কিডনির ব্যথা কোথায় হয়?
আমাদের অনেকেরই কোনো না কোনো সময়ে কোমরের দু’পাশে, বিশেষত নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়। আমরা সাধারণত এই ব্যথাকে কোমরের ব্যথা বা পিঠের ব্যথা বলে মনে করি। কিন্তু অনেক সময় এই ব্যথার কারণ কিডনিতে কোনো সমস্যাও হতে পারে। কিডনিজনিত ব্যথা বুঝতে হলে এর সঠিক অবস্থান জানা জরুরি। শরীরের যেসব অসুবিধার ইঙ্গিত কিডনির ব্যথা থেকে আসতে পারে তাও জেনে রাখা দরকার।
কিডনির অবস্থান
কিডনি আমাদের শরীরে মেরুদণ্ডের দুই পাশে, পিঠের উপরের দিকে, বক্ষপিঞ্জর বা রিবকেজের ঠিক নিচে অবস্থিত। প্রতিটি কিডনি মুষ্টিবদ্ধ হাতের মতো আকারের। ডান কিডনি যকৃতের (লিভারের) কিছুটা নিচে থাকায়, বাম কিডনির থেকে সামান্য નીচে অবস্থান করে।
কিডনির ব্যথার প্রকৃতি
কিডনির ব্যথা সাধারণত পিঠে অনুভূত হয়, বিশেষ করে নিচের দিকে। এই ব্যথা:
- কোমরের এক বা দুই পাশে হতে পারে।
- ভোঁতা, তীব্র বা খুব যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। ব্যথার ধরন নির্ভর করে ব্যথার কারণের উপর। কিডনিতে যদি সংক্রমণ (infection) থাকে তাহলে সাধারণত প্রচন্ড ব্যথা হবে। আবার কিডনিতে পাথর হলে ব্যথা আসতে আসতে কয়েক মিনিটের মাথায় খুব তীব্র আকার ধারণ করে।
- পাঁজরের নীচে এবং নিতম্বের উপরের অংশ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। কিডনি স্টোনের ক্ষেত্রে প্রায়শই ব্যথা কোমর থেকে তলপেটের দিকে নেমে যায়।
- কিছু কিডনি রোগের ক্ষেত্রে ব্যথা স্থির থাকে। আবার কিডনিতে পাথর হলে এই ব্যথা তরঙ্গের মতো আসতে এবং যেতে পারে।
কিডনির ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ
কিডনির ব্যথার সাথে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোও দেখা দিতে পারে:
- প্রস্রাবে পরিবর্তন: প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বাড়া, রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত বা দুর্গন্ধযুক্ত ঘোলাটে প্রস্রাব ইত্যাদি।
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- জ্বর ও কাঁপুনি দেওয়া। কিডনির ইনফেকশন হলে এটি হতে পারে।
- শরীরে ফোলা ভাব (বিশেষ করে পা, গোড়ালি এবং মুখে)।
কিডনির সাধারণ সমস্যা যেগুলো ব্যথার কারণ হতে পারে
- কিডনিতে প্রদাহ বা সংক্রমণ (পাইলোনেফ্রাইটিস): ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশনের কারণে কিডনিতে প্রদাহ হলে প্রচন্ড ব্যথা, জ্বর, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- কিডনিতে পাথর (কিডনি স্টোন): আমাদের কিডনিতে ছোট ছোট পাথরের মতো শক্ত স্ফটিক তৈরি হতে পারে। এই পাথর যখন নড়াচড়া করে তখন তীব্র ব্যথা হয়। এর সাথে বমিভাব, প্রস্রাবে রক্ত দেখা যেতে পারে।
- হাইড্রোনেফ্রোসিস: কিডনি থেকে মূত্রনালীতে প্রস্রাব যাওয়ার পথে যদি কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়, তবে কিডনির ভেতরে প্রস্রাব জমে কিডনি ফুলে যেতে পারে। এর ফলে কিডনির ব্যথা হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত
নিম্নোক্ত কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ :
- পিঠে কোমরের দুই বা একপাশে তীব্র ব্যথা শুরু হওয়া।
- ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবে পরিবর্তন।
- জ্বর বা কাঁপুনি।
পরিশেষে
- কিডনির ব্যথা ছাড়া পিঠে বা কোমরে আরও অনেক কারণে ব্যথা হতে পারে। যেমন- পেশীতে টান পড়া, মেরুদণ্ডের সমস্যা ইত্যাদি। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা – এইসব কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিডনি রোগকে প্রতিরোধের চেয়ে সহজ কিছু নেই। তাই সুস্থ অবস্থায় থেকেই সতর্ক হতে হবে।
মনে রাখা জরুরী: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কিছু ব্যথার ওষুধ কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।