ডালিম ফলের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
ডালিমকে বলা হয় ‘সুপার ফুড’। কম পরিমাণে ক্যালরি থাকলেও শক্তিবর্ধক এক ফল হলো ডালিম। এছাড়াও ভিটামিন বি, সি ও কে এর পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে ডালিম ফলে। ডালিমের বিচি এবং ফলের জুস প্রাকৃতিক অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া হিসেবে কাজ করে।
ডালিম বা বেদানার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী গুনাগুণ। তবে কিছুটা দামি হওয়ার কারণে অনেকেই ডালিম খেতে চান না। নিয়মিত ডালিম খেলে তা দেহের বহু উপকার পাওয়া যায়।
ডালিমের পুষ্টিগুণ
ডালিম মজাদার ও পুষ্টিকর এক ফল- যা বছরের প্রায় সব সময়ই পাওয়া যায়। ডালিমে রয়েছে প্রচুর ফসফরাস যা কমলা, আপেল ও আমের চেয়ে চার গুণ বেশি। আতা ও আঙুরের চেয়ে দ্বিগুণ, কুল ও আনারসের চেয়ে সাত গুণ বেশি।
ডালিমের পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি ১০০ গ্রাম)
নিচের তালিকাটি ডালিমের পুষ্টিগুণের মান উপস্থাপন করে, সেই সাথে কিছু অতিরিক্ত তথ্যও দেওয়া হল।
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | দৈনিক চাহিদা মূল্য (%DV)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৮৩ কিলোক্যালোরি | ৪% |
মোট চর্বি | ১.২ গ্রাম | ২% |
সোডিয়াম | ৩ মিলিগ্রাম | ০% |
পটাসিয়াম | ২৩৬ মিলিগ্রাম | ৫% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ১৯ গ্রাম | ৬% |
ডায়েটারি ফাইবার | ৪ গ্রাম | ১৬% |
চিনি | ১৪ গ্রাম | ১৬% |
প্রোটিন | ১.৭ গ্রাম | ৩% |
ভিটামিন সি | ১০ মিলিগ্রাম | ১২% |
ভিটামিন কে | ১৬ মাইক্রোগ্রাম | ২০% |
ফোলেট (ভিটামিন বি ৯) | ৩৮ মাইক্রোগ্রাম | ৯% |
দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।
ডালিম ফলের উপকারিতা
ডালিম খাওয়ার রয়েছে বহু উপকারিতা। যদিও কিছুটা দামি হওয়ার কারণে অনেকেই ডালিম খেতে চান না। তবে নিয়মিত ডালিম খেলে তা দেহের বহু উপকার করে।
এ লেখায় তুলে ধরা ধরা হলো তেমন কিছু উপকারিতা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ব্রাইট সাইড।
- পুষ্টিগুণ ডালিমে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। মাত্র এক কাপ ডালিম দানায় রয়েছে আপনার দৈনন্দিন চাহিদর ৩০ শতাংশ ভিটামিন সি, ৩৬ শতাংশ ভিটামিন কে, ১৬ শতাংশ ভিটামিন বি৯ ও ১২ শতাংশ পটাশিয়াম।
- রক্তচাপ ডালিম রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাহলে নিয়মিত ডালিম খাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহেই আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
- আথ্রাইটিস ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম ডালিম আথ্রাইটিসে উপকার করে। এছাড়া এটি হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ডালিম দেহের কোলস্টেরলের ঝুঁকি কমায়। এতে রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ডালিম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। আর এ কারণে এটি অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগীদের জন্যও উপকারি।
- হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি ডালিমে রয়েছে বহু পুষ্টি উপাদান, যা দেহের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এতে অ্যানেমিয়া ও রক্তের নানা সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।
- প্রাকৃতিক ইনসুলিন ডালিম ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। অনেকেই একে ইনসুলিনের বিকল্প হিসেবে বলেন। এটি মিষ্টি হলেও সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো সমস্যা হয় না।
- ক্যান্সার প্রতিরোধী ডালিমের বেশ কিছু উপকার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে এর ভূমিকা প্রমা�
- ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী দেহে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে ডালিম। এছাড়া এটি ফাংগাস ইনফেকশনের বিরুদ্ধেই ভূমিকা রাখে।
- শারীরিক অনুশীলনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি সুস্থ থাকার জন্য কিংবা ভালো পারফর্মেন্সের জন্য অনেকেই শারীরিক অনুশীলন করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুশীলনের পাশাপাশি ডালিম খাওয়া হলে তা টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
ডালিমের অপকারিতা
ডালিমের উপকারিতার সাথে কিছু কিছু লোকের জন্য একটি অপকারী ও বটে চলুন জেনে আসা যাক এর অপকারিতা গুলো।
- কম রক্তচাপের লোকেদের বেদানা খওয়া একদম উচিত নয়। আজকালকার জীবনে উচ্চ রক্তচাপের রোগ বেশিরভাগ মানুষের থাকে। তাদের জন্য বেদানা একটি আশির্বাদ। বেদানা সেবনে উচ্চরক্তচাপের সব সমস্যা কমে যায়। আর আপনার যদি কম রক্তচাপের মত সমস্যা থাকে তাহলে আপনার জন্য বেদানা মারাত্মক ক্ষতিকারক। কারণ তাতে রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে। আর তার ফলে প্রাণ সংশয় হতে পারে।
- মানসিক রোগে আক্রান্ত যেসব রোগীরা, যারা নিয়মিত মানসিক রোগের জন্য ওষুধ খান তাদের জন্য বেদানা প্রায় বিষের সমান।
- সর্দি কাশিতে বেদানা খেলে শরীরের আরো ক্ষতি হয়। বেদানা সাধারনত ঠান্ডা ফল। তাই সাধারনত গরমকালেই এই ফল খাওয়া হয়। যাদের সর্দি কাশি বা ঠান্ডা লাগার ধাত আছে তাদের বেদানা খওয়া উচিত নয়। এর ফলে আরো ঠান্ডা লাগতে পারে। তাদের বেদানার পরিবর্তে গরম কিছু খাওয়া উচিত।
- অ্যালার্জিতে বেদানা খওয়া ক্ষতিকর। এমন অনেক লোক আছে যাদের ধুলো, বালি বা কোন নোংরাতে অ্যালার্জি আছে, তাদের পক্ষে বেদানা খওয়া খুব ক্ষতিকর। বেদানায় এমন কিছু উপাদান আছে যা অ্যালার্জির সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
ডালিমের ঔষধি গুনাগুণ
ছোট বড় সকলের অনেক প্রিয় এই ফল ডালিম। একদিকে এর আকর্ষণীয় রং ও স্বাদসহ অবর্ণনীয় পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ডালিম ক্ষিদে বাড়নো, শরীর স্নিগ্ধ করা, মেদ ও বল বৃদ্ধি করা সহ রুচি বৃদ্ধি, অরুচি দূর, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বাত ব্যধি দূরসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য গুনাগুণ। ডালিমের বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুণ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডালিমের বিচির উপকারিতা
ডালিমের বিচি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিটামিন-বি থাকে। এছাড়াও ফাইবার আঁস জাতীয় খাদ্য উপাদান থাকে ডালিমের বিচিতে যা খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
ডালিম কিভাবে খেতে হয়
ডালিম ফলের দুই থেকে তিন গ্রাম খোসার গুঁড়ো করে খেলে ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সকালবেলায় ও সন্ধ্যাবেলায় তাজা জলের সঙ্গে পান করা হয়। তাহলে এটি ডায়রিয়ায় উপকারী।
এক গ্রাম ডালিমের ছাল ফল বা মূলের ছাল পাউডার, সমান পরিমাণ জায়ফল গুঁড়ো এবং ২৫০ মিলিগ্রাম জাফরান মিশিয়ে নিতে হবে।
ডালিম খাওয়ার পর কি পানি খাওয়া যাবে?
ফল খাওয়ার পরে জল এড়ানো উচিত কারণ এই সংমিশ্রণটি পেটে শোষণ এবং হজম প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, ফলে অ্যাসিডিটি হয়।
এই কারণে কিছু লোক ফল খাওয়ার পরে অস্বস্তি বোধ করে। ফল খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডালিমের রসে আপনার প্রতিদিন এর ভিটামিন সি এর চাহিদা ৫০শতাংশের বেশি থাকে পাস্তুরিত করার সময় ভিটামিন সি ভেঙে যেতে পারে তাই সবাধিক পুষ্টি পাওয়ার জন্য ঘরে তৈরি তাজা ডালিমের রস বেছে নিন।
ডালিমের রস প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে ডালিমের রস ক্যান্সার প্রতিরোধ করে বা ঝুঁকি কমায়।
প্রতিদিন ডালিমের রস পান করা সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে যানমাইজড নিয়ন্ত্রিত টায়ালগুলি একটি ব্যাপক পযালোচনায় বলা হয়েছে যে প্রতিদিন ডালিমের রস অন্তর্ভুক্ত করা হৃদরোগের জন্য উপকারী হবে পুনিসিক অ্যাসিড হলো ডালিমের অন্যতম প্রধান উপাদান।
ডালিমের রস অন্তের প্রদাহ কমাতে এবং হজমের উন্নতি করতে পারে ডালিম যোগ করা আপনার দৈনন্দিন রুটিনে ফাইভার অন্তর্ভুক্ত করার সেরা উপায় হতে পারে। তাই প্রতিদিন ডালিম খাওয়ার অভ্যাস করুন