রসুনের উপকারিতা,অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম (আপডেট ২০২৪)

রসুন হলো মসলাজাতীয় উপাদান।রসুনের ঘ্রান তীব্র ঝাঁজালো।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রসুন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রান্নার কাজে আমরা রসুন ব্যবহার করে থাকি।

কিন্তু প্রাচীন যুগে ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারবেন রোগ থেকে বাঁচার জন্য তারা রসুন ব্যবহার করতো।বিশেষ করে গ্রিস,ব্যাবিলনীয়,মিশরীয়, রোমান ও চৈনিকরা রসুনকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতো।

রসুনে আছে সেলেনিয়াম,থায়ামিন,ফোলেট,নায়াসিন ও প্যান্টোথেনিক এসিড।

রসুনের মধ্যে আরো রয়েছে এলিসিন নামে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা থাকার কারণে আমাদের শরীরে ক্যান্সার ও শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধ করে।এরজন্য রসুনকে সুপারফুডে অন্তরভুক্ত করেছে।

রসুনের পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১ কোয়া বা প্রায় ৩ গ্রাম)

বিশেষ দ্রষ্টব্য

• দৈনিক প্রয়োজনীয়তার শতকরা হার একটি ২০০০ ক্যালরি ডায়েটের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

• রসুনে অ্যালিসিন নামে একটি যৌগ রয়েছে, যা রসুনের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার সাথে যুক্ত।

• সামান্য পরিমাণে রসুনে অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থও রয়েছে।

রসুন খাওয়ার উপকারিতা

রসুন খাওয়ার নিয়ম

পুষ্টিবিদরা বলেছেন পূর্নবয়স্কদের ২/৩টি রসুনের  কোয়া খেতে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার হয়।

• সকালে খালি পেটে ১/২ কোয়া কাঁচা  রসুন খেতে হবে।( কাঁচা রসুন খাওয়া সবচেয়ে উপকার) 

• রান্নার সাথে রসুন  কুঁচি কুঁচি করে দিয়ে। ( রান্না সাথে খেলে রসুনের গুনাগুন কিছুটা নষ্ট হয়)।  

• রসুনের আচার বানিয়ে।

• সিদ্ধ করে।

• রসুন ঘি এ ভেজে গরম ভাতের সাথে খাওয়া যায়। 

• রসুন পানিতে ভিজিয়ে সে পানি খেতে পারবেন ইত্যাদি। 

ত্বকে রসুনের উপকারিতা

বর্তমানে আমাদের দেশের উর্তি বয়সের ছেলে মেয়েদের প্রায় সবার ব্রণের সমস্যা। এই ব্রণ থেকে বাঁচতে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন রকমের ক্রিম ব্যবহার করে খাকে যা কিনা ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

এই ক্রিম ব্যবহার করার কারণে ত্বকে ক্যান্সার হয়।মুখের ব্রণ দূর করতে আমরা ক্রিম ব্যবহার না করে রসুন ব্যবহার করতে পারি।কারণ মুখের ব্রণ দূর করতে রসুন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।

• মুখে যে ভাবে রসুন ব্যবহার করবো,রসুন নিয়ে ব্লেন্ডার বা ছেঁচে রস বের করে সে রস মুখে লাগান।পাঁচ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।এই ভাবে আপনে নিয়মিত কয়েকদিন ( ৭-১৫দিন) ব্যবহার করেন।তারপর ইন্শাল্লাহ দেখবেন মুখের ব্রণ ও লালচে ভাব দূর হয়ে যাবে।

• লক্ষ্য করলে দেখবেন আমাদের পসমের(লোমকূপ)গোঁড়ায় ময়লা জমে ব্রণ ও কালো দাগ হয়ে খাকে।এর থেকে মুক্তি পেতে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। রসুনের সাথে টমেটু নিয়ে ব্লেন্ডার করে পেস্ট তৈরি করেন।এই পেস্ট মুখে লাগান তারপর ১০/১২ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।তারপর দেখবেন মুখের ময়লাও পসমের গোড়া পরিস্কার হয়ে গেছে।

• অনেক সময় দেখা যায় যে বয়স কম কিন্তু বেশি বয়স মনে হয়( বয়সের ছাপ মুখে পড়ে যায়)।প্রতিদিন রসুন চিবিয়ে খেলে অতিরিক্ত বয়সের ছাপ ও ওজন কমে যায়।

• আজকাল এলার্জি সমস্যা প্রায় সবার। এলার্জি কারণে শরীরে লাল দাগ পড়ে। লাল জায়গায় রসুনের রস লাগিয়ে ম্যাসাজ করলে লাল দাগ ও জ্বালাপোড়া কমবে।

চুলে রসুনের উপকারিতা

রসুনে রয়েছে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট, সালফার,ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক যা মাথার চুল পড়া বন্ধ করে।রসুনে প্রচুরপরিমানে ভিটামিন থাকার কারণে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

• কিভাবে চুলে রসুন ব্যবহার করবো,প্রথমে ৭/৮ কোয়া রসুন ও এক টেবিল চামচ মধু নেই।তারপর রসুনের রস বের করে মধুর সাথে ভালো করে মিশিয়ে নেই।মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলের গেড়ায় দিয়ে১৫/২০ মিনিট রাখি।তারপর স্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নেই। এই মিশ্রণটি একদিন পরপর ব্যবহার করি।

• আরেকটি নিয়ম,প্রথমে ৭/৮ কোয়া রসুন ও একটি পিয়াজ নিয়ে ব্লেন্ডার দিয়ে পেস্ট তৈরি করি।তারপর আধা টেবিল চামচ অলিভ ওয়েল নিয়ে গরম করতে হবে।অলিভ ওয়েলের সাথে রসুন ও পিয়াজ পেস্ট মিশিয়ে গরম করতে হবে( যতখন পযন্ত বাদামী কালার ধারন না করে)।এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে।ঠান্ডা হওয়ার পর মাথায় দিতে হবে।মাথায় দিয়ে ৩০/৩৫ মিনিট রাখার পর স্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুতে হবে।এইভাবে নিয়মিত একদিন পরপর ব্যবহার করবো। 

রসুন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে

আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলে প্রায়ই জ্বর, কাশি ও ঠান্ডা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হই।আমরা ঘরোয়া পরিবেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারি।এটা হচ্ছে রসুন মধু মিশ্রণ। 

• রসুনে আছে এলিসিন।এলিসিন বিপাক কার্যক্রম ভালো করে ও তারাতারি ওজন কমায়। রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

• মধুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কাঁচা রসুণের উপকারিতা

রসুন আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।কাঁচা রসুন খেতে পারলে আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকার হয়।পুষ্টিবিদরা বলেছেন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন নিয়মিত এক কোয়া রসুন খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচা যায়।

• ঠান্ডা থেকে বাঁচা যায়: আমাদের অনেকের প্রায় সারাবছর ঠান্ডা লেগে থাকে।এই ঠান্ডা থেকে মুক্তি পেতে,সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক কোয়া রসুন দুই বা তিন সপ্তাহ নিয়মিত খেলে ইন্শাল্লাহ ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

• শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়: সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে। শরীরের বিষাক্ত উপাদান মূত্রের মাধ্যমে বের হয়।

• রক্ত পরিস্কার রাখে: রসুনের আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত পরিস্কার ও রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।তাই আমরা সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করি।

• হৃদরোগ থেকে বাঁচতে: নিয়মিত খালি পেটে রসুন খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।তাই আমরা সবায় খালি পেটে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করি।

রসুন বয়স্ক নারীদের জন্য অনেক উপকার

 মহিলাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হাড় দূর্বল হয়ে যায়।রোগ ক্ষমতা কমার কারণে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।

তাই প্রতিদিন বয়স্ক মহিলাদে দুই গ্রাম করে রসুন খাওয়া দরকার।

রসুন খেলে বয়স্ক মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধি পায় ফলে হাড়ের দূবলতা কমে যায়। 

রসুনের অপকারিতা

রসুনের যেমন উপকার আছে তেমন কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। তা নিচে আলোচনা করা হল।

• খালি পেটে রসুন খেলে কিছু কিছু লোকের ডায়রিয়া হয়ে যায়। 

• অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্তের ঘনত্ব কমায়।যারা অ্যাসফিরিন, ওয়ারফিরিন ইত্যাদি ঔষধ খেয়ে থাকেন তারা অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্তের ঘনত্ব পাতলা হয়ে যায়।

• এক গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং শরীরের ঘাম বেশি বের হয়।

• যুক্তরাষ্ট্রের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলেন।খালি পেটে রসুন খেলে বমিভাব,বমি ও বুকজালাপোড়া করে।

• গর্ভধারণ মহিলারা অতিরিক্ত রসুন খেলে প্রসব বেদনা বেড়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়।

• যেসকল মায়েদের বাচ্চা দুধ খায়, ঐসকল মায়েরা  রসুন খেলে  দুধের স্বাদ পরিবর্তন হয়।