কিডনি রোগী কি দই খেতে পারবে?
কিডনি মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া, রক্ত পরিশোধন করা, হরমোন নিঃসরণ করা – কিডনির কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত।
কিডনির নানা সমস্যার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease – CKD) ক্রমবর্ধমান এক বৈশ্বিক সমস্যা। CKD হলে খাদ্যতালিকায় অনেক পরিবর্তন আনা জরুরি।
দই স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে দই খাওয়া কতটা নিরাপদ সে ব্যাপারে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। এ সম্পর্কে নানা দিক বিবেচনা করে এখানে একটি আলোচনা উপস্থাপন করা হচ্ছে।
দইয়ের পুষ্টিগুণ
দই-এ রয়েছে প্রচুর পরিমানে উপকারী ব্যাকটেরিয়া (‘প্রো-বায়োটিক’) যা হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও দুধের সকল উপকারী উপাদান দই-এও পাওয়া যায়:
- ক্যালসিয়াম: হাড় এবং দাঁতের সুস্বাস্থ্য রাখার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যাবশ্যক।
- প্রোটিন: প্রোটিন শরীরের কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।
- ভিটামিন বি: ভিটামিন বি-১২ স্নায়ুকোষের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- ফসফরাস ও পটাশিয়াম: ফসফরাস হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য জরুরি।
দইয়ের পুষ্টি উপাদান
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি 100 গ্রাম দই) | দৈনিক চাহিদার % |
ক্যালসিয়াম | 100-140 মিলিগ্রাম | 10-14% |
প্রোটিন | 3-5 গ্রাম | 5-10% |
ভিটামিন বি-12 | 0.4 মাইক্রোগ্রাম | 17% |
ফসফরাস | 90-120 মিলিগ্রাম | 13-17% |
পটাশিয়াম | 140-150 মিলিগ্রাম | 4-5% |
দ্রষ্টব্য
- উপরের তালিকাটি গড় মানের উপর ভিত্তি করে তৈরি। বাজারজাত দই-এর পুষ্টিমানের তারতম্য হতে পারে।
- কিডনি রোগীদের দই খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দইয়ের অন্যান্য উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হজমশক্তি উন্নত করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
দই খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়
- ঘরে তৈরি দই খাওয়া ভালো।
- দই-এ চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার মেশাবেন না। বরং ফল দিয়ে দই খান।
- দই-এর সাথে বাদাম, কাজু, ওটস যোগ করে খেতে পারেন।
- দই-কে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
কিডনি রোগীদের জন্য দইয়ের উপকারিতা
কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও কিডনি রোগীদের জন্য দই-এর কিছু উপকারিতা আছে:
- প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া: দই-এ উপস্থিত প্রোবায়োটিক হজমশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কিডনি রোগীদের অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে দই উপকারী হতে পারে।
- ক্যালসিয়ামের উৎস: হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ক্যালসিয়াম অত্যাবশ্যক। কিডনি রোগীদের জন্য অনেক সময় দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারে বিধিনিষেধ থাকে, সেক্ষেত্রে দই ক্যালসিয়ামের ভালো একটি উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য দই-এর ক্ষতিকর দিক
কিডনি রোগে দই খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে:
- ফসফরাসের পরিমাণ: দই-এ ফসফরাস আছে যা কিডনি রোগীর জন্য সীমিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি। শরীরে ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে গেলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, চামড়ায় চুলকানি হতে পারে।
- পটাশিয়ামের পরিমাণ: কিডনি রোগে পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। কারণ শরীর থেকে পটাশিয়াম সঠভাবে বেরিয়ে যেতে না পারলে রক্তে এই পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকারক।
কিডনি রোগী দই খেতে পারবেন কি?
দইয়ের উপকারিতা তো বটেই, কিডনি রোগীদের জন্য দই খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। কিডনি রোগের পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে কতটুকু এবং কীভাবে দই খাওয়া নিরাপদ হবে তা নির্ধারিত হবে। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য দই খাওয়া নিরাপদ কি না তা জানতে অবশ্যই ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদে দই খাওয়ার পরামর্শ
কিডনি রোগীদের যদি দই খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, এই টিপসগুলি মেনে চললে তা বেশি নিরাপদ হবে:
- চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন: খাদ্যতালিকায় দই অন্তর্ভূক্ত করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
- অল্প পরিমাণে খান: দৈনিক ৮০-১০০ গ্রামের বেশি দই খাবেন না।
- ঘরে তৈরি দই: বাজারের দইয়ে অনেক সময় অতিরিক্ত চিনি যোগ করা থাকে। তাই ঘরে তৈরি দই-ই খাওয়া উচিত।
- চিনি সংযোজন থেকে বিরত থাকুন: দই-এ চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার মেশাবেন না। বরং ফল দিয়ে দই খান।
- ফ্রেস দই খান: পুরনো দই খাবেন না।
- দুধের সাথে দই খাবেন না: দুধ ও দই দুটোতেই ফসফরাস বেশি, তাই একসাথে খাওয়া উচিত নয়।
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কিডনি রোগীদের দই খাওয়া নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। দই-এর উপকারিতা থাকলেও কিডনি রোগীদের জন্য এর কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। তাই, কিডনি রোগীদের জন্য দই নিরাপদ কি না, এবং নিরাপদ হলে কতটুকু পরিমাণে খাওয়া যাবে – তা ঠিক করবেন একজন ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ান।