নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায়
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: একবার কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সাধারণত সম্ভব হয় না। কিডনি বিকল হওয়ার কারণ, বর্তমান অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি কমানো যেতে পারে, এবং রোগীর অবস্থার যাতে আর অবনতি না হয় তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তাই, কিডনির সুরক্ষা এবং প্রাথমিক পর্যায়েই কিডনি রোগ সনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি।
এখন নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা যাক:
কিডনি কখন নষ্ট হয়ে যায় বলা হয়
যখন কিডনির ক্ষতি এতটাই বেড়ে যায় যে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো বের করে দিতে পারে না, শরীরে তরল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রাখতে পারে না, হরমোন নিঃসরণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বা লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ করতে পারে না – তখন কিডনি বিকল বা নষ্ট হয়ে গেছে বলা হয়।
এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ’ (ESRD) বা ‘কিডনি ফেইলিওর’
নষ্ট কিডনি কি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে
কিডনি একবার সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেলে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন, প্রায়শই অসম্ভব। অনেকসময় চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থার আরও অবনতি ঠেকানো গেলেও কিডনি ফিরে পাওয়া যায় না।
তবুও কিডনি ফেইলিওরের চিকিৎসা আছে, এবং এই চিকিৎসা রোগীকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসা সাধারণত নিম্নলিখিত দুই ধরণের হতে পারে:
ডায়ালাইসিস
ডায়ালাইসিস একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত লবণ ও তরল পদার্থ বের করে দেওয়া হয়। এতে কিডনির কাজকর্ম কৃত্রিম উপায়ে করা হয়। ডায়ালাইসিস মূলত দুই ধরনের হয়:
- হেমোডায়ালাইসিস: এই পদ্ধতিতে রক্তকে শরীর থেকে বের করে একটি ডায়ালাইসিস মেশিনের মাধ্যমে একটি ফিল্টারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। ফিল্টারটি বর্জ্য পদার্থগুলিকে ছেঁকে নেয় এবং পরিশোধিত রক্ত আবার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
- পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস: এই পদ্ধতিতে পেটে একটি স্থায়ী ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয়। এর মাধ্যমে পেটের গহ্বরে (পেরিটোনিয়ামে) একটি বিশেষ তরল (ডায়ালিসেট) প্রবেশ করানো হয়। এই তরল বর্জ্যপদার্থগুলিকে শোষণ করে নেয় এবং কিছু সময় পর বর্জ্যপূর্ণ তরলটিকে ক্যাথেটারের মাধ্যমে বের করে নতুন তরল প্রবেশ করানো হয়।
কিডনি প্রতিস্থাপন (কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট)
এটি নষ্ট কিডনির সবথেকে কার্যকরী চিকিৎসা, তবে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য একটি সুস্থ কিডনির প্রয়োজন হয়, যা দুই উপায়ে পাওয়া যেতে পারে:
- জীবিত দাতার কাছ থেকে: পরিবারের কোনো সুস্থ সদস্য, অথবা অন্য কেউ দয়া করে অনুদান দিতে পারেন। সবদিক থেকে দাতার সাথে গ্রহীতার টিস্যুর মিল খুঁজে দেখা হয়।
- মৃত দাতার কাছ থেকে: কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে এবং ব্যক্তি বা পরিবার সম্মত থাকলে কিডনি নেওয়া যেতে পারে।
নষ্ট কিডনির চিকিৎসার সাথে সাথে রোগীর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতির অন্যতম কারণ। তাই কিডনি নষ্ট হয়ে গেলেও এই দুটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী যাতে অবস্থা আর খারাপ না হয়।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষ খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা: ধূমপান ও মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করে, সেইসাথে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ওষুধ সেবন: চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
কিডনি একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা আগের মতো করে ফিরিয়ে আনা দুষ্কর। তাই কিডনি ভালো রাখার জন্য প্রাথমিক অবস্থাতেই যত্নবান হওয়া উচিত। নীচে কিডনি সুস্থ রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হল:
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
- সঠিক ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা।
- নিজে থেকে কোনো ওষুধ সেবন না করা। চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
উপসংহার
কিডনি বিকল হওয়ার অর্থ জীবনের সমাপ্তি নয়। কিডনি নষ্ট হয়ে গেলেও ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে এখন অনেকেই স্বাভাবিক এবং তুলনামূলক সুস্থ জীবন যাপন করছেন।
তবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে যাতে কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি শনাক্ত করা যায়।
এতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, ওষুধ সেবন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে রোগের অবনতি রোধ করা সম্ভব।