হার্টের সমস্যার লক্ষণ : শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলো উপেক্ষা করবেন না
হৃদযন্ত্র আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর অন্যতম। এটি নিরলসভাবে কাজ করে গিয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত পৌঁছে দেয়, কিন্তু আমরা যখন পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত না হই তখন পর্যন্ত এই অঙ্গের কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করি না। যখনই হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, আমাদের শরীর থেকে কিছু সংকেত পাওয়া যায়। সঠিক সময়ে লক্ষণগুলো চিনতে পারলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিলে মারাত্মক হৃদরোগ এড়ানো সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা হার্টের সমস্যা নির্দেশ করে এমন কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করব।
বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি
- হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
- চাপ, টানটান ভাব, বা বুকের মাঝখানে ভারী অনুভূতি।
- কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হতে পারে।
- বিশ্রাম নিলেও কমতে নাও পারে।
শ্বাসকষ্ট
- হাঁপানি ছাড়াও হার্টের সমস্যার লক্ষণ।
- হার্ট যদি পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে না পারে।
- ফুসফুসে তরল জমা হতে পারে।
- বিশ্রামের সময় বা অল্প পরিশ্রমে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
বুক ধড়ফড় করা
- হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত বা দ্রুত।
- অ্যারিথমিয়া নামক হৃদরোগের লক্ষণ।
- হৃৎপিন্ডের বৈদ্যুতিক সংকেত সঠিকভাবে কাজ না করলে।
দুর্বলতা বা অবসাদ
- হার্ট দুর্বল হয়ে গেলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
- মস্তিষ্ক ও পেশীতে পর্যাপ্ত রক্ত পৌছাতে না পারায়।
- হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ।
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- হার্ট যথাযথ রক্ত সরবরাহ করতে না পারলে।
- মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে।
গলা, চোয়াল, কাঁধ, বা হাতে ব্যথা
- বুকের ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- বাম হাতে ব্যথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পায়ে ফুলে যাওয়া
- হার্ট ঠিক মতো রক্ত পাম্প করতে না পারলে।
- তরল শরীরের নিম্নাংশে জমা হতে পারে।
হার্টের সমস্যার কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ
- ঘাম হওয়া
- বমি বমি ভাব
- পেটে ব্যথা
- মাথাব্যথা
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি
- দ্রুত ও দুর্বল নাড়ি
- হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি
মনে রাখবেন
- উপরোক্ত লক্ষণগুলি সবসময় হার্টের সমস্যার লক্ষণ নয়।
- অন্যান্য অনেক কারণেও এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে।
- তবে, এই লক্ষণগুলি অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
হার্টের সমস্যার অন্যান্য লক্ষণ
- অতিরিক্ত কাশি
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- খাবারের প্রতি অনীহা
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত
উপরের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেই, বিশেষ করে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা অজ্ঞান হয়ে গেলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি মনে করেন আপনার হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে তাহলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হলে জটিলতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমানো যায়।
হার্টের সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য । সুস্থ্য জীবনধারা অনুসরণ করে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখা সম্ভব:
- সুষম খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম
- ধূমপান ত্যাগ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেেটিস নিয়ন্ত্রণ
- পর্যাপ্ত ঘুম
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
উপসংহার
হার্টের সমস্যা যেকোনো বয়সের যে কারোরই হতে পারে। লক্ষণগুলোর দিকে মনোযোগী হওয়াটা জরুরি এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াটা জীবন বাঁচাতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার হার্ট আপনার জীবন। শরীরের দেওয়া সংকেতগুলো উপেক্ষা করবেন না, হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখতে আজই পদক্ষেপ নিন ।