শিমুল মূল, গাছের উপকারিতা, অপকারিতা এবং শিমুল মূল পাউডার খাওয়ার নিয়ম
শিমুলকে আমরা সৌন্দর্য্য বর্ধন এর বৃক্ষ হিসেবে জানলেও এর রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণ। এর মূল,বাকল,কষ,ফুল ও বীজ বহুকাল ধরে বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শিমুল মূলকে গবেষকরা প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা হিসেব অভিহিত করেছেন। যৌন সমস্যার সমাধানে শিমুল একটি অতুলনীয় ভেষজ। অনেকে শিমুল মূলকে বাংলার জিনসেং হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
শিমুল মূলের উপকরিতা
শিমুল মূলের যে ভাবে গাছান্তার ঔষধ তৈরি হতো ঠিক এখন আরো অধিক পরিমানে যৌন শক্তি বর্ধক হিসাবে তৈরি করছে।যেনে নিই শিমুল মূলের ভেষজ গুণাগুণ। শিমুল গাছের মূল এবং কান্ডে গ্লাইকোসাইড এবং ট্যানিন আছে, যার কারণে গাছটি ওষুধি গুণাগুণ সম্পন্ন।
- স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর করে।
- ডায়রিয়া ও আমাশয় নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী।
- প্রেশার এর রোগীদের জন্য খুবই ভালো।
- পৌঢ় বয়স পর্যন্ত যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে।
- যারা অপুষ্টিতে ভোগছেন তাদের জন্য শিমুল মূল খুবই কার্যকরী।
- শিমুল মূল পিপাসা নিবারক হিসেবে কাজ করে।
- ডায়বেটিস প্রতিরোধক হিসেবে শিমুল মূল ব্যবহার করা হয়।
- এছাড়াও এটি ব্যাথাযুক্ত ঋতুস্রাবে কার্যকরী।
- আমাশয় এবং ডায়রিয়ার মতো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের চিকিৎসায়ও সহায়ক।
- ত্বকের ব্রণ কমায়, দাগ দূর করে।
- পেটের সমস্যা দূর করে।
- ক্ষতস্থানের ঘাঁ নিরাময়ে এটি ভালো কাজ করে।
- শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সহায়তা করে।
- গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- সর্দি-কাশি দ্রুত ভালো করে।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে শিমুল গাছের মূল ভালো কাজ করে।
- শরীরের রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে।
- ফোঁড়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। শিমুল মূল ছেঁচে ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে।
- মেছতা ও উদরাময় রোগের চিকিৎসায়তেও ব্যবহার করা হয়।
- রক্ত আমাশয়ে শিমুলের ছাল চুর্ণ করে ছাগল এর দুধের সাথে মিশিয়ে দু বেলা খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
- পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা কয়েক গুন বৃদ্ধি করে।
- পুরুষের বীর্যকে ঘন করে।
- যৌন ক্ষমতা/সময় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- পুরুষের অকাল বীর্যপাত প্রতিরোধ করে।
- পুরুষের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- শরীরের পেশীগুলিতে শক্তি সরবরাহ করে।
- মস্তিষ্কতে অবস্থিক লিবিডোকে উদ্দীপিত করে। ফলে যৌন চাহিদা তীব্র হয়।
- মহিলাদের মাসিক সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।মহিলাদের শ্বেত প্রদাহ ও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
শিমুল মূল পাউডার খাওয়ার নিয়ম
সদ্য শিমুল মূল হিসাবে, আরেকটি শিমুল মূল পাউডার হিসাবে। তবে শিমুল মূল প্রাকৃতিকভাবে উত্তোলন করে খেলে উপকার সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আবার অনেকক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় শিমুল মূল চাষাবাদ হয় না কিংবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া অসুবিধাজনক।
সেক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি রয়েছে যেখানে শিমুল মূল তুলে নিয়ে এসে শুকিয়ে গুড়ো করে তা প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করা হয়। যাকে শিমুল মূল পাউডার বলা হয়।
শিমুল মূল পাউডার বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। শিমুল মূলের পাউডার প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস দুধের মধ্যে ১-২ চা চামচ পরিমাণে দিয়ে মিশ্রণ করে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া শিমুল মূলের পাউডার রুটি বানানোর সময় আটার মধ্যে দিয়ে খাওয়া হয়। এছাড়া শিমুল মূলের পাউডার গরম পানির মধ্যে দিয়ে খাওয়া হয়।
এটি দিনে সকালে ও রাতে সেবন করতে হবে। মনে রাখতে হবে ২ বারের বেশি এটি খাওয়া যাবে না। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই উপকারিতার পিছনে অপকারিতা থাকে। তবে সবচেয়ে পুষ্টিকর মাধ্যম হলো প্রাকৃতিক শিমুল মূল চিবিয়ে খাওয়া।
শিমুল মূল রোপনের সময় ও পদ্ধতি
প্রতি বছর বসন্তের শেষ দিকে শিমুলের ছোট শাখা কেটে লাগালেই চলে। শিমুলের বীজ থেকেও শিমুল চারা হয়ে থাকে।
রাসায়নিক উপাদানঃ শিমুল ছালে ট্যানিন, স্টেরল, ফিনল জাতীয় পদার্থ, লুপিয়ল, ন্যাফতোকুইনোন, ল্যাকটোন ও গ্লাইকোসাইড বিদ্যমান। বিচিতে টকোফেরল ও টার্পিন থাকে।
শিমুল মূল কোথায় পাওয়া যায়
কাচা শিমুল মূল আগে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে এটি খুব কম দেখা যায়। আগে শিমুলের তুলা বাংলাদেশ ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিল।
যার ফলে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে আনাচে-কানাচে শিমুল মূল দেখা দিত। কিন্তু বর্তমানে এটি সংকটপূর্ণ অবস্থায় বিরাজ করছে। যেহেতু কাচা শিমুল মূলের উপকারিতা অপরিসীম তাই বর্তমানে অনেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে শিমুল মূল চাষাবাদ শুরু করেছে।
শিমুল গাছের উপকারীতা
শিমুল তুলা লেপ, তোষক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।এর স্ত্রীকেশর পুংকেশর অপেক্ষা লম্বায় বড় হয়। বাংলাদেশের সর্বত্রই শিমুল গাছ জন্মে।
এছাড়াও ভারত, চীন, মালোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এ গাছ প্রচুর জন্মে। শিমুল গাছের মূল, গাছের ছাল, কষ, ফুল ও বীজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- শিমুলের ছাল বেটে ব্রনের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রেন ভালো হয়।
- শিমুলের ফুল বেটে ঘিয়ে ভেজে লবনের সঙ্গে খেলে প্রদরে উপকার হয়।
- কাশি হলে শিমুলের মূল বেটে লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়।
- মেছতা হলে শিমুলের কাঁটা দুধে বেটে মুখে মাখলে মেছতা ভালো হয়।
- কুকুর কামড়ালে ৭ টি শিমুলবীজ ৭ দিন কলার ভিতর দিয়ে রোজ সকালে খেলে জলাতঙ্কের আশঙ্কা থাকে না।
- শিমুল তুলা নিয়ে তাতে শিমুল গাছের ছাল অর্থাৎ মোচরস দিয়ে ভিজিয়ে পোড়া ঘায়ে দিন, ঘা সেরে যাবে।
- শিমুলের ছাল চুর্ণ করে ছাগলের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দু’বেলা খাওয়ালে উপকার হয়।
- ফোঁড়া হলে শিমুল গাছের ছাল ধুয়ে বেটে, তার ওপর প্রলেপ দিলে উপকার হয়।