কামরাঙ্গার উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক
বেশি টক হওয়ার কারণে অনেকেই কামরাঙ্গা খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর কামরাঙা। এমনকি এমনিতে না খেতে পারলেও চাটনি হিসেবে খাওয়া যায় কামরাঙা।
বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান’ বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা বলেন, “কামরাঙ্গা মৌসুমি ফল হলেও কোনো কোনো গাছে সারাবছর বা একাধিকবারও ফলে। এর রয়েছে রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা।”
কামরাঙ্গার পুষ্টি গুণ সম্পর্কে তিনি জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙ্গায় আছে ৫০ কিলো ক্যালোরি খাদ্য শক্তি, ০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.১ গ্রাম ফ্যাট, ৫.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
কামরাঙ্গার উপকারিতা
মানবদেহে কামরাঙ্গা ঔষধির মত কাজ করে। এর কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানান তিনি-
- কামরাঙ্গা আঁশযুক্ত ফল হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের প্রতিকারক হিসেবে কাজ করে।
- যাদের হজম জনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী ফল।
- এই ফল শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছারাও এতে কিছু পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- কামরাঙ্গার আছে জীবাণুনাশক ক্ষমতা যা ত্বকের নানা রকমের জটিলতা যেমন- ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমাধানে সাহায্য করে। ত্বক ভালো রাখে।
- যাদের ডায়াবেটিস রোগ আছে তারা নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে উপকার পাবেন।
- ভিটামিন সি ভালো পরিমাণে থাকায় এটি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি দাঁত, মাড়ি ও হাড় সুস্থ রাখে।
- রোগপ্রতিরোধকারী ক্ষমতা থাকায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডাজনিত অন্যান্য সমস্যায় এই ফল প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
- এতে থাকে এলাজিক অ্যাসিড, যা খাদ্যনালির অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
কামরাঙ্গার ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত কামরাঙা খেলে প্রধানত কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কিডনির পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের আক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।
কামরাঙার অন্যতম একটি উপাদান হলো অক্সালিক অ্যাসিড। কিডনি নষ্টের প্রধান কারণ কামরাঙায় থাকা অক্সালেট ও নিউরোটক্সিন। ১০০ মিলিলিটার কামরাঙার জুসে ০.৫০ গ্রাম অক্সালিক অ্যাসিড রয়েছে।
তাই অত্যধিক সেবনে অতিমাত্রায় অক্সালিক অ্যাসিড জমে গিয়ে অক্সালেট পাথর হয়ে কিডনি বিকল করে দিতে পারে। তবে খালি পেটে কামরাঙা খেলে ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
যাঁদের কিডনি দুর্বল তাঁরা এই মারাত্মক নিউরোটক্সিনকে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। তখন এটি শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে ব্রেন এবং নার্ভাস সিস্টেমের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারানো, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, এমনকি খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।
- কিডনির সমস্যা না থাকলে অল্প করে কামরাঙা খাওয়া যাবে।
- কাঁচা বা টক কামরাঙার রস বেশি ক্ষতিকর, তাই পরিহার করুন।
- কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে ফলটি পরিহার করুন।
- গর্ভবতী নারীরা কামরাঙা পরিহার করুন। এই ফল খেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ সময় নানা কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা উঁকি দেয় মনের ভেতর। তবে একটি কাজ আপনি নিশ্চিন্তে করতে পারেন। তা হলো ফল খাওয়া। গর্ভাবস্থায় অনেকে আনারস, কামরাঙা, কাঁচা পেঁপে, অতিরিক্ত আঙুর ইত্যাদি খেতে নিষেধ করেন।
কামরাঙা গাছের বৈশিষ্ট্য
কামরাঙ্গা একটি চিরসবুজ ছোট মাঝারি আকৃতির গাছের টকমিষ্টি ফল। গাছ ১৫-২৫ ফুট লম্বা হয়। ঘন ডাল পালা আচ্ছাদিত, পাতা যৌগিক, ১-৩ ইঞ্চি লম্বা। বাকল মসৃন কালো রং এর।
কামরাঙা দেখতে কেমন
কামরাঙার ত্বক পাতলা, মসৃণ, ও মোমের মতো হয় এবং পরিপক্ব অবস্থায় অন্ধকার হলুদাভ হালকা বর্ণ ধারণ করে। ভেতরের মাংসল স্থান পরিষ্কার এবং এবং হালকা হলুদ বর্ণের। প্রতিটি ফলের ১০ থেকে ১২টি সমতল হালকা বাদামী বীজ থাকতে পারে যা প্রস্থে ০.২৫ থেকে ০.৫ ইঞ্চি ০.৬৪ থেকে ১.২৭ সেমি এবং নরম ও আঠাল ছিলকে আবদ্ধ।