ডাঁটাশাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চাষ পদ্ধতি
ডাঁটাশাক একপ্রকার লতাজাতীয় উদ্ভিদ। গাছের পাতা ও ডাঁটা শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে ডাঁটাশাক বলে উল্লেখ করা হয়। এর মাংসল লতা দ্রুতবেগে ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর মোটা রসাল ডাঁটা ও পাতায় মৃদু সুগন্ধ আছে।
ডাঁটাশাকের পুষ্টি উপাদান ও আমাদের দৈনিক চাহিদা পূরণ
নিচের টেবিলটিতে ডাঁটাশাকের পুষ্টিগুণ এবং সেগুলি আমাদের দৈনিক চাহিদার কতটা পূরণ করে সে সম্পর্কিত তথ্য দেখুন।
ডাঁটাশাকের প্রস্তুতপ্রণালী এবং চাষের উপর নির্ভর করে পুষ্টির মান নির্ভর করে।
১০০ গ্রাম রান্না করা ডাঁটাশাকে পাওয়া পুষ্টি উপাদান (আনুমানিক) এবং দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (আনুমানিক)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (আনুমানিক) | দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (আনুমানিক)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৪৫ | ২.২৫% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ৯ গ্রাম | ৩% |
ফাইবার | ৩ গ্রাম | ১২% |
প্রোটিন | ৩ গ্রাম | ৬% |
ভিটামিন সি | ৯০ মিলিগ্রাম | ১২০% |
ভিটামিন এ | ৬০০০ আইইউ | ১২০% |
ভিটামিন কে | ৪০০ মাইক্রোগ্রাম | ৫০০% |
ক্যালসিয়াম | ২০০ মিলিগ্রাম | ২০% |
আয়রন | ৭ মিলিগ্রাম | ৩৮.৮৯% |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮০ মিলিগ্রাম | ২০% |
*একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েট এবং গড় প্রাপ্তবয়স্কদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
- ভিটামিনের সমাহার: ডাঁটাশাকে প্রচুর ভিটামিন থাকে, বিশেষ করে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে এর দৈনিক চাহিদা পূরণে এর পরিমাণ অত্যধিক।
- খনিজের ভালো উৎস: এগুলো ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস।
- ফাইবারের পরিমাণ: ডাঁটাশাকে পরিমাণমতো ফাইবার থাকে, যা হজমে সাহায্য করে।
- প্রস্তুতপ্রণালী গুরুত্বপূর্ণ: ডাঁটাশাক রান্না করার পদ্ধতি পুষ্টি উপাদানের উপর সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে।
ডাটা শাক এর উপকারিতা
ডাটা শাকের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে আসুন জেনে ফেলি এর উপকারিতা গুলো
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ডাটা শাক এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে প্রথমটি হল এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। ভিটামিন সি, যা ডাটা শাকে উপস্থিত, শরীরকে অসংখ্য ক্ষত এবং সংক্রামক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে পরিচিত। উপরন্তু, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সবুজ ভিটামিনের কারণে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উপরন্তু, এটি জ্বর, সর্দি এবং কাশির মতো মৌসুমী অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
ডাটা শাক এর সবুজ শাক-সবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব ফেলে, যা তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান করে তোলে। ক্যান্সার এড়াতে এবং শরীরে রোগের ঝুঁকি কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে
লোহা এবং ফসফরাসের মতো খনিজগুলি ডাটা শাকগুলিতে পাওয়া যায়। আয়রন এবং ফসফরাস দ্বারা শরীরে রক্তের উৎপাদন এবং সঞ্চালন উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
রক্ত পরিশুদ্ধ করতে
ডাটা শাক রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে। সবজির মরসুমের উপর নির্ভর করে, ডাটা শেষ হয়। তবে শাকসবজি ফ্রিজে অনেক দিন রাখা যায়। রক্ত বিশুদ্ধ রাখতে ডাটা শাক খান। ডাটা শাকে পাওয়া স্যাপোনিন, অ্যালকালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
ডাটা শাকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধার মধ্যে একটি হল এটি হার্টের অবস্থার চিকিৎসায় কতটা ভালো কাজ করে। প্রদাহ কমাতে, শরীরের পাতায় উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যাল প্রয়োজন। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। উপরন্তু, ডাটা শাক আমাদের হার্টের অন্যান্য অবস্থা থেকে রক্ষা করে।
ব্রেইনকে সচল ও অধিক একটিভ করে তোলে
ডাটা শাকের অধিকতর পলিফেনোল পদার্থ ব্রেইনকে কার্যকর করতে সাহায্য করে। এবং এর ফলে দেহের কগনিটিভ ফাংশন এর উন্নতি সাধন হয়।
অনিদ্রা থেকে মুক্তি
ডাটা শাকের খেলে ইনসোমনিয়া এবং অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে থাকা শক্তিশালী ক্যামিক্যাল ব্রেইনকে শান্তি প্রদান করে, যার ফলে ভালো ঘুম হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে
ডাটা শাকের ক্যালরির মাত্রা অনেক কম এর পাশাপাশি ফ্যাট এর মাত্রা নাই বললেই চলে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ডাটা শাকের ভূমিকা রয়েছে। ডাটা শাকের ক্যালরির মাত্রা কম থাকার ফলে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে।
হজমে সহায়তা করে
হজমে সাহায্যকারী এনজাইম ডাটা শাকে পাওয়া যায়। ফল হিসেবে ডাটা শাক-সবজি হজমে সাহায্য করে। তাহলে মনে রাখতে হবে যে খাবার হজমের জন্য শাকসবজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে
মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। একটি মজবুত হাড়ের গঠন বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ডাটা পাতায় আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং অন্যান্য অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। এটি হাড়কে মজবুত ও মজবুত করতে ভূমিকা রাখে।
ডাটা শাক এর অপকারিতা
ডাটা শাক এর উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন বেশ কিছু ডাটা শাক এর অপকারিতাও রয়েছে। এখন আমরা জেনে নেব ডাটা শাক এর অপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
- যাদের ডায়াবেটিকস আছে। তারা অতিরিক্ত বেশি ডাটা শাক খাবেন না। অতিরিক্ত ডাটা শাক খেলে রক্তের চাপ বাড়তে পারে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে।
- যারা ওজন বাড়াতে চান। তারা ডাটা শাক খাবেন না। কারণ ডাটা শাক খেলেও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ডাটা শাক দুপুরে ও রাতে খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। কারণ ডাটা শাক পেট ভরতে সাহায্য করে। পেট জনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন।
- যাদের অ্যালার্জি আছে। তাদের জন্য ডাটা শাক খাওয়া ক্ষতিকর হবে। ডাটা শাকে থাকা প্রোটিন লেটএক্স এর মত উপাদান থাকায় এটি এলার্জির বৃদ্ধি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ডাটা শাক খেলে মাথা ঘোড়া, মাথাব্যথা, মেজাজ খিটখিটে, হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডাঁটা শাক ভাজা
উপাদান
- 1 আঁটি ডাঁটা শাক
- ১টি বেগুন ছোট টুকরো করে কাটা
- ৪টে লঙ্কা চিরে নেওয়া
- স্বাদ মত নুন ও চিনি
- ১/২ চা চামচ +১ টা কালোজিরে ও শুকনো লঙ্কা ফোঁড়ন
- প্রয়োজন অনুযায়ী সর্ষের তেল
- ১ চা চামচ আটা
- ১/৪চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে শাক ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।এবার ডাটা থেকে কচি পাতা দেখে কুচিয়ে নিতে হবে, বেগুন টুকরো করে কেটে নিয়ে ১৫মিনিট মতো জলে ভিজিয়ে রেখে নুন,চিনি ও ১চামচ আটা মাখিয়ে নিতে হবে।
এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে বেগুন ভেজে তুলে রেখে ঐ তেলেই কালোজিরে ও ৪টে লঙ্কা ফোড়ন দিয়েসুগন্ধ বেড়োলে শাক দিয়ে নুন,চিনি, হলুদ দিয়ে নাড়াচাড়া করে নরম হলে অল্প জল দিয়ে ও ঢাকা দিয়ে কম আচেঁ রান্না করতে হবে।
জল শুখিয়ে ও শাক সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা বেগুন দিয়ে নাড়িয়ে ও ১চামচ সর্ষের তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে, গরম ভাতের সঙ্গে এই শাক দারুন লাগে।
ডাটা শাক চাষ
ডাটার জন্য উর্বর ও গভীর মাটি প্রয়োজন। সুনিষ্কাশিত অথচ ‘জো’ থাকে এমন মাটিতে এটি সবচেয়ে ভাল জন্মে। ডাটা চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
জমি গভীরভাবে চাষ দিয়ে বড় ঢেলা ভেঙে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। সারিতে কাঠির সাহায্যে ১.০-১.৫ সে.মি. গভীর লাইন টানতে হবে। লাইনে বীজ বুনে হাত দিয়ে সমান করে দিতে হবে।
ছিটিয়ে বুনলে বীজের সঙ্গে সমপরিমাণ ছাই বা পাতলা বালি মিশিয়ে নিলে সমভাবে বীজ পড়বে। বপনের পর হাল্কাভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে ঝাঝরি দিয়ে হাল্কা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। তাহলে বীজ দ্রুত এবং সমানভাবে গজাবে।
ডাটা একটি উচ্চ ফলনশীল সবজি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের চাষ করলে প্রতি একরে ১০০-১২০ টন ডাটা পাওয়া সম্ভব।
ডাটা শাকের জাত
ডাটা শাকের জাত গুলোর মধ্যে – বারি ডাঁটা-১, বারি ডাঁটা-২, বাঁশপাতা, আখি, সুফলা-১, কে এস ০১, ভুটান সফ্ট, রেড ম্যান, অপরাপা, লাবনী জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত।