সর্বোৎকৃষ্ট ৪টি বাদামের উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং খাবার নিয়ম
থিয়েটার, স্কুল, অফিস, চায়ের দোকানই হোক বা জমজমাট গল্পের আড্ডাখানাই বলুন সব জায়গায় একটাই স্ন্যাক্স খুব পরিচিত। সেটি বাদাম।
এই মুখরোচক স্ন্যাক্সটা সবাই খেতে খুব মজাই পায়। তাছাড়াও এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। এই সুস্বাদু খাবারটি রান্নার স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলে।
বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে এর বিকল্প নেই। রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের সমস্ত রকম রোগ থেকে মুক্ত রাখে।
উদ্ভিদগতভাবে বলতে গেলে বাদাম হ’ল শক্ত বাইরের শেলের ভিতরে পাওয়া বীজ এবং শুকনো ফলগুলির সংমিশ্রণ। এটি একটি স্ন্যাক্স। অনেক রান্নায় এটি ব্যবহার করা হয়। বাদাম বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
সর্বোৎকৃষ্ট ৪রকমের বাদাম
বাদাম কত প্রকার বলতে গেলে অনেক বাদামের কথা মাথায় আসে তবে, বাদাম সাধারণত চার প্রকার। কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাজু বাদাম। এছাড়াও বাজারে অনেক রকমের বাদাম পাওয়া যায়। যা আলাদা আলাদা ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং তাদের স্বাদও ভিন্ন।
বাদাম ৪টির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
এই চার রকমের বাদাম পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খুবই উপকারী। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
কাঠ বাদাম
প্রতি আউন্স কাঠ বাদামে রয়েছে ১৬১ ক্যালোরি , ৫.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৮ গ্রাম ফ্যাট। ক্যালোরি আমাদের দেহের শক্তি যোগায় এবং প্রোটিন দেহের বিকাশ করে। এছাড়াও বাদামে ৩৭ শতাংশ ভিটামিন ই রয়েছে যা ভিটামিন ই একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি যা দেহের অভ্যন্তরে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে।
চিনা বাদাম
প্রতি আউন্স চিনা বাদাম ১৬১ ক্যালোরি, ৪.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৭.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৬ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। এই উপাদানগুলি আমাদের শরীরের ভালো রাখতে প্রয়োজন। চীনা বাদামে উপস্থিত আয়রন ৪.৬ মিলিগ্রাম ও জিঙ্ক ৩.৩ মিলিগ্রাম যা আমাদের সুস্থ রাখতে সহায়ক।
পেস্তা বাদাম
প্রতি আউন্স পেস্তা বাদামে ১৫৯ ক্যালোরি, ৭.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫.৭ গ্রাম প্রোটিন, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ১২.৪৯ গ্রাম ফ্যাট, ভিটামিন বি ৬- ২৪% আরডিআই থাকে। বি 6 দেহের শক্তি বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
কাজু বাদাম
প্রতি আউন্স কাজু বাদামে রয়েছে ১৫৭ ক্যালোরি, ৮.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫.১ গ্রাম প্রোটিন, ০.৯ গ্রাম ফাইবার, ১২.৩ গ্রাম ফ্যাট। এছাড়াও কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ পরিমাণে রয়েছে যা রক্তচাপ কমিয়ে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
কাঠ বাদাম কি
প্রাচীনকালে তিন হাজার বছর আগে কাঠবাদাম ফল হিসাবে খ্যাতি ছিল। কাঠবাদামের ফল দেখতে প্রায় অনেকটা গোলাকার এবং কাঠের মতো শক্ত খোলসের আবরণ দিয়ে ঢাকা। খোলসের অভ্যন্তরে থাকে বাদামের খাবারের অংশটি।
কাঠ বাদাম হল একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী উপাদান যা যেকোনো খাদ্যের জন্য একটি চমৎকার সংযোজন এবং এটি প্রচুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাথে যুক্ত। কাঠ বাদামে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যাামাইনো অ্যাসিড ও ফলিক অ্যাসিড। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, উপকারি ফ্যাট, প্রোটিন, মিনারেলস, ভিটামিন সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কাঠবাদাম আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি বাদাম। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। চোদোন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা গুলো।
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি– কাঠবাদামে থাকা পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই বাদামে থাকে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি পুষ্টিগুণ রিবোফ্লাভিন ও এল ক্যারনিটিন। এই উপাদান দুটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি স্মৃতিভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৪-৬ টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের কাজের উন্নতি ঘটে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকারী ফ্যাট উৎস হিসেবে কাঠবাদাম বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য কাঠবাদাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। এছাড়া এতে আলঝেইমার হবার সম্ভাবনাও কম।
- ক্যানসার প্রতিরোধে – কাঠবাদাম কোলোন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি কোলন ক্যান্সার থেকে ভালো রাখতেও কাজ করে।
- ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে – আজকাল তরুণদের মধ্যেও ব্লাড সুগারের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য বাদাম একটি নিরাময় চিকিৎসা। বাদামে কার্বোহাইড্রেট খুব কম পরিমাণে থাকে কিন্তু এটি উচ্চ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পারফেক্ট চয়েস।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে এবং বাদাম খেলে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বাড়ায় এবং রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রনে থাকে।
- হার্ট ভালো রাখে– এফ.ডি.এ অনুসারে, নিয়মিত ১.৫ গ্রাম ওজনের কাঠ বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। পুষ্টি ভরপুর কাঠ বাদাম হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এই বাদামগুলি ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।২০১৫ সালে আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত খাবারের তালিকায় এই বাদাম থাকলে, এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি হ্রাস পায়।
- রক্তের কোলেস্টেরল উন্নত করতে পারে – রক্তের কোলেস্টেরলের উপর কাঠ বাদামের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। দুই ধরণের কোলেস্টেরলের মধ্যে এলডিএল কোলেস্টেরল খারাপ কোলেস্টেরল হিসাবে চিহ্নিত, যাতে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। কাঠ বাদাম রক্তের এই খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে।
- গর্ভস্থ শিশুর জন্মকালীন সমস্যা হ্রাস– কাঠবাদাম ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি। যা গর্ভস্থ শিশুদের জন্মকালীন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা কম। তাই গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে – কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক-বাদাম খাওয়ার পর খিদে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য– বাদামের ফাইবার শরীরের জন্য উপকারী। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে।
- টেস্টোস্টেরন: টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি এবং উৎপাদনে সাহায্য করে ।
কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাঠ বাদাম কাঁচা খাওয়া যায় আবার জলে ভিজিয়েও খাওয়া যায়।
তবে পুষ্টিবিদের মতে সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে বাদাম খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।
দৈনিক কতটুকু কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত
মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের গবেষণা মতে দৈনিক ১০ থেকে ১৩ টি কাঠ বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
কাঠ বাদামের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঠ বাদাম খেলে যেমন উপকার পাওয়া যাবে ঠিক তেমন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে এর কিছু সাইড এফেক্ট রয়েছে। যেমন-
- অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণে ওজন বাড়তে পারে।
পেস্তা বাদাম
মিষ্টির শোভা বাড়ানোর এই শুকনো পেস্তা বাদাম সকলের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত খাদ্যের মধ্যে অন্যতম।
স্বাস্থ্যের জন্য পেস্তা খুব উপকারি। এটি দূষিত রক্তকে শুদ্ধ করে। এমনকি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ থেকেও রক্ষা করে। নিয়মিত পেস্তা বাদাম খেলে রোগমুক্ত হয়। এছাড়াও রয়েছে অনেক গুণাবলী।
পেস্তা বাদাম কি
পেস্তা একধরনের শুকনো ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম পিস্তাসিয়া ভেরা। পেস্তা পুষ্টিতে সমৃদ্ধ একটি ফল যা আমাদের খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি উপাদানের অভাব পূরণ করে এবং ভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি থেকে প্রতিরোধ করে।
পেস্তা এমনই এক সুস্বাদু বাদাম যা যেকোনো খাবারের স্বাদ দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয় তা মিস্টি-ক্ষীর হোক বা আইস্ক্রিম। হালকা সবুজ রং এর শুকনো এই বাদাম রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগ থেকেও রক্ষা করে।
পেস্তা বাদামের পুষ্টিগুণের উপকারিতা
তিস্তা বাদাম দেখতে যতটা সুন্দর খেতেও অতটাই মজা আর এর পুষ্টিগুনো রয়েছে অনেক এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী চলুন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা গুলো।
- নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিস– খুব দারুনভাবেই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে পেস্তা বাদাম। মূলত উপকারী এই বাদামটি গ্লাইকেশন প্রক্রিয়ার হারকে কমিয়ে আনে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ– বেটা-ক্যারোটিন, লুটিন ও গামা-টকোফেরলসহ চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস হল পেস্তা বাদাম। বেটা-ক্যারোটিন ও গামা-টকোফেরল যথাক্রমে ভিটামিন- এ ও ই এর অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। এদিকে ভিটামিন-এ ও ই উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ত হিসেবে কাজ করে এবং অক্সিডেটিভ ড্যামেজের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- সুস্থ রাখে হৃদযন্ত্র– সঠিক পরিমাণ পেস্তা বাদাম গ্রহণ হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের অন্যতম উৎস হওয়ার দরুন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমাতে কাজ করে পেস্তা বাদাম। এই খারাপ কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে যাবতীয় হৃদরোগ দেখা দেওয়ার অন্যতম বড় একটি কারণ।
- স্নায়বিক সিস্টেম – পেস্তা বাদামে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা স্নায়বিক সিস্টেমের জন্য খুব উপকারি। এই ভিটামিন নার্ভ তন্ত্রগুলির চারপাশে মায়েলিন ঘনত্ব তৈরি করে, যা নার্ভের তন্ত্রগুলির মাধ্যমে অন্য স্নায়ু থেকে বার্তা প্রেরণ করে।
- হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি – পেস্তা বাদামে উপস্থিত ভিটামিন বি ৬ নামক প্রোটিনের উপাদান, যা রক্তে অক্সিজেন বহন করে। যদি প্রতিদিন এটা খাওয়া যায় তবে রক্তে হিমোগ্লোবিন এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- জ্বলন থেকে রক্ষা – এই বাদামে জ্বালা প্রতিরোধ করার গুণাবলী প্রচুর। পেস্তায় সমৃদ্ধ ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং জ্বলন প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে হ’ল যা শরীরের কোনও রকমের সমস্যায় হাত থেকে রক্ষা করে।
- চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি – পেস্তা চোখের জন্যও খুব উপকারি এবং চোখের রোগের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এটি মাস্কুলার বিকৃতি থেকে রক্ষা করে, যা বৃদ্ধ বয়েসে চোখের সাধারণ সমস্যা এবং যার ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। পেস্তা বাদামে লুটিন এবং জ্যাক্স্যান্থিন নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ পাওয়া যায়, যা এই মুক্ত রেডিকেলসকে আক্রমণ করে এবং তাদের ধ্বংস করে। কোষগুলোকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।
- ক্যালোরি ও প্রোটিন– পেস্তায় ক্যালোরির পরিমাণ যেমন কম, তেমনই এই বাদাম হাই-প্রোটিন সমৃদ্ধ। অন্যান্য বাদামের তুলনায় পেস্তায় অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি।সকালে আপনি পেস্তা খেলে ভালো উপকার পাবেন। সন্ধ্যায় ব্যায়াম করার পরে পেস্তা খাওয়া শরীরকে শক্তি দেয়।
পেস্তা কোন সময়ে খাওয়া উচিত
সকালে আপনি পেস্তা খেলে ভালো উপকার পাবেন। সন্ধ্যায় ব্যায়াম করার পরে পেস্তা খাওয়া শরীরকে শক্তি দেয়। তবে রাতের বেলা একদমই খাওয়া উচিত নয়।
পেস্তা বাদামের সাইড এফেক্ট বা অপকারিতা
অতিরিক্ত পরিমাণে পেস্তা বাদাম খেলে কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে যেমন-
- অ্যালার্জির সমস্যা।
- কাশি, হাঁচি, ফুসকুড়ি এবং মুখের ফোলাভাবের মতো লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, পেট খারাপ হতে পারে।
- রাতের বেলা একদমই খাওয়া উচিত নয়।
চিনা বাদাম
চিনা বাদাম, জনপ্রিয় বাদামের মধ্যে অন্যতম। ব্যস্তময় জীবনে কাজের ফাঁকে এটি খেতে অসাধারণ লাগে। এটি শুধু খেতেই সুস্বাদু তাই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। চিনা বাদামগুলি বীজের তেল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য ভারতে জনপ্রিয়। এগুলি মাটি থেকে প্রাপ্ত।
চিনা বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সোডিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম।
চিনা বাদাম কি
চিনা বাদাম হল মুখরোচক স্ন্যাকস। এই বাদামটি বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- হিন্দিতে ‘মুঙ্গফালী‘, তেলেগু ভাষায় ‘পাললেউ’, তামিল ভাষায় ‘কাদালাই’, কানাডায় ‘কাদালে কৈাই’, মালয়ালামে ‘নিলাক্কাদালা’, নামে পরিচিত।
চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
চিনা বাদাম প্রায় সর্বত্রই সব জায়গায় এবং সারা বছরেই পাওয়া যায়। অনেক বাড়িতেই এটি স্ন্যাকস হিসাবে রাখা হয়। স্ন্যাকসের পাশাপাশি চিনা বাদাম খওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমদের জানা প্রয়োজন। আসুন দেখে নিই এই বাদাম খাওয়ার উপকারিতাগুলি –
- পাকস্থলী ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে – পলি-ফেনোলিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি চিনা বাদামে উচ্চ মাত্রায় উপস্থিত। যা পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- প্রচুর শক্তির উৎস – চিনা বাদাম প্রচুর পরিমানে খনিজ, পুষ্টি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ধারন করে এবং প্রচুর পরিমাণ শক্তির উৎস এটি।
- খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা কমায়– কোলেস্টেরল হওয়ার একমাত্র কারণ হল অপুষ্টিকর খাবার এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাদ্য গ্রহণ। নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- দীর্ঘ জীবন পাওয়া যায় – চিনাবাদাম খেলে জীবন দীর্ঘায়ু হয় এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। WebMd অনুসারে, একটি গবেষণায় দেখা গিছে যারা প্রতিদিন চিনাবাদাম খান তারা বেশি দিন বাঁচেন। তাহলেও এটি নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
- ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে – আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে এই বাদাম খেয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায় সহজেই।
- বিশেষজ্ঞদের মতে চিনাবাদামে একটি লো-গ্লাইসেমিক খাবার, যা খেলে রক্তে শর্করা হঠাৎ বাড়ে না। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে চিনাবাদাম মহিলাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কম হতে দেখা গিয়েছে।
- ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে – চিনা বাদাম রয়েছে ভিটামিন ই এবং ম্যাগনেসিয়াম যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ত্বক গ্লোয়িং করে তোলে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত চিনা বাদাম খাওয়ার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়ার প্রবণতা কম থাকে।
- চুলের পুষ্টি জোগায় – চুলের স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে যে সমস্ত প্রোটিনের প্রয়োজন তা চিনা বাদামে রয়েছে। এতে উচ্চ মানের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা মাথার স্ক্যাল্প শক্তিশালী করার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি করে ।
চিনা বাদামের সাইড এফেক্ট বা অপকারিতা
যেকোনো খাবার খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত খান তাহলে শরীরে খারাপ প্রভাব পড়ে। ঠিক তেমন চিনা বাদাম অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তার কিছু সাইড এফেক্ট থাকে। চিনা বাদাম মাত্রাতিরিক্ত খেলে আমাদের যা সমস্যা হতে পারে সেগুলি হল-
- বেশি পরিমাণে চিনাবাদাম গ্যাস, বুক জ্বালা বা অ্যাসিডিটি হতে পারে।
- চিনাবাদাম অ্যালার্জি হতে পারে।
- গরমে অতিরিক্ত খেলে পেট খারাপ হতে পারে।
- থাইরয়েড যাদের আছে তাদের সমস্যা হতে পারে।
- আপনার ত্বকের চুলকানি এবং ফুসকুড়ি হতে পারে।
চিনা বাদাম খাওয়ার নিয়ম
অসাধারণ কার্যকরী ফ্যাট শরীর থেকে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এই বাদাম শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।
প্রতিদিন একমুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে।
রাতে ১০-১৫ টি বাদাম জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাজু বাদাম
সুস্বাদু স্বাদের কারণে সারা বিশ্বে কাজু সকলের প্রিয় খাবার। বহু ভারতীয় রান্নায় স্বাদবর্ধক হিসেবে কাজু ব্যবহৃত হয়। তবে শুধু তরকারি নয়, ভারতীয় নানা মিষ্টির ঐতিহ্যবাহী উপাদান হল কাজু। এমনকী জন্মদিনের পায়েসও কাজু ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যে কোনও পদে স্বাদের সঙ্গে সুবাসও যোগ করে কাজু। তাই ভারতীয় রান্নাঘরে কাজুর দেখা মেলেই।
কাজুর পাশাপাশি আখরোটও যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং উপকারী। তবে কাজু সারা বছরই প্রায় পাওয়া যায়। দামও মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যে। তাই একটি পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে কাজু বেশি ব্যবহৃত হয়।
কাজুবাদামের উপকারিতা
কাজুর বহু স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তাই আপনার খাদ্যতালিকায় কাজু অবশ্যই যোগ করা উচিত। তবে মুঠো মুঠো কাজু খেলে চলবে না। খেতে হবে ৪ থেকে ৫টি কাজু। তাতেই হবে কামাল।
1. ওজন কমাতে – প্রচলিত ধারণা অনুসারে যে কোনও বাদাম ওজন বাড়ায়! হ্যাঁ, বাদামে প্রচুর ফ্যাট থাকে। তাই বেশিমাত্রায় বাদাম খেলে ওজন বাড়ে। তবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বাদাম খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত যাঁরা নিয়মিত কাজু বাদাম খান তাদের ওজন কিন্তু ঝরতে শুরু করে। কাজু এবং অন্যান্য বাদামে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপকারী ফ্যাট বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ায়। ফলে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট বার্ন করা সহজ হয়। তাছাড়া কাজু একবার খেলে দীর্ঘসময় পেট ভরে থাকার অনুভূতি দেয়। ফলে উলটোপালটা খাবার খাওয়ার দরকার পড়ে না। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালোরিও প্রবেশ করে না। ফলে ওজনও বাড়ে না।
2. ত্বকের জন্য – কাজুতে রয়েছে তামা এবং পর্যাপ্ত মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তামা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষের ধ্বংস হওয়া রোধ করে। ফলে নিয়মিত কাজু খেলে চেহার হয় উজ্জ্বল। এছাড়া কাজু বীজ থেকে প্রস্তুত কাজু তেলও ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কাজু তেলে সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস যা ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। সহজে বলিরেখা আসতে দেয় না। ত্বক রাখে টানটান।
3. চোখের জন্য – কাজুতে রয়েছে লুটেইন নামে উপকারী উপাদান। এছাড়া রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। দু’টি উপাদানই বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে চোখকে রক্ষা করে। দৃষ্টিশক্তিও উজ্জ্বল করে। এছাড়া কাজুতে রয়েছে বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জিয়াজ্যান্থিন যা চোখের ম্যাকুলা অংশের ক্ষয় রোধ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফিল্টার হিসেবে কাজ করে সূর্যের রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করে।
4. মাইগ্রেন– ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিতে শরীরে দেখা দিতে পারে একাধিক অসুখ। নিয়মিত কাজু খেলে শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রায় ভারসাম্য আসে। কাজু ভিটামিন ই-এর একটি ভালো উৎস যা স্নায়ু কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে মাইগ্রেনের মতো মাথাব্যথার সমস্যা কমতেও সাহায্য করে।
5. ক্যান্সার প্রতিরোধ– প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিনের উৎস হল কাজু। উপাদানটি এক ধরনের ফ্ল্যাভোনল যা শরীরে ক্যান্সার কোষের প্রতিলিপি তৈরিতে বাধা দেয়।
6. হার্টের অসুখ প্রতিরোধে– কাজুতে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড এবং অসম্পৃক্ত চর্বি যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রক্তনালীগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের সমস্যাও প্রতিরোধ করা যায়।
কাজু বাদামের অপকারিতা
কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতার সাথে বেশ কয়েকটি অপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা গুলো।
- যেসব ব্যক্তিদের অ্যালার্জি আছে সেই সব ব্যক্তিদের কাজুবাদাম খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারণ কাজু বাদামের মধ্যে অ্যালার্জি আছে। অ্যালার্জি লক্ষণ হবে গায়ে চুলকানি, ফুসুরি, ফোলা ভাব, লাল ভাব ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক, ষ্ট্রোক হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, পেটে ফোলা ভাব, গ্যাস, অম্বল সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে কিডনিতে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক পরিমাণ
কাজু বাদাম যদি প্রতিদিন নিয়মিত খাওয়া হয়, তাহলে তার সঠিক পরিমাণ হল পাঁচ থেকে আটটি, প্রত্যেকদিন কাজু বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
- কাজু বাদাম আমরা যখন খুশি সরাসরি খেতে পারি।
- কাজু বাদাম অনেক মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- কাজু বাদাম ক্ষীর এবং হালুয়া বানাতেও ব্যবহার করা হয়।
- কাজু বাদাম স্নাক্সের সঙ্গে সামান্য মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক সময়
কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক সময় হল সকাল বেলা খালি পেটে।
এছাড়াও যখন ইচ্ছা তখনই খাওয়া যেতে পারে কাজু বাদাম।
One Comment