আখের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাবার নিয়ম
আখ বা ইক্ষু পোয়াসি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর রস চিনি ও গুড় তৈরির জন্য ব্যবহার হয় বলে এর চাষ করা হয়। আখ শব্দের উৎপত্তি ইক্ষু থেকে। আখ হচ্ছে বাঁশ ও ঘাসের জাতভাই।
বাংলাদেশে এর যে প্রজাতি চাষ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আখ উৎপাদিত হয় নাটোর জেলায়। একক জেলা হিসেবে বাংলাদেশের ১৫ টি সরকারি চিনিকলের মধ্য এই জেলায় দুটি চিনিকল অবস্থিত।
আখ একটি বর্ষজীবি উদ্ভিদ। প্রথাগতভাবে আখের কান্ডের একটি টুকরার দুই-তৃতীয়াংশ মাটিতে পুঁতে দিয়ে এর চাষ করা হয়। তবে ইদানীং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণাগারে টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও আখের ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
আখ এবং আমাদের দৈনিক চাহিদা পূরণ
আখ থেকে আমরা কী পরিমাণ পুষ্টি উপাদান পাই এবং সেটি আমাদের দৈনিক চাহিদার কতটা পূরণ করে, সে বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট টেবিল তৈরি করা কঠিন। কারণ:
- সেবনের ধারা গুরুত্বপূর্ণ:
- কাঁচা আখ: আমরা সাধারণত কাঁচা আখের ডাল বা freshly squeezed juice হিসেবে খাই। বিভিন্ন জাত এবং চাষের পরিবেশের উপর নির্ভর করে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।
- শোধিত চিনি: শোধিত সাদা চিনি আখ থেকে তৈরি হয়, তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এটি প্রায় সব ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার হারিয়ে ফেলে।
- আখ একটি জরুরি পুষ্টি উপাদানের উৎস নয়:চিনি, আখ বা অন্য কোন উৎস থেকে আসুক না কেন, এটি ক্যালোরি সরবরাহ করে তবে আমাদের দৈনিক চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল বা প্রোটিনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থাকে না। এটিকে “empty calorie” খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
- মধ্যপন্থা অবলম্বনই মূল চাবি:অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে স্বাস্থ্যের উপর এর বিরূপ প্রভাব পরবে।
১০০ গ্রাম কাঁচা আখের রস
১০০ গ্রাম কাঁচা আখের রস কী পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে সে সম্পর্কে একটি আনুমানিক ধারণা (nirói dhārণā) নিচে দেওয়া হলো, তারপরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উল্লেখ করা হলো:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (আনুমানিক) | দৈনিক চাহিদার শতাংশ (আনুমানিক)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৪০-৪৫ | ২% – ২.২৫% |
চিনি | ১০-১২ গ্রাম | |
ফাইবার | নগণ্য (nagônyo) | 0% |
ভিটামিন ও মিনারেল | অল্প পরিমাণে | নগণ্য |
*একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েট এবং গড় প্রাপ্তবয়স্কদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
- Empty Calories আখের রস দ্রুত শক্তি যোগায় তবে শরীরের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি পুষ্টি উপাদানের অভাব রয়েছে।
আখ এর উপকারিতা
আজকের এ সময়ে অসংখ্যা রোগ আমাদের ঘিরে ধরেছে, তার প্রায় সবকটির প্রকোপ কমাতেই আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম,ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম এবং আরও সব উপকারি উপাদান নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত সমস্যা দূরে করে
আখের রসে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড মেয়েদের শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে বাচ্চার শারীরিক উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না।
এই কারণেই তো গর্ভাবস্থায় নারীদের নিয়মিত আখের রস খাওয়া পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
ডায়াবেটিসের মতো রোগ দূরে থাকে
গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে একেবারে তলার দিকে থাকার কারণে আখের রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। বরং এই প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই তো ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম খরে আখের রস খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে ডায়াবেটিকদের একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আখের রস খাওয়া উচিত। কারণ জেনে নেওয়া উচিত এই রসটি খেলে তাদের শরীরে অন্য় কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে কি-না!
রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
আখের শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। প্রসঙ্গত, ক্যানসার রোগকে দূরে রাখতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার বুঝেছেন তো আখের রস খাওয়াটা কতটা জরুরি।
কনস্টিপেশনের মতো রোগ দূর পালায়
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, আখের রসে উপস্থিত ল্যাক্সেটিভ প্রপাটিজ বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে সময়ই লাগে না। সেই সঙ্গে আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দেহের প্রতিটা অঙ্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আখের রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
বিশেষত সেনসরি অর্গেন, রিপ্রাডাকটিভ অর্গেন এবং ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আয়ুও বাড়ে চোখে পরার মতো। এবার নিশ্চয় বুঝেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে বাঁচতে আখের রস খাওয়ার প্রয়োজন কতটা।
কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আখের রসে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সেই সঙ্গে কিডনি স্টোনের মতো সমস্যা দূর করতেও সাহায্য় করে। প্রসঙ্গত, কিডনি ফাংশনকে ঠিক রাখতেও আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
এনার্জির ঘাটতি দূর হয়
সারা দিন অফিস করে কি বেজায় ক্লান্ত হয়ে পরেছেন? তাহলে ঝটপট এক গ্লাস আখের রস খেয়ে ফেলুন। দেখবেন একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।
আসলে আখের ভিতরে থাকা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম এবং অন্য়ান্য় উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এনার্জির ঘাটতি দূর করে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন এবং শরীর, দুইই চনমনে হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, আখের রস শরীরের ভিতরে প্লাজমা এবং বডি ফ্লইডের ঘাটতি মেটায়। এভাবেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়য়ে তোলে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
আজ থেকেই আখের রস খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন হজম ক্ষমতা একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
আসলে এই প্রকৃতিক উৎপাদনে উপস্থিত পটাশিয়াম, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হজমে সহায়ক একাধিক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যে কারণে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।
লিভারের ক্ষমতা বাড়ে
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সম্পর্কিত একাধিক বইয়ে এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যে লিভারকে সুস্থ রাখতে আখের রস দারুন কাজে আসে। সেই কারণেই তো জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে রোগীকে আখের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
শুধু তাই নয়, শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদা মেটাতেও আখ বিশেষ ভূমিকা নেয়।
ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়
সম্প্রতি হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আখের রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে ফ্লবোনয়েড নামক একটি বিশেষ উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এই উপাদানটি ক্যানসার সেলেদের ধ্বংস করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বর্তমানে যে হারে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে প্রায় সবারই যে প্রতিদিন আখের রস খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই!
ত্বকের বয়েস কমে
শরীরের বয়স বাড়লে ত্বকের বয়স তো বাড়বেই! কিন্তু আপনি যদি চান, তাহলে কিন্তু এমনটা আপনার সঙ্গে নাও হতে পারে।
নিয়মিত আখের রস খেলে দেহের ভিতরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্লেবোনয়েডের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এই দুটি উপাদান ত্বক এবং শরীরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে শরীরের পাশাপাশি ত্বকের বয়স বাড়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে
হাই কোলেস্টেরলের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই আখের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা বেশ কিছু উপাদান খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করে।
মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে নিয়মিত আখের রস খেলে হাড় শক্তপোক্ত তো হয়ই, সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।
আখের রসের অপকারিতা
আখের রসের এতো উপকারিতা থাকার পরেও এর রয়েছে কিছু অপকারিতা। অতিরিক্ত পরিমাণ আখের রস খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকম অপকারিতা দেখা দিতে পারে। আখের রসের অপকারিতা গুলো কি কি তা নিচে দেওয়া হলো।
- রাস্তাঘাটে আখের রস কিনতে পাওয়া যায় এগুলো অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে কারণ এগুলোতে ধুলা ময়লা পড়ে থাকে তাই এই আখের রস হতে পারে স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং পেটের ক্ষতি করে।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আখের রস অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া কিছুটা ক্ষতিকর ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত পরিমাণ আখের রস খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
- অনেক সময় যারা আখের রস বিক্রি করে তারা টাটকা আখ থেকে রস বের করে না আর সেজন্য সেই আখের রস খাওয়া কিছুটা বিষাক্ত। তাই যদি আখের রস খেতে চান তাহলে টাটকা আখ কিনে বাসায় রস করে খেতে পারেন।
- আখের রস ঠান্ডা হয়ে থাকে তাই শীতকালে আখের রস খেলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এবং মাথাব্যথা সর্দি লেগে যেতে পারে। তাই শীতকালে আখের রস কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর খেলেও কম পরিমাণ খাবেন।
- আখের রসের মধ্যে রয়েছে একটি উপাদান যা রক্ত পাতলা করে দিতে অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় যার ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যায় এবং শরীর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।
- একবারে অতিরিক্ত পরিমাণ আখের রস খাওয়ার কারণে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং মাথা ব্যথা করতে পারে তাই অতিরিক্ত পরিমাণ আখের রস খাবেন না।
আখের রস খাওয়ার নিয়ম
আখের রস খাওয়ার নিয়ম হলো প্রথমে একটি আখ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবেন এবং সেটা থেকে রস বের করে নিবেন রস বের করে নেওয়ার পরে রসগুলো ভালোভাবে ছেঁকে নিবেন ছেঁকে নেওয়ার পরে সেই আখের রস খাবেন।
আখের রস কখন খাওয়া উচিত আখের রস খাওয়া উচিত বিকেল টাইমে রাতের বেলা আখের রস না খাওয়াই ভালো এছাড়াও দুপুরের সময় আখের রস খেতে পারেন। এই নিয়মগুলো মেনে যদি আখের রস খান তাহলে ভালো উপকারিতা পাবেন।
বাংলাদেশের আখের উৎপাদন
বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর ০.৪৩ মিলিয়ন একর জমিতে ৭.৩ মিলিয়ন মে.টন আখ উৎপন্ন হয়। দেশের ১৫টি চিনিকলে বছরে গড়ে ১.৫-১.৯৯ লক্ষ মে. টন চিনি উৎপন্ন হয়, বাকিটা গুড় ও খাওয়ার জন্য ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠান চিনি শিল্প নিয়ন্ত্রণ করে।
বেসরকারিভাবে ২০০৭-এ আরো ৩টি কোম্পানি চিনি উৎপাদনে আসছে, যার মধ্যে মেঘনা গ্রুপের বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬ লাখ মে. টন বলে বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাৎসরিক চিনির চাহিদা ১০-১২ লক্ষ মে. টন যার ১.৫ লক্ষ টন দেশে উৎপন্ন হয়, বাকিটা আমদানি ও চোরাই পথে আসে।
আঁখের চাষাবাদ পদ্ধতি
এঁটেল, দোঁআশ ও এঁটেল-দোঁআশ মাটিতে আখ ভালো জন্মে৷ গভীর পলিমাটিতেও আখ ভালো উত্পন্ন হয়৷ বেলে ও ইট পাটকেলযুক্ত মাটিতে আখ মোটেই ভালো হয় না৷
আখের জমি উচু ও সমতল হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ যেসব নিচু জমিতে সহজেই পানি জমে যায় এবং পানির নিঃসরণ ভালো হয় না সেসব জমি আখ চাষের উপযোগী নয়৷
আখের জমি ৩/৪ বার চাষ ও বার কয়েক মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়৷ জমি তত সূক্ষ্নভাবে/ খুব মিহি করে চাষ করার প্রয়োজন হয় না৷ পূর্ববতী ফসল আখ হলে সে ফসলের গোড়া জমি হতে উঠিয়ে অন্যত্র ফেলে দিতে হবে৷
যেহেতু আখের জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন সেজন্য সমস্ত জমিকে ৫০ ফুট অর্থাত্ ১৫.১ মিটার প্রশস্ত ও ১০০-২০০ ফুট অর্থাত্ ৩১-৬২ মিটার দৈর্ঘ্য ফালিত ভাগ করে নিলে নিষ্কাশনের জন্য নালা কাটা সুবিধাজনক হয়৷
আখের বীজ বলতে আখের ছোট ছোট টুকরাকেই বোঝায়৷ যে আখ ফসলে রোগ পোকার আক্রমণ ও ভিন্ন জাতের মিশ্রণ নেই সে যেন ফসল হতেই বীজ সংগ্রহ করা শ্রেয়৷ একটি আখ দণ্ডের দিক হতে বীজ সংগ্রহ করা ভালো, কারণ আগার দিকের বীজ হতেই ভলো চারা গজায়৷
তাই আগের দিনে চাষীরা শুধু আখের আগা হইতে একটি মাত্র চারা বা বীজ সংগ্রহ করতেন৷ আসলে নিচের দিকের কিছু অংশ বাদ দিয়ে সমস্ত আখটাই বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ তাই পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে সম্পূর্ণ আখটাই নালায় লম্বালম্বি ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়৷
বীজের জন্য কোনো ক্ষেতের আখ নির্বাচন করার পর সেখান হতে বীজ সংগ্রহ করা হয়৷ প্রতিটি আখ ধারালো দার সাহায্যে টুকরা টুকরা করতে হয়৷ প্রতি টুকরাতে তিনটি করে চোখ যদি বীজ বপনের পর দেখা যায় যে ১০/১৫ দিনের মধ্যেও অন্কুর বের হচ্ছে না তা হলে হালকা ধরনের সেচ দেওয়া ভালো৷
আখ চাষীরা সাধারণত আখ ফসলে পানি সেচ দেয় না৷ কিন্তু উত্তম ফলনের জন্য জমিতে সেচ দেওয়া অত্যাবশ্যক৷
আখ দীর্ঘস্থায়ী ফসল, প্রায় এক বত্সরকাল তা মাঠে থাকে৷ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অন্তত দুটি সময়ে পানি ফসলটির জন্য পানি বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়৷
গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা
আখের রস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপাকারি কিন্তু গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা রয়েছে কিনা এবং খাওয়া যাবে কিনা এই বিষয়ে এখনও অনেকেরই অজানা।
আখের রসের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে যেমন ভিটামিস সি, ভিটামিন এ, বিটামিন বি ১, বি ২, বি ৩ সহ আরো পুষ্টিগুন। এবার জেনে নিন গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা গুলো।
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি দেখা দেয় তাই গর্ভাবস্থায় আখের রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলার দাঁতের সমস্যা দেখা দেয় আর এই দাঁতের সমস্যা দূর করতে আখের রসের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। তাই দাঁতে সমস্যা হলে আখের রস খাবেন।
- গর্ভাবস্থায় মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গর্ভাবস্থায় আখের রস খাবেন।
- গর্ভাবস্থায় আখের রস খেলে গর্ভবতী নারীর লিভার ও কিডনি ভালো থাকে।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের বিভিন্ন রকম সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে চাইলে এবং শরীরে জমা ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে আখের রস বেশ উপকারী।
আখের রসের খির
উপকরণ
- আখের রস- ১ কাপ
- চাল- আধা কাপ
- ঘি- ২ চা চামচ
- দুধ- ১ কাপ
- এলাচ- ৩টি
- কিসমিস- ২ চা চামচ
- ক্যাশিউ নাট- ৮/১০টি
- আমন্ড- ৮/১০টি
প্রস্তুত প্রণালি
একটি গোলাকার পাত্রে দুধ, চাল ও সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। চাল নরম হয়ে আসলে আখের রস দিয়ে চুলায় মৃদু আঁচে বসিয়ে দিন পাত্র। ঘি দিয়ে ভালো করে নাড়ুন। চাল সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
আরেকটি প্যানে ঘি গরম করে এলাচ, কিসমিস, ক্যাশিউ নাট ও আমন্ড ভেজে নিন। ক্ষীরের পাত্রে ভাজা বাদাম দিয়ে রান্না করুন আরও কিছুক্ষণ। গরম গরম পরিবেশন করুন আখের রসের ক্ষীর।