মিনি হার্ট অ্যাটাকের যে লক্ষণগুলো উপেক্ষা করবেন না
হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা যখন শুনি, আমাদের মনের মধ্যে একটা ভয়ের সঞ্চার হয়।
অনেকেই হার্ট অ্যাটাককে হঠাৎ, তীব্র বুকব্যথা হিসেবে চিনলেও এর আগে শরীর বিভিন্নভাবে আমাদের সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে।
মিনি হার্ট অ্যাটাক এই ধরণেরই একটা অবস্থা যেখানে হার্টে সাময়িকভাবে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ক্ষতিকর অবস্থা সৃষ্টির আগেই কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে।
এই নিবন্ধে আমরা মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো, কেন এগুলোকে উপেক্ষা করা ঠিক নয়, এবং এর থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
মিনি হার্ট অ্যাটাক কী
মিনি হার্ট অ্যাটাককে বলা হয় ‘ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক’। এ অবস্থায় সাধারণত ধমনীতে আংশিক বাধা সৃষ্টি হয়।
ফলে অল্পসময়ের জন্য হার্টে রক্ত চলাচল কমে যায় যা টিস্যুকে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত এই অবস্থা ১০ মিনিটের মতো স্থায়ী হয় ও এতে হৃদপেশীর স্থায়ী ক্ষতি হয় না।
তবে মিনি হার্ট অ্যাটাক গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
মিনি হার্ট অ্যাটাক, যা নন-এসটি-এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন (NSTEMI) নামেও পরিচিত, হার্ট অ্যাটাকের একটি হালকা রূপ। এর লক্ষণগুলি হার্ট অ্যাটাকের মতোই, তবে তীব্রতা কম এবং স্থায়িত্বও কম।
কিছু সাধারণ লক্ষণ হল
- বুকে অস্বস্তি: বুকের মাঝখানে ব্যথা, চাপ অনুভূত হওয়া, ভারীভাব, জ্বালাপোড়া।
- ব্যথা যা ছড়িয়ে পড়ে: ব্যথা হাত (বিশেষ করে বাম হাত), কাঁধ, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বিশেষত শুয়ে থাকলে।
- বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- ঠান্ডা ঘাম হওয়া I
- হালকা মাথা ঘোরা বা বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম I
- দুর্বলতা বা অবসাদ বোধ করা I
মহিলাদের মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি পুরুষদের থেকে আলাদা হতে পারে। মহিলাদের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:
- পেটে ব্যথা I
- ঘাড়, কাঁধ বা চোয়ালে ব্যথা I
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি I
- হালকা মাথা ঘোরা I
- বমি বমি ভাব I
মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত চিকিৎসা হার্টের ক্ষতি কমাতে এবং ভবিষ্যতের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মনে রাখবেন, এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়। আপনার যদি মনে হয় যে আপনি মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি অনুভব করছেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
কিছু টিপস
- আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির কারণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- আপনার রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
তাৎক্ষণিক সতর্কতা প্রয়োজন
মিনি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো অনেকসময় উপেক্ষিত হয়ে যায়। অনেকেই এই লক্ষণগুলোকে বদহজম বা অম্বল বলে ভুল করেন।
কিন্তু মনে রাখতে হবে মিনি হার্ট অ্যাটাক হলে পরবর্তীতে সম্পূর্ণ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
তাই, উপরের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি প্রকাশ পেলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির কারণসমূহ
হার্ট অ্যাটাকের মতোই মিনি হার্ট অ্যাটাকের পেছনেও কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে। যেমন-
- উচ্চ রক্তচাপ I
- উচ্চ কোলেস্টেরল I
- ডায়াবেটিসI
- ধূমপান I
- স্থূলতা I
- পারিবারিক ইতিহাস I
- বয়স (পুরুষদের ৪৫-এর পর ও নারীদের ৫৫-এর পর ঝুঁকি বেড়ে যায়) I
মিনি হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
মিনি হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে হার্টের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি আপনাকে সাহায্য করবে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাক-সবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। লবণ, কোলেস্টেরল, ট্রান্স ফ্যাট, ও বাড়তি চিনি খাওয়া কমান।
- নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাঝারিমাত্রায় ব্যায়াম করুন।
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হৃদযন্ত্রে চাপ বাড়ায়।
- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ওষুধ সেবন বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে সম্ভব।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- ধূমপান পরিহার: ধূমপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ শরীরের নানাভাবে ক্ষতি করে।
- নিয়মিত চেক আপ: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
হৃদরোগ সারা বিশ্বে একটি বড় স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ। এই রোগ প্রতিরোধে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
মিনি হার্ট অ্যাটাক শরীরের দেওয়া একটি সতর্কবার্তা। এর লক্ষণগুলো কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো এবং সুস্থ হৃদয়ের অধিকারী হওয়া সম্ভব।