গোলমরিচের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাবার নিয়ম
মাংসের ঝাল ঝাল মজাদার কিছু রান্না করতে যাচ্ছেন? এতে গোলমরিচ দেবেন না, তা কি হয়? ছোট ছোট কালো গোল এই মসলা দিলে তরকারির স্বাদ যে পাল্টে যায়, তা ভোজনরসিকেরা জানেন। দেখতে একরত্তি, অথচ প্রবল তেজি এই মসলা নিজের গুণেই রান্নাঘরে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
গোলমরিচকে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত মসলা হিসেবে মনে করা হয়। এর আছে নানা ঔষধি গুণাগুণ। সাধারণত জ্বর, সর্দি, গনোরিয়া ও পেট ফাঁপায় গোলমরিচ বেশ কার্যকর। তা ছাড়া গোলমরিচ ও পেঁয়াজবাটা একসঙ্গে চুলের জন্য পুষ্টিকর। কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামান্দ্য, রক্তাল্পতা, দাঁতের রোগ, ডায়রিয়া ও হৃদ্রোগেও উপকারী গোলমরিচ।
গোলমরিচ এর উপকারিতা
গোলমরিচে রয়েছে বিভিন্ন রকমের গুণ। ঠিক মতো খেলে উপকার পাবেন। দেখে নিন কোন কোন রোগ উপশমে এই মশলা সাহায্য করে।
গোলমরিচ হজমে সাহায্য করে।
গোলমরিচ হজমে সাহায্য করে। গোলমরিচের মধ্যে পিপারের নামক একটি উপাদান থাকে যার জন্য গোলমরিচকে স্বাদে ঝাঁঝালো লাগে। গোলমরিচের মধ্যে আছে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। যা হজমে সাহায্য করে।
গোলমরিচ ওজন কমাতে সাহায্য করে।
গোলমরিচ ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ, গোলমরিচ ফ্যাট সেল গুলোকে ভেঙে দেয়। যার ফলে ওজন কমে ক্যালরি কম হয় এবং এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের অন্যতম ওষুধ হলো গোলমরিচ।
গোলমরিচের মধ্যে আছে পেপারের নামক একটি উপাদান যা ক্যান্সারের অন্যতম ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গোলমরিচে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যা ক্ষতিকর ফ্রী রেডিকেলসে্র হাত থেকে এবং আমাদের শরীরকে ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচায়।
সর্দি কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ।
সর্দি-কাশি কমাতে গোলমরিচ দারুন ভাবে কাজ করে। এক চামচ মধু ও গোলমরিচ গুঁড়ো সর্দি কাশির সমস্যাকে সমাধান করতে পারে। এটি বুকে জমে থাকা সর্দি দূর করতে সাহায্য করে। ভাইরাস জনিত ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্য করে।
সর্দি কাশি ছাড়াও, যদি জ্বর আসে তাহলেও গোলমরিচ কাজ করে। গোলমরিচে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা অ্যান্টিবায়োটিক এর মত কাজ করতে পারে। জ্বরের সময় গোলমরিচ খেলে খুব ঘাম হয় এবং তার ফলে জ্বর ছেড়ে যায়। গলা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে গোলমরিচ। তাই ঠান্ডা লাগলে গোলমরিচ খেতে পারেন
সর্দি কাশির সময় মুখে স্বাদ থাকে না। সেই সময় মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে গোলমরিচ।
দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে গোলমরিচ।
গোলমরিচ দাঁত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়াও গোলমরিচ খেলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর ফলে শরীরের ব্যথা কমে।
গোলমরিচ ত্বকের জন্য উপকারী।
গোলমরিচ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী গোলমরিচ শরীরকে ভেতর থেকে সচল রাখতে সাহায্য করে। বাইরের ক্ষতিকর সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি হাত থেকে ত্বকের রক্ষা করে। তাছাড়াও ত্বক কে গুরিয়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
গোলমরিচ আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গোলমরিচ খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। গোলমরিচের মধ্যে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং সেলেনিয়াম রয়েছে। যেগুলি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন চার-পাঁচটা গোলমরিচ খাওয়া ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ঘুম ঘুম সমস্যা দূর করে গোল মরিচ।
যাদের ঘুমঘুম লাগে বা সর্বদা বিরক্ত থাকেন। তাহলে গোলমরিচের চা খান। এটি মস্তিষ্কের ডোপমাইন নামক একটি রাসায়নিক ছড়াবে। যা আপনাকে ভালো বোধ করো করাবে।
গোলমরিচ মুখের ভিতরে খারাপ সমস্যার সমাধান করতে পারে।
যাদের মাড়িতে রক্ত পড়ে বা দাঁত খারাপ হতে শুরু করেছে। তারা গোলমরিচ পিষে লেবুর রস এবং নুন ভালো করে মিশিয়ে নেওয়ার পরে ম্যাসাজ করু।ন ম্যাসাজ করার ফলে মুখের খারাপ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
গোলমরিচ আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে।
যারা আমাশয় ভুগছেন তারা গোলমরিচ গুঁড়ো সকাল বিকাল দুই বেলা জলের সঙ্গে খেতে পারে। দু-তিন দিন খেলেই আমাশয় দূর হয়ে যাবে।
নাসা রোগ দূর করতে সাহায্য করে গোলমরিচ।
নাসা এ রোগের মূল কারণ হলো রসবহ স্রোতের বিকার আর সমস্যা হয় গলা থেকে উপর দিকটা। নাসা রোগের লক্ষণ হল নাকে সর্দি তারপর নাক বন্ধ, কখনো কখনো কপালে ব্যথা, গন্ধ না পাওয়া, এমনকি খাবারের রুচিও কমে যায়, আবার কারো কারো ঘাড়ে যন্ত্রণা করে, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
এইরকম সমস্যা হলে– পুরনো আখের গুণ পাঁচ গ্রাম, মত গরুর দুধের দই ২৫ গ্রাম মত তবে এই দই বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। তার সঙ্গে এক গ্রাম গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দুবার করে খেতে হবে। তিন চারদিন পর থেকে কমতে শুরু করবে।
গোলমরিচ ক্রিমির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
গোল মরিচ গুড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল বিকাল দুবার খেতে হবে তাহলেই ক্রিমির মতো সমস্যা দূর হয়ে যাবে। যার ফলে পাকস্থলী ভালো থাকে।
গোলমরিচ টাক পড়ে যাওয়ার মত সমস্যা রোধ করা যায়।
টাক পড়ে যাওয়ার সমস্যায় বেশির ভাগ মানুষই ভুগতে থাকেন। তাই যারা টাক পড়ে যাওয়ার মত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই টিপসটি খুব কাজে লাগবে।
যে স্থানে টাক পড়ে গেছে সেই স্থানে পেঁয়াজের রস লাগান এবং তারপরে ওই জায়গায় গোলমরিচ ও সিন্দুক লবণ একসঙ্গে বেটে লাগিয়ে রাখতে হবে। এইভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলেই দেখতে পাবেন নতুন চুল গজাতে থাকবে।
চোখের অসুখ সারাতে সাহায্য করে গোল মরিচ।
গোলমরিচ খেলে চোখের অসুখ সেরে যায়। গোলমরিচ চোখে কাজলের মতো করে দিতে পারলে চোখে ঝাপসা দেখা এবং ছানি পড়ে যাওয়া এইসব সমস্যা দূর করা যেতে পারে।
গোলমরিচ হেঁচকি বন্ধ করতে সাহায্য করে।
একটি গোলমরিচ সুঁচ দিয়ে ফুটিয়ে প্রদীপের শিখায় যদি ধরা হয়। তো ওই গোলমরিচ পুড়ে যে ধোঁয়া উঠবে ওটা শুকলে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে।
পেটের অসুখ সরাতে গোলমরিচ সাহায্য করে।
পেট ফাঁপা বা পেটে পুরানো গোলমরিচ খেলে তা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। একটি কিসমিসের সঙ্গে গোলমরিচ চিবিয়ে খেলে মস্তিষ্ক সহ পাকস্থলের দূষিত বায়ু নষ্ট হয়ে যায়। লেবুর রস ও আদা সঙ্গে অল্প গোলমরিচগুলো মিশিয়ে খেলে পেটে ব্যথা কমে যায়।
ফোঁড়া সারাতে গোলমরিচ সাহায্য করে।
ফোঁড়া সারাতে গোলমরিচ উপকার করে। গোল মরিচ বেটে ফোঁড়াতে লাগালে ফোঁড়ার কমতে পারে।
ম্যালেরিয়া সারাতে গোলমরিচ সাহায্য করে।
তুলসী পাতার রস, গোল মরিচের গুড়ো আর মধু ভালো করে মিশিয়ে নেওয়ার পর খেলে ম্যালেরিয়া ভালো হয়ে যায়।
এছাড়াও চুলকানি কমাতে, আম্বাত কমাতে কলেরা কমাতে, বাচ্চাদের খিদে বাড়াতে, জ্বর সারাতে, দাঁতের ব্যথা সারাতে, পেটের বায়ু কমাতে, ঢুলুনি রোগ কমাতে, ব্যথা কমাতে ইত্যাদ রোগ সারাতে গোলমরিচ আমাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে
গোল মরিচের অপকারিতা
উপকারিতার সাথে এর ছোট খাটো কিছু অপকারিতাও রয়েছে চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা গুলো।
- গ্রীষ্মের সময় গোলমরিচ অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে নাকের রক্তপাতের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় গোলমরিচ খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের অ্যালার্জি আছে গোলমরিচে, তারা যদি গোল মরিচ খায়। তাহলে ত্বকের চুলকানি, ফোলা ভাব এবং লাল ভাবের মত কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- কালো গোলমরিচের গন্ধে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা ও তৈরি হতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে গোলমরিচ গরম তাই গোলমরিচ যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে পেটে জ্বালা ভাব অনুভব হবে।
- যাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা আছে। তাদের গোলমরিচ খেলে পেটের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই সমস্যা যাদের আছে তারা গোল মরিচ থেকে দূরেই থাকবেন।
- গোলমরিচ চামড়া এবং বিশেষত চোখে সরাসরি যোগাযোগ থেকে রক্ষা করাই ভালো। গোলমরিচ খেলে চোখে প্রচুর জ্বালাও হতে পারে।
- আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিদিন টাটকা গোলমরিচ ব্যবহার করলে এই সুফল পাওয়া যাবে আর ও অতি আরো মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো নয়।গোলমরিচ অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে উপকার নয় বরং হতেই হবে তাই সঠিক পরিমাণে অল্প করে গরম খেলেই গোলমরিচের সুফল পাওয়া যাবে।
গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম
যাদের প্রায়ই ঠান্ডা লাগে বা হাঁচি হয় ঘন ঘন,তাঁরা যদি কয়েকটা গোলমরিচ রোজ চিবিয়ে খেয়ে নেন,উপকার পাবেনই পাবেন। ইষদুষ্ণ জলে গোলমরিচের গুঁড়ো ফেলে একটু নেড়ে নিয়ে হালকা হালকা চুমুক দিয়ে খেলে শরীরে শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। কাজ করার এনার্জি পাওয়া যায়। শরীরে জলের মাত্রা কমতে পারে না।
গোলমরিচ চিবিয়ে খেলে কি হয়
গোলমরিচে ‘পিপেরিন’ নামক একটি উপাদান আছে যা শরীরে চর্বি জমতে দেয় না এবং নতুন ফ্যাট তৈরি করতে দেয় না। ফ্যাটি অ্যাসিড, ট্রাইগ্লিসারাইড, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। ওজন কমানোর জন্য পান পাতার সঙ্গে গোলমরিচ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। এই পদ্ধতিটি ওজন হ্রাস করার একটি শক্তিশালী উপায়।