ফিটকিরির উপকারিতা, অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
বাড়িতে খাওয়ার পানি পরিস্রুত করার যন্ত্রটি খারাপ হয়ে গেলে আমাদের মনে পড়ে ফিটকিরির কথা। পানিতে ফিটকিরি দিলে অনেক ক্ষতিকর জীবাণু দূর হয়। এ ছাড়া ফিটকিরি আমাদের আরও অনেক উপকারে আসে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ফিটকিরির অন্যান্য গুণাগুণ।
এটি দামে সস্তা, সহজলভ্য এবং ভালো জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত পানি পরিশোধনের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
ফিটকিরির উপকারিতা
ফিটকিরি এর বেশ কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে চলুন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা গুলো।
ইউরিন ইনফেকশন দূর করে
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণাগুণ ফিটকিরিতে পাওয়া যায়, যা ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে সহায়ক। গোপনাঙ্গ ফিটকিরির জল দিয়ে পরিষ্কার করা হয়, যা সংক্রমণ কমায়।
ছোট খাটো চোটেও কাজে দেয়
প্রায়শই ছোট শিশু এবং বৃদ্ধরা অনেক সময় আঘাত পায় যার কারণে তাদের রক্ত বের হতে থাকে। আঘাতের স্থান ফিটকিরির জল দিয়ে পরিষ্কার করলে রক্তপাত বন্ধ হয়।
এছাড়াও, এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। বাড়িতে মায়েরা সন্তান আঘাত পেলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে এটি ব্যবহার করেন।
ত্বকের জন্য উপকারী
ফিটকিরির জল দিয়ে মুখে ম্যাসাজ করলে মুখ পরিষ্কার হয়। একইভাবে, এটি মুখের জন্য ন্যাচরাল ক্লিনজারের কাজ করে এবং ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। ফিটকিরি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। তাতে ফিটকিরি গুঁড়ো করে দিয়ে দিন। পানি ঠান্ডা হলে একটি বোতলে ভরে রাখুন।
নিয়মিত এই জল দিয়ে কুলকুচি করলে দুর্গন্ধের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
ওরাল হেল্থের জন্যও ভাল দাঁতের জন্য প্রাকৃতিক মাউথওয়াশ হিসেবে কাজ করে ফিটকিরি। জলেতে রেখে গার্গল করলে দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর সাথে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যাও দূর হয়।
ব্রণের সমস্যা দূর করতে
গরমের দিনে ব্রণের সমস্যায় নাজেহাল কমবেশি সবাই। এক চামচ মুলতানি মাটি, দু’চামচ ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো মিশিয়ে
একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। ব্রণের সমস্যা বাড়লে এটা মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের লালচে ভাব বা ফোলা ভাব কমবে।
বয়সের ছাপ ঠেকাতে
৪০ পেরোলেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে পানিতে ফিটকিরির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়ে ফ্রিজে বরফ বানিয়ে নিন।
প্রত্যেক দিন এই বরফ মুখে ঘষে নিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দীর্ঘদিন নিয়মিত এই টোটকা মেনে চললে ত্বক মসৃণ ও টানটান হবে।
মাথার ময়লা দূর করে
অনেক সময় শ্যাম্পু মাথার ত্বকের ময়লা দূর করতে পারে না যার কারণে মাথায় উকুন দেখা দিতে শুরু করে। ফিটকিরির জল দিয়ে মাথা ধুলে তা মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় গিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে। মাথায় উপস্থিত উকুনও এর জলে মারে যায়।
ফিটকিরির অপকারিতা
ফিটকিরির বেশ কয়েকটি অপকারিতা রয়েছে চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা
নিয়মানুযায়ী পানিতে ফিটকিরি ব্যাবহার করলে পানির কিছু কিছু জীবাণু যেমন, ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংসহয়।
কিন্তু ভাইরাস ধ্বংসহয়না না। টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয় ও কৃমি সংক্রামন জাতীয় রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় পান করলে পেটে ব্যথা ও বিষক্রিয়া অবধি হতে পারে।
ফিটকিরি কাজ কি
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণাগুণ ফিটকিরিতে পাওয়া যায়, যা ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে সহায়ক।
গোপনাঙ্গ ফিটকিরির জল দিয়ে পরিষ্কার করা হয়, যা সংক্রমণ কমায়। প্রায়শই ছোট শিশু এবং বৃদ্ধরা অনেক সময় আঘাত পায় যার কারণে তাদের রক্ত বের হতে থাকে।
ফিটকিরি কি চোখে দেয়া যায়
ফিটকিরি পানির পিএইচ হ্রাস করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে পানিতে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফিটকিরি মিশ্রিত পানি চোখের সংস্পর্শে এলে চোখ জ্বালা করে।
পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করলে পানির কিছু জীবাণু যেমন—ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস হলেও ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না।
পুকুরে ফিটকিরি কিভাবে প্রয়োগ করতে হয়
অ্যালুমিনিয়াম সালফেট প্রয়োগ করার সময়, পিএইচ 6.5 এবং 8.2 এর মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রায় 8.2 জলের সাথে অ্যালাম মেশানো মাছের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।
এটি জলের পৃষ্ঠের উপরে, জলপ্রপাতের মাধ্যমে বা স্কিমারের মাধ্যমে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যে কোনো উপায়ে আপনি এটি প্রয়োগ করুন, এটি পুকুর বা হ্রদের মাধ্যমে প্রচার করা প্রয়োজন।
মুখে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
ফিটকিরি চূর্ণ পানিতে মিশিয়ে, মুখে মাখুন। শুকিয়ে গেলে, কিছুক্ষণ পর মুখটা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছু দিন করলে, মুখে উজ্জ্বলতা ফিরবে। ব্রণ-ফুসকুড়ির হাত থেকেও মুক্তি পাবেন।