অশোক মূলের উপকারিতা এবং রাসায়নিক উপাদান
গাছপালা ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়। এমনও বিশ্বাস করা হয় যে বাড়ির গাছ-গাছালি থেকে বাস্তুর দোষ দূর হয়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থেও গাছটির উল্লেখ রয়েছে, যা পুজো এবং ঘর সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তেমনই একটি গাছ হল অশোক।
অশোক শব্দের অর্থ হল সমস্ত দুঃখ কষ্ট নষ্ট করা। জ্যোতিষশাস্ত্রেও অশোক গাছের প্রচুর অবদান রয়েছে।
হিন্দু ধর্মে শুভ অনুষ্ঠান বা কাজ মানেই মূল দরজায় তোরণ লাগানো হয়। তাতে নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করতে পারেন না। অশোকের আভিধানিক অর্থ হল কোনও প্রকার দুঃখ নেই। শুধু তোরণ হিসেবে নয়,
যে বাড়িতে অশোক গাছ থাকে সেখানে সব কাজ খুব সহজে সম্পন্ন হয়, পায় সাফল্যও। কোনও বাধা ছাড়াই খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। অশোকের পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে।
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে
প্রতিদিন অশোক গাছে জল দিলে তা ঘরে লক্ষ্মীজির প্রবেশ করে। দেবী লক্ষ্মীর কৃপায় মানুষকে কখনওই আর্থিক ঝুঁকি নিতে হয় না। প্রতিদিন অশোক গাছে জল নিবেদন করলে দাম্পত্য জীবনে সমৃদ্ধি আসে। সেই সঙ্গে পরিবারের কোনও সদস্যের কঠিন রোগ থাকে, তা শীঘ্রই শেষ হয়ে যায়
পজিটিভ শক্তি
কোনও কারণ ছাড়াই যদি আপনার বাড়িতে অশান্তি হয়, তাহলে অবশ্যই অশোক গাছে জল নিবেদন করুন। এর পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার অশোক গাছে কর্পূর ও ঘি মিশিয়ে প্রদীপ জ্বালাতে হবে। এতে ঘরে পজিটিভ এনার্জি আসে। ঘরের মারামারি-ঝগড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অশোক গাছ কোন দিকে থাকবে
বাস্তুশাস্ত্রে উত্তর দিকের বিশেষ গুরুত্ব বলা হয়েছে। এটি সবচেয়ে শুভ দিক হিসাবে বিবেচিত হয়, তাই অশোক গাছ সবসময় উত্তর দিকে লাগানো উচিত। এতে ঘরে নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করতে পারে না।
অশোক গাছ লাগানোর নিয়ম
বাস্তুশাস্ত্রে অশোক গাছ লাগানোর কিছু নিয়ম বলা হয়েছে। বাড়ির ভিতরে অশোক গাছ লাগানো শুভ বলে মনে করা হয় না। বাড়ির দরজার বাম কোণে অশোক গাছ লাগালে ধন-সম্পদ আসে। বাড়ি থেকে বাস্তু দোষ দূর করতে অশোকের শিকড় গঙ্গাজল দিয়ে পরিষ্কার করে বাড়ির মন্দিরে রাখতে হবে।
প্রায় ২০ বছর আগে বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রথম অশোক ফুল দেখে অবাকই হয়েছিলাম। গাছের কাণ্ড ফুঁড়ে বেরিয়েছে থোকা থোকা ফুল। এর আগে কাণ্ড ফুঁড়ে শুধু ডুমুর বা কাঁঠাল দেখার অভিজ্ঞতা ছিল। অবাক হওয়ার আরও কারণ ফুলের বর্ণশোভা।
কমলা আর লালে মেশানো ফুলগুলো ঝলমল করছিল। বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান সড়ক এবং পশ্চিম-উত্তর প্রান্তে একটি সুদর্শন অশোকবীথি আছে। কিন্তু গাছটি আমাদের চারপাশের অন্যান্য গাছের মতো ততটা সহজলভ্য নয়। আমাদের লোকালয় কিংবা যত্রতত্র কোনো সুদৃশ্য অশোকবীথিও পাওয়া যাবে না।
তবে বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে অনায়াসেই দেখা মিলবে। ঢাকায় রমনা পার্কে আছে নান্দনিক অশোককুঞ্জ। ধানমন্ডি এলাকায়ও একটি বিবর্ণ অশোকবীথি চোখে পড়ে। কোনো এক সময় হয়তো পরিকল্পিতভাবেই লাগানো হয়েছিল গাছগুলো। পরে সেগুলো নগরায়ণের বলি হয়।
অশোক গাছের উপকারিতা
মূলত হেমন্ত, শীত ও বসন্ত কালে এই ফুল ফোটে। তবে এই ফুল ফোটার প্রধান সময় বসন্তকাল। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এগুলি আমাদের ধারণার বাইরে। সাধারণত অশোক গাছের ছাল আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই গাছের ছাল, বীজ এবং ফুলের গুণ
- অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যা কমায়। বন্ধ্যত্বের সমস্যাও কমায় এগুলি।
- প্রতিদিন অশোকের ছাল দিয়ে তৈরি পানীয় পান করলেও গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এমনই বলছে আয়ুর্বেদ।
- হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে এগুলি খেলে।
- অ্যালার্জির সমস্যা কমায় এগুলি।
- আমাসয় বা পেটের গণ্ডগোল হলে, অনেকের মলের সঙ্গে রক্তপাত হয়।
- অশোক ফুল লের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা কমতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট হলে অশোকের বীজ পানের সঙ্গে চিবিয়ে খেতে পারেন। এই সমস্যা কমতে পারে তাতে।
- শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এগুলি।
- অর্শের সমস্যা হলে অশোকের ছাল খেলে রক্তপাত কমতে পারে। কৃমির সমস্যাও কমায় এগুলি।
- ত্বক উজ্জ্বল করতে পারে অশোক গাছের ফুল, বীজ।
রাসায়নিক উপাদান
ছালে প্রচুর পরিমান ট্যানিন, হিমাটক্সাইলিন ও খনিজদ্রব্য বিদ্যমান। এছাড়াও এতে কিটোস্টেরল এবং স্যাপোনিন বিদ্যমান।
অশোক গাছের রোপন
আশোক অসংখ্য শাখাবিশিষ্ট ছায়াতরু অশোক ফুলের গাছের দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ৩০ ফুটের মত হয়ে থাকে। এর পাতা কচি অবস্থায় তাম্রবর্ণ থাকে পরিণতিতে সবুজ। পাতা লম্বা ধরনের এবং তাতে ৫-৬ জোড়া পাতা থাকে। এর শুঁটি বেশ লম্বা ও চওড়া ২ ইঞ্চির মত।জুন-জুলাই মাসে এই গাছের ফল পাকে।
ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা রৌদ্রে শুকিয়ে বীজ তলায় বাঁ পলিব্যাগে লাগানো যায়। এর বীজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয়। অঙ্কুরিত চারার বয়স ১-২ বৎসর হলে তা রোপন করতে হয়। বর্ষাকাল চারা রোপনের উৎকৃষ্ট সময়।