খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম।(আপডেট ২০২৪)

খেজুর সবার কাছে একটি পরিচিত ফল।এটি বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুন সম্পুর্ন ফল।খেজুর খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। খেজুরে আছে প্রচুর ভিটামিন বি। নিয়মিত খেজর খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি ও রোগ নিরাময় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।

খেজুরের অর্থ? খেজুরে,খেজুরিয়া।

খেজুরে কি কি উপাদান আছে

খেজুর হলো একটি পুষ্টিগুন সম্পুর্ন একটি খাদ্য।

খেজুরে আছে

1. ক্যালসিয়াম
2. ম্যাগনেশিয়াম
3. পটাশিয়াম
4. ফসফরাস 
5. আয়রন
6. জিঙ্ক 
7. আঁশ এবং 
8. ভিটামিন। 

খেজুরের পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রাম)

বিশেষ দ্রষ্টব্য

• দৈনিক প্রয়োজনীয়তার শতকরা হার একটি ২০০০ ক্যালরি ডায়েটের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

• খেজুরে ফ্রুক্টোজ, একটি প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে।

• খেজুর হলো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ভালো উৎস, বিশেষ করে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার এবং ভিটামিন বি৬।

খেজুরের উপকারিতা 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নিয়মিত খেজুর খেতেন।এই খেজুর হলো আল্লাহ পাকের এক বড় নিয়ামত। কারণ খেজুরে প্রায় সকল পুষ্টিগুন বৃদ্ধমান।খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

সকালে খালি পেটে খেজুরের উপকারিতা 

খালি পেটে খেজুর খাওয়া খুবই উপকার। চলুন দেখি সকালে খালি পেটে খেজুর খেয়ে আপনি কি কি উপকার আশা করতে পারেন।

ওজন কমায়

যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের শরীরের  ওজন কমাতে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ খেজুরে আছে ফাইবার যা শরীরের ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়া কমায় যার ফলে শরীরের ওজন কমে। আপনে যখন কম খাবেন তখন শরীরের ওজন কমবে। আর শরিরের ওজন কম থাকলে তা একি সাথে হার্ট কিডনি আর পাকস্থলী কে সুস্থও রাখে। আর শরিরের ওজন কম থাকলে তা একি সাথে হার্ট , কিডনি আর পাকস্থলী কে সুস্থও রাখে।

গর্ভবতী মহিলার জন্য

সবায় জেনে খাকবেন যে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভবতী অবস্থায় আয়রনের অভাবে ভুগে।আর খেজুরে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন যা গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের অভাব দূর করে।খেজুরে আছে ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় উপাদান। যা গর্ভবতী নারীর শরীরের জন্য বেশ উপযোগী। তাই গর্ভবতী মহিলারা প্রতিদিন নিয়মিত সকালে খালি পেটে এক বা দুইটি খেজুর খাওয়া দরকার।

বদহজম ও কষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কারণ আমরা জানি খেজুরে ফাইবার আছে যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং মলত্যাগকে সহজ করে।

রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায়

আমরা সবায় জানি যে খেজুরে আয়রন আছে।প্রতিদিন এক বা দুইটি করে খেজুর খালি পেটে খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ে ও শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি হয়। 

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা 

আজওয়া খেজুর দেখতে কালো এবং আকারে ছোট ছোট জামের মতো।এই খেজুর খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুন সম্পুর্ন হয়ে থাকে।এরজন্য অন্য খেজুরের তুলনায় এই খেজুর দাম একটু বেশি।

• আজওয়া খেজুর সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এরশাদ ফরমায়েছেন।কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খায়।সেদিন তাকে কোনো বিষ ও জাদু ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।(বুখারীঃ ৫৪৪৫ হাদিস)

• আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত হুজুরে পাক (সাঃ) এরশাদ করিয়েছেন যে আজওয়া জান্নাতের,যাতে রয়েছে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক।( তিরমিজিঃ২০৬৬ হাদিস)

• আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত হইয়াছে যে রাসূল (সাঃ) এরশাদ ফরমান আল- আলিয়ার আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙলে তা সকল প্রকার বিষক্রিয়া ও জাদু থেকে বাঁচায়। (মুসনাদে আহমদ ২৩৫৯২হাদিস)ইত্যাদি। 

মধু ও খেজুরের উপকারিতা 

মধু ও খেজুর উভয় পুষ্টিগুন সম্পুর্ন খাবার।উপকারিতা দিক দিয়ে মধু ও খেজুর উভয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীর, মন,ও স্মৃতিশক্তি সতেজ রাখতে মধু ও খেজুরের  ভূমিকা অপরিসীম।মধু ও খেজুর একসাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই মধু ও খেজুর একসাথে খাইলে কি কি উপকার হয়? 

• রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 
• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে।
• উচ্চ রক্তচাপ কমায়। 
• পানি শূণ্যতা রোধ করে।
• হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। 
• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 
• স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধি করে। 
• তারণ্য দরে রাখে।
• কন্ঠস্বরকে ভালো রাখে।
• নিসন্তান দম্পতির সন্তান দানে সহায়ক করে।
• শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। 
• হাপানি ও শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে।
• দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। 
• শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। 
• হাড় ও দাঁত মজবুত করে। 

অতএব আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত খেজুরের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। 

কাঁচা খেজুরের উপকারিতা 

খেজুর শরীরের জন্য বেশ উপকারী একটি ফল।শরীরের জন্য পাকা খেজুরের পাশাপাশি কাঁচা খেজরও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

কাচাঁ খেজুরে আছে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসসিয়াম,আয়রন, ফাইবার,প্রোটিন ও ভিটামিন বি৬। আসুন জেনে নেই কাঁচা খেজুর কি কি উপকার করে? 

• ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। 
• বদহজম দুর করে। 
• পেট ফোলা দুর করে। 
• পেটের গ্যাস দুর করে।
• রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
• রক্তশূন্যতা দুর করে।
• হাড় মজবুত করে। 
• স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
• রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 
• দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে ইত্যাদি। 

কিসমিস ও খেজুরের উপকারিতা 

কিসমিস ও খেজুর আমাদের সবারই প্রিয় দুইটি খাবার। আমরা ইফতারি, পায়েস ও সেমাইয়ের সঙ্গে কিসমিস ও খেজুর খেয়ে থাকি। আসুন জেনে নেই কিসমিস ও খেজুর খেলে কি কি উপকার হয়? 

• হাড় মজবুত হয়ঃ

কিসমিস ও খেজুর খেলে হাড় মজবুত হয়। কিসমিস আছে বোরন ও ক্যালসিয়াম নামক উপাদান। যারা হাড়ের রোগে আক্রান্ত আছেন তারা নিয়মিত একমুঠো কিসমিস খাবেন।

• ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়ঃ

এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন নিয়মিত তিনটি করে খেজুর খেলে ক্যান্সার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।

• অ্যানিমিয়া রোগ থেকে বাঁচায়ঃ

কিসমিসে রয়েছে আয়রন যা রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদনে সহয়তা করে। রক্তশূণ্যতা কমায় এবং মেয়েদের অ্যানিমিয়া রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। 

• অ্যাসিডিটি কমায়ঃ

কিসমিস ও খেজুর খেলে রক্তের অ্যাসিডিট কমায়।কিসমিস ও খেজুরে আছে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা শরীরে প্রবেশের পরপরই রক্তের অ্যসিডিটি কমে। তাই নিয়মিত খেজর ও কিসমিস এর কোনো বিকল্প নেই। 

• প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ

খেজুরে ও কিসমিসে আছে পটাসিয়াম। পটাসিয়াম থাকার কারণে শরীরের ব্লাড প্রেসার কমায় ইত্যাদি। 

খেজুরের গুড়ের উপকারিতা 

শীত কাল আসলেই খেজুরের রস পাওয়া যায়। আর এই রস থেকে তৈরি করা হয় খেজুরে গুড়।শীতকালে খেজুরের গুড় দিয়ে আমরা বিভিন্ন রকমের পিঠা বানাই।আসুন জেনে আসি খেজুরের গুড়ে কি কি উপকার হয়?

• নিয়মিত খেজুরের গুড় খেলে শরীর গরম থাকে। যার ফলে সর্দি,কাশি ও ভাইরাস ফিভার রক্ষা পাওয়া যায়।

• আমাদের দেশে প্রায় মহিলা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে হবে।নিয়মিত গুড় খেলে হরমোনের বৃদ্ধি হয়।

• খেজুরের গুড়ে আছে প্রচুর আয়রন। শরীরে আয়রনের অভাব থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিন ঘাটতি দেখা দেয়। নিয়মি গুড় খেলে শরীরের আয়রনের অভাব দুর হয়।

• প্রতিদিন খাওয়ার পর নিয়মিত গুড় খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। গুড় খেলে এনজাইমের শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়।

খেজুরের রসের উপকারিতা 

শীতের সাথে খেজুরের রসের একে অন্যের সাথে বন্ধুত সম্পর্ক। শীত আসলেই খেজুরের রসের কথা মনে পরে।আজকাল খেজুরের রস গ্রামে দেখাই যায় না।আসুন জেনে নেই খেজুরের রসে কি কি উপকার আছে? 

• খেজুরের রস কাঁচাও খাওয়া যায় আবার গুড় বানিয়েও খাওয়া যায়। খেজুরের রসে প্রচুর শক্তি এবং গ্লুকোজ আছে।যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন।

• যাদের শরীরের শক্তি কম বা দূর্বলতায় ভোগছেন তাদের জন্য খেজুরের রস বেশ উপকারী। খেজুরের রসে প্রচুর শর্করা,খনিজ ও পুষ্টি। যা শরীর ও হার্টের জন্য বেশ উপকারী। 

দুধ ও খেজুরের উপকারিতা 

দুধ ও খেজুর উভয়ে আয়রন রয়েছে। দুধ ও খেজুর শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত সকালে খালি পেটে দুধ ও খেজুর খেলে।শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, রক্তশূণ্যতা দুর হয় এবং হাড় মজবুত করে। 

• বিভিন্ন সময় আমাদের শরীর দূর্বল থাকে।এক গ্লাস দুধে চার থেকে পাঁচটি খেজুর ভিজিয়ে খেলে শরীরে অনেক শক্তি বৃদ্ধি হয়। 

• গাঁটের ব্যথা দুর করে।দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে যা গাঁটের ব্যথা দুর করে থাকে।

• পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী দুধ ও খেজুর খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

• আমাদের অনেকের ভারী খাবার বা বেশি খাবার খাওয়ার অভাস।যা আমাদের হজমের সমস্যা করে থাকে।আমরা যদি নিয়মিত দুধ ও খেজুর খাই তাহলে হজম ক্রিয়ায় সাহায্য করে। 

• ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।বয়সের ছাপ কমায় ও ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে। 

খেজুরের অপকারিতা

খেজুরের অপকারিতা নেই বললেই চলে। কারণ খেজুরে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই।তারপরেও কোনো কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়।

• বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস তারা অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত খেজুর খেলে ডায়াবিটিস বাড়ার সম্ভবনা থাকে।

• বিকল কিডনি অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না, ফলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

খেজুর খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন সকালে খেজুর খাবেন।সকালে খুজুর খেলে হয় কি সারাদিন শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। 

• খেজুর ও সষা এক সাথে খেতে পারেন।

• দুধ ও খেজুর মিশিয়ে খেতে পারেন। 

• কিসমিস ও খেজুর একসাথে খেতে পারেন।

• শুকনা খেজুর  থেকে ভিজা খেজর বেশি 

উপকার।১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। 

• মধু ও খেজুর একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

• জিমে যাওয়ার আধা ঘন্টা আগে খেজুর খেতে পারেন।