মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাটি মধু চেনার উপায়

মধু আমাদের জন্য আল্লাহ পাকের এক বড় নিয়ামত।মধু হলো প্রায় সকল রোগের মহাঔষধ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মধুকে খাইরুদ্দাওয়া(মহাঔষধ)বলেছেন।আমরা যদি ভালো খাবারের একটি তালিকা করি তাহলে প্রথমের দিকেই মধুকে রাখতে হবে।মধুকে ইউনানি ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মহাঔষধ বলা হয়।নিয়মিত মধু খেলে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে বাঁচা যায়। 

মধুতে কি কি উপাদান আছে

এক গবেষণায় দেখা গেছে মধুতে প্রায় পয়তাল্লিশ টি উপাদান আছে। রাশিয়ার মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় মধুর নমুনা গবেষণা করে দেখছেন মধুতে আছে।

• কপার
• ক্রোমিয়াম
• অ্যালুমিনিয়াম
• টিন,
• লেড,জিংক
• ,জৈবএসিড
• হরমোন
• ভিটামিন
• প্রোটিন
• এসিটাইল কোলিন
• অ্যান্টিবায়োটিকস
• সাইস্টোস্ট্যটিক্স
• পানি( ২০%) ছারাও আছে আরো স্বাস্থ্যকর উপাদান। 

মধুতে কি কি ভিটামিন আছে

মধুতে যেসকল ভিটামিন আছে।

1. ভিটামিন সি
2. ভিটামিন বি-১,বি-২,বি-৩,বি-৫,বি-৬
3. ভিটামিন ই
4. ভিটামিন এ
5. ভিটামিন কে।

মধুর পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১ টেবিল চামচ বা প্রায় ২১ গ্রাম)

বিশেষ দ্রষ্টব্য

• দৈনিক প্রয়োজনীয়তার শতকরা হার একটি ২০০০ ক্যালরি ডায়েটের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

• মধুতে মূলত ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ থাকে, যা উভয়ই প্রাকৃতিক চিনি।

• মধুতে ট্রেস পরিমাণে অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

মধুর উপকারিতা 

মধু ওজন কমায়

মধুতে কোনো প্রকার চর্বি জাতীয় উপাদান নাই। নিয়মিত মধু খেলে পেট পরিস্কার থাকে ও চর্বি কমে।চর্বি কমার কারণে ওজনও কমে।

গাজর ও মধুর উপকারিতা 

যাদের চোখের সমস্যা,চোখে কম দেখেন।তারা ট্রাই করতে পারেন মধু ও গাজরের রস এক সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।ইন্শাল্লাহ আশাকরি মধু ও গাজরের রস নিয়মিত খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়বে।

গরম পানি ও মধুর উপকারিতা 

মধু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরকরে

আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। গ্যাস্ট্রিক নাই এরকম মানুষ খুব কম আছে।

• এই গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধুর সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খান।

• মধুর সাথে কলা ও দই মিশ্রণ করে প্রতিদিন নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইন্শাল্লাহ। 

মধু খেলে শরীরে তাপ বাড়ে

বিশেষ করে শীতকালে আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকে। এই ঠান্ডা থেকে শরীরকে গরম করতে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়।

ত্বকে মধুর উপকারিতা

মধু দিয়ে রূপচর্চা

মধু এমন একটি উপাদান, যার গুণের কোনো শেষ নেই। ডায়াবেটিস রগী বাদে প্রায় ছোট-বড় সবায় খেতে পারে। 

• ত্বককে ভিতর থেকে সুস্থ রাখতে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে, এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবু রস মিশিয়ে খেলে ত্বক ভালো খাকে।

• কোনো একটি পাত্রে সমপরিমাণ  দুধ ও মধু মিশিয়ে ক্রিম বানিয়ে প্রতিদিন গোসলের বিশ মিনিট পূর্বে মুখে লাগিয়ে নেন। মুখে নিয়মিত মধু ও দুধের ক্রিম লাগালে মুখ পরিষ্কার থাকে।

• সমপরিমাণ মধু ও লবঙ্গের গুড়া মিশিয়ে ব্রণে স্থানে লাগান।যতদিন পযন্ত ব্রণ দূর না হবে ততদিন পযন্ত লাগাতে হবে।

• ত্বকের দাগ,মলিনতা প্রশমনে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ফেইসপ্যাক তৈরি করতে হবে।ফেইসপ্যাক তৈরি করতে আধা চা চামচ মধু সাথে আধা চা চামচ টমেটোর মিশিয়ে তৈরি করা যায় বা আধা চা চামচ মধু সাথে আধা চা চামচ শষার রস মিশিয়ে। মধু সাথে তরল বা গুড়া দুধ মিশিয়ে ফেইসপ্যাক তৈরি করা যায়।এই ফেইসপ্যাক সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করবো।

• চুল পড়া বন্ধ ও চুলকে সতেজ রাখতে সপ্তাহে এক দিন এক চা চামচ মধু, একটি কলা,একটি ডিম ও আধা কাপ টক দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে ব্যবহার করি।তাহলে চুল পড়া বন্ধ ও চুলের গোড়া মজবুত হবে।

সতর্কতা

1. শুধু খালি মধু অন্য কোনো উপকরণ ছাড়া ব্যবহার করা নিষেধ।

2. যাদের মধুতে এলার্জি আছে তারা মধু ব্যবহার থেকে বিরত খাকেন।

মধু হজমে সয়হতা করে

যারা প্রতিনিয়ত হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন মধু খেতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত মধু খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়।প্রতি দিন সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খেতে পারেন বা ভারি খাবার খাওয়ার আগে মধু খেতে পারেন।নিয়মিত মধু খেলে পেটের অম্লতা দূর হয়।

মধু খেলে পানিশূন্যতা কমে

আমাদের শরীরে ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।ডায়রিয়া হওয়ার পর এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে পানিশূন্যতা কমে।

মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

নিয়মিত মধু খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা  বৃদ্ধি হয়।মধুকে সকল রোগের ঔষধ বলা হয়। আমাদের শরীরের ভিতর বাহির যেকোনো ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচায় মধু।মধু যেকোনো রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। 

মধু খেলে রক্তশূণ্যতা কমে

মধুতে আছে কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও লৌহ যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই আমরা নিয়মিত মধু খেলে রক্তশূণ্যতা কমবে।

 লেবু ও মধুর উপকারিতা 

মধু খেলে রক্ত পরিস্কার থাকে

কেউ যদি প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ লেবুর রস ও দুই চামচ মধু মিশিয়ে খান। এটি রক্ত পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে। 

মধু খেলে গলার স্বর ভালো হয়

নিয়মিত মধু খেলে গলার কন্ঠস্বর ভালো হয়।এর জন্য বক্তা, শিল্পী ইত্যাদি মানুষ মধু খায় কন্ঠস্বর ভালো হওয়ার জন্য। 

আদা ও মধুর উপকারিতা 

মধু খেলে হাঁপানি ভালে হয়

যাদের হাঁপানির সমস্যা তারা যদি নিয়মিত প্রতিদিন তিনবার সমপরিমাণ মধু ও আদার রসের সঙ্গে আধা গ্রাম গোলমরিচের গুড়া মিশিয়ে খান। তাহলে হাঁপানি ভালো হয়ে যাবে ইন্শাল্লাহ। 

দুধ ও মধুর উপকারিতা

দুধ ও মধু আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপযোগী খাদ্য। দুধ ও মধুতে পুষ্টিকর খাবারের প্রায় সকল উপাদান বৃদ্ধমান। মধুতে আছে পয়তাল্লিশটি উপাদান আর দুধে আছে ক্যালসিয়াম,প্রোটিন এবং ল্যাকটিক এসিড। তাই দুধ ও মধু উভয় আমাদের স্বাস্থের জন্য অনেক উপকারী খাদ্য। 

মধু খেলে হাড় ও দাঁত মজবুত হয়

দুধ ও মধুতে আছে ক্যালসিয়াম,যা আমাদের হাড়,দাঁত ও চুলের গোড়া মজবুত করে।

মধু খেলে ঘুম ভালো হয়

যাদের ঘুম কম হয় তারা নিয়মিত মধু ও দুধ মিশিয়ে খেলে ঘুম ভালো হয়। রাতে ঘুমের আগে নিয়মিত মধু ও দুধ খেলে খুব ভালো ঘুম হয়।

মধু খেলে ফুসফুস ভালো হয়

মধুর সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।

রসুন ও মধুর উপকারিতা 

এক চা চামচ মধুর সাথে তিন বা চার কোয়ার রসুনের রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করি।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মিশ্রণটি যদি খাই তাহলে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর হবে এবং শরীরে কোনো অলসতা থাকবেনা।

খেজর ও মধুর উপকারিকা 

খেজর ও মধু এক সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক গুলো উপকার হয়।নিয়মিত খেজর ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের পানিশূণ্যতা দূর হবে।আমাদের দেহের অনেক চাহিদা পূরণ করে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি। 

কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা 

প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা ও মধু মিশিয়ে খাই তাহলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি হয়। এছাড়া হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।

মধুর অপকারিতা

মধুর উপকারিতা আমরা সবায় জানি।কিন্তু মধুর যে কিছু ক্ষতিকর দিক আছে হয়ত আমরা অনেকেই জানি।মধুর অপকারিতা গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকরঃ

যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সাবধান মধু খাবেন না।কারণ মধুতে চিনির ফ্রুক্টোজ নামক উপাদান আছে। যা রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের শর্করা বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা সাবধানতা অবলম্বন করবেন। 

শিশুদের জন্য ক্ষতিকরঃ

আমরা মধুর উপকারিতা সবায় কমবেশি জানি। তাই অনেক সময় আমরা এই ভুল করে থাকি শিশুদের মুখে মধু তুলে দেই।যে শিশুদের বয়স এক বছরের কম তাদের মুখে ভুলেও মধুও তুলে দিবেন না।কারণ শিশুরা মদু খেলে বিভিন্ন সংক্রমণের আক্রান্ত হয়।

এলার্জি রোগীর জন্য ক্ষতিকরঃ

যারা এলার্জির রোগে আক্রান্ত তারা ভুলেও মধু খাবেন না।কারণ মধু খেলে এলার্জি কমে না বরং এলার্জি আরো বাড়ে। 

ওজন বৃদ্ধি করেঃ

মধু যেমন ওজন কমায় তেমন অতিরিক্ত মধু খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। তাই অতিরিক্ত মধু খাওয়া যাবেনা।

খাঁটি মধু চেনার উপায়ঃ

বর্তমানে ভেজালের যুগে খাঁটি মধু পাওয়া খুবই কঠিন একটি কাজ।বর্তমানে অনলাইনে, বাজারে ও ফেরিকরে অনেকে মধু বিক্রি করে থাকেন।মধুর সাথে বিভিন্ন তরল জাতীয় ভেজাল পদার্থ মিশিয়ে বিক্রি করে থাকে। যেভাবে খাঁটি মধু চিনবেনঃ

• মধুর ভিতরে মেঝের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালালে যদি আগুন জ্বলে তাহলে খাঁটি মধু। যদি আগুন না জ্বলে তাহলে ভেজাল মধু।

• খাঁটি মধু চেনার আরেকটি উপায়,মধু  ফ্রিজে রাখবেন।মধু যদি জমাটবদ্ধ হয় তাহলে ভেজাল আর যদি জমাটবদ্ধ না হয় তাহলে খাটি মধু।

• এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নাড়া দিলে মধু যদি মিশে যায় তাহলে ভেজাল মধু। যদি না মিশে পিন্ডের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে তা হলে খাটি মধু।

• এক চামচ মধু হাতের তালুতে নিন।তারপর হাতের আঙ্গুলে নিয়ে দেখেন যদি পাতলা মনে হয় তাহলে ভেজাল। আর যদি ঘনত্ব হয় তাহলে খাটি মধু।