ভাত খাবার উপকারিতা, অপকারিতা এবং রান্নার নিয়ম
ভাত বা অন্ন চালকে জলে সেদ্ধ করে তৈরি খাবার। ভাত বাংলাদেশের ও ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রধান খাদ্য। এছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশে ভাত খাওয়ার চল রয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও চীন জাপান ও কোরিয়ায় ভাত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে স্থান ভেদে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন রকম ভাত খাওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ ঝরঝরে ভাত খাওয়া হয়। কিন্তু চীন জাপান ও কোরিয়ায় আঠালো ভাব খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
ভাত খাওয়ার উপকারিতা
মাছে ভাতে বাঙালি। তিন বেলা ভাত না খেলে আমাদের পেট যেন ভরেই না। এত ভাত খাওয়া কি শরীরের জন্য ভালো? এবিপি আনন্দের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পুরো ব্যাপারটা। চলুন দেখে নেই।
আর্সেনিক
গবেষকদের মতে, বেশি ভাত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ চাষ করার সময়ই মাটি ও পানি থেকে ধানের মধ্যে আর্সেনিক প্রবেশ করে। পরবর্তীকালে ধান থেকে চাল এবং ভাত হওয়ার সময়ও সেই আর্সেনিক থেকে যায়। এই বিষাক্ত পদার্থটি শরীরে নিয়মিত প্রবেশ করতে থাকলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
শর্করা
ভাত আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ভাত খাওয়া উচিত।
ওজন বাড়ায়
ভাতে থাকা বিপুল পরিমাণ ক্যালোরি আমাদের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই অবশ্যই পরিমাণ বুঝে ভাত খাওয়া দরকার।
ভাতে পুষ্টিমান
ভাত প্রধানত শর্করা সরবরাহ করে। তবে এতে কিছুটা আমিষও পাওয়া যায়।শর্করা ৭৯%,স্নেহ ৬%,কিছু পরিমানে আমিষ,ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।
ভাত রান্না করে মাড় বা ফেন ফেলে দিলে ভাতে স্টার্চের অংশ অনেক কমে যায়। ফলে অনেক ভাত খেয়েও মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ ধরনের ভুল ধারণা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে ফুুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গাইজেশন অফ ইউনাইটেড নেশনসর এর গবেষণা রিপোর্টসহ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, ভাতের মাড় ফেলে দিলে মাড়ের সঙ্গে শর্করাসহ ১৮ রকমের পুষ্টি উপাদান অপচয় হয়ে যায় যা বসা ভাতে বিদ্যমান থাকে।
আর এই পুুুুুষ্টি উপাদানগুলো শর্করার ক্ষতিকর প্রভাবকে অনেকটাই কমিয়ে আনে।বিজ্ঞান গবেষক গাজী রফিক ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত করা গবেষণায় দেখিয়েছেন, মাড় ফেলা পদ্ধতিতে ভাত রান্নার কারণে চাল অপচয়ের মাত্রা ১৩-১৫ শতাংশ।
এতে ৪২-৫১ লাখ টন চাল অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় বছরে ১৬৮০০-২০৪০০ কোটি টাকা গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে।
এ পদ্ধতিতে রান্নার প্রচলনকে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ অঞ্চলে জনপ্রিয় করা গেলে পুষ্টিঘাটতি দূর হওয়ার পাশাপাশি মোট জনসংখ্যার চাহিদার ১৩-১৫% সাশ্রয়ের মাধ্যমে ৪২-৫১ লাখ টন চালের অপচয় রোধ সম্ভব হবে।সেই সাথে আমদানি নির্ভরতাও কমে আসবে।
১০০ গ্রাম ভাতের পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম সাদা ভাতে পুষ্টির পরিমাণ
ক্যালোরি: ৩৫৭ কিলো ক্যালোরি
প্রোটিন: ৮ গ্রাম
ফ্যাট: ০.৫ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: ৭৮ গ্রাম
ফাইবার: ২.৮ গ্রাম
ভাত খাওয়ার অপকারিতা
১৫০ গ্রাম ভাতে ২০০ ক্যালরি থাকে। পেটে চর্বি জমার অন্যতম কারণ হিসেবেও দায়ী করা হচ্ছে ভাতকে। তাই প্রয়োজনের বেশি ভাত খাওয়ায় রাশ টানতে না পারলে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরে বাসা বাঁধবে নানান রোগ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রতিদিন সাদা ভাত খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
গবেষকরা বলছেন, ভাত থেকে মূলত যে ধরনের শর্করা তৈরি হয়, তা হলো গ্লাইকোজেন। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এ-জাতীয় শর্করার দহন হয় ও পেশি সুগঠিত হয়।
কিন্তু যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এই গ্লাইকোজেন দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, যা শরীরে জমা হতে থাকে এবং দেহের ওজন ও মেদ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রোজ ভাত খেলে এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে অনেকটাই।
এই ভয়ে অনেকেই ভাতের পরিমাণ কমিয়ে আনছেন। ভাত না খেয়ে ঝুঁকছেন রুটির দিকে। কিন্তু এতে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই। তাই ভাত খাবেন এমনভাবে, যাতে এর অপকারিতা না পেয়ে শুধু আপনি পেতে পারেন এর উপকারিতাটুকু।
ভাত রান্নার নিয়ম
চাল বেশি ধুলে ভিটামিন বি-র অনেকটা জলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কাজেই দু–এক বারের বেশি চাল ধোবেন না।
চাল ভিজিয়ে রেখে ওই জলেই কম আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। এমন মাপে পানি দিন যাতে ফ্যান ফেলতে না হয়। তাহলে ভিটামিন–মিনারেলরা ভাতের মধ্যেই থেকে যাবে। ফুটন্ত জলে ভেজানো চাল দিয়েও রাঁধতে পারেন। চাল নরম হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে ঢ়াকা দিয়ে রাখুন। বাকিটা ভাপেই হয়ে যাবে। প্রেশার কুকারেও রান্না করা যায়।
ভাপে রাখা ভাত যত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসে ততই তার মধ্যে থাকা স্টার্চ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে পরিণত হয় ও সেই ভাত খেলে অল্পেই পেট ভরে যায় বলে ওজন কমার সুরাহা হয়। কিছু ক্যানসারের আশঙ্কাও কমে, জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত
শরীর ভাল রাখতে সারা দিনে ১৫০ গ্রামের মতো ভাত খেতেই পারেন।
কোন ভাত খাওয়া ভালো
আমরা যতটা সম্ভব বাদামী চালের সাথে সাদা চাল প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দিই। আস্ত শস্য – যেমন বাদামী, বন্য, কালো বা লাল চাল – প্রতিদিন খাওয়া তৃপ্তি এবং রক্তে শর্করার ভারসাম্যকে উন্নীত করতে পারে এবং এমনকি আপনার হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আপনার আয়ু বাড়াতে পারে।
রাতে ভাত খেলে কি হয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের থেকে রাতে কম পরিমানে মুসুর ডাল ও ভাত হার্ট ও ব্লাড সুগারকে ঠিক রাখে। ভাত আমাদের অন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ভাত হজম করা সহজ, তাই এটি রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। উল্টে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ভাত খেলে কি হয়
ভাত রক্তে সুগার লেভেল দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৫০ গ্রাম ভাতে ২০০ ক্যালরি থাকে। পেটে চর্বি জমার অন্যতম কারণ হিসেবেও দায়ী করা হচ্ছে এই ভাতকে। তাই প্রয়োজনের বেশি ভাত খাওয়ায় রাশ টানতে না পারলে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরে বাসা বাঁধবে নানান রোগ।
তিন বেলা ভাত খেলে কি হয়
তিন বেলা ভাত খাওয়ার মাধ্যমেই মানুষ মোটা হয় না। মূলত মানুষ মোটা হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে শরীরের জমে থাকা ক্যালোরি। কারণ আমাদের খাবারের মাধ্যমে আমরা ক্যালরী গ্রহণ করে থাকে এবং আমরা কাজের মাধ্যমে ক্যালরি খরচ করি।