কি খেলে হার্টের রোগ ভালো হয়?
হার্টের সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অপরিসীম। হৃদরোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিদ্যমান হৃদরোগে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
হার্টের কার্যক্ষমতা যেমন ভালো রাখতে সাহায্য করে, তেমনি হার্টের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য উপকারী খাদ্য ও আছে। তবে শুধু খাদ্যাভ্যাস দিয়ে হৃদরোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না।
এটা শুধু হার্টের রোগ ভালো রাখতে বা রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। জেনে নেওয়া যাক হৃদরোগের সমস্যায় কোন খাবারগুলি উপকারী।
হার্টের জন্য উপকারী খাবার
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবার রয়েছে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
- হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী I
- রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে I
- রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে I
- “খারাপ কোলেস্টেরল” (LDL) কমিয়ে “ভালো কোলেস্টেরল” (HDL) বাড়ায় I
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উৎস
- সামুদ্রিক মাছ: স্যামন, টুনা, সার্ডিন, ম্যাকেরেল I
- বাদাম: আখরোট I
- বীজ: চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্সসিড I
দ্রবণীয় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার
- কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে I
- হার্টের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ I
দ্রবণীয় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের উৎস
- ওটমিল I
- ডাল I
- বাদাম I
- শাকসবজি I
- ফল I
অন্যান্য উপকারী খাবার
- টমেটো I
- বাদামী চাল I
- অ্যাভোকাডো I
- ব্লুবেরি I
- ডার্ক চকোলেট I
- বাদাম I
খাবারের পাশাপাশি
- নিয়মিত ব্যায়াম করা I
- ধূমপান পরিত্যাগ করা I
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা I
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা I
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করার জন্য একটি সুষম খাদ্য এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু টিপস
- প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের ফল ও শাকসবজি খান।
- সপ্তাহে অন্তত দুইবার সামুদ্রিক মাছ খান।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি কম খান।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
প্রক্রিয়াজাত খাবার
- প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে।
- এগুলো হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই কৃত্রিম উপাদান, রং এবং সংরক্ষণকারী থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের উদাহরণ
- প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, যেমন চিপস, বিস্কুট এবং ক্র্যাকার I
- ফ্রোজেন ডিনার I
- সসেজ, বেকন এবং হ্যাম I
- প্রক্রিয়াজাত পনির I
- ফাস্ট ফুড I
বেশি পরিমাণে লাল মাংস
- লাল মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি।
- অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- সপ্তাহে 2-3 বারের বেশি লাল মাংস না খাওয়াই ভালো।
লাল মাংসের উদাহরণ
- গরুর মাংস I
- খাসির মাংস I
- শুয়োরের মাংস I
প্যাকেটজাত খাবার
- প্যাকেটজাত খাবারে প্রায়শই প্রচুর পরিমাণে লবণ, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে।
- এগুলো হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- প্যাকেটজাত খাবারে প্রায়শই কৃত্রিম উপাদান, রং এবং সংরক্ষণকারী থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্যাকেটজাত খাবারের উদাহরণ
- প্যাকেটজাত স্যুপ I
- প্যাকেটজাত নুডুলস I
- প্যাকেটজাত ফলের রস I
- প্যাকেটজাত মসলা I
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের উদাহরণ
- ভাজা খাবার I
- ফাস্ট ফুড I
- পুরো চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার I
- বাদাম I
তেলে ভাজা খাবার
- তেলে ভাজা খাবারে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ক্যালোরির পরিমাণ বেশি।
- তেলে ভাজা খাবার খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
তেলে ভাজা খাবারের বিকল্প
- খাবার সিদ্ধ, ঝলসানো বা বেকিং করুন।
- তেল ব্যবহার করলে অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করুন, যেমন জলপাই তেল বা ক্যানোলা তেল।
এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলার পাশাপাশি
- প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং পুরো শস্য খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম I
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য এইসব খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি আরও কিছু টিপস বিবেচনায় রাখা জরুরী:
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়ানো
- মিষ্টি, ফলের রস, সোডা, চকোলেট ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত চিনি হৃদরোগ, স্থূলতা, এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
পানি পান করুন
- প্রচুর পানি পান শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, বিশেষ করে হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য।
- পানি শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
অ্যালকোহল
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- যতটা সম্ভব অ্যালকোহল সেবন সীমিত করুন।
ধূমপান বর্জন করুন
- ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম বড় কারণ।
- আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা বর্জন করুন। ধূমপান ত্যাগ করা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
আরও কিছু পরামর্শ
- খাবারের লেবেল পড়ুন এবং চিনি, লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।
- আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত চেক আপ করুন।
উপসংহার
হার্টের সুস্বাস্থ্যের একটি বড় অস্ত্র হল সঠিক খাদ্যাভ্যাস। তবে শুধুমাত্র খাবারে পরিবর্তন এনেই হৃদরোগ দূর করা সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান পরিহার, ওজন নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন খাদ্য কতটুকু খাবেন, বা একেবারেই কোন তালিকা থেকে কোন খাবার বাদ দেবেন, তা একজন ডায়েটিশিয়ান এর সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
অস্বীকৃতি
এই তথ্য শুধুমাত্র શিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে এবং চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করার উদ্দেশ্যে তৈরি নয়। আপনার যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তবে দয়া করে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
One Comment