আমলকির উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
আমলকি, যা বৈজ্ঞানিক নামে ইম্বলিকা আগর বা Phyllanthus emblica নামেও পরিচিত, একটি গাছের ফল। এই ফলটি বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষভাবে ভারতে চিত্রপট এবং আরো কিছু দেশে চাষ করা হয়।
আমলকি অনেকগুলো পোষকতার সম্পূর্ণ উৎস হিসাবে পরিচিত এবং ধাতুগুলি, ভিটামিন C, ফিবার, ফোলেট, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এটিব্যাক্টেরিয়াল এবং অন্যান্য উপাদানের মধ্যে সমৃদ্ধ।
আমলকির পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি ১০০ গ্রাম)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদা মূল্য (%DV)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৪৪ কিলোক্যালোরি | ২% |
মোট চর্বি | ০.৬ গ্রাম | ১% |
সোডিয়াম | ০ মিলিগ্রাম | ০% |
পটাসিয়াম | ১৯৮ মিলিগ্রাম | ৪% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ১০.২ গ্রাম | ৩% |
ডায়েটারি ফাইবার | ৪.৩ গ্রাম | ১৭% |
চিনি | ০.৯ গ্রাম | ১% |
প্রোটিন | ০.৯ গ্রাম | ২% |
ভিটামিন সি | ৬০০ মিলিগ্রাম | ৬৬৭% |
দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলি অনেকগুলো। নিচে আমলকির কয়েকটি প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট
আমলকি অনেক পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে, যা মুক্ত রেডিকাল সংক্রমণ ব্যবধান করে এবং শরীরের স্বাভাবিক ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
বিটামিন C এর সুপারস্টার
আমলকি ভিটামিন C এর অত্যাধিক উৎপাদন করে, যা মজবুত প্রতিরোধশীলতা, স্কিন স্বাস্থ্য ও কোলাজেন উৎপাদন সহায়তা করে।
শক্তিশালী প্রতিরোধক
আমলকি অনেক শক্তিশালী প্রতিরোধক যা মহামারী, স্বাস্থ্য সমস্যা ও অস্থায়ী ব্যাধি বিরুদ্ধে সহায়তা করে। এটি মানসিক ও শারীরিক দৌড়াল স্ট্রেস এবং ব্যস্ত জীবনের জন্য একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়।
পুষ্টিকর
আমলকি অনেক উচ্চ পুষ্টির সূত্র, যেখানে বিটামিন C, ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এটি শরীরের পুষ্টি স্তর উন্নত করে এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক, মাংসপেশী, হাড়-নকশা, চোখ এবং নকশার উন্নতির জন্য উপকারী।
পাচনতন্ত্র উন্নতি
আমলকি পাচনতন্ত্রের ক্ষেত্রে উন্নতি করে। এটি অস্থিতি এবং কলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণ করে, অস্থিবন্ধি প্রতিসার বাধা দেয় এবং পাচনা সিস্টেমকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর রাখে।
ডায়াবেটিসে সহায়তা
আমলকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনসুলিন প্রস্তুতি ও প্রসারণ বৃদ্ধি করে।
মানসিক স্থায়িত্ব
আমলকি মানসিক স্থায়িত্ব ও মানসিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে। এটি মানসিক তন্দ্রা, চিন্তা, বিচার শক্তির বৃদ্ধি এবং মনোবলের সহায়তা করে।
হৃদয়ের স্বাস্থ্যকর
আমলকি হৃদয়ের স্বাস্থ্যকর উন্নতি করে। এটি কোলেস্টেরলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যাডিয়াক সংক্রান্ত ঝুঁকিতে হ্রাস আনে এবং হৃদয়ের রোগের প্রতিরোধ করে।
আন্তিক্রিয়াশীলতা প্রতিরোধ
আমলকি মজবুত আন্তিক্রিয়াশীলতা প্রতিরোধ করে এবং শরীরের শক্তিশালী প্রতিস্থাপন করে।
স্কিন স্বাস্থ্য
আমলকি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ত্বকের যৌবন বন্ধন করে। এটি ত্বকের রোগ এবং সমস্যার জন্য একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসামূলক উপাদান।
মধুমেহ নিয়ন্ত্রণ
আমলকি মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি রক্তচাপ ও রক্তের গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং মধুমেহের সংক্রামক প্রতিকারক বৈদ্যুতিন বৈশিষ্ট্য আরও উন্নত করে।
বিষাক্ততা প্রতিরোধ
আমলকি শরীরের বিষাক্ততা বৃদ্ধি করে এবং বিষপ্রতিরোধ করে। এটি জীবাণুগত এবং ভাইরাল সংক্রান্ত রোগগুলির বিরুদ্ধে সহায়তা করে, স্বাস্থ্যকর প্রতিবন্ধক সিস্টেম উন্নতি করে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গ্রন্থিতে গোলাকার গঠন
আমলকি গ্রন্থি গোলাকার গঠন প্রশংসিত করে এবং গ্রন্থি পথলতা, ক্যান্সার এবং বিভিন্ন অন্যান্য জন্য একটি প্রতিরোধকারী ব্যাধি বন্ধন করে।
স্বাস্থ্যকর মাংসপেশী
আমলকি মাংসপেশীর উন্নতি করে এবং শক্তিশালী মাংসপেশী গঠন করে। এটি প্রোটিন স্থানান্তর ও মাংসপেশী প্রতিসারণে সহায়তা করে, যা খাদ্য পরিপক্বতা ও শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও, আমলকির মাধ্যমে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ উপকারিতা তোলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়ে উঠে। এটি স্বাস্থ্যকর চর্ম ও নখের জন্য উপকারী, পাচন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে, কোলেস্টেরল স্তর নিয়ন্ত্রণ করে, অস্থিপান স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য ভালো হয়ে থাকে।
কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
কাচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অনেকগুলো রয়েছে। নিম্নে কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলঃ
- শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট: কাচা আমলকি অনেক শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে। এটি শরীরের মুক্ত রেডিকাল সংক্রান্ত ক্ষতির বিরুদ্ধে সহায়তা করে এবং শারীরিক ক্ষতির প্রতিরোধ করে।
- বিটামিন C সমৃদ্ধ: কাচা আমলকি অত্যন্ত বিটামিন C ধারণ করে। এটি শরীরের বিটামিন C স্তর উন্নত করে এবং শারীরিক রোগের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিটামিন C শরীরের প্রতিসারণ সিস্টেম উন্নত করে এবং আন্তিক প্রতিসারণের সাথে সাথে শারীরিক ক্ষতি পূরণ করে।
- ইমিউনিটি সমর্থক: কাচা আমলকি শক্তিশালী ইমিউনিটি সমর্থক প্রতিষ্ঠা করে। এটি শারীরিক প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তির সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ বাড়ায়।
- ডেটকস্টনিং বৈশিষ্ট্য: কাচা আমলকি মথন এবং ডেটকস্টনিং বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এটি পাচনতন্ত্র উন্নতি করে এবং আমলকির মাধ্যমে আমলকির পুষ্টিকর উপাদান ঠিকমত শরীরে প্রবেশ করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য: কাচা আমলকি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি করে। এটি ত্বকের সমতলতা, রঙের স্বাস্থ্য, ব্রাইটনেস এবং ত্বকের সঙ্গতিকাল উন্নতি করে। এছাড়াও, এটি ত্বকের অক্সিজেনেশন ও পুনরুদ্ধার করে এবং ত্বকের মডিউল ব্যালান্স সমাপ্ত করে।
এছাড়া কাচা আমলকি পাচনে সহায়তা করে, ব্যক্তিগত তন্দ্রা ও বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার প্রতিরোধ করে এবং মানসিক স্থায়িত্ব উন্নত করে।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
- পুরোনো জীবনধারকে বাড়ানো: আমলকি অনেক উচ্চ বিটামিন C ধারণ করে, যা পুরোনো জীবনধারকে বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরের বিটামিন C স্তর উন্নত করে এবং পুরোনো জীবনধারের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- পুরোনো জীবনধার রক্ষায়িত: আমলকি এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব ধারণ করে, যা পুরোনো জীবনধার রক্ষা করে। এটি মুক্ত রেডিকালগুলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং শারীরিক ক্ষতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
- পাচনার সুবিধা: আমলকি খাওয়ার পরিণামে পাচনার সুবিধা অনুভব করা যায়। এটি পাচনতন্ত্রকে উন্নতি দেয় এবং পাচনক্ষমতা বাড়ায়। যা পাকস্থলির জন্য উপকারি ।
- শরীরের রোগপ্রতিরোধ বৃদ্ধি: খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ফলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি ইমিউনিটি সিস্টেমকে সক্ষম করে এবং সাধারণত স্বাস্থ্যকর ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক প্রতিরোধক সংস্করণ করে।
- মনস্তাত্ত্বিক স্থায়িত্ব উন্নতি: আমলকি খাওয়ার পরিণামে মনস্তাত্ত্বিক স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। এটি মনের স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি উন্নত করে, মানসিক তন্দ্রা ও মনোবিকার সমাপ্ত করে।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এটি কেবলমাত্র কিছু নয়, তবে আমলকির নির্দিষ্ট খাদ্যমূল্য সেবন করার জন্য যথাযথ সময়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকে পরামর্শ নিতে উচিত।
দিনে কয়টি আমলকি খাওয়ার উচিত
আমলকি একটি প্রাকৃতিক উপকারী খাদ্য যা স্বাস্থ্যকর প্রভাব ফেলে। আপনি দিনে কতটি আমলকি খাবেন তা কিছুটা ব্যক্তিগত উপায়ে ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত দৈনিক 1-2 টি আমলকি খেতে পারেন।
এটি ভিন্ন পরিমাণ সেবনের কয়েকটি উদাহরণ হলঃ
- সকালের নাস্তা: আপনি দিনের শুরুতে একটি আমলকি খেতে পারেন। এটি আপনাকে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব ও ভিটামিন C সরবরাহ করবে এবং দিনের প্রথম অংশে শরীরের সংক্রামক রোগের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি দেবে।
- স্ন্যাক হিসেবে: আপনি মধ্যবিত্তে একটি আমলকি খাওয়ার জন্য একটি স্ন্যাকের হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনাকে সক্তিশালী পুরোনো জীবনধার বাড়াতে সাহায্য করবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাজে আরও শক্তি ও সম্প্রতি দিনের জন্য জীবনধারকে সহনশীল করবে।
মনে রাখবেন, সর্বদা শক্তিশালী এবং সুস্বাস্থ্যকর খাদ্যসেবন নিশ্চিত করতে হবে এবং আপনার স্বাস্থ্যসম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা দিতে সহায়তা করবে।
- সকালে আমলকি খাওয়ার পূর্বে একটি গ্লাস গরম পানি পান করুন।
- আমলকি খাওয়ার আগে আপনি এটি ধুয়ে নিতে পারেন যাতে সম্ভব মথন এবং মাল বা শুষ্ক শরীরের ব্যাথা কমে যায়।
- আমলকি খাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনি যেন এটি শুষ্ক শরীরে পান করতে পার
আমলকি খাওয়ার অপকারিতা
আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে মূলত অপকারিতা প্রায় পাওয়া যায় না, কিন্তু কিছু বিশেষ সমস্যার সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য অপকারিতা আছে যা কিছু ব্যক্তিগত পরিস্থিতিতে বিবেচনা করতে হবে।
অ্যালার্জি বা অনুক্রমিক প্রতিক্রিয়া
কিছু ব্যক্তিদের আমলকির প্রতি অ্যালার্জি বা অনুক্রমিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটি ত্বকে চার্মরোগ, চোখের জ্বলবিস্ফোরণ, ঘামের ব্যথা, শ্বাসতন্দ্রাবিশেষ ব্যথা ইত্যাদির কারণে সম্ভব। এই ক্ষেত্রে আপনাকে আমলকি খাওয়ার পূর্বে একজন চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন বিশেষ মেডিকেশনের সাথে সংঘটিত প্রতিক্রিয়া
কিছু মেডিকেশন যেমন এন্টিহিস্টামিন, এন্টিবায়োটিক, অ্যান্টিকোয়াগুলির সাথে আমলকি সংযুক্ত হলে সেগুলির কার্যক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে। এই জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ অবশ্যই প্রয়োজন।
অতিরিক্ত খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করা
কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে আমলকি পড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুষম পরিচর্যা না করলে সেটি বাকি খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে সমস্যার কারণ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সঠিক সংগ্রহ ও পরিচর্যা করতে হবে।
সাধারণত, আমলকি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে উপরে উল্লিখিত সমস্যার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি মনে রাখতে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
7 Comments