সাজনা পাতার উপকারিতা, অপকারিতা এবং রেসিপি
সজনে ডাঁটা অনেকের খুব প্রিয় একটি সবজি; বেশ কয়েকদিন ধরেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বসন্তের শেষ থেকেই সজনে ডাঁটা বাজারে ওঠতে শুরু করে। সজনের তরকারি ও সজনে-ডাল অনেকের খুব প্রিয় একটি খাবার। তা ছাড়া সজনে পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড।
সজনার পুষ্টি উপাদান
সজনার পাতার পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রাম)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক প্রয়োজনীয়তার শতকরা হার |
---|---|---|
ক্যালরি | ৯২ কিলোক্যালরি | ৫% |
প্রোটিন | ৬.৭ গ্রাম | ১৩% |
ভিটামিন এ | ১৮,৯৮৩ আইইউ | ৩৭৯% |
ভিটামিন সি | ১৭.৩ মিলিগ্রাম | ২৯% |
ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) | ০.০৫ মিলিগ্রাম | ৩% |
ক্যালসিয়াম | ৪৪০ মিলিগ্রাম | ৪৪% |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪০ মিলিগ্রাম | ১০% |
পটাশিয়াম | ৩৩৭ মিলিগ্রাম | ১০% |
আয়রন | ০.৮৫ মিলিগ্রাম | ৫% |
সজনে ডাঁটার পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রাম)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক প্রয়োজনীয়তার শতকরা হার |
---|---|---|
ক্যালরি | ৬৫ কিলোক্যালরি | ৩% |
প্রোটিন | ৯.৪ গ্রাম | ১৯% |
ভিটামিন এ | ৩,৭৮২ আইইউ | ৭৬% |
ভিটামিন সি | ৫১.৭ মিলিগ্রাম | ৮৬% |
ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) | ০.২১ মিলিগ্রাম | ১২% |
ক্যালসিয়াম | ৩২৮ মিলিগ্রাম | ৩৩% |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৪৭ মিলিগ্রাম | ৩৭% |
পটাশিয়াম | ১৩২৪ মিলিগ্রাম | ৩৮% |
আয়রন | ৫.৩ মিলিগ্রাম | ২৯% |
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- দৈনিক প্রয়োজনীয়তার শতকরা হার একটি ২০০০ ক্যালরি ডায়েটের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
- সাজনা পাতা ও সজনে ডাঁটা উভয়েই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস।
- এগুলিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।
সজনে পাতার উপকারিতা
আমাদের শরীরের উপরে সজনে পাতার উপকারিতা অনেক বেশি। সজনে পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের যদি জানা থাকে তাহলে আমরা খুব সহজেই বিভিন্ন জটিল রোগগুলো থেকে আমাদের শরীর বা দেহকে রক্ষা করতে দেয়।
তাই চলুন আজকে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক সজনে পাতার উপকারিতা গুলো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সজনে পাতার ভেতরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান , প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এ , জিংক , ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম , আয়রন ইত্যাদি থাকে ।
এক কথায় , বলতে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন সজনে পাতায় সেই সব পুষ্টি উপাদান গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে পুষ্টি চাহিদাগুলো পূরণ হয় এবং পুষ্টি ঘাটতি না থাকার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে যায়।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
সজনে পাতার ভিতরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং জিংক থাকায় এটি আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
সজনে পাতা খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে এর মাধ্যমে আমরা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী আয়রনের ঘাটতি মেটাতে পারবো এবং এর ফলে রক্তশূন্যতা হোক সহ আয়রনের ঘাটতি জনিত বিভিন্ন সমস্যা গুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে
আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সুজনে পাতা । আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের অ্যামাইনো এসিড রয়েছে এই সজনে পাতায়।
তাই সজনে পাতা খেলে এর মধ্যে থাকা অ্যামাইনো এসিড আমাদের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
লিভার ভালো রাখে
সজনে পাতায় বেশ কিছু ঔষধি উপাদান রয়েছে যেই উপাদানগুলো আমাদের যকৃত বা লিভার কে ভালো রাখতে অত্যন্ত সাহায্য করে।সজনে পাতার মধ্যে আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় সজনে পাতা লিভারের কোষগুলো সচল রাখতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া সজনে পাতার ভিতরে পলিফেনল নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যেই উপাদানটি লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে , যার ফলে লিভার সুস্থ থাকে।
অতিরিক্ত ওজন কমানো
সজনে পাতার ভেতরে থাকা উপাদানগুলো আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে, সজনে পাতা খাওয়ার ফলে আমরা খুব সহজেই আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ ও চর্বি কমিয়ে ফেলতে পারি।
তাই যারা অতিরিক্ত শারীরিক ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এবং ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন ,তারা খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা রস অথবা গুড়া যুক্ত করতে পারেন।
হার্ট ভালো রাখে
সজনে পাতা খেলে শররীরে অতিরিক্ত মেদ চর্বি থাকেনা বিধায় হার্ট এ্যটাক বা হার্টের যা কোন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।এবং হার্টে অসুখ থাকেনা বিধায় হার্ট ভাল থাকে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করে
সজনে পাতা শরীরের শর্করার মাত্রা কে বাড়তে দেয় না যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি প্রতিদিন সজনে পাতা খেতে পারে তাহলে তাদের শরীরে চিনির পরিমাণ বাড়বে না থাকবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করে
সজনে পাতার ভেতরে থাকা ঔষধি উপাদানগুলো আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীর কর্মক্ষম থাকে
সজনে পাতার ভেতরে যেহেতু শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান বিশেষ করে ভিটামিন , আইরন, ক্যালসিয়াম , জিংক ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থকে এবং সজনে পাতার ভেতরে থাকা অ্যামাইনো এসিড আমাদের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এ কারণে শরীর তার প্রয়োজনীয় শক্তি পাই ,যার ফলে শরীর দুর্বল লাগে না এবং কর্মক্ষম থাকা যায়।
হাড় মজবুত করতে
সজনে পাতার ভেতর ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের হাড় গঠনের জন্য বাহার মজবুত করার জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে এর মধ্যে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় গঠন এবং দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
বুকের দুধ বৃদ্ধি করে
বাচ্চা প্রসবের পরে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরার পাশাপাশি আরেকটি কার উপাদানের নাম হল সজনে পাতা। নিয়মিত কিছু পরিমাণ সজনে পাতা খেলে নতুন মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে এটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে কারণ সজনে পাতার ভেতরের রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সহ আরো বিভিন্ন উপাদান।
চোখের জ্যোতি বাড়াতে
আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং ভিটামিন এ অন্ধত্ব বিশেষ সাহায্যকারী আর এই ভিটামিন এ আমরা প্রচুর পরিমাণে পেতে পারি সজনে পাতার ভিতরে।
সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
শুধু সাজনা পাতার উপকারিতা জানলে চলবে না ,জানতে হবে সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও। আপনার যদি সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম জানা না থাকে তাহলে ,আপনিও জেনে নিন সাজনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা।
চলুন তাহলে আর দেরি না করে আমরা জেনে নিই সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম গুলো। সাজনা আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন যেমন – সাজনা পাতা শাক হিসেবে ভাজি করে অথবা অন্য শাকের সাথে মিশিয়ে ভেজে খেতে পারেন।
সাজনা পাতা বেটে এর সাথে বেসন বা অন্য ডাল মিশিয়ে বড়া বানিয়ে খেতে পারেন।
সজনা পাতার চা বানিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন হালকা কুসুম গরম পানিতে সজনা পাতা গুড়া এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন, এছাড়াও সাজনা পাতার গুড়া বিভিন্ন সালাত জাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। সাজনা পাতা ভর্তা এবং জুস বানিয়েও খাওয়া যায়। আশা করছি সাধনা পাতা খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
সাজনা পাতার অপকারিতা
এতক্ষণ ধরে আমরা সজনে পাতার বহু উপকারিতার কথা জেনেছি এবার আমাদেরাকে জানতে হবে সাজনা পাতার অপকারিতা সম্পর্কে ।
সজনা পাতা আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক একটি খাবার হলেও , প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাজনা পাতা খেলে দেখা দিতে পারে বেশ কিছু জটিলতা যেমন – সজনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , ক্যালসিয়াম , আয়রন , এমাইনো এসিড ইত্যাদি থাকার কারণে বেশি পরিমাণ সাজনা পাতা খেলে হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং পেটে এসিডিটি দেখা দিতে পারে।
এই কারণে, সজনা পাতা খেতে হবে অল্প পরিমানে সজনা পাতা খাওয়ার সঠিক পরিমাণ হল আপনার শারীরিক ওজন প্রতি এক গ্রাম। অর্থাৎ আপনার ওজন যত কেজি দৈনিক তত গ্রাম সজিনা পাতা আপনি খেতে পারবেন এর চেয়ে বেশি খেলে হতে পারে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা।
আমরা জেনেছি সাজনা পাতা শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে , তাই না জেনে বুঝে যদি বেশি পরিমাণে সজনা পাতা খাওয়া হয় তাহলে এটি সুগার লেভেল অতিমাত্রায় কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের বিপাকে ফেলতে পারে।
এই কারণে সজনা পাতা অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রেও সাজনা পাতা অতিরিক্ত খেলে লো প্রেসার এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সজিনা পাতা খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই কারণে গর্ভবতী বা প্রেগন্যান্ট মহিলাদের সজনা পাতা না খাওয়াই ভালো , কারণ গর্ভাবস্থায় সজনা পাতা খেলে মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও সাজনা পাতা বেশি পরিমাণে খেলে বদহজম এবং ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশা করছি সাজনা পাতার অপকারিতা গুলো বুঝতে পেরেছেন।
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
সুপার ফুট সজনে পাতা। এই পাতার গুড়া খাওয়ার আরো কয়েকটি নিয়ম নীচে দেওয়া হল-
- রাতে ঘুমানোর সময় দুই চামচ সজনে পাতার গুড়া এক গ্লাস নরমাল পানিতে মিক্স করে রেখে দিবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সেকে খেয়ে নিবেন।
- যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য খাবেন তারা অবশ্যই রাতে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে খালি পেটে খাবেন। এভাবে দুই থেকে তিন মাস সেবন করলে একটা ভালো ফল পাবেন।
সজনে ডাঁটা খেলে কি হয়
সজনে ডাটা এবং পাতার রস খেলে শ্বাসকষ্ট সারে। সজনে ডাটায় থাকা প্রদাহ-বিরোধী এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন সি অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে, ফলে অ্যালার্জির কারণে যে শ্বাসকষ্ট হয় তা দূর করে।
সজনে পাতার কিছু স্বাস্থকর রেসিপি
মসুর ডালে সজিনা
প্রথমে মসুর ডাল-১ কাপ, সজিনা- ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি, তেল, হলুদ গুঁড়া;, রসুন কুচি, মেথি, সরষে বাটা, লবণ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা পরিমাণমতো নিতে হবে।
মসুর ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর হাঁড়িতে পানি চাপিয়ে তাতে মসুর ডাল, রসুন কুচি, হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে। অন্য পাত্রে তেল দিয়ে সজনে ভেজে তাতে মেথি দিয়ে তুলে নিয়ে পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভেজে তেলসহ ডালে ঢেলে দিতে হবে। কাঁচামরিচ কালি ও ধনেপাতা দিয়ে চুলা থেকে নামাতে হবে।
সজিনা লাউ নিরামিষ
সজিনা ২৫০ গ্রাম, লাউ- আধা কেজি, শুকনা শিমের বীচি-২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, টমেটো-১টি, কাঁচামরিচ-২টি, ধনেপাতা পরিমাণমতো নিতে হবে। সজিনার আঁশ ফেলে ১.৫-২ ইঞ্চি করে টুকরা করে নিতে হবে। একই সাথে টমেটো ও লাউ টুকরো করতে হবে। শুকনো শিমের বীচি তাওয়ায় ভেজে পাটায় ভেঙে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।
তেলে পেঁয়াজ অল্প ভেজে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, সজিনা ও লাউ দিয়ে রান্না করতে হবে। শিমের বীচি দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে এরপর টমেটো দিতে হবে। লাউ ও সজিনা সেদ্ধ হলে, মরিচ ফালি ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে ২-৩ মিনিট পর চুলা হতে নামাতে হবে।
সজিনা পাতার পাকোড়া
সজিনা পাতা-১০০ গ্রাম, মসুর ডাল-২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ও আলু-২০০ গ্রাম করে, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, লবণ ও তেল পরিমাণমতো। মসুর ডাল পরিষ্কার করে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সজিনা ডাঁটা ভালো করে ধুয়ে কুচি, কুচি করে কাটাতে হবে।
আলু, পেয়াজ, ধনেপতা, কাঁচামরিচ, সব কুচি করে কেটে নিতে হবে।
মসুরের ডাল হালকা করে বেটে নিতে হবে। ডালের সাথে কুচানো সজিনা পাতা, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা ভালো করে মেশাতে হবে। চুলায় কড়াই বসিয়ে তেল গরম করতে হবে। হাত দিয়ে গোল করে বড়ার মতো করে বানিয়ে তা গরম তেলে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। সস্ বা চাটনিসহ গরম গরম পাকোড়া পরিবেশন করতে হবে।
আলু সজিনার তরকারি
সজিনা-৫০০ গ্রাম, আলু, পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া ও কাঁচামরিচ পরিমাণমতো নিতে হবে। সজিনা ডাঁটার আঁশ ফেলে ২ ইঞ্চি লম্ব করে কেটে নিতে হবে। আলুর খোসা ছিলে লম্বাকরে টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
তেলে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, লবণ দিয়ে সরষে বাটা, আলু, সজিনা দিয়ে চুলায় চড়াতে হবে। পরে পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সবজি সেদ্ধ হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
সজিনা দিয়ে ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছ-৪ টুকরা, সজিনা ৪-৫টি, বড় পেঁয়াজ কুচি-১টি কাঁচামরিচ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, জিরা বাটা, তেল ও লবণ পরিমাণ মতো নিতে হবে। ইলিশ মাছের টুকরাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সজিনাগুলো ১.৫-২ ইঞ্চি করে কেটে নিতে হবে।
কড়াইতে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি ও সব মসলা, লবণ কড়াইতে দিয়ে সজিনা দিতে হবে। সজিনা দিয়ে অল্প কষিয়ে নিতে হবে। কষানো হলে তাতে মাছ দিতে হবে। তারপর অল্প নাড়াচড়া করে পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঝোল মাখা মাখা হলে নামানোর আগে কাঁচামরিচ দিয়ে নামাতে হবে।
চিংড়ি নারিকেলে সজিনা মালাইকারি
সজিনা ২৫০ গ্রাম, চিংড়ি-১৫/২০টি মাঝারি আকৃতির, নারিকেল বাটা-আধা কাপ, চিনি-১ চা চামচ, কাঁচামরিচ-২/৩টি, পরিমাণমতো পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, তেজপাতা, তেল, হলুদ গুঁড়া নিতে হবে।
প্রথমে চিংড়ির মাথা ও ভেতরের কালো রগ ফেলে ধুয়ে সজিনার আঁশ ফেলে টুকরো করে রাখতে হবে।
নারিকেল বেটে নিতে হবে। তেল গরম হলে তেজপাতা, পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, আস্ত চিংড়ি দিয়ে নেড়ে চেড়ে সজিনা ভেজে নিতে হবে। পানি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এরপর বাটা নারিকেল, সামান্য চিনি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ২০ মিনিট রান্নার পর নামানোর পূর্বে কাঁচামরিচ দিয়ে নামাতে হবে।
আম সজিনার ঝোল
সজিনা ভাটা-২৫০ গ্রাম, কাঁচা আম-৬-৭ টুকরা, পেঁয়াজ বাটা, পাঁচ ফোড়ন, রসুন বাটা, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল, হলুদ গুঁড়া ও লবণ পরিমাণমতো। প্রথম সজিনা ডাঁটার আঁশ ফেলে টুকরা করতে হবে। কাঁচা আমের ওপরের সবুজ ত্বক ফেলে লম্বা করে কাটতে হবে। কাঁচামরিচ বেটে নিতে হবে।
তেল গরম হলে পেঁয়াজ বাটা, পাঁচ ফোড়ন বাটা, হলুদ ও রসুন বাটা দিয়ে কষাতে হবে। এরপর সজিনা ডাঁটা ও লবণ দিয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে দিতে হবে। সজিনা সেদ্ধ হলে আমের টুকরা ও মরিচ বাটা দিয়ে জ্বাল দিতে হয়। তেল ওপরে ভেসে উঠলে নামিয়ে ফেলতে হবে।
দই সজিনা
সজনে-৫০০ গ্রাম টকদই-২০০ গ্রাম, রসুন আদা, কাঁচামরিচ বাটা, হলুদ গুঁড়া ও তেজপাতা পরিমাণমতো নিতে হবে। সজনে ডাঁটার আঁশ ফেলে ১.৫ ইঞ্চি করে টুকরা করে নিতে হবে।
তেলে তেজপাতা ভেজে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে সজিনা ঢেলে দিতে হবে। ভালোভাবে নেড়ে টক দই দিয়ে অল্প পানি সহযোগে ২০ মিনিট পর নামাতে হবে।
সজনে পাতার সবুজ ভাত
চাল-৪০০ গাম, মুগডাল-২০০ গ্রাম, সজনে পাতা-২০০ গ্রাম, সেদ্ধ ডিম-৩টি, টমেটো, শসা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, তেজপাতা, গরম মসলা, লবণ, সয়াবিন তেল, লেবু পরিমাণমতো নিতে হবে। প্রথমে চাল ও ডাল ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। সজনে পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে কেটে কুচি কুচি করতে হবে। পেঁয়াজ ও ধনেপাতা কুঁচি করতে হবে।
সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়িয়ে টমেটো ও শসার সাথে সøাইস করতে হবে। আদা, রসুন ও কাঁচামরিচ বেটে নিতে হবে। চুলায় কড়াই চাপিয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজ ভাজতে হবে।
এরপর চাল ও ডাল ২ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। তারপর আদা, রসুন, কাঁচামরিচ বাটা ও তেজপাতা দিয়ে ভালোভাবে মিশাতে হবে। তারপর সজিনা পাতা যোগ করতে হবে। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ২০ মিনিট জ্বাল দিলে সব সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে যাবে।
কুচানো ধনেপাতা ও গরম মসলা দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। ডিম, টমেটো, শসা ও লেবু দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
সজনে পাতার সবুজ রুটি
গমের আটা-৫০ গ্রাম, বেসন-২০ গ্রাম, সজিনা পাতা-২৫ গ্রাম, পেঁয়াজ-২৫ গ্রাম এর সাথে আদা জিরা, কাঁচামরিচ, তেল, লবণ পরিমাণমতো নিতে হবে। প্রথমে সজিনা পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। আদা, পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিতে হবে। জিরা ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে।
এবার আটার সাথে বেসন ভালো করে মেশাতে হবে। একে একে মিশ্রণের সাথে সজিনা পাতা, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা ও অন্যান্য মসলা মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে রুটি তৈরির খামির বানাতে হবে। কিছুক্ষণ খামির রেখে দিয়ে রুটির গোলা তৈরি করে রুটি বেলে নিতে হবে। চুলায় তাওয়া গরম করে সাধারণ রুটির মতো সবুজ রুটি ভেজে নিতে হবে।
পেলকা
সজিনা পাতার তৈরি দিনাজপুরের গ্রামীণ সমাজের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও উপাদেয় খাবারের নাম হচ্ছে পেলকা। পরিমাণমতো সজিনা পাতা, খাবার সোডা এক চিমটি, রসুন ১টি কাঁচামরিচ ও লবণ স্বাদমতো নিতে হবে। ডেকচিতে ২-৩ লিটার পানি চাপিয়ে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে জ্বাল দিতে হবে।
সজিনা পাতা পরিষ্কারভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। চুলায় পানি ফুটলে পাতাগুলো ফুটন্ত পানিতে ঢেলে দিতে হবে। এরপর আদা, রসুন কাঁচামরিচ ও সামান্য পরিমাণ খাবার সোডা দিয়ে নেড়ে নিতে হবে। পাতিলের তলায় যেন না লাগে সেজন্য চামচ দিয়ে নাড়তে হবে। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে।