কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?
কিডনির ক্ষমতা নির্ণয়ে ক্রিয়েটিনিন লেভেল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। কিন্তু “কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো” এইভাবে ভাবা সঠিক পদ্ধতি নয়।
কারণ, বয়স, লিঙ্গ, পেশীবহুলতা (muscle mass) ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ক্রিয়েটিনিনের একটি স্বাভাবিক পরিসীমা (normal range) আছে। সেজন্য একজনের সুস্থতার মানদণ্ড অন্যজনের সাথে মিলবে না। একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে এই বিষয়ের জটিলতা তুলে ধরা হল:
ক্রিয়েটিনিন কী
ক্রিয়েটিনিন, ক্রিয়েটিন নামক পদার্থের একটি বর্জ্য উপাদান। আমাদের পেশী স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় (metabolism) ক্রিয়েটিনকে ভেঙে ক্রিয়েটিনিন তৈরি করে। কিডনি সাধারণত রক্ত থেকে এই ক্রিয়েটিনিনকে ছেঁকে বের করে দেয়। তাই রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা দেখে কিডনি কতটা ভালো কাজ করছে, তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কীভাবে মাপা হয়
ক্রিয়েটিনিন লেভেল রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মাপা হয়। পরীক্ষার ফল/রিপোর্টে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ mg/dL (মিলিগ্রাম পার ডেসিলিটার) এককে দেখানো হয়।
ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক পরিসীমা (Normal Range)
পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক পরিসীমা সাধারণত নিম্নরূপ:
- পুরুষ: ০.৬ থেকে ১.২ mg/dL
- মহিলা: ০.৫ থেকে ১.১ mg/dL
উপরের মানটি অবশ্যই পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষাগারে কিছুটা পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু তা সামান্যই হবে এবং রিপোর্টের সাথে স্বাভাবিক মানটি উল্লেখ করে দেওয়া থাকে।
শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিন লেভেল দেখে কিডনির স্বাস্থ্য সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব নয়। এই লেভেল ব্যাখ্যা করতে বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়:
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বয়স্ক ব্যক্তির রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাবে, কিন্তু তা দুশ্চিন্তার কারণ নয়।
- লিঙ্গ: মহিলাদের পেশীর পরিমাণ (muscle mass) পুরুষদের তুলনায় কম হয়। তাই মহিলাদের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে পুরুষদের থেকে কিছু কম থাকে।
- শরীরের গঠন: খুবই পেশীবহুল বা মোটা ব্যক্তির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা একটু বেশি হতে পারে, যেহেতু তাদের পেশীর পরিমাণ বেশি ।
- খাদ্যাভ্যাস: যাদের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে মাংস থাকে, তাদের শরীরে অস্থায়ীভাবে ক্রিয়েটিনিন লেভেল বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ওষুধ: কিডনি রোগ ছাড়াও আরও কিছু শারীরিক সমস্যা, কিংবা কিছু ওষুধের কারণে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ক্ষণিকের জন্য বেড়ে যেতে পারে
কীভাবে কিডনির স্বাস্থ্যের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়
একটি রক্ত পরীক্ষায় ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ঠিক স্বাভাবিক পরিসীমার মধ্যে থাকলেও কিডনির সমস্যা থেকে যায়। আবার উলটোটাও হতে পারে, সামান্য বেশি মাত্রার ক্রিয়েটিনিন দেখেও, কিডনি সুস্থ থাকতে পারে।
সেকারণে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, রোগীকে সামগ্রিকভাবে মূল্যায়নের জন্য চিকিৎসক আরও কিছু তথ্য বিবেচনা করে থাকেন:
- ইজিএফআর (eGFR): ইজিএফআর বা এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট হলো একটি গণনা যা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রার সাথে বয়স, লিঙ্গ, জাতিগত বিষয় বিবেচনা করে করা হয়। কিডনির কার্যকারিতা পরিমাপের ক্ষেত্রে ইজিএফআর খুবই উপযোগী একটি সূচক।
- অন্যান্য লক্ষণের উপস্থিতি: রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেশি থাকার পাশাপাশি কিডনি রোগের উপসর্গ, যেমন প্রস্রাবের পরিবর্তন, শরীরে ফোলা ভাব ইত্যাদি দেখা দিলে তা কিডনির কোন সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করে।
- অন্যান্য পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষায় ক্রিয়েটিনিন এর উচ্চ মাত্রা এবং উপসর্গ থাকলে, কিডনির সমস্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে, চিকিৎসক প্রস্রাব পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য ইমেজিং টেস্ট করতে বলতে পারেন।
উপসংহার
একটি নির্দিষ্ট ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সকলের জন্য কিডনির সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয় না। চিকিৎসক প্রতিটি রোগীর শারীরিক অবস্থা আলাদা করে বিবেচনা করে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল এবং রোগীর লক্ষণগুলির ভিত্তিতে কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক মতামত দিতে পারেন।
তাই কিডনির স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কোন রকম সন্দেহ থাকলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।