রমজানে সুস্থ ও নিরাপদে রোজা রাখার ১১টি উপায়
চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজান মঙ্গলবার, ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। ইসলামী ক্যালেন্ডারের নবম মাসটি রোজা পালনের মাস হিসেবে পরিচিত।
রমজানে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রোজা রাখার কিছু পরামর্শ এখানে দেওয়া হল।
আগে থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা রমজান মাসে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন। ডাক্তারদের মতে, যাদের প্রাথমিক পর্যায়ের ডায়াবেটিস আছে এবং ওষুধের সামান্য মাত্রা দিয়ে তা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে, তারা নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন।
তবে যাদের ডায়াবেটিস অগ্রসর হয়েছে, যারা ইনসুলিন সহ একাধিক ওষুধ সেবন করছেন বা অন্যান্য ওষুধ যেমন সালফোনাইলইউরিয়া যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, বা যাদের হৃদরোগ বা কিডনি রোগ, যকৃতের রোগের মতো উল্লেখযোগ্য চিকিৎসাগত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য রোজা রাখা খুব নিরাপদ নাও হতে পারে।
তাই, রোজা রাখার সময় যেকোনো জটিলতা বা ঝুঁকি এড়াতে তাদের আরও প্রস্তুত থাকা দরকার।
রোজা শুরু করার আগে চিকিৎসা পরিকল্পনায় কাঙ্খিত পরিবর্তনটি নিয়ে আলোচনা করা বা রোজা রাখা আপনার জন্য নিরাপদ কিনা তা আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন।
সুতরাং, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়া-কমার ঝুঁকি থাকে। কারণ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় রোজা থাকতে হয়, তখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে।
পর্যাপ্ত তরল খান
পানিশূন্যতা রোধ করতে প্রচুর পানি দিয়ে আপনার রোজা শুরু করুন এবং শেষ করুন। রোজা না রাখার সময় তরমুজ, শসা এবং স্যুপের মতো পর্যাপ্ত তরল সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে শরীর সারাদিন হাইড্রেটেড রাখুন।
সুষম খাবার
জটিল কার্বোহাইড্রেট, চর্বিহীন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সমন্বিত সুষম খাবার বেছে নিন। তাহলে রোজা রাখার সময় শক্তির মাত্রা বজায় থাকবে এবং তৃপ্তি বোধ হবে।
হজমে সমস্যা এড়াতে ইফতারের সময় ভাজা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সাহরির পুষ্টি
ওটস, গোটা শস্য, ডিম এবং দইয়ের মতো ধীরে হজম হওয়া খাবার দিয়ে দিন শুরু করুন। তাহলে সারাদিন টেকসই শক্তি পাওয়া যাবে। রোজার সময় পিপাসা ও পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
মধ্যম ধরণের ব্যায়াম
রোজা না রাখার সময় হালকা থেকে মাঝারি ধরণের শারীরিক কার্যকলাপে লিপ্ত হোন। তাহলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হবে, মেজাজ ভালো হবে এবং পেশী ভর বজায় থাকবে।
হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিংয়ের মতো কার্যক্রম বেছে নিন এবং শক্তি সংরক্ষণের জন্য রোজার সময় কঠোর পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
সচেতনভাবে খান
ইফতার এবং সাহরির সময় আস্তে আস্তে চিবিয়ে, প্রতিটি কামড় উপভোগ করে এবং ক্ষুধা ও পূর্ণতার সংকেতগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়ে সচেতনভাবে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
পুষ্টিকর খাবার
আপনার খাবারে ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং শিম জাতীয় বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। তাহলে পর্যাপ্ত ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ নিশ্চিত হবে।
পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস বজায় রাখুন
রমজানের সময় খাদ্যবাহিত রোগ এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা প্রতিরোধ করতে নিয়মিত হাত ধোয়া, খাবার পরিচালনায় সতর্কতা এবং খাবার প্রস্তুত করার জায়গা পরিষ্কার রাখাসহ ভালো পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসগুলি বজায় রাখুন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
গভীর শ্বাস -প্রশ্বাস, ধ্যান, নামাজ এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর মতো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলিকে অগ্রাধিকার দিন। তাহলে আবেগগত সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে এবং কর্টিসলের মাত্রা হ্রাস পাবে, যা ক্ষুধা এবং হজমকে প্রভাবিত করতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ
যদি আপনার আগে থেকে কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা থাকে বা রোজা রাখা নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তাহলে রোজা রাখা আপনার জন্য নিরাপদ এবং উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন।
তারা আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের প্রয়োজনের ভিত্তিতে আপনাকে নির্দেশনা দিতে পারবেন।
শরীরের কথা শুনুন
আপনার শরীরের সংকেতের প্রতি মনোযোগ দিন। যদি আপনি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অত্যধিক তৃষ্ণার মতো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ করুন এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতে পুনরায় তরল পান ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিন।