নিম পাতার উপকারিতা, অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
নিম একটি ওষুধি গাছ। যার ডাল, পাতা, রস সবই কাজে লাগে।
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে নিম খুবই কার্যকর। আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতার সাহায্যে আমরা অনেক উপকারিতা পেয়ে থাকি। এটি আমাদের ত্বক চুলসহ অনেক অঙ্গ পদত্যাগের জন্য বেশ উপকারী কাজ করে।
নিমের উপকারিতা
ত্বক
বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে।এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।
মাথার ত্বকে অনেকেরই চুলকানি ভাব হয়। নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে এ চুলকানি কমে। নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়।
চুল
উজ্জ্বল, সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার ব্যবহার বেশ কার্যকর। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে।
চুলের জন্য নিম পাতার ব্যবহার অদ্বিতীয়। সপ্তাহে ১ দিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টার মতো রাখুন। এবার ১ ঘণ্টা পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমার সঙ্গে সঙ্গে চুল নরম ও কোমল হবে।
কৃমিনাশক
পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেটে বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতার জুড়ি নেই।
দাঁতের রোগ
দাঁতের সুস্থতায় নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত হবে মজবুত, রক্ষা পাবেন দন্ত রোগ থেকেও।
ওজন কমাতে
দেহের ওজন কমাতে নিমপাতা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিমের ফুল শরীরের চর্বি কমাতে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
দেহের ওজন কমাতে নিমপাতা এবং নিমের ফুল চূর্ণ বেটে করে, ১ চা চামচ মধুর সাথে, এক চা-চামচ লেবুর রস মিশ্রণ করে প্রতিনিয়ত খালি পেটে সেবন করতে পারেন। এটি খুব দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করে
দেহের রক্ত পরিষ্কার করতে নিম পাতা খুবই উপকারী একটি উপাদান।
নিম পাতার রস প্রতিনিয়ত সেবন করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে আসে এবং রক্ত পরিষ্কার করেএছাড়াও হৃদপিন্ডের গতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিনিয়ত নিম পাতার রস সেবন করতে পারেন। নিমপাতা শরীরের রক্তচলাচল ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খুশকি রোধে
নিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ছত্রাক নাশক এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদান।
এই উপাদান গুলি খুশকির চিকিৎসার জন্য মহাঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে যদি মাথার তালুর উপর ভাল করে লাগানো হয়, তাহলে খুশকি, উকুন এবং চুলকানির মত সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
এছাড়াও নিম পাতা গরম জলে ফুটিয়ে ওই জলটি মাথার চুলে ভাল ভাবে লাগিয়ে নিন এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পর ভালভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যাবহার করলে চুল পড়ার মতো সমস্যার হাত থেকে নিরাময় পাবেন।
উকুন বিনাশে
নিমের ব্যাবহারে উকুনের সমস্যা দূর হয়। নিমের পেস্ট তৈরি করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন, তারপর মাথা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন এবং উকুনের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ান। সপ্তাহে ২-৩ বার ২ মাস এভাবে করুন। উকুন দূর হবে।
নিম পাতার অপকারিতা
প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন ভালো দিক থাকে, তেমনই তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে। সেই অনুযায়ী নিমের ভালো দিক এর পাশাপাশি বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে
তাই অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা খাওয়ার ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে,তা নিন্মে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। তো চলুন এক নজরে দেখে নিন নিম পাতার অপকারিতা গুলি –
- কিছু কিছু সময় নিম বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। যার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে নিমপাতা সেবন করা উচিত নয়।
- যে কোন প্রকার অপারেশনের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিম পাতা খাওয়া এবং নিম ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।
- গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের নিম পাতা খাওয়া কোনমতেই উচিত নয়। কারণ গর্ভবতী অবস্থায় নিম পাতা খেলে গর্ভপাত হওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
- যে সকল মানুষের নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার সেই সকল ব্যক্তিদের জন্য নিম পাতা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। কারণ নিম পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা সেবনের ফলে উপকারের বদল অপকার হতে পারে। সেই কারণে নিয়ম করে পরিমাণ মতো নিম পাতা খাওয়া উচিত।
নিম পাতার রস পানে পুরুষদের ক্ষতি হতে পারে
নিম গাছের ডাল, পাতা, রস সবই কাজে লাগে। কিন্তু অতিরিক্ত নিমের রস পানে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। বিশেষ করে পুরুষের জন্য। আসুন জেনে নেয়া যাক নিমের রস পান করলে পুরুষদের যেসব ক্ষতি হতে পারে।
বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে – অতিরিক্ত নিমের রস খেলে পুরুষদের দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব। তবে নিমের রস পান করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের দেয়া ওষুধের মতোই ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগেরও নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। আন্দাজে কম বা বেশি মাত্রা গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই নিজেই নিজের উপর চিকিৎসা না করা ভালো।
নিম পাতার ব্যবহার
নিমপাতা ব্যবহারের কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যেগুলো মেনে চললে নিম পাতা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে অনেক উপকারী।
- 1. নিমের পাতা খেলে আমাদের শরীরের আজেবাজে জিনিস ভালো হয়ে যায় মানে শরীরের পরিপাক তন্ত্রের গতি বাড়ে সেই সাথে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দেয় এবং রক্তের শুদ্ধতা বাড়ায়।ফলাফল হিসেবে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে আপনার ত্বক পরিষ্কার থাকবে। এ জন্য নিমের পাতা ৩/৪ টি প্রতিদিন চিবিয়ে খেতে হবে। উফফ!! মুখটি কি এখনি তেতো হয়ে গেলো?? আরে সহজ সমাধান দেই! নিমপাতা বেটে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে রোদে শুকাতে দিন। ভালো ভাবে শুকিয়ে গেলে কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন সকালে ২/৩ টি বড়ি পানি দিয়ে পেটে চালান করে দিন!
- নিম পাতা সেদ্ধ পানি গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে নিন। যাদের স্কিন ইরিটেশন এবং চুলকানি আছে তাদের এতে আরাম হবে আর গায়ে দুর্গন্ধের ব্যাপারটাও কমে যাবে আশা করা যায়।
- নিম পাতা সেদ্ধ পানি বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। কোন ফেইস প্যাক পেস্ট করার সময় পানির বদলে এই নিম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
- নিমের ডাল যে দাঁতের জন্য উপকারী সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের জীবাণু রোধে এটি বেশ কার্যকরী।
- কাটা ছেড়া বা পোড়া স্থানে নিম পাতার রস ভেষজ ওষুধের মতো কাজ করে।
- নিম পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে ফেইস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।
নীম চায়ের গুনাগুন
শুকনো নিম পাতা গুঁড়ো অথবা তাজা নিমের ৬/৭ টি পাতা গরম পানিতে ছেড়ে ২/৩ মিনিট জ্বাল দিয়ে মধু মিশিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় সুমিষ্ট নিম চা , তবে নতুনদের জন্য সময়সীমা ১ মিনিট। যত বেশি জ্বাল দিবেন তত তিতা হবে।
আপনারা চাইলে একই ভাবে তুলসি পাতা দিয়েও চা বানাতে পারেন। মজার ব্যাপার হলো তুলসি পাতা অল্প সেদ্ধ করলে রঙ থাকবে সবুজ, বেশি সেদ্ধ করলে চায়ের রঙ হয়ে যাবে। যাদের সত্যিকারের সবুজ চা খাওয়ার ইচ্ছে তারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমি নিজেই ব্যক্তিগত ভাবে অনেককে এই স্পেশাল গ্রিন টি খাইয়েছি।
নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম
ভালো ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
উজ্জ্বল,সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
নিম পাতা খাওয়ার উপায়
খালি পেটে খেতে হবে নিমপাতা। তবে তা ২ থেকে ৩ টির বেশি নয়। যদি তেঁতো নিমপাতা খেতে সমস্যা হয়, তাহলে গুড় দিয়ে খেতে পারেন নিমপাতা। তবে শরীরের পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন বহু বিশেষজ্ঞ।
এছাড়াও তরকারিতে নিমপাতা ধনিয়া পাতার বদলায় দিয়ে খেতে পারেন। এটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদুও বটে।
নিম পাতার সংরক্ষণের উপায়
আপনি কাচের তৈরি বোতলে সংরক্ষন করে ঠান্ডা কোন স্থানে রাখতে পারেন।তবে বেশিদিন রাখতে পারবেন না নস্ট হয়ে যাবে।