তরমুজের উপকারিতা, অপকারিতা এবং রেসিপি
তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল। ঠান্ডা তরমুজ গ্রীষ্মকালে বেশ জনপ্রিয়। এতে প্রচুর পরিমাণ জল থাকে। এই ফলে ৬% চিনি এবং ৯২% জল এবং অন্যান্য উপাদান ২%। এটি ভিটামিন এ জাতীয় ফল।
প্রত্নতাত্ত্বিক এবং প্যালেওবোটানিস্টদের মতে, তরমুজের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন জাতীয় সিট্রুলাস প্রজাতির ক্ষুদ্র বুনো প্রতিনিধিদের সাথে প্রচলিত শেকড় রয়েছে, যা এখনো দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক এবং জাম্বিয়া, নামিবিয়া এবং বোটসওয়ানা প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
এই দেশগুলিতেই তরমুজগুলির জিনগত রূপগুলির সর্বাধিক সংখ্যক প্রকাশিত হয়েছিল, এতে তিক্ত, তাজা এবং সামান্য মিষ্টি মাংসযুক্ত ফল পাওয়া যায়।
তরমুজের পুষ্টিগুণ
তরমুজের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে-
- পানি- ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম, আঁশ ০.২ গ্রাম
- আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১০ মি.গ্রাম
- আয়রণ ৭.৯ মি.গ্রাম
- কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম
- খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম
- ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম
- তাছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি-২ রয়েছে
তরমুজ: দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (প্রতি ১০০ গ্রাম)
পুষ্টি উপাদান | দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ |
---|---|
ক্যালোরি | ১.৫০% |
প্রোটিন | ১.২০% |
চর্বি | ০.৩১% |
ফাইবার | ১.৬০% |
ক্যালসিয়াম | ১.২০% |
আয়রন | ১.১১% |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩.০০% |
ফসফরাস | ১.৫৭% |
পটাশিয়াম | ৫.৭৯% |
জিঙ্ক | ১.২৫% |
ভিটামিন বি১ | ১.৬৭% |
ভিটামিন বি২ | ১.৫৪% |
ভিটামিন বি৩ | ০.৬২% |
ভিটামিন বি৬ | ৩.৫৩% |
ফোলেট | ০.৭৫% |
ভিটামিন সি | ১০.৮০% |
ভিটামিন ই | ৩.৩৩% |
ভিটামিন কে | ২.২৫% |
তরমুজ একটি সতেজ ও স্বাস্থ্যকর ফল যা ভিটামিন এবং খনিজের একটি ভালো উৎস। উপরের টেবিল থেকে দেখা যায়, তরমুজ ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস, প্রতি ১০০ গ্রাম পরিবেশনে দৈনিক প্রস্তাবিত পরিমাণের ১০% এরও বেশি সরবরাহ করে।
এটি ভিটামিন বি ৬, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামেরও একটি ভালো উৎস।
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে এই শতাংশগুলি একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। আপনার বয়স, লিঙ্গ এবং কার্যকলাপের স্তরের উপর নির্ভর করে আপনার দৈনিক চাহিদা পরিবর্তিত হতে পারে।
তরমুজের উপকারিতা
গরমে তরমুজ খাওয়া যেমন উপকারী তেমন এর দানাও পুষ্টিকর। খাওয়ার সময় তরমুজের দানা ফেলে না দিয়ে বরং জমিয়ে রাখুন। কারণ এই দানাতেও রয়েছে নানান উপকারিতা।
হেল্থশটস ডটকমে’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে নয়াদিল্লির প্রাইমাস সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুষ্টিবিদ অঙ্কিতা ঘোশাল এ বিষয়ে বলেন, তরমুজের বীজ অনেকেই ফেলে দেন। তবে এটা নানান পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
হৃদ স্বাস্থ্য
তরমুজের বীজ ম্যাগনেসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এটা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদ স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও হৃদগতির ছন্দ ধরে রাখতে এটা উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তরমুজের বীজে রয়েছে এ উপাদান। এটা সংক্রমণসহ অন্যান্য অসামঞ্জস্যতার বিরুদ্ধে কাজ করতে সহায়তা করে।
হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে
তরমুজের বীজে রয়েছে আঁশ এবং অপরিশোধিত চর্বি; যা হজমে সহায়তা করে। ফলে পেট পরিষ্কার থাকে।
ত্বক ও চুল ভালো রাখে
তরমুজের মাস্ক যেমন ত্বক সতেজ রাখে; একইভাবে এর বীজ ত্বক ও চুলের উপকার করে। তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটা প্রদাহ ও ব্রণ কমাতে পারে।
হাড়ের সুস্থতা
তরমুজের বীজে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। হাড় ছাড়াও পেশির কার্যকারিতা বাড়াতে ও স্নায়ু সচল রাখতে এটা উপকারী।
তরমুজের অপকারিতা
তরমুজ শরীরের অনিষ্ট কখনোই করতে পারে না যদি পরিমিত পরিমাণে এই ফল খাওয়া যায়। অতিরিক্ত তরমুজ খেলে বিভিন্ন ধরণের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কোন খাবারই মাত্রাধিক খেতে নেই। অমৃত বেশী খেলে যেমন গরলে পরিবর্তিত হয় তেমনই তরমুজ বেশী খেলে শরীরে নানান অসুবিধের সৃষ্টি হয়।
- অতিরিক্ত তরমুজ খেলে পাতলা পায়খানা, গ্যাস, পেট ফাঁপা ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়বে। তরমুজে সরবিটল আছে আর আছে লাইকোপিন” তরমুজের লাল রঙ লাইকোপিনের অবদান যা আমাদের পেটের সমস্যা, গ্যাস, মোশন লুজ করতে সহায়তা করে।
- অ্যালকোহলের সাথে তরমুজ বেশী পরিমাণে খেলে লিভারের সমস্যার হতে পারে। তাই অ্যালকোহল প্রেমীরা মদের সাথে তরমুজ খেতে যাবেন না। তরমুজে থাকা লাইকোপিন অ্যালকোহলের সাথে মিশে অতিরিক্ত জারণ চাপ সৃষ্টি করবে যা লিভারের পক্ষে ক্ষতিকারক।
- তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে শরীরে যদি পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে কার্ডিওভাসক্যুলার হার্ট ও রক্তবাহী শিরা সমস্যা আসতে পারে।
- যে কোন খাদ্য খাওয়ার দু ঘন্টার মধ্যে আমাদের শরীরে গ্লুকোজ লেভেলের পরিমাণ কি হবে সেটা নির্ধারণ করা হয় গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স পরীক্ষা করে । তরমুজের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৭২. সেই জন্য বহুমূত্র রোগীদের খুব বেশী মাত্রায় তরমুজ খেলে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। সুগারের রোগীদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তরমুজ খাওয়া উচিত।
- তরমুজে জলের হার ৯২% । বেশী তরমুজ খেলে শরীরে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরে বেশী জল হলে রক্তে সোডিয়াম লেভেল কমে যাবে। কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। হাত পা ফুলতে পারে, শরীর দুর্বল লাগতে পারে, ক্লান্ত লাগতে পারে।
কতটুকু তরমুজ খাবেন
সাধারণত এক বাটি তরমুজ খাওয়াই ভালো। ভারী খাবার খাওয়ার পরে তরমুজ খাবেন না
যেসব সময়ে তরমুজ খাওয়া যাবে
সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যেকোনো সময়ে তরমুজ খেতে পারেন। তবে দিনের আলো থাকতে থাকতে তরমুজ খেলে তা সহজে হজম হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে খেলে সবচেয়ে ভালো।
তরমুজের বিচির উপকারিতা
তরমুজের বিচিতে থাকা ফোলেট, লৌহ এবং খনিজ অংশ ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও তরমুজের বিচির ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এ ব্যাপারে সাহায্য করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ‘জিংক’ পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনা একটি গবেষণার মতে, জিংক পুরুষদের শুক্রাণুর মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখে
তরমুজ বিচিতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখে। এটি হৃদপিন্ডের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও তরমুজের বিচিতে স্টিরুলাইন নামে একটি পদার্থ রয়েছে যা অ্যাওর্টিক রক্তচাপ কমিয়ে হার্টকে রক্ষা করে। আর তরমুজের বিচিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং ভাসোডিলেটিরিও হার্টকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইমিউন সিস্টেম করে শক্তিশালী
তরমুজের বিচিতে থাকা ফোলেট, লৌহ এবং খনিজ অংশ ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও তরমুজের বিচির ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এ ব্যাপারে সাহায্য করে।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ‘জিংক’ পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনা একটি গবেষণার মতে, জিংক পুরুষদের শুক্রাণুর মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
তরমুজ ও এর বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ থাকে। মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের মতে, ম্যাঙ্গানিজ পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করতে অবদান রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ইরানি একটি গবেষণা বলছে, তরমুজ বিচি গ্লাইকোজেন স্টোরগুলোর সংশ্লেষণের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সহায়তা করে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বেসিক অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেসের একটি প্রতিবেদন বলছে, তরমুজের বিচির মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৬ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভীষণভাবে সহায়তা করতে পারে।
তরমুজের খোসার উপকারিতা
তরমুজের খোসায় জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকায় দেহের পানিশূন্যতা পূরণ করে, দেহকে সতেজ রাখার পাশাপাশি খাদ্য দ্রুত হজমেও সাহায্য করে। এতে ঘুম ভালো হয়।
এ ছাড়া লাইকোপেন–জাতীয় উপাদানের উপস্থিতি থাকায় তরমুজের খোসা জ্বালাপোড়া কমিয়ে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
তরমুজের খোসা দিয়ে রূপচর্চা
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী। তরমুজের খোসার সবুজ অংশ পাতলা করে কেটে নিয়ে অল্প পানিতে সেদ্ধ করে নিন। পানি ঘন হয়ে গেলে সেটি ঠান্ডা করে আপনি টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। তরমুজে যেহেতু ভিটামিন এ রয়েছে, তাই এটি আপনার চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে.
তরমুজের পুডিং
তরমুজ টুকরা করে বিচি ছাড়িয়ে নিন। ছোট ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারে দিয়ে জুস বানিয়ে নিন। ৪ কাপ তরমুজের রস মাঝারি আঁচে চুলায় বসিয়ে দিন। অনবরত নাড়তে হবে। বলক চলে আসলে স্বাদ মতো চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন।
ফুটে উঠলে আধা কাপ কর্ন ফ্লাওয়ার পানি দিয়ে মিশিয়ে অল্প অল্প করে দিয়ে দিন। এ সময় চুলার আঁচ একদম কমিয়ে রাখতে হবে। না হলে দলা বেঁধে যাবে। অনবরত নাড়তে হবে আরও কিছুক্ষণ। মিশ্রণটি ঘন ও আঠালো হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।
একটি বেকিং মোল্ডে বাটার ব্রাশ করে তরমুজের মিশ্রণ ঢেলে দিন। ঠান্ডা হওয়ার পর নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন। সারারাত রেখে পরদিন বের করে স্লাইস করে পরিবেশন করুন তরমুজের পুডিং।
তরমুজের জুস
উপকরণ
লাল তরমুজ ৪ কাপ, চিনি স্বাদমতো, পুদিনাপাতা ২০টি, পাতিলেবুর রস ১ টেবিল চামচ স্বাদমতো, ঠান্ডা পানি পরিমাণমতো ও লবণ ১ চিমটি।
প্রণালি
তরমুজ ছোট করে কেটে যতটা সম্ভব বীজ ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিলেই তরমুজের জুস তৈরি।
তরমুজের জেলি
তরমুজের রস ২ কাপ
লেবুর রস-সামান্য
চায়না গ্রাস-৫ গ্রাম
চিনি-স্বাদমতো
প্রথমে চায়না গ্রাস ভিজিয়ে নিতে হবে। এক কাপ গরম পানিতে চায়না গ্রাস ভিজিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
অন্যদিকে তরমুজ ছোট ছোট টুকরো করে জুস বানিয়ে নিন। এবার চুলায় একটি ননস্টিকি পাত্র বাসিয়ে এতে তরমুজের রস দিয়ে দিন। ফুটে উঠলে ভেজানো চায়না গ্রাসের মিশ্রণটি ঢেলে দিন। চায়না গ্রাস না গলা পর্যন্ত নাড়তে হবে।
কিছুক্ষণ পর এতে চিনি ও লেবুর রস দিয়ে দিন। ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। যেন কোনোভাবেই লেগে না যায়। ৫ মিনিট পর্যন্ত চুলায় রাখুন। এরপর আঁচ বন্ধ করে দিন। তরমুজের জেলি তৈরি হয়ে যাবে।
তরমুজের জেলি একটি কাঁচের কৌটায় ঢেলে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে ফ্রিজে রেখে দিন। কৌটার মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করুন। পাউরুটি কিংবা রুটির সঙ্গে খেতে দারুণ লাগবে তরমুজের জেলি।
তরমুজের ইতিহাস
খাদ্যে ব্যবহৃত সংস্কৃতি হিসাবে। যদি উচ্চ গ্লাইকোসাইড উপাদানযুক্ত তিক্ত উদ্ভিদগুলি যদি বিনা বাধে ফেলে রাখা হয় তবে 4,000 বছর আগে আরও ভোজ্য প্রজাতি আফ্রিকার উত্তরে এসেছিল এবং নীল উপত্যকায় বসবাসকারী লোকদের আগ্রহী ছিল।
এখান থেকে সংস্কৃতি, যেমন তরমুজের ইতিহাস বলেছে, ভূমধ্যসাগর, মধ্য প্রাচ্য এবং এর বাইরেও ভারত এবং চীন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।পশ্চিম আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাকি মিসর—কোনটি তরমুজের জন্মভূমি, সেটি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছ।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাংলা যে দেশের দ্বিতীয় অফিশিয়াল ভাষা সেটি সিয়েরালিওন। এই সিয়েরালিওন আফ্রিকার যে অঞ্চলে অবস্থিত সেই পশ্চিম আফ্রিকা তরমুজের জন্মভূমি হিসেবে বিখ্যাত—এ রকম একটি জনপ্রিয় মত চালু আছে।
তবে নাইজেরিয়া, নাইজার, সেনেগাল, আইভরি কোস্টসহ পশ্চিম আফ্রিকার ১৭টি দেশের কোনটি তরমুজের আদিভূমি, তা বলা মুশকিল। কিন্তু ইসরায়েলের গবেষক হ্যারি প্যারিস অনুমান করেছেন, প্রাচীন মিসরও তরমুজের আদিভূমি হতে পারে।
প্রাচীন মিসরীয়দের তরমুজ চাষের ছবি দেখে তিনি বলতে চেয়েছেন, মিসরীয়দের কৃষির ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো এবং এটি পশ্চিম আফ্রিকার কৃষির চেয়েও প্রাচীন। প্রাচীন মিসরের দ্বাদশ রাজবংশের রাজা আমেনমহাট–১–এর শাসন আমলে ১৯৯১-১৯৬২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তরমুজের দেখা পাওয়া যায়।