ধুন্দুলের উপকারিতা, রেসিপি এবং চাষ পদ্ধতি
সবুজ রঙের ধুন্দুল সবজির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। এই সবজি সারা বছরই পাওয়া যায়। মাছ রান্না বা ভাজি যা-ই বলুন; এই সবজির তরকারি খুবই সুস্বাদু।
এটি দেখতে অনেকটা ঝিঙের মতো। যা জুকিনি, কোর্জেট নামেও পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয় একটি খাদ্য এই সবজি। বর্তমানে জাপান, চীন, রোমানিয়া, ইতালি, তুরস্ক, মিসর এবং আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা চাষের মাধ্যমে এটির উৎপাদন করেন।
ধুন্দুলের পুষ্টি উপাদান
ধুন্দুলের পুষ্টির তথ্য দেওয়া একটু জটিল, কারণ এর পুষ্টি উপাদান রান্নার ধরন অনুযায়ী বদলে যায়। তবুও আমি ১০০ গ্রাম কাঁচা ধুন্দুলের একটি সাধারণ পুষ্টিকর তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।
এখান থেকে আপনি দৈনিক চাহিদার কিছুটা হিসাব পাবেন।
১০০ গ্রাম কাঁচা ধুন্দুলে থাকা পুষ্টি উপাদান এবং দৈনিক চাহিদার শতাংশ:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদার শতাংশ (প্রায়) |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১৪ | ০.৭০% |
প্রোটিন | ০.৭ গ্রাম | ১.৪% |
চর্বি | ০.১ গ্রাম | ০.১৫% |
ফাইবার | ১.২ গ্রাম | ৪.৮% |
ভিটামিন C | ২১ মিলিগ্রাম | ২৮% |
ভিটামিন K | ৫ মিক্রোগ্রাম | ৬.২৫% |
ফোলেট | ৬ মিক্রোগ্রাম | ১.৫% |
ক্যালসিয়াম | ১৯ মিলিগ্রাম | ১.৯% |
আয়রন | ০.৪ মিলিগ্রাম | ২.২% |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৫ মিলিগ্রাম | ৩.৭৫% |
পটাশিয়াম | ৯০ মিলিগ্রাম | ১.৯১% |

এখানে লক্ষ্য রাখুন
- ধুন্দুল রান্না করার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে এর পুষ্টিগুণের পরিমান পরিবর্তন হয়।
- এই শতাংশগুলো ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটের উপর নির্ধারিত। আপনার দৈনিক চাহিদা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক কর্মতৎপরতার উপর ভিত্তি করে আলাদা হতে পারে।
ধুন্দুলের উপকারিতা
ধুন্দুলে রয়েছে পানি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফোলেট এবং বিটা ক্যারোটিন। আসুন জেনে নেই ধুন্দুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা-
- হজম ক্ষমতা বাড়ায় ধুন্দুল। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় পেটের নানাবিধ সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও পাশাপাশি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- হার্ট ভালো রাখতে এই সবজি। ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম এবং ফোলেট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় হার্টের ভালো রাখে। এতে থাকা ফাইবার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- এই সবজি দৃষ্টিশক্তি ভালা রাখে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন থাকায় চোখের দৃষ্টি উন্নত করে।
- এতে স্টার্চ ও কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং ফাইবার ও পানির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটি স্বল্প ফ্যাটযুক্ত খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণ আনে।
- এই সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি। যা ক্যান্সারের জীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- এই সবজিতে থাকা লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক দুটি ক্যারোটিনয়েড হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেট হাড়ের বৃদ্ধিতে খুবই উপকারী।
- মাথার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ধুন্দুলে থাকা ভিটামিন-বি ২, ভিটামিন-সি এবং জিঙ্ক মাথার চুলের বৃদ্ধিতে ও চুলের গোড়া শক্ত করে। এছাড়া শুষ্ক, রুক্ষ চুল ও খুশকি দূর করে।

সবুজ ধুন্দল ভাজি
উপকরণ
তিনটি মিডিয়াম সাইজের ধুন্দল খোসা ছাড়িয়ে চাক চাক করে কেটে নিতে হবে
- এক কাপ পেঁয়াজ কুচি
- হাফ চা চামচ ধনিয়া কুচি
- স্বাদ মত লবণ
- হাফ চা চামচ সরিষা
- শুকনো মরিচ তিনটা
- পরিমাণ মত তেল
প্রণালী
প্রথমে চুলায় একটা প্যান বসিয়ে এটা গরম করে নিতে হবে।
তারপর এর ভিতর চার টেবিল চামচ পরিমাণ তেল নিতে হবে।
যখন তেলটা গরম হয়ে আসবে তখন এর ভিতর শুকনো মরিচ মাঝ থেকে ভেঙ্গে দিয়ে দিতে হবে।
এবার এগুলো নেড়েচেড়ে সামান্য ভেজে নিতে হবে।এরপর এর ভিতর আস্ত জিরাগুলো দিয়ে দিতে হবে। এখন এর ভিতর পেয়াজ কুচি দিয়ে দিতে হবে। এবার পেয়াজগুলো ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর এগুলো এক থেকে দুই মিনিট ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে।
যখন পেয়াজের কাঁচা গন্ধ চলে যাবে তখন এর ভিতর ধুন্ধলগুলো দিয়ে দিতে হবে। এবার সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর এর ভিতর ধনিয়াগুড়ো দিয়ে দিতে হবে। এখন এর ভিতর স্বাদ মত লবণ দিয়ে দিতে হবে। এবার সবগুলো উপকরণ উপর নিচ করে আবার ও ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এখন এটাকে দশ মিনিট জ্বাল দিয়ে রান্না করে নিতে হবে।
এটা জ্বাল দেওয়ার মাঝে মাঝে একটু একটু করে নেড়ে দিতে হবে। যখন ধুন্দল থেকে পানি বের হবে তখন এটা ভালো করে নেড়ে দিতে হবে। এখন আবার পাঁচ মিনিট এটাকে জ্বাল দিয়ে রান্না করে নিতে হবে।
এটা থেকে অতিরিক্ত পানি শুকিয়ে নিতে হবে। যখন এর ভিতর আর কোন পানি থাকবে না তখন এটা নামিয়ে নিতে হবে।
এটা যখন নাড়তে হবে তখন এটা হালকা করে নাড়তে হবে যাতে ভেঙ্গে না যায়।
ধুন্দলের পানি একদম শুকিয়ে যাওয়ার পর এটা নামিয়ে নিতে হবে। তারপর এটা পরিবেশন করা যাবে।
ধুন্দল চাষ পদ্ধতি
ভালো জাতের বীজ নির্বাচন করতে হবে। বীজ বপনের ২৪ ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ পুঁতে দিতে হবে। মাটিতে রস কম থাকলেই সেচ দেয়া প্রয়োজন। তবে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া উত্তম।
৩- ৪ বার গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আগাছামুক্ত ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। চাষের সময় জমিতে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এরপর ১ ফুট গভীর ও ১.৫ ফুট চওড়া করে মাদা বা ঝাড় করতে হবে।
এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব হবে ৫-৬ ফুট। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, জমির চেয়ে মাদা যেন কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু হয়। ওপরে উল্লেখিত পরিমাণ অনুসারে সার জমিতে প্রয়োগ না করে মাদায়ও প্রয়োগ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় পচা গোবর,
ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি মিলিয়ে ৫-৬ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোমতো মিশিয়ে দিতে হবে। এবং ৫-৬ দিন অপেক্ষা করে বীজ বপন করতে হবে।