তোকমা দানার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাবার নিয়ম
ছোট কালো রঙের একটি বীজ তোকমা, যা মূলত বিভিন্ন মিষ্টি পানীয় কিংবা শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও তোকমা বীজ অন্যতম একটি উপাদান।
এটি স্থানভেদে সবজা বীজ, মিষ্টি বাসিল, ফালুদা বীজ কিংবা তুর্কমারিয়া বীজ হিসেবে পরিচিত। বহু গুণ রয়েছে বীজটির।
তোকমা দানার পুষ্টি উপাদান
নিশ্চিত পরিমাণে তোকমা দানা আমাদের দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে কিনা, সে সম্পর্কিত তথ্য সঠিকভাবে টেবিলে উপস্থাপন করা কঠিন কয়েকটি কারণে।

১. তৈরির পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ:
- শুকনো বনাম ভিজানো: তোকমা দানা ভিজিয়ে রাখলে পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্যতা নাটকীয় ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায় – এগুলি ফুলে যায় এবং জেলের মতো ঘনত্ব লাভ করে।
- রেসিপি: এগুলি প্রায়শই পানীয় বা মিষ্টি খাবারের মধ্যে কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয়, যা দৈনিক চাহিদা পূরণের উল্লেখযোগ্য অবদান হিসাব করা কঠিন।
২. বিস্তৃত তথ্যের অভাব:
তোকমা দানার, বিশেষ করে ভিজানোর পরে এর পুষ্টি উপাদানের স্তর সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণ, গম বা ফলের মতো প্রধান খাবারের তুলনায় কম পাওয়া যায়।
৩. ব্যক্তিগত চাহিদা বিভিন্ন: দৈনিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বয়স, লিঙ্গ, কার্যকলাপের স্তর ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।
১৩ গ্রাম তোকমা দানার আনুমানিক পুষ্টি উপাদানের তালিকা (শুকনো তোকমা দানা)
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি টেবিল চামচ – প্রায় ১৩ গ্রাম) | দৈনিক চাহিদা পূরণের শতাংশ (আনুমানিক)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৬০ | ৩% |
ফাইবার | ৭ গ্রাম | ২৮% |
প্রোটিন | ২ গ্রাম | ৪% |
চর্বি | ২.৫ গ্রাম | ৩.৮৫% |
আয়রন | ১.৭ মিলিগ্রাম | ৯.৪৪% |
ক্যালসিয়াম | ১৫৫ মিলিগ্রাম | ১৫.৫% |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪১ মিলিগ্রাম | ১০.২৫% |
- একটি ২০০০ ক্যালোরির ডায়েট এবং গড় প্রাপ্তবয়স্কদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে।
- দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
- তোকমা দানা একটি স্বাস্থ্যকর খাবার, তবে এটি একটি সুষম খাদ্যের বিকল্প নয়।
আরও তথ্যের জন্য
- আপনার ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন।
- তোকমা দানার উপর গবেষণাপত্রগুলি পড়ুন।
- বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলিতে তোকমা দানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তথ্য খুঁজুন।
তথ্যসূত্র
তোকমা দানার উপকারিতা

ইউনানি ও চীনা মেডিসিনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালরি রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তোকমা শরীরের নানা রকম সমস্যা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
- ওজন কমাতে : দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়। এটি ওজন কমানোর মাধ্যমে হার্ট ব্লকের মত কঠিন রোগ থেক বেচে থাকতে সহায়তা করে এবং পরোক্ষভাবে কিডনিকেও রাখে সুস্থ।
- এসিডিটি দূর করে : তোকমা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। এছাড়াও তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক। এসিডিটি পাকস্থলির জন্য খুবই ক্ষতিকর কিন্তু নিয়মিত তোকমা খেলে পেট সুস্থ থাকে।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ : রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : তোকমা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
- সুস্থ ত্বক ও চুল : ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
- ঠান্ডার সমস্যায় : তোকমা বীজে রয়েছে ঠান্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
- ওমেগা-৩ : ওমেগা-৩ শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি একটি উপাদান। উদ্ভিদ ভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো একটি উৎস হচ্ছে তোকমা দানা। তাই তোকমা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা
যেহেতু প্রায় প্রতিটা বিষয়ের খারাপ দিক এবং ভালো দিক রয়েছে তাই তোকমা খাওয়ার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি তোকমা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে।
- যদি কোন গর্ভবতী মহিলাকে বেশি তোকমা প্রদান করা হয় তাহলে তার অনেক সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি তাকে খুব বেশি পরিমাণ তোকমা বীজ খাইয়ে দেওয়া হয় তখন এই ইস্ট্রোজেন হরমোনটির মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আসতে পারে।
- যদি আমরা খুব ছোট শিশুদেরকে এটি খাওয়াই তাহলেও তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। যেহেতু ছোট শিশুর পেটে খুব বেশি পরিমাণে বিপাকীয় ক্ষমতা থাকে না তাই এটি থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও শিশুদের পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে এই তোকমা। এমনকি এই তোকমা দানর মারাত্মক একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে শিশুদের দম ও বন্ধ হয়ে আসতে পারে। এই কারণে শিশুদেরকে এটি কখনোই প্রদান করা যাবেনা সব সময় পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরা এটি সেবন করবেন।
তোকমা খাওয়ার নিয়ম
উপরে আমরা পাঠকদেরকে তোকমা খাওয়ার উপকারিতা এবং তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেকে আছে যারা তোকমা খাওয়ার নিয়ম ভালো মতো বোঝে না।
এই কারণে এখন আমরা আপনাদেরকে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেব।
- তোকমা সাধারণত বীজ বা দানা জাতীয় খাদ্য হয়ে থাকে। এই তোকমা দানাগুলোকে আপনারা পানির সাথে মিশিয়ে সুন্দরভাবে খেতে পারেন।
- এছাড়াও তোকমা দানা গুলোকে পানিতে ভিজিয়ে তারপর যখন এগুলো ফুলে উঠবে বা এগুলোর মধ্যে পানি ঢুকে যাবে তখনও খাওয়া যাবে।
- তোকমা দানা গুলো বাদামের সাথে ব্লেন্ডার করে ও খাওয়া যায় এতে শরীরের অনেক উপকার হয়।
- তোকমা দানা ভালোমতো পিষে নেওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে সেখানে দুধ এবং মধু দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- এগুলো ছাড়াও যদি আপনারা শুধুমাত্র পানির সাথে মিশিয়ে খেতে চান তাও খেতে পারবেন এবং সাথে চিনি দিতে চাইলে সেটাও দিতে পারবেন।
- উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো বাদেও আপনারা ইসবগুলের ভুষি এবং পানির সাথে মিশে মিক্সার করে তোকমা বীজ সেবন করতে পারবেন।
আরও তথ্যের জন্য:
- আপনার ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন।
- তোকমা দানার উপর গবেষণাপত্রগুলি পড়ুন।
- বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলিতে তোকমা দানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তথ্য খুঁজুন।
তোকমা প্রতিদিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো। ১-২ চামচ তোকমা ২৫০গ্রাম পানি বা ১ গ্লাস পানির মধ্যে মিশিয়ে খাবেন। চিনি ছাড়া খাবেন। এটি চাইলে প্রতিদিন খেতে পারেন শরীরের জন্য উপকার কারণ তাপমাত্রা ঠিক রাখে,পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
তোকমা কত টাকা কেজি
তোকমা দানা ১ কেজি ২৮০ টাকা
চিয়া বীজ ও তোকমা কি একই?
বাংলায় চিয়া বীজকে তোকমা বলা হয় । পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা বড় ও চিকন হয়ে যায়। সাধারণত জুস বা ফালুদা বা লস্যির সাথে মেশানো হয়। আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবহার হল এটি ডালের সাথে মেশানো।
তোকমার শরবত
দেড় গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে চিনি গুলে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার তোকমা ও গোলাপ জল মেশান। শরবত নেড়ে চেড়ে দুই গ্লাসে ঢেলে কয়েকটা পুদিনাপাতা দিয়ে পরিবেশন করুন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ তোকমার দানা রাখলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপাক প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি করে থাকে।