চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল?
চিয়া সিড একটি মেক্সিকান উদ্ভিজ গাছের বীজ। এই বীজগুলো পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য বহু উপকারী উপাদান এতে বর্তমান।
কিডনি রোগীদের খাদ্য তালিকায় অনেক খাবারই সীমাবদ্ধ থাকে। তাই তারা জানতে চান, চিয়া সিড তাদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী কিনা। চিয়া সিডের উপকারিতা তো বটেই, কিডনি রোগীদের জন্য এর কিছু ক্ষতিকর দিক আছে যেগুলো বিবেচনা করা জরুরী।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণের বিস্তারিত তালিকা
চিয়া সিড বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। নিচে ১০০ গ্রাম চিয়া সিডের প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো এবং সেটি আমাদের দৈনিক চাহিদার কত শতাংশ পূরণ করে তাও উল্লেখ করা হলো:
ভিটামিন
- ভিটামিন বি১ (থায়ামিন): ০.৬৬ মিলিগ্রাম (৫৫%)
- ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন): ৮.৮৩ মিলিগ্রাম (৫৫%)
খনিজ
- ক্যালসিয়াম: ৬৩১ মিলিগ্রাম (৬৩%)
- ম্যাঙ্গানিজ: ২.৭২ মিলিগ্রাম (১১৮%)
- ম্যাগনেসিয়াম: ৩৩৫ মিলিগ্রাম (৮৪%)
- ফসফরাস: ৮৬০ মিলিগ্রাম (১২৩%)
- জিঙ্ক: ৪.৫৮ মিলিগ্রাম (৪২%)
- আয়রন: ৭.৭২ মিলিগ্রাম (৪৩%)
- পটাসিয়াম ৪০৭ মিলিগ্রাম (১২%)
অন্যান্য পুষ্টি উপাদান
- ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ১৭.৮৩ গ্রাম
- ফাইবার: ৩৪.৪ গ্রাম
- প্রোটিন: ১৬.৫৪ গ্রাম
দ্রষ্টব্য
- দৈনিক চাহিদার শতাংশ (% DV) প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত। ব্যক্তিভেদে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
চিয়া সিডের উপকারিতা
চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
১০০ গ্রাম চিয়া সিড থেকে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। চিয়া সিড স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে কিডনি রোগীদের চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রদাহ কমায়
চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কিডনি রোগের কারণে শরীরে প্রদাহ হতে পারে। চিয়া সিড এই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ফাইবার সমৃদ্ধ
চিয়া সিড ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিডনি রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। চিয়া সিড এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ
চিয়া সিডে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কোষের ক্ষতি রোধ করে। কিডনি রোগের কারণে কোষের ক্ষতি হতে পারে। চিয়া সিড এই ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
চিয়া সিড ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিডনি রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। চিয়া সিড এই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য চিয়া সিড খাওয়ার সাবধানতা
চিয়া সিডে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের শরীরে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কিডনি রোগীদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিডনি রোগীদের জন্য চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
- প্রতিদিন এক টেবিল চামচের বেশি চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়।
- চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া উচিত।
- চিয়া সিড গুঁড়া করে খাওয়া যায়।
চিয়া সিড কিডনি রোগীদের জন্য কিছু উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। তবে কিডনি রোগীদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত।
কিডনি রোগীদের জন্য চিয়া সিডের ক্ষতিকর দিক
ফসফরাসের পরিমাণ বেশি
- চিয়া সিডে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি।
- কিডনি রোগীদের রক্তে ফসফরাসের মাত্রা সীমিত রাখা জরুরী।
- শরীরে ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে গেলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম হতে পারে, এবং রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম জমা হতে পারে।
পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি
- চিয়া সিডে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি।
- কিডনি রোগে শরীর থেকে পটাশিয়াম সঠভাবে বেরিয়ে যেতে না পারলে রক্তে এই পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- তাই কিডনি রোগীদের পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে।
- রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, মাংসপেশীর দুর্বলতা, এবং প্যারালাইসিস হতে পারে।
অন্যান্য সম্ভাব্য ক্ষতি
- চিয়া সিডে ফাইবারের পরিমাণ বেশি।
- কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত ফাইবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- চিয়া সিড রক্ত জমাট বাঁধার ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য সতর্কতা
- চিয়া সিড খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সীমিত পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
- চিয়া সিড খাওয়ার সময় রক্তে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
কিছু বিকল্প
- চিয়া সিডের পরিবর্তে কিডনি রোগীরা আখরোট, বাদাম, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ, এবং তিল খেতে পারেন।
- এই বিকল্পগুলোতে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকে।
উল্লেখ্য
- এই তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য।
- কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
কিডনি রোগী চিয়া সিড খেতে পারবেন কি?
কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে চিয়া সিড খাওয়া উচিত কিনা এবং কতটুকু পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ হবে তা নির্ভর করবে রোগের পর্যায়ের ওপর। তাই এ ব্যাপারে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অত্যাবশ্যক।
