গরম মশলার উপকারিতা, অপকারিতা এবং বানানোর নিয়ম
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গরম মসলা নানাভাবে উপকারে আসে। মসলার এই মিশ্রণটি হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমে যায়।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গরম মসলা নানাভাবে উপকারে আসে। মসলার এই মিশ্রণটি হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমে যায়।
গরম মসলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সকলেই জানি যে গরম মসলা সাধারণত খাবারে গন্ধ বা খাবারকে আরো সুস্বাদু বানাতে সাহায্য করে। অনেকে আছে যারা বিভিন্ন রকম সমস্যা হবে বলে গরম মসলা খেতে চাই না কিন্তু এর অনেক উপকারিতা রয়েছে এটি তরকারির স্বাদ বাড়ানোর ছাড়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ করতে গরম মসলার ভূমিকা অপরিসীম। তাহলে চলুন গরম মসলা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেই।
- শরীর এবং ত্বকের বয়স কমায়: দেশে-বিদেশে হওয়া বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, খাবারে গরম মশলার পরিমাণ একটু বেশি হলে কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে দেহের ভেতরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শরীর এবং ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। এর ফলে খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীর এবং ত্বকের উপর তার কোনও প্রভাবই পরে না।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গরম মশলা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ইমিউনিটির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি কোন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
- অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে: গরম মশলায় উপস্থিত জিরায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে, রক্তসল্পতা দূর হতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: প্রচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে সেখানে উল্লেখ রয়েছে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গরম মশলা নানাভাবে উপকারে লেগে থাকে।আসলে এই মশলার এই মিশ্রনটি হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে, বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্বাদ গ্রন্থিরা খুব অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে খাবার খাওযার ইচ্ছাও বাড়ে।
- শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়: খুব কাছ থেকে যদি গরম মশলায় ব্যবহৃত মশলাগুলির দিকে দেখেন, তাহলে জানতে পারবেন এদের মধ্যে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনপ্লেমেটারি উপাদান, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রপাটিজ, অ্যান্টি-ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ লোয়ারিং প্রপাটিজ, যা ছোট-বড় কোনও রোগকেই ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
- ক্যান্সারের মতো মরণ রোগকে দূরে রাখে: শুনতে আজব লাগলেও একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, রান্নায় গরম মশলার ব্যবহার বাড়লে শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আসলে এই মশলাটিকে প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।প্রসঙ্গত, নিউট্রিশন এবং ক্যান্সার নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে টানা দশ দিন গরম মশলা খেলে শরীরের ভেতরে টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে শরীরের বিষের পরিমাণ এতো মাত্রায় কমে যায় যে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
- হার্টের ক্ষমতা বাড়ে: এই মশলার মিশ্রনটি শরীরে প্রবেশ করার পর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে।সেই সঙ্গে হার্টে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ধারে কাছে ঘেঁষারও সুয়োগ পায় না।
- ডায়াবেটিস ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয় না: রক্তে সুগারের মাত্রা কি মাঝে মধ্যেই বেশ ওঠা-নামা করে থাকে?l তাহলে কিন্তু বন্ধু ভুলেও গরম মশলার সঙ্গে সম্পর্ক করবেন না! কারণ এই মশলার মিশ্রনটির মধ্যে থাকা দারচিনি, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।আসলে দরচিনির মধ্যে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধারে কাছে ঘেঁষার সুয়োগই পায় না।তাই যাদের সুগার লেভেল একবারে বর্ডারে রয়েছে, তারা হয় দারচিনি, নয়তো গরম মশলা খেতে ভুলবেন না যেন!
- কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমে: ট্রপিকাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক স্টাডি অনুসারে নিয়মিত গরম মশলা খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের ভেতরে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে পটির পরিমাণ বেড়ে য়ায়।ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না।তাই যাদের সকালটা একেবারেই সুন্দর যায় না, তারা রান্নার সময় গরম মশলা ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন!
গরম মসলা খাওয়ার অপকারিতা
গরম মসলার অনেক অনেক উপকারিতা থাকলেও এর এক দুটি অপকারিতা রয়েছে।
গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বালা, ঢেকুর ইত্যাদি সমস্যার জন্য মসলা দায়ী
পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর।
গরম মসলা তরকারিতে কেন দেওয়া হয়?
গরম মসলা সাধারণত খাবারের গন্ধ খাবারকে সুস্বাদু করতে ব্যবহার করা হয়। অনেকে মনে করেন পেটের সমস্যা হবে তাই গরম মসলা খেতে চান না। কিন্তু গরম মসলা শুধু তরকারির স্বাদের জন্য ব্যবহার করা হয় না এতে অনেক পুষ্টি উপাদান এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উপাদান রয়েছে।
সাধারণত এইজন্য গরম মসলা ব্যবহার করা হয়। আপনি চাইলে এমনি এমনিও গরম মসলা খেতে পারেন এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন রকম বড় এবং ছোট রোগ থেকে আপনাকে মুক্ত রাখবে।
গরম মশলা গুড়ার উপকরণ
আঞ্চলিক তারতম্য, ভারতীয় উপমহাদেশীয় খাদ্যের তারতম্য এবং মানুষের নিজস্ব স্বাদের কারণে গরম মশলার পরিমাণ ও গঠনগত তারতম্য হতে পারে, এই গঠনগত তারতম্য কখনই একটির সাথে অপরটির শুদ্ধতার তুলনায় আসে না। উপাদান গুলি একসাথে মিশিয়ে সেঁকে, ব্যবহার করা হয়।
গরম মশলা তৈরি করার উপায়
- কালো ও সাদা-মরিচ
- লবঙ্গ
- দারুচিনি আথবা দারুচিনির শুকনো বাকল
- জৈত্রী জায়ফলের আংশবিশেষ
- কালো বড়ো ও সবুজ ছোট এলাচ দানা
- তেজপাতা
- জিরা
- ধনে
একটি ঘরোয়া রান্নার ক্ষেত্রে, থাকেঃ ধনে, জিরে, মউরি, লবঙ্গ, লবঙ্গ পাতা, তেজপাতা, অ্যানিস্টার, জৈত্রী, কালো বড়ো এলাচ, এবং দারুচিনি।
গরম মসলা ঔষধের কাজ
আয়ুর্বেদিকের মধ্যে লবঙ্গকে দাঁতের সব রোগের সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি দাঁত ব্যথা ও ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।
দেশে-বিদেশে হওয়া বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, খাবারে গরম মশলার পরিমাণ একটু বেশি হলে কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে দেহের ভেতরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শরীর এবং ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে।
গরম মসলার মিশ্রনটি শরীরে প্রবেশ করার পর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে।সেই সঙ্গে হার্টে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ধারে কাছে ঘেঁষারও সুয়োগ পায় না।
ডায়াবেটিস রোগকে দূরে রাখে কারণ এই মসলার মিশ্রণটির মধ্যে থাকা দারচিনি, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আসলে দরচিনির মধ্যে থাকা একাধিক উপকারী উপাদান ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে ডায়াবেটিস ধারে কাছে ঘেঁষার সুয়োগই পায় না। তাই যাদের সুগার লেভেল একবারে বর্ডারে রয়েছে, তারা হয় দারচিনি, নয়তো গরম মসলা খেতে ভুলবেন না যেন।
- গরম মসলা খাবারের স্বাদ ও আরও বাড়িয়ে দেয়।
- গরম মসলা খাবারের রং এবং গন্ধ বেড়ে তুলে।
- গরম মসলা পেটের পাচনশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
- গরম মসলা ভুক্ত পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- গরম মসলা শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
- গরম মসলা অনেক খাবারে সুস্থ ক্যালোরি যোগ করে।
- রম মসলা খাবারের রুচি তৈরি করে।
গরম মসলা সংরক্ষণ নিয়ম
- মুখবন্ধ কাচের বয়ামে রাখুন গুঁড়া মসলা।
- বাটা মসলা ডিপ ফ্রিজে রাখুন মুখবন্ধ বাটিতে।
- কখনও প্লাস্টিকের ব্যাগে বাটা বা গুঁড়া মসলা রাখবেন না।
- আঙুল অথবা ভেজা চামচ ঢোকাবেন না মসলার বয়ামে। শুকনা চামচ দিয়ে মসলা উঠিয়ে নিন।
- শুষ্ক স্থানে রাখুন গুঁড়া মসলার বয়াম।
- মসলার বয়াম একটির উপর আরেকটি রাখুন।
- গরম মশলা ও জিরা রোদের মধ্যে রাখবেন না। এতে মশলার গন্ধ রোদের তাপে নষ্ট হয়ে যায়।
- গরম মশলা কাচের বয়ামে ভরে মুখ আটকে রেখে রোদে রাখুন। এতে গরম মশলা ঝরঝরে থাকবে ও গন্ধ ভালো থাকবে।
- গুঁড়া করা মশলা যেমন- জিরা, ধনিয়া, গোলমরিচ ইত্যাদি মজুদ করার আগে হালকা তাপে টেলে নিয়ে ঠাণ্ডা করে কৌটায় রাখুন। অনেক দিন গন্ধ ভালো থাকবে।