুলোতে যেমন ভারত বা পাকিস্তানে খাওয়ার পর টক দই খাওয়ার নিয়মটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
টক দইয়ের পুষ্টিগুণ
টক দইয়ের পুষ্টিগুণ এবং আমাদের দৈনিক চাহিদা পূরণের শতকরা হার সম্পর্কে একটি সারণি:
টক দইয়ের পুষ্টিকর উপাদান এবং দৈনিক চাহিদা পূরণের হার
পুষ্টি উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রাম টক দইয়ে পরিমাণ | দৈনিক চাহিদার শতকরা হার* |
---|---|---|
ক্যালসিয়াম | ১২৫ মিলিগ্রাম | ১৩% |
প্রোটিন | ৩.৫ গ্রাম | ৭% |
ভিটামিন বি১২ | ০.৪ মাইক্রোগ্রাম | ১৬% |
ভিটামিন ডি | – | – |
পটাশিয়াম | ১৫৫ মিলিগ্রাম | ৪% |
দৈনিক চাহিদার শতকরা হার একজন প্রাপ্তবয়স্কের গড় প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
টক দইয়ের গুরুত্ব
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ: টক দই ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস, যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
- প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া: টক দইয়ে “ভালো” ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিক থাকে যা হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- প্রোটিনের উৎস: টক দই প্রোটিনের একটি ভালো উৎস যা পেশী তৈরি ও মেরামতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- টক দইয়ে চর্বির পরিমাণ দুধের ধরনের (পূর্ণ চর্বিযুক্ত, কম চর্বিযুক্ত ইত্যাদি) উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
- দইয়ে প্রাকৃতিকভাবে কিছু শর্করা থাকে। বাড়তি চিনিযুক্ত টক দই এড়িয়ে চলা ভালো।
- ভিটামিন ডি এর পরিমাণ খুবই নগণ্য।
টক দই এর উপকারিতা
টক দই এর অনেক অনেক উপকার রয়েছে। চলুন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা গুলো
- এতে আছে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক। মহিলাদের টক দই বেশী প্রয়োজন, কেননা তারাই ক্যালসিয়ামের অভাবে বেশী ভোগেন।
- টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত উপকারী। এটা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ঠান্ডা, সর্দি, জ্বরকে দূরে রাখে।
- টক দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে। এটি কোলন ক্যান্সার রোগীদের খাদ্য হিসাবে উপকারী।
- যারা দুধ খেতে পারেন না বা দুধ যাদের হজম হয় না, তারা অনায়াসেই টক দই খেতে পারেন। কারণ টক দইয়ের আমিষ দুধের চেয়ে সহজপাচ্য। ফলে স্বল্প সময়ে হজম হয়।
- টক দই ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এর আমিষের জন্য পেট ভরা বোধ হয় ও শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করতে ইচ্ছে করে না। আর অতিরিক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ হ’লে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
- টক দই শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন মাত্র এক কাপ করে টক দই খেলে উচ্চ রক্তচাপ প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে যায় এবং স্বাভাবিক হয়ে আসে। এছাড়া এটি রক্তের খারাপ কোলেষ্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে দেয়।
- হার্টের অসুখ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা টক দই খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- টক দই শরীরে টক্সিন জমতে দেয় না। ফলে অন্ত্রনালী পরিস্কার থাকে। যা শরীরকে সুস্থ রাখে ও বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে।
- নিয়মিত টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
টক দই এর অপকারিতা
- দইয়ের প্রভাব ঠান্ডা করা, এক্ষেত্রে এটি খেয়ে আপনাকে কাশি বা সর্দির সম্মুখীন হতে হতে পারে।
- আয়ুর্বেদ অনুসারে, দই কাশির দোষ বাড়ায়। তাই এটি হাঁপানি, সাইনাস কনজেশন বা সর্দি এবং কাশির মতো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাযুক্ত লোকদের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে।
- এছাড়াও এটি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
ঘরে কিভাবে টক দই তৈরী করা যায়
এক লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে। এবার ছয়/সাত চামচ টকদই-এর ভিতর দিয়ে ভাল করে ঘেঁটে দিতে হবে।
তারপর মাটির পাত্রে দুধটা ঢেলে সাত আট ঘন্টা রেখে দিলেই টক দই তৈরী হয়ে যাবে। ফ্রিজে দই পাতা যায় না। কারণ ফ্রিজে ব্যাকটেরিয়া কাজ করে না।
টক দই কখন খাওয়া ভালো
অনেকেই দুপুরে খাওয়ার পর টক দই খান। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, দিনের বেলা দই খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। এবং খাওয়ার পরেই খেতে পারেন দই। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি দিনের দু’টি খাবারের মাঝে দই খাওয়া যায়।
টক দই কেন খাবেন
টক দইয়ে রয়েছে প্রো-বায়োটিক উপাদান, উপকারী ব্যাক্টেরিয়া। যেগুলি শরীরের ক্ষতিকার ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এ ছাড়াও ভিটামিন এ, বি ৬, বি ফ্যাট, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস-সহ নানা পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর টক দই। এছাড়াও এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা পুষ্টির শোষণে সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, দিনের বেলা দই খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। এবং খাওয়ার পরেই খেতে পারেন দই।
টক দই দিয়ে রূপচর্চা
যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মধু নিতে পারেন। ৩ চামচ টক দই, আধা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ চামচ বেসন মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে লাগান, ত্বক ফর্সা হবে। স্টবেরি ফল ২ টি এবং ৫ চামচ টক দই ব্লেন্ড করে মুখে মাস্ক হিসেবে লাগান।
ত্বক অনেক ফ্রেশ হবে, ত্বকের কোলাজেন এর সমতা রাখবে, ব্রণ এবং ত্বকের দাগ দূর করবে, বলিরেখা কমাবে।
১ কেজি টক দই এর দাম কত
সাধারন সময়ে দাম পড়বে প্রতি কেজি ১৪০-২২০ টাকা।
টক দই সংরক্ষণ নিয়ম
১ ডিগ্রি তাপমাত্রা দুধ রাখার জন্য উপযুক্ত। তবে খাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে তা বের করে নিতে হবে। এতে দুধের গুণগত মান নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য টক দই ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে।
দই প্যাকেজিং-এ উল্লিখিত মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি কেবলমাত্র খোলা না হওয়া প্যাকেজের পণ্যগুলির জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে প্রিজারভেটিভ ধারণকারী দই প্রায় যেকোনো অবস্থাতেই সংরক্ষণ করা যায়, এমনকি ঘরের তাপমাত্রায়ও তাপের উৎসের কাছে এবং সরাসরি সূর্যালোকের প্রভাবে খাদ্য সংরক্ষণ না করা গুরুত্বপূর্ণ
প্রাকৃতিক দই শুধুমাত্র ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পার
- দই সহ একটি পাত্রে হিমায়িত করা যেতে পারে এই পদ্ধতিটি প্রায়শই “বাড়িতে তৈরি” আইসক্রিম তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাবে, দইয়ের পুষ্টিগুণ এবং স্বাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় না।
- আপনি আবার দই জমা এবং গলাতে পারবেন না পণ্যের সামঞ্জস্য নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে, এবং স্বাদ খারাপ হবে।
- কাঁচের জারে রেফ্রিজারেটরে দই সংরক্ষণ করা ভাল কার্ডবোর্ডের প্যাকেজে, পণ্যটি আরও খারাপ হবে।
- লাইভ দই ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে না যেমন একটি পণ্য শুধুমাত্র ঠান্ডা বা হিমায়িত করা উচিত।
- যদি তরল দই থেকে আলাদা হয়ে যায়, তবে পণ্যটি খারাপ হতে শুরু করে এবং আপনার এটি খাওয়া উচিত নয়।
- দই কেনার পরে, আপনার এটি ঘরের তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত নয় এবং তারপরে এটি ফ্রিজে রাখুন পণ্যটি অবশ্যই ফ্রিজে রাখতে হবে, অন্যথায় তাপমাত্রার ড্রপগুলি তার শেলফ লাইফকে ছোট করতে পারে।
- যদি পাত্র না থাকে, তাহলে ফয়েল দিয়ে দইয়ের জারটি সিল করা ভাল এই ক্ষেত্রে পলিথিন সুপারিশ করা হয় না।
- যদি দই দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সিল করা প্যাকেজে সংরক্ষণ করা হয়, তবে এটি বেকিং বা ডেজার্টের জন্য অতিরিক্ত উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা ভাল যদি পণ্যটি নষ্ট হওয়ার লক্ষণ না থাকে যদি দইয়ের পৃষ্ঠে একটি ফলক দেখা যায়, তাহলে পণ্যটি নষ্ট হয়ে গেছে, এবং ছাঁচটি সরানোর সময় তাজা মনে হলেও আপনি এটি খেতে পারবেন না।
- তাপ-চিকিত্সা করা দইগুলি তাপমাত্রার অবস্থা এবং তাদের পরিবর্তনের জন্য খুব বেশি ।
- সংবেদনশীল নয় প্রাকৃতিক পণ্যগুলির তুলনায় এই জাতীয় পণ্যগুলিতে অনেক কম পুষ্টি রয়েছে, তাই সেগুলি কেনার সময় এই সংক্ষিপ্ততা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
- হিমায়িত দই কয়েক মাসের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে।