সরিষার তেলের উপকারিতা, অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
সরিষার তেল একটি গুণমানের ওষুধী তেল যা অনেক ব্যবহারে ব্যবহৃত হয়। এটি খাদ্য প্রস্তুতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যেমন মিষ্টি, বরফ ক্রীম, সমোসা, পুরি, পাকোড়া ইত্যাদি।
সরিষার তেলে প্রাকৃতিক প্রস্তুতি থাকায় এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, আন্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের উচ্চ উপাদান বিশিষ্ট।
এটি এন্টিইন্ফ্লামেটরি এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণগত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। সরিষার তেলে অপরিহার্য ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিওক্সিডেন্ট এর মাত্রা থাকায়, এটি শরীরে কোলেস্টেরল এর স্তর কমিয়ে আনে এবং হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
সরিষার তেল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান যা সম্পূর্ণ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ব্যবহার করা হয়, না কেবলমাত্র খাদ্য উদ্যোগে, বরং চিকিৎসার উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়। তাই সরিষার তেল প্রাকৃতিক উপাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
সরিষার তেল কি?
সরিষার তেল হলো সরিষা বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল। সরিষা বীজ থেকে প্রাপ্ত তেলটি একটি সুস্থ খাদ্য তেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
এটি অনেক ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয়, যেমন চিনি মিষ্টি, বরফ ক্রীম, সমোসা, পুরি, পাকোড়া ইত্যাদি। সরিষার তেল বাংলাদেশে সরিষা পুষ্প থেকে উৎপাদিত হয়।
এটি একটি বেশি প্রাকৃতিক প্রস্তুতি পণ্য এবং এটিতে প্রাকৃতিক গুণগত মান বহন করে। সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, আন্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এটি এন্টিইন্ফ্ল্যামেটরি এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণগত বৈশিষ্ট্যও রাখে। এছাড়া সরিষার তেল শরীরে কোলেস্টেরলের স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে আনে।
তাই সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদসম্পন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয়।
সরিষার প্রকারভেদ
সরিষার তেলের প্রকারভেদ নিম্নরূপে বর্ণিত করা যায়:
সরিষার শীতকালীন তেল (Cold-Pressed Mustard Oil): এই তেল কাঁচা সরিষা বীজ থেকে কোমরে নিখুঁতভাবে তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে বীজের উচ্চ গুণমানের তেল প্রদান করা হয়। এই তেলটি পাকানো অল্প ব্যবহার করা হয় কারণ তাপমাত্রা উচ্চ করলে তার বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সরিষার গরমকালীন তেল (Refined Mustard Oil): এই তেলটি বীজের উপর শক্তিশালী তাপমাত্রা প্রয়োগ করে তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায় বীজ থেকে মিষ্টান্ন বাদ করা হয় এবং রঙবিচ্ছিন্ন হয়। এটি সরিষার আকর্ষণীয় গন্ধ ও স্বাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে, কিন্তু এটি বিশেষ রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয়।
কলড প্রেস্ড সরিষার তেল (Cold-Pressed Mustard Oil): এই প্রকারের সরিষার তেলটি একটি নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে তৈরি হয়। বীজের দারুণী উচ্চ গুণমান রক্ষা করার জন্য এই প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই তেলটি স্বাস্থ্যকর হিসাবে পরিচিত এবং প্রাকৃতিক গন্ধ ও স্বাদ থাকে।
সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে আরও বিভিন্ন প্রকারের সরিষার তেল উপস্থাপন করা হয়। তবে, উপরে উল্লিখিত প্রকারগুলি প্রধানত ব্যবহৃত হয় এবং বাজারে পাওয়া যায়।
সরিষার তেলের পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি ১ টেবিল চামচ / ১৫ মিলিলিটার)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদা মূল্য (%DV)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ১২৪ কিলোক্যালোরি | ৬% |
মোট চর্বি | ১৪ গ্রাম | ২২% |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১.৬ গ্রাম | ৮% |
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৮.৩ গ্রাম | N/A |
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ২.৯ গ্রাম | N/A |
দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।
তবে, বিভিন্ন সরিষার তেলে উপাদানের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে, এবং প্রতিটি উপাদানের পরিমাণগুলি উপাদানের গুণমান এবং বিভিন্ন তথ্যসূত্রের উপর নির্ভর করে।
এই পরিমাণগুলি সম্ভবত পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করতে পারে, তাই বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট একটি তথ্য প্রদান করা কঠিন।
সরিষার তেলের উপকারিতা
সরিষার তেলের ১৫ টি বিস্তারিত উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো:
হৃদপিন্ড সুস্থ রাখে
সরিষার তেলে মোনোনথী অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকায় এটি হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যকর মানসম্পন্নতা প্রদান করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও হৃদপিন্ডের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উপকারী।
কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণ
সরিষার তেলে অ্যালফা-লিপোইক এসিড থাকায় এটি কোলেস্টেরলের স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আর্থিক রোগগুলির ঝুঁকিকে কমিয়ে আনতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য
সরিষার তেলে এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে। এটি শরীরের রোগজনিত ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুগুলির প্রতিরোধ বাড়াতে একটি প্রাকৃতিক উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
রোগ প্রতিরোধ
সরিষার তেলে পর্যাপ্ত পরিমানে এন্টিওক্সিডেন্ট থাকায় এটি ক্ষতিকারক মূল্যবান রেডিকালদ্বারা বীমারি প্রতিরোধের ব্যাপারে কার্যকর হতে পারে। এটি মুক্তিপ্রাপ্তির পথে প্রচুর মাত্রায় অবদান রাখতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন কমানো
সরিষার তেলে লোহিত অল্প পরিমাণ থাকায় এটি ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত। এটি কোষসংখ্যার বৃদ্ধি, পাচন প্রক্রিয়ার উন্নতি ও ওজন কমানোর জন্য সহায়তা করতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
কিছু গবেষণা উপর ভিত্তি করে বলে সরিষার তেলে অ্যান্টিওক্সিডেন্টগুলির একটি পরিমাণ আছে, যা ক্যান্সার সংক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ দাত্ত্বকে কমাতে সহায়তা করতে পারে। এটি ক্যান্সারের উপসর্গ বা প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
ত্বকের তামাটে ভাব দূর
সরিষার তেল ত্বকের তামাটে ভাব ও দাগ দূর করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পারে। এ জন্য বেসন, দই, সরিষার তেল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগান।
১০-১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন
সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই থাকে। এই তেল ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। তাই এটি ত্বকের ক্যানসারও প্রতিরোধ করতে পারে।
ভিটামিন ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই ব্যবহার করতে পারেন এই সরিষার তেল। তবে এই তেল যেহেতু ঘন, তাই ত্বকে লাগানোর পর ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে, যেন অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে। অন্যথায় অতিরিক্ত ধুলাবালু জমা হয়ে ত্বকের ভালোর চেয়ে খারাপই হতে পারে বেশি।
সরিষার তেলে একটি উচ্চ জ্বালানি বিশেষত্ব থাকায় এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানো, উত্তেজনা শান্ত করা এবং মানসিক দূর্বলতা দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক
সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেলে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এতে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রতি রাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হয়।
উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে
সরিষার তেল পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
এ ছাড়া খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে মালিশ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্মগ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।
ঠোঁটফাটা রোধ করে
ঠোঁট ফাটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকের এই সমস্যা এত বেশি হয়ে থাকে যে লিপবাম কাজ করে না। অল্প একটু সরিষার তেল নিয়ে ঠোঁটে লাগান।
এই প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ঠোঁটফাটা রোধ করে ঠোঁট নরম কোমল করে তোলে। শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে সরিষার তেল ভালো কাজ করে। লিপবাম বা চ্যাপস্টিক—এগুলোর পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
চুল পাকা রোধ করতে
সরিষা তেলের পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, মিনারেল চুলের অকালপক্বতা রোধ করে থাকে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই তেল মালিশ করুন চুল এবং মাথার তালুতে যা আপনার চুল পাকা রোধ করবে।
পুষ্টিকর উপকারিতা
সরিষার তেলে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকায় এটি শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি ক্ষুধার্ত হওয়াকে বাধা দেয় এবং সঠিক পুষ্টিগুলির সরবরাহ করে।
অতিরিক্ত কোষসংখ্যার বৃদ্ধি
সরিষার তেলে থাকা পোলিউনস্যাটুরেটেড ফ্যাট হলোন্যাটারল উপাদানের একটি উচ্চারণ। এটি ক্ষুধার্ত এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডের জন্য উচ্চ শক্তি সরবরাহ করে এবং শরীরের হালকা অতিরিক্ত কোষসংখ্যা বৃদ্ধি করে।
চর্ম স্বাস্থ্য
সরিষার তেলে প্রচুর পরিমানে উপসর্গ থাকায় এটি চামড়ার স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য উপকারী। এটি ত্বকের স্বাস্থ্যকর রাখে, চর্মরোগ ও এলার্জি দূর করে এবং চর্মের প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রদান করে।
শ্বাসকশের স্বাস্থ্য
সরিষার তেলে থাকা থাইমোমলিন এবং কার্সিনোফিল এসিডের উপসর্গ শ্বাসকশের স্বাস্থ্যকর রাখতে পারে। এটি শ্বাসকশের সংক্রামণ প্রতিরোধ করতে পারে এবং শ্বাসকশের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উপকারী।
চোখের স্বাস্থ্য
সরিষার তেলে বিটা-কারটেন এবং ভিটামিন এ থাকায় এটি চোখের স্বাস্থ্যকর রাখতে পারে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করে, চোখের জ্বলজ্বল কমিয়ে আনে এবং চোখের সঠিক কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সহায়তা করতে পারে।
চুলের জন্য উপকারী
সরিষার তেলে থাকা ভিটামিন এ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের উপসর্গ হেয়ার কেয়ারের জন্য উপকারী। এটি মাথার স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যকর রাখে, হেয়ারফলের ঝুলঝুলে কমাতে এবং হেয়ার বৃদ্ধি ও সুন্দরতা বাড়ানোর জন্য সহায়তা করে।
ক্ষতিকারক রোগ প্রতিরোধ
সরিষার তেলে থাকা এন্টিওক্সিডেন্টগুলির উপসর্গ এটিকে ক্ষতিকারক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এটি মুক্তিপ্রাপ্তির পথে অবদান রাখতে পারে এবং শরীরের ক্ষতিকারক কমে যাওয়ার জন্য সহায়তা করতে পারে।
এই উপকারিতা গুলি সরিষার তেলের একটি সারাংশিক তালিকা যা আপনার স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে। সতর্কতা অবলম্বন করে সরিষার তেল ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সরিষার তেলের অপকারিতা
সরিষার তেল অতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যা উৎপন্ন হতে পারে। এই তেলে উচ্চমাত্রায় পলিইউনস্যাচারাইড অস্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পাওয়া যায়। এই পলিইউনস্যাচারাইডের বৃদ্ধি কিছু ক্ষতিকর প্রভাব সহজেই সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:
পেট সমস্যা
সরিষার তেল মধ্যে অতিরিক্ত প্রজনন হরমোন বা এসিডিটি থাকতে পারে, যা পেটের ক্ষতিকর সমস্যার উপসৃতি করতে পারে। এটি ডায়রিয়া, কব্জি, পেট ব্যথা এবং পেটে গ্যাসের উৎপাদনের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়ে :
পরপর বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে সরষের তেলে ৪২ থেকে ৪৭ শতাংশ ইউরিক অ্যাসিড থাকে। সেই সঙ্গে থাকে ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড।
আর এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের পক্ষে বিষ। যে কারণে বেশি পরিমাণ সরষের তেল খেলে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়ে।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর
সরষের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ইরেটিক অ্যাসিড। যা হার্টের জন্য মোটেই ভালো নয়। বেশি সরষের তেল কিংবা ঝাল মশলাদার খাবার খেলে হতে পারে মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস।
যা শরীরে বেশি পরিমাণ ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে হার্টের ক্ষতি করে। যেখান থেকে হার্ট ফেলের সম্ভাবনা থাকে প্রবল।
ফুসফুসের ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে
ইরেটিক অ্যাসিড ফুসফুসের জন্যেও খুব ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণ সরষের তেল খেলে প্রথমে ফুসফুসের উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেই ক্ষতি না আটকালে ধীরে ধীরে ফুসফুস আরও ড্যামেজ হয়। যেখান থেকে ক্যানসার হতে পারে।
জ্বালা ভাব
সরষের তেল পরিশোধন করলেই তাতে উপস্থিত হয় ক্ষতিকর যৌগ অ্যালাইল আইসোথিয়োকানেট। যার ফলে মুখে জ্বালা করে। সেই সঙ্গে ফুসফুস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট প্রভৃতিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
ত্বকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর
ত্বকের উপর সরষের তেলের বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। সরষের তেল এপিডার্মিসের ক্ষতি করে ত্বকের জলীয় অংশের পরিমাণ কমিয়ে দেয়য়।
সেই সঙ্গে এপিডার্মাল কেরাটিনোসাঅটগুলির গঠনগত পরিবর্তনও ঘটে। যার ফলে ত্বকে ফোসকা পড়ে। যে কারণে বাচ্চাদের সরষের তেলে মালিশ এড়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
গর্ভাবস্থায়
হবু মায়েদের এমনিই বেশি মশলাদার খাবার খেতে বারণ করা হয়। সেই সঙ্গে সরষের তেলও। কারণ এর মধ্যে থাকে বেশ কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগ।
যা ভ্রূণের গঠনে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে রাসায়নিক যৌগের প্রভাবে গর্ভপাতও হতে পারে।
এলার্জি ও অনুক্রমিক প্রতিক্রিয়া
কিছু মানুষে সরিষার তেলের উপর অ্যালার্জি বা অনুক্রমিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটি হতে পারে যেন ত্বকে খারাপ রেশ বা ফুসফুস বা শ্বাসকষ্ট বা চোখের লক্ষণ দেখা যায়।
এগুলো কেবলমাত্র সরিষার তেলের অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভব প্রভাব হতে পারে।
তবে, এগুলো সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয় নয়। যদি কেউ যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হন, তবে সেবার জন্য চিকিৎসাবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
সরিষার তেল কি কি ভাবে খাওয়া যায়?
আপনি অনেক ভাবেই সরিষার তেল খেতে পারেন। প্রতি দিনের রান্না থেকে শুরু করে সর্দি, কাশি বা ঠান্ডা জনিত সমস্যার সমাধানের কার্যকর।
এমন কি অনেক ব্যাথা বা ত্বক ও চুলের যত্নে সরিষার তেল আপনি মেখেও ব্যবহার করতে পারেন। কি কি ভাবে সরিষার তেল খাওয়া যায় এই বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিভিন্ন রকমের ভর্তায় সরিষার তেল
বিভিন্ন রকমের ভর্তায় সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে আসতে বহুদিন আগে থেকেই। ভর্তা মানেই সরিষার তেল। এই তেল ছাড়া যেন ভর্তা একদম বেস্বাদ বা কারো কাছেই ভালো লাগে না।
বিভিন্ন রকম ভর্তা যেমন, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, পটল ভর্তা, মাছ ভর্তা, সবজি ভর্তা, বিভিন্ন শাক ভর্তা, শিদল ভর্তা থেকে শুরু করে সকল ভার্তায় পরিমান মতো সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ঔষদ হিসাবে সরিষার তেল
আগে যদি আমাদের ছোট বেলায় ঠান্ডা বা শ্বাস কষ্ট হতো তবে রসুন ও সরিষার তেল মা বুকে মালিশ করে দিত। অনেক সময় হাত পা মজবুতের ও ব্যাথার সমস্যার মুক্তির জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করা হত।
এমন কি মাথা তেও। শীতের সময় ত্বক যত্ন ও কাশি তে ১-২ চামুচ সরিষার তেল খেলে অনেক টাই রিলিফ পাওয়া যায়। অনেক বাতের ব্যাথা থেকে শরীরের ব্যাথা দূর করতে সরিষার তেলের উপকারের অন্ত নেই।
সরিষার তেলের ব্যবহারের নিয়ম
সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়, যা হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
এছাড়াও শীতের সুস্থতায় প্রতিদিন নিয়ম করে নাভিতে এক ফোটা করে তেল ও গোসলের আগে বুকে ও শরিরে মেখে গোসল দিতে পারেন। এতে ঠান্ডা সর্দি জনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সতর্কতা
সরিষা তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে জেনে নিতে হবে যে আপনার সরিষার তেল খাঁটি কি না? নকল বা ভেজাল সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় সরিষার তেল কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু যেকোনো সরিষার তেল কি আমাদের জন্য উপকার বয়ে আনবে? মোটেও তা নয়। দোকানের খোলা সরিষার তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখ–বিসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাঁটি সরিষার কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।