হৃদযন্ত্রের স্ট্রেস টেস্ট (Heart Stress Test): আপনার হৃৎপিণ্ড কতটা সুস্থ?
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট (এক্সারসাইজ স্ট্রেস টেস্ট বা ফার্মাকোলজিক্যাল স্ট্রেস টেস্ট নামেও পরিচিত) একটি পরীক্ষা যা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয়ে করে। বিশেেষত, এটি হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয়য় কিনা তা নির্ণয়ে করতে সাহায্য করে। আপনার যদি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকেে, বা বুকে ব্যাথাার মতো লক্ষণ দেখা দিয়ে, তাহলে আপনার ডাক্তার হার্ট স্ট্রেস টেস্ট করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। এই পরীক্ষাটি নিরাপদ এবং ব্যাথাহীন।
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট করার কারণ
বিভিন্ন হৃদরোগ নির্ণয়, চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং জীবন বাঁচাতে এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি হৃদরোগের কোনো উপসর্গ বা হৃদযন্ত্র নিয়ে কোন উদ্বেগ থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
করোনারি আর্টারি ডিজিজি (CAD)
- CAD হল হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীগুলিতে ফ্যাট জমা হওয়ার ফলে সৃষ্ট একটি রোগ। ফ্যাট জমা হওয়ার ফলে রক্তনালী সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ কমে যায়।
- স্ট্রেস টেস্ট CAD নির্ণয় করতে সাহায্য করে কারণ এটি দেখায় যে ব্যায়ামের সময় হৃৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ পাচ্ছে কিনা।
- যদি ব্যায়ামের সময় হৃৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ না পায়, তাহলে এটি CAD-এর লক্ষণ হতে পারে।
বুকে ব্যাথা
- বুকে ব্যাথার অনেক কারণ হতে পারে, CAD এর পাশাপাশি।
- স্ট্রেস টেস্ট বুকে ব্যাথার কারণ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
- যদি ব্যায়ামের সময় বুকে ব্যাথা হয়, তাহলে এটি CAD-এর লক্ষণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি মূল্যায়ন
- যদি আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাহলে স্ট্রেস টেস্ট আপনার ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
- স্ট্রেস টেস্ট দেখায় যে ব্যায়ামের সময় আপনার হৃৎপিণ্ড কীভাবে সাড়া দেয়।
- যদি ব্যায়ামের সময় হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে সাড়া না দেয়, তাহলে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের পর
- হার্ট অ্যাটাকের পর, স্ট্রেস টেস্ট আপনার হৃৎপিণ্ড কীভাবে কাজ করছে তা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করতে পারে।
- স্ট্রেস টেস্ট দেখায় যে হার্ট অ্যাটাকের পর আপনার হৃৎপিণ্ড কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- স্ট্রেস টেস্ট হৃৎপিণ্ডের পেশী কতটা ভালভাবে কাজ করছে তাও দেখায়।
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
- অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের অনেক কারণ হতে পারে।
- স্ট্রেস টেস্ট অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের কারণ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
- স্ট্রেস টেস্ট দেখায় যে ব্যায়ামের সময় হৃৎস্পন্দন নিয়মিত থাকে কিনা।
- যদি ব্যায়ামের সময় হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়, তাহলে এটি একটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
ভালভজনিত হৃদরোগ
- ভালভজনিত হৃদরোগ হল হৃৎপিণ্ডের ভালভগুলির সমস্যা।
- স্ট্রেস টেস্ট ভালভজনিত হৃদরোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
- স্ট্রেস টেস্ট দেখায় যে ভালভগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
- যদি ভালভগুলি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে এটি হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
অন্যান্য কারণ
উপরে উল্লিখিত কারণগুলি ছাড়াও, নিম্নলিখিত কারণেও হার্ট স্ট্রেস টেস্ট করা যেতে পারে:
- ঔষধের কার্যকারিতার মূল্যায়ন: হৃদরোগের ঔষধ কীভাবে কাজ করছে তা নির্ণয় করার জন্য সট্রেস টেস্ট করা যেতে পারে।
- সার্জারির পূর্বে মূল্যায়ান: হার্টের সার্জারীর আগে আপনার শারীরিক অবস্থা পর্যবেেক্ষণ করতে সট্রেস টেস্ট করান হতে পারে।
- জীবন বীমা নেওয়ার পূর্বে মূল্যায়ান: কখনও কখনও, স্বাস্থ্য ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য, বীমাকারী সংস্থাগুলি আপনাকে স্ট্রেস টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন।
সট্রেস টেস্ট করার সিদ্ধান্ত
সট্রেস টেস্ট করবেন কিনা তা নির্ণয় করবেন আপনার চিকিৎসক, আপনার লক্ষণ ও চিকিৎসার ইতিহাসের ভিত্তিতে। সট্রেস টেস্ট করারআগে আপনার বর্তমানে সেবন করা ঔষধ, অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, ও শারীরিক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হার্ট স্ট্রেস টেস্টের প্রকারভেদ
হৃদরোগ নির্ণয়, চিকিৎসার লক্ষ্য নির্ধারণ এবং রোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেস টেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার জন্য সঠিক ধরনের স্ট্রেস টেস্টটি নির্ধারণ করতে চিকিৎসক আপনাকে সাহায্য করবেন।
এক্সারসাইগ স্ট্রেস টেস্ট
- সর্বাধিক প্রচলিত: এটি সবচেয়ে সহজ এবং সাশ্রয়ী স্ট্রেস টেস্ট।
- ট্রেডমিল বা স্টেশনারি সাইকেল: টেস্টটি ট্রেডমিল বা স্টেশনারি সাইকেলে হাঁটা বা দৌড়ানোর মাধ্যমে করা হয়।
- হৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ: ব্যায়ামের সময় আপনার হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
- ইলেক্ট্রোকারডিওগ্রাম (ECG): ECG ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়।
- কার্যক্রম: ব্যায়ামের তীব্রতা ধাপে ধাপে বাড়ানো হয় যতক্ষণ না আপনার হৃদস্পন্দন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছায় বা আপনার লক্ষণগুলি দেখা দেয়।
- সময়: টেস্টটি সাধারণত 15-30 মিনিট স্থায়ী হয়।
ফার্মাকোলজিক্যাল স্ট্রেস টেস্ট
- ব্যায়ামে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য: যারা ব্যায়াম করতে অক্ষম তাদের জন্য এই টেস্টটি করা হয়।
- ওষুধের মাধ্যমে হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি: ডোবুটামিন বা অ্যাডেনোসিনের মতো ওষুধ ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় যা হৃৎস্পন্দন এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
- ECG এবং রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ: ECG এবং রক্তচাপ নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
- কার্যক্রম: ওষুধের ডোজ ধাপে ধাপে বাড়ানো হয় যতক্ষণ না আপনার হৃদস্পন্দন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছায় বা আপনার লক্ষণগুলি দেখা দেয়।
- সময়: টেস্টটি সাধারণত 15-30 মিনিট স্থায়ী হয়।
স্ট্রেস ইকোকার্ডিডিওগ্রাম
- এক্সারসাইগ বা ফার্মাকোলজিক্যাল স্ট্রেস টেস্টের সাথে: এটি এক্সারসাইগ বা ফার্মাকোলজিক্যাল স্ট্রেস টেস্টের সময়, পূর্বে এবং পরে করা হয়।
- হৃৎপিণ্ডের ছবি তৈরি: শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ডের ছবি তৈরি করা হয়।
- হৃৎপেশীর কার্যকারিতা মূল্যায়ন: টেস্টটি হৃৎপেশীর কার্যকারিতা, রক্ত প্রবাহ এবং ভাল্ব কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।
- কার্যক্রম: টেস্টটি সাধারণত 30-45 মিনিট স্থায়ী হয়।
অন্যান্য স্ট্রেস টেস্ট
- নিরপেক্ষ স্ট্রেস টেস্ট: শরীরের অবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।
- ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) স্ট্রেস টেস্ট: MRI ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ডের ছবি করা হয়।
কোন টেস্ট উপযুক্ত তা নির্ধারণ
স্ট্রেস টেস্টের ধরণ যা আপনার জন্য উপযুক্ত তা চিকিৎসক বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করবেন। তার মধ্যে রয়েছে:
- আপনার বয়স ও স্বাস্থ্য: আপনার বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সক্ষমতা টেস্টের ধরন নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
- লক্ষণ: আপনার সুনির্দিষ্ট উপসর্গগুলি স্ট্রেস টেস্টের ধরণ নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করে।
- চিকিৎসার ইতিহাস: আপনার অতীতের হৃদরোগ এবং অন্যান্য চিকিৎসার ইতিহাস টেস্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- ঔষধ: আপনি যে ওষুধগুলি সেবন করেন তাও টেস্টের ধরণ নির্বাচনে বিবেচিত হবে।
স্ট্রেস টেস্ট কখন এড়ানো উচিত
নিম্নলিখিত কারণ থাকলে স্ট্রেস টেস্ট করা উচিত হবে না:
- সাম্প্রতিক হার্ট অ্যাটাক: যদি আপনার সাম্প্রতিক সময়ে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে, তাহলে স্ট্রেস টেস্ট করা হবে না।
- অস্থির এনজাইনা: যদি আপনার অস্থির এনজাইনা থাকে (বুকে ব্যথা প্রায়ই হয় বা বিশ্রামের সময় হয়), তাহলে স্ট্রেস টেস্ট করা হবে না।
- গুরুতর ভালভ ডিজিজ: যদি আপনার গুরুতর হৃদরোগের ভালভ সমস্যা থাকে, তাহলে স্ট্রেস টেস্ট করা হবে না।
- অন্যান্য চিকিৎসাগত সমস্যা: নির্দিষ্ট চিকিৎসাগত অবস্থা স্ট্রেস টেস্টটি নিরাপদহীন বা অসম্ভব করে তুলতে পারে।
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট কীভাব করা হয়
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট হৃদরোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পরিকল্পনা করার জন্য একটি মূল্যবান পরীক্ষা। পদ্ধতিটি সাধারণত নিরাপদ এবং ব্যথাহীন। আপনার যদি হার্ট স্ট্রেস টেস্ট সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে দয়া করে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট করার প্রস্তুতি
- পোশাক: আপনাকে হালকা, আরামদায়ক পোশাক এবং জুতা পরতে বলা হবে যা ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত।
- খাবার ও পানীয়: পরীক্ষার কমপক্ষে চার ঘণ্টা আগে আপনাকে কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন চা, কফি এবং কোলা, পরীক্ষার 24 ঘন্টা আগে এড়িয়ে চলুন।
- ঔষধ: আপনার যদি নিয়মিত ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে পরীক্ষার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তারা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ঔষধগুলি কীভাবে ও কখন নিতে হবে তা নির্দেশ দেবেন।
- অন্যান্য: আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে পরীক্ষার জন্য আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করুন।
ইলেক্ট্রোড প্রস্থাপন
- আপনার বুক, বাহু এবং পায়ে 12 টি ইলেক্ট্রোড লাগানো হবে। এই ইলেক্ট্রোডগুলি আপনার হৃৎস্পন্দনের ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালগুলি রেকর্ড করবে।
- ইলেক্ট্রোডগুলি ত্বকের সাথে আঠালো দিয়ে লাগানো হবে। এটি একটি অল্প ব্যথা হতে পারে।
- ইলেক্ট্রোডগুলি একটি ইলেক্ট্রোকারডিওগ্রাফ (ECG) মেশিনের সাথে সংযুক্ত থাকবে। ECG মেশিন আপনার হৃৎস্পন্দন রেকর্ড করবে এবং একটি মনিটরে প্রদর্শন করবে।
ব্যায়াম বা ওষুধ
এক্সারসাইগ স্ট্রেস টেস্ট
- আপনাকে ট্রেডমিল বা স্টেশনারি বাইকে হাঁটতে বা দৌড়াতে বলা হবে।
- ব্যায়ামের তীব্রতা ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে।
- আপনার হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
- আপনার যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা, তাহলে ব্যায়ামটি থামানো হবে।
ফার্মাকোলজিক্যাল স্ট্রেস টেস্ট
- যদি আপনি ব্যায়াম করতে অক্ষম হন, তাহলে আপনাকে ডোবুটামিন বা অ্যাডেনোসিনের মতো ওষুধ দেওয়া হবে।
- এই ওষুধগুলি আপনার হৃৎস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়াবে।
- আপনার হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
- আপনার যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে ওষুধ প্রদান বন্ধ করা হবে।
নিরীক্ষণ
- চিকিৎসক এবং নার্সরা টেস্ট চলাকালীন আপনার নজর রাখবেন।
- তারা আপনার হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং অন্যান্য লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করবে।
- ECG রেকর্ডিং: পরীক্ষা চলাকালীন, ECG মেশিন আপনার হৃৎস্পন্দনের রেকর্ড তৈরি করবে।
- ক্ষণস্থায়ী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: ফার্মাকোলজিক্যাল স্ট্রেস টেস্টের সময়, ওষুধের প্রভাবে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, বুকে অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট বা ফ্লাশিং (চামড়ার লালভাব) এর মতো অস্থায়ী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
স্ট্রেস ইকোকার্ডিওগ্রাম
- হৃৎপিণ্ডের ছবি: আপনার পরীক্ষায় যদি স্ট্রেস ইকোকার্ডিওগ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে ব্যায়ামের বা ওষুধের আগে, সময়, এবং পরে আপনার হৃৎপিণ্ডের ছবি (ইকোকার্ডিওগ্রাম) তোলা হবে।
- হৃৎপেশির কার্যকারিতা: ইকোকার্ডিওগ্রাম থেকে প্রাপ্ত চিত্রগুলি ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ডের পেশীর কার্যকারিতা, রক্ত প্রবাহ এবং ভালভ ফাংশন পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
পরবর্তী যত্ন
- উপসর্গ দূর হয়ে যাওয়া: পরীক্ষার পরে, আপনি কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রামে থাকবেন এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি (যদি থাকে) দূর না হওয়া পর্যন্ত নজরে রাখা হবে।
- প্রাত্যহিক কাজে ফেরা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনি পরীক্ষার দিনেই বাড়ি যেতে পারবেন এবং আপনার স্বাভাবিক কার্যকলাপে ফিরে যেতে পারবেন।
- ফলাফল পর্যালোচনা: আপনার চিকিৎসক পরীক্ষার ফলাফলগুলি আপনার সাথে নিয়ে আলোচনা করবেন এবং আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণ এবং একটি উপযুক্ত চিকিৎসা প্রণালী নিয়ে কাজ করবেন।
হার্ট স্ট্রেস টেস্টের নিরাপত্তা ও নির্ভুলতা
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য মূল্যায়নের জন্য একটি মূল্যবান এবং নিরাপদ পরীক্ষা। পরীক্ষার কিছু অস্থায়ী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তবে এটি সাধারণত ভালোভাবে সহ্য করা যায়। সঠিকভাবে করা হলে, স্ট্রেস টেস্ট হৃদরোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পরিকল্পনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
নিরাপত্তা
- হার্ট স্ট্রেস টেস্ট একটি নিরাপদ এবং সাধারণত ভালোভাবে সহ্য করা যায়।
- অধিকাংশ লোকের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।
- কিছু ক্ষেত্রে, নিম্নলিখিত অস্থায়ী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
- বুকে ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- হালকা মাথা ঘোরা
- হৃৎস্পন্দনের অনিয়ম
- মাথা ব্যাথা
- বমি বমি ভাব
- ফ্ল্যাশিং (চামড়ার লালভাব)
এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত দ্রুত চলে যায়।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য
- পরীক্ষার সময় আপনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একজন চিকিৎসক এবং নার্স উপস্থিত থাকবেন।
- কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের জানাবেন।
নির্ভুলতা
- হার্ট স্ট্রেস টেস্ট হৃৎপিণ্ডের অবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে।
- এটি CAD, হৃৎপেশীর কার্যকারিতা, এবং হৃৎস্পন্দনের অনিয়ম সহ বিভিন্ন হৃদরোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
- সঠিকভাবে করা হলে, স্ট্রেস টেস্ট 90% এরও বেশি নির্ভুল হতে পারে।
নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য
- পরীক্ষার পূর্বে আপনার চিকিৎসা ইতিহাস এবং লক্ষণগুলি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।
- পরীক্ষার সময় নির্দেশাবলী অনুসরণ করা এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ।
সীমাবদ্ধতা
- স্ট্রেস টেস্ট সবসময় 100% নির্ভুল নয়।
- কিছু ক্ষেত্রে, টেস্টটি “মিথ্যা ইতিবাচক” বা “মিথ্যা নেতিবাচক” ফলাফল দেখাতে পারে।
- স্ট্রেস টেস্টের ফলাফলের ব্যাখ্যার জন্য আপনার চিকিৎসা ইতিহাস, লক্ষণ এবং অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
হার্ট স্ট্রেস টেস্ট হৃদপিণ্ডর স্বাস্থ্যের মূল্যায়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী মাধ্যম। যদি আপনার হৃদপিণ্ডর সুস্থতা নিয়ে কোন উদ্বগ থাকে, তাহলে অতিসতর ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এখানে দেওয়া তথ্য শিক্ষামূলক এবং একজন চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে নয়। ফ্যাটি লিভার বা অন্যান্য লিভারের সমস্যাগুলি সনাক্ত এবং চিকিত্সার জন্য সবসময় একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
