সয়াবিন তেলের উপকারিতা, অপকারিতা এবং ব্যবহার পদ্ধতি
সয়াবিন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষতঃ চীনে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। এটা তারপর ধীরে ধীরে জাপান এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে, সয়াবিন সব জায়গায় চাষ করা হচ্ছে।
ইউনাইটেড স্টেটস বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় সয়াবিন উৎপাদক দেশ। এরপর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং চীনের স্থান। ভারতে, বৃহত্তম সয়াবিন উৎপাদক রাজ্যগুলি হল মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান।
সয়াবিন নানা রকমের সয়া-ভিত্তিক খাবার যেমন সয়া দুধ এবং টোফু তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা বিভিন্ন মাংস এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের পরিবর্ত হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।
এশিয়ার দেশগুলিতে, গাঁজানো খাবারগুলির প্রধান উপাদান হিসাবে সয়া ব্যবহৃত হয় যেমন সয়া সস, টেম্পে, গাঁজানো বিনের মণ্ড, এবং মিসো। সয়াবিন তেল নিষ্কাশন করার জন্যও সয়াবিন ব্যবহার করা যেতে পারে। একবার, সয়াবিন তেল যদি নিষ্কাশিত হয়, অবশিষ্ট অংশ যাকে সয়াবিন খাবার বলা হয়, অত্যন্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ, সয়া প্রোটিন উৎপাদন করতে অথবা পশুদের একটা খাবার হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সয়াবিন তেলের পুষ্টিগুণ
সয়াবিন তেলে রয়েছে পালমিটিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, চিনাবাদাম অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, লিনোলিক অ্যাসিড, লিনোলিক অ্যাসিড এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং সমৃদ্ধ লেসিথিনের কার্যকারিতা এবং কার্যকারিতা, হজম এবং শোষণের হার 98 শতাংশের মতো উচ্চ, এবং এটির উচ্চ পুষ্টির মান এবং থেরাপিউটিক স্বাস্থ্য প্রভাব রয়েছে।
সয়াবিন তেল লিনোলিক অ্যাসিডের মতো অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা রক্তের চর্বি এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে প্রভাব ফেলে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্ডিওভাসকুলার রোগ
প্রতিরোধ করতে পারে;সয়াবিন তেলে থাকা সয়াবিন ফসফোলিপিডগুলি স্নায়ু, রক্তনালী এবং মস্তিষ্কের বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য উপকারী। যাইহোক, অত্যধিক সয়াবিন তেল খাওয়া এখনও কার্ডিওভাসকুলার এবং সেরিব্রোভাসকুলার রোগের উপর একটি নির্দিষ্ট প্রভাব ফেলবে এবং ওজন বাড়ানো সহজ।
আনুমানিক পুষ্টি উপাদানের তালিকা (প্রতি টেবিল চামচ সয়াবিন তেল)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (আনুমানিক) | দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (আনুমানিক)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১২০ | ৬% |
মোট চর্বি | ১৪ গ্রাম | ২১.৫% |
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৮ গ্রাম | -** |
মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৪ গ্রাম | -** |
*একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েট এবং গড় প্রাপ্তবয়স্কদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। স্বতন্ত্র চর্বির জন্য দৈনিক হার সার্বজনীনভাবে স্থির করা হয়নি।
সয়াবিন তেল খাওয়ার উপকারিতা
সয়াবিন তেল খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে জানিয়েছেন জেড এইচ শিকদার মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পুষ্টিবিদ আশফি মোহাম্মদ। লিখেছেন আতিফ আতাউর বেশির ভাগ মানুষের রান্নাবান্নায় বড় ভরসা সয়াবিন তেল।
সঠিক পুষ্টিমানের কারণে দিন দিন সয়াবিন তেলে রান্না করা খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন গ্রাহকরা। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের সেরা উপাদানগুলোর মধ্যেও অন্যতম সয়াবিন।
- যারা হার্ট ও লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী এসব ভিটামিন। ডিম, মাংস ও ডেইরি পণ্যের মতোই প্রাণিজ প্রোটিনের সমতুল্য প্রোটিন পাওয়া যায় সয়াবিনে। সয়াবিনে ফ্যাটের পরিমাণও কম। এতে থাকা ভিটামিন-ই ও লেসিথিন জাতীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- দাঁত ও হাড় মজবুতের জন্য উপকারী এসব ভিটামিন। এতে থাকা আয়রন মানবশরীরে রক্তের সুস্থতা ধরে রাখে। নিয়মিত সয়াবিন খেলে মেয়েদের স্তন ক্যান্সারেরও ঝুঁকি কমে। এ জন্য বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের বেশি বেশি সয়াবিন খাওয়া ভালো। সয়াবিনে বিদ্যমান আইসোফ্ল্যাবনস মেনোপজের লক্ষণ, প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- তা ছাড়া সয়াবিন তেলে কোনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে না।কিশোর বয়সে ছেলে-মেয়েদের মুখমণ্ডল, গলায় ফুসকুড়ি ও কালো আঁচিল দেখা যায়। অনেকের মুখে মেছেতা পড়ে। এসব দূর করতে সাহায্য করে সয়াবিন।
- সয়াবিনের প্রোটিন মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সকে সতেজ রাখে। এতে মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে। ফলে সহজে কাজে ক্লান্তি আসে না। সয়াবিনে থাকা লেসিথিন মস্তিষ্ক গঠনের উপাদান। এ জন্য সয়াবিন খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিন তেলে ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সয়াবিন রাখতে পারেন নির্দ্বিধায়।
সয়াবিন তেলের ক্ষতিকর দিক
সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য শরীরের জন্য প্রয়োজন খাদ্য। খাবারকে সুস্বাদু করতেও ভোজ্য তেল ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে রান্নায় সাধারণত সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়।
তবে খাবারে অতিরিক্ত সয়াবিন তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সয়াবিন তেলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাবার খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল শরীরে তৈরি হয়। ফলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়।
- অনেকে অতিরিক্ত ডুবো তেলে ভাজা বা একই তেলে বারবার রান্না করা খাবার খায়। পোড়া তেল বা ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেলে শরীরে ক্যানসার হতে পারে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাকস্থলির ক্যানসার, লিভারের ক্যানসার, গলব্লাডারের যেকোনো সমস্যার জন্য দায়ী পোড়া তেলে ভাজা খাবার। খাবার তেলে ভাজার পরে অবশিষ্ট তেল ফেলে দিতে হবে।
- তেলে ভাজা আকর্ষণীয় কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি। এই খাবারগুলো খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়। ফলে ডায়রিয়া বা আমাশয় হতে পারে।
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদরোগের কারণে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও হতে পারে।
- শরীরের স্থ‚লতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সয়াবিন তেল। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দৈনিক ৫ চা চামচের বেশি সয়াবিন তেল খাওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত সয়াবিন তেলজাতীয় খাবার গ্রহণ করলে লিভারে কোলেস্টেরল জমে যায়। লিভার কোলেস্টেরল থেকে লিভার সিরোসিস হতে পারে।
প্রতিদিন কত গ্রাম তেল খাওয়া উচিত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ২০-৩৫ মিলিলিটার তেল গ্রহণ করতে পারেন। এ তেল কোনোভাবেই অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন- ডালডা, ঘি, গরু-খাসির চর্বি ইত্যাদি হতে পারবে না। সয়াবিন তেল, সূর্যমুখীর তেল, রাইস ব্রান তেল, অলিভ ওয়েল ইত্যদি তেলের যে কোনো একটি খাবারের রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
সয়াবিন তেলে কি কোলেস্টেরল ভালো?
খাদ্যে সয়াবিন তেল মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল বা “খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে বলে মনে হয়, তবে এটি এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরলও কম করতে পারে।
ফরচুন সয়াবিন তেল কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
এটি আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে এবং ওমেগা 3 সমৃদ্ধ যা আপনার হৃদয়কে সুস্থ রাখে। অতএব, আমরা ফরচুন সয়া হেলথ অয়েল ব্যবহার করার পরামর্শ দিই।
সয়াবিন তেল কি ত্বকের জন্য ভালো?
সয়াবিন তেলে লিনোলিক অ্যাসিড রয়েছে যা ত্বকের আর্দ্রতা বাধাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করতে সাহায্য করে
যা ত্বকের বাধা বজায় রাখতে সাহায্য করে, জলের ক্ষয় কমাতে এবং ত্বকের হাইড্রেশনে সহায়তা করে এবং ভিটামিন ই, যা ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পরিবেশগত সুরক্ষা প্রদান করে।
ক্যানোলা ও সয়াবিন তেল কোনটি স্বাস্থ্যকর?
সয়াবিন তেল পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ভিটামিন ই এর একটি ভাল উৎস। যদিও এর উপকারিতা রয়েছে,
ক্যানোলা তেলকে প্রায়ই একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এর কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চ মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট কন্টেন্ট।