কেওড়া ফল ও জলের উপকারিতা এবং ব্যবহার
কেওড়া সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনের নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায়। কেওড়া দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। এর গড় উচ্চতা ২০ মিটার। এ গাছের পাতা চিকন, ফল আকারে ছোট ও গোলাকার , এই ফল টক বা অম্ল স্বাদের।
এই ফলের বহিত্বক সাধারণত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সুন্দরবন এবং এর পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষ এর ফল থেকে একধরনের সুস্বাদু খাবার বানিয়ে থাকে । লবনাক্ত মাটিতে জন্ম নেওয়া এই উদ্ভিদে শ্বাসমূল দেখা যায়।
জোয়ার ভাটার জলে পুষ্ট সুন্দরবনে স্বাসমূল এই গাছের বায়ুতে থাকা শ্বাসমূলগুলো গ্রহণ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি জলের এলাকাতে এই গাছ জন্মেনা বললেই চলে ।
কেওড়া গাছের পাতা ও ফল হরিণ ও বানরের প্রিয় খাবার। এই গাছের নিচে হরিণ ও বানরের দল বেশি দেখা যায়। এ গাছের কাঠ ঘরের বেড়া, দরজা-জানালা ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কেওড়া ফলের উপকারিতা
কেওড়া ফলে আমলকী, আপেল ও কমলার তুলনায় বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক রয়েছে।
এ ফলের আরও রয়েছে ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধী আর ব্যথানাশক গুণ। ফলটি ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটের পীড়ার জন্য দায়ী জীবাণুকে কার্যকরভাবে দমন করতে পারে।
কেওড়া জল এর উপকারিতা
প্রসাধনীতে কেওড়া জলের ব্যবহার চলে আসছে প্রাচীন কাল থেকে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক রাসয়নিক পদার্থ রয়েছে। যেমন ফেনল, ট্যানিন, গ্লাইকোসাইডস, আইসোফ্ল্যাভোনস, ক্যারোটিনয়েড। ব্রন, সোরিয়াসিস এবং একজিমার মতো বেশ কয়েকটি ত্বকের রোগের চিকিৎসায় এগুলো দারুণ কাজে আসে।
ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করে
দূষণ, আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে ত্বকে ময়লা জমে। ধুলো-ময়লায় ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এ থেকে সহজেই মুক্তি দিতে পারে কেওড়ার জল। অল্প তুলো নিয়ে কেওড়ার জলে ভিজিয়ে মুখে, হাতে ধীরে ধীরে ঘষলে ত্বক থেকে সম্পূর্ণ ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়।
ত্বকের কোষ পুনরুদ্ধার করে
কেওড়া জল হল প্রাকৃতিক টোনার। এর ব্যবহারে ত্বকে একটা তাজা ভাব তৈরি হয়। কার্ডিও টনিক হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা যায় এবং সেই কারণেই এটি রক্তপ্রবাহে সচ্ছলতা আনতে পারে এবং টিস্যুকে সঞ্চালিত করতে পারে। হার্টবিট সহজ করে তোলে এবং হৃদযন্ত্রের পেশিগুলো সক্রিয় রাখে।
ব্রন থেকে মুক্তি
ব্রন, শুষ্ক ত্বক, সোরিয়াসিস, একজিমা এবং রোসেসিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভরপুর কেওড়া জল একটি দুর্দান্ত জৈবিক পণ্য। স্কিনের নানান সমস্যা যেমন চুলকানি জ্বলুনি এমনকী স্কিনের ভাঁজে ভাঁজে দাগ পড়ে গেলেও কিন্তু এর থেকে রেহাই মিলতে পারে।
বার্ধক্য দূরে রাখে
কেওড়া জলে প্রচুর পরিমাণে ফেনল এবং ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটা বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় ত্বকের গভীর স্তর থেকে টক্সিন, ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং ময়লা অপসারণ করে। ফলে বলিরেখা, ফাইন লাইন এবং বার্ধক্য কমাতে কেওড়া জলের জুড়ি নেই।
ময়শ্চারাইজেশন প্রদান করে
কেওড়াতে হিউমেক্ট্যান্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কেওড়া ফুলের জল শুষ্ক ত্বককে তাৎক্ষণিক হাইড্রেট করে। এক্সফোলিয়েটিং এবং দূষণের সংস্পর্শে আসার ফলে ত্বক যে পরিমাণ আর্দ্রতা এবং জল হারায় তাও পুনরুদ্ধার করে। চোখে মুখে শীতল অনুভূতি দেয় কেওড়া জল।
কেওড়া জলের ব্যবহার
বাজারে গোলাপ জলের মতোই কেওড়া জলও খুব সহজেই পাওয়া যায়। না কিনে বাড়িতেও তৈরি করে নেওয়া যায়। এক গ্লাস জলে কয়েকটা কেওড়া ফুল সেদ্ধ করে সেই জলটা ছেঁকে নিয়ে একটা বোতলে রেখে ফ্রিজে স্টোর করতে হবে।
ফেসপ্যাক, ক্রিম, স্ক্রাব, ফেস মিস্ট ইত্যাদিতে কেওড়া জল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। কিংবা প্রতি রাতে বা সকালে টোনার হিসাবেও ব্যবহার করা যায় কেওড়া জল।
কেওড়া জল এর ব্যবহার
কেওড়া জল পানদানাস নামক একটি ফুলের নির্যাস। এটি দেখতে স্বচ্ছ তরল, ঠিক গোলাপ জলের মতো দেখতে। কেওড়া জল বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি, মাংস, পানীয় ও বিভিন্ন ভাবে রান্নায় ফ্লোরাল ফ্লেভার আনতে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন গ্ৰোসারী শপ বা মুদির দোকানে কেওড়া জল বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়।
কেওড়া নিয়ে কিছু প্রচলিত প্রশ্ন
গোলাপ জল ও কেওড়া জল কি একই?
কেওড়া ফুলের একটি মিষ্টি, সুগন্ধযুক্ত গন্ধ থাকে যা গোলাপ ফুলের মতোই মনোরম মানের, তবে কেওড়া বেশি ফলদায়ক। জলীয় পাতন কেওড়া জল, প্যান্ডানুস ফুলের জল বেশ পাতলা। কেওড়া ফুল এবং পাতা হিন্দু দেবী মনসার পূজায়ও অপরিহার্য, যাকে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দ্বারা পূজা করা হয়।
কেওড়ার গন্ধ কেমন?
কেওড়া ফুলের একটি মিষ্টি, সুগন্ধিযুক্ত গন্ধ রয়েছে যা একটি মনোরম গুণমান গোলাপ ফুলের মতো , তবে কেওড়া বেশি ফলযুক্ত। জলীয় পাতন কেওড়া জল, প্যান্ডানুস ফুলের জল বেশ পাতলা হয়