আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা, অপকারিতা এবং নির্বাচনের নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগার বা সিডার ভিনেগার হলো ভেজানো আপেলের রস থেকে তৈরি ভিনেগার, এবং সালাদ ড্রেসিংস, মেরিনেডস, ভিনাইগ্রেটস, ফুড প্রিজারভেটিভস এবং চাটনিতে ব্যবহৃত হয় ।
এটি আপেল পিষে তৈরি করা হয়, তারপরে রস বের করে নিন। অ্যালকোহলীয় গাঁজন প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাকটিরিয়া এবং খামির তরলে যুক্ত হয়, যা শর্করাগুলিকে অ্যালকোহলে রূপান্তর করে। একটি দ্বিতীয় গাঁজন পদক্ষেপে, এলকোহল দ্বারা ভিনেগার রূপান্তরিত হয় অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া ।
এসিটিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিড একত্রিত হয়ে ভিনেগারকে এর স্বাদযুক্ত স্বাদ দেয়।
অ্যাপল সিডার ভিনেগারের কোনও ঔষধি বা পুষ্টিগুণ নেই। আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত গ্রহণ শরীরের ওজন বজায় রাখতে বা হ্রাস করতে সহায়তা করে এমন কোনও উচ্চমানের ক্লিনিকাল প্রমাণ নেই বা রক্তের গ্লুকোজ এবং লিপিড স্তর পরিচালনা করতে কার্যকর।
আপেল সিডার ভিনেগারের পুষ্টিগুণের তালিকা
নিচের তালিকাটি আপেল সিডার ভিনেগারের (এসিভি) পুষ্টিগুণের তথ্য সারাংশ উপস্থাপন করে। মনে রাখবেন, মানগুলি আনুমানিক এবং ব্র্যান্ড ও এসিভি’র ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
পুষ্টি উপাদান | প্রতি টেবিল চামচ (১৫ মিলি) | দৈনিক চাহিদা মূল্য (%DV)* |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৩ কিলোক্যালোরি | ০% |
মোট চর্বি | ০ গ্রাম | ০% |
সোডিয়াম | ০ মিলিগ্রাম | ০% |
পটাসিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম | ০% |
মোট কার্বোহাইড্রেট | ০.১ গ্রাম | ০% |
চিনি | ০.১ গ্রাম | ০% |
দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।
অতিরিক্ত তথ্য
- জাত: আপেল সিডার ভিনেগার ফিল্টার করা এবং আনফিল্টারেড, দুই রকম পাওয়া যায়। আনফিল্টারেড এসিভি’তে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মতো অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান থাকতে পারে।
- মাইক্রো মিনারেল: এসিভিতে ক্যালসিয়াম, লোহা এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজের সামান্য পরিমাণ থাকতে পারে।
- অ্যাসিটিক এসিড: এসিভির মূল সক্রিয় উপাদান, এটি কিছু সম্ভাব্য উপকারিতার সাথে সম্পর্কিত।
- সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা (গবেষণা চলমান):
- রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে।
- ওজন ব্যবস্থাপনায় সামান্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- এন্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- তেজস্ক্রতা (Tejscorta – Acidity): এসিভি তেজস্ক্র এবং বিশুদ্ধ (undiluted) অবস্থায় পান করলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি সর্বদা পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
- সীমিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ: এসিভির অনেক সম্ভাব্য উপকারিতার জন্য আরও কঠোর গবেষণা প্রয়োজন।
আপেল সিডার ভিনেগার কি?
অন্যান্য ভিনেগারের মতই আপেল সাইডার ভিনেগারও এক প্রকার ভিনেগার, যা আপেল থেকে প্রস্তুত করা হয়। এতে রয়েছে ৫ -৬%শতাংশ অ্যাসিডিটি।
প্রকারভেদ
আপেল সিডার ভিনেগারের কয়েক ধরনের হয়।এর মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উপকারী।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা
ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। সাদা ভিনেগারের প্রচুর ব্যবহার থাকলেও আপেল সিডার ভিনেগারে ও রয়েছে আরো বহুমুখী ব্যবহার। বিশাল পরিসরের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে টি ট্রি অয়েল এর পরিবর্তে আপেল সিডার এর ব্যবহার, হেচকি থেকে নিরাময়, ঠাণ্ডাজনিত রোগমুক্তি।
কিছু মানুষ স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত এটিকে ব্যবহার করেন যেমন, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হার্টের সমস্যা, হাই কোলেস্টেরল ও ওজন কমানো ইত্যাদি।
পেটের সমস্যা নিরাময়ে
পাকস্থলী পীড়ায় কাতর! তাহলে পানিতে একটু আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনজনিত ডায়রিয়াতেও সাহায্য করে এই সিডার।
এতে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গুণ রয়েছে। অনেক আগে থেকেই প্রচলিত যে, আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে পেকটিন, যা বাস্তবিকই অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে। সরাসরি জুস হিসেবে বা দুই থেকে তিন টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে পান করা যায়।
হেঁচকি থেকে মুক্তি পেতে
এক চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে ফেলুন। এর টক স্বাদ হেঁচকি বন্ধ করবে। অতিরিক্ত উত্তেজিত স্নায়ু হেঁচকির জন্য দায়ী। তাই আপেল সিডার খেয়ে নিয়ে গুডবাই জানান হেঁচকিকে।
গলাব্যথা দূর করতে
গলাটা খুব খুসখুস করছে? তাহলে আপেল সিডার ভিনেগারকে আপনার সেবায় লাগিয়ে দিন। ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়াকেও প্রতিরোধ করবে এটি। কারণ অ্যাসিডযুক্ত পরিবেশে জীবাণুগুলো টিকতে পারে না। ১/৪ কাপ কুসুম গরম পানিতে ১/৪ কাপ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে এক ঘণ্টা পর পর কুলকুচা করলে উপশম পাওয়া যাবে।
কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল সিডার কোলেস্টেরল কমায়। ২০০৬ সালে জাপানের এক গবেষণাতে দেখা যায়, ভিনেগার এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
গবেষণায় আরো দেখা যায় যে, আধা আউন্স আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সেবন কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
বদহজম প্রতিরোধে
যে খাবারগুলো গ্রহণের পরে আপনার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা খাওয়ার আগে এক চুমুক আপেল সিডার খেয়ে নিন। প্রাচীন এই পন্থানুসরণ করতে পারেন- এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা-চামচ মধু আর এক চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাবারের আধা ঘণ্টা আগে খেয়ে নিলে বদহজম থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
বন্ধ নাক পরিষ্কারে
এরপর যখন আপনি নাক বন্ধ সমস্যায় ভুগবেন তখন আপেল সিডার ভিনেগার এর শরণাপন্ন হতে পারেন। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, যা মিউকাসকে পাতলা করতে সাহায্য করে এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিড জীবাণুগুলো ধ্বংস করে,
যা আপনার নাক বন্ধ হওয়া সমস্যা দূর করবে। এক গ্লাস পানিতে এক চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন, যা আপনার সাইনাস সমস্যাজনিত নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করবে।
ওজন কমাতে
আপেল সিডার ভিনেগার আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করে, মেটাবলিজম বাড়ায়। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্ব প্রদান করেন যে, এটি স্টার্চকে পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্তপ্রবাহে ক্যালরির পরিমান কম হয়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন আপেল সিডার ভিনেগার
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, রান্নায় এ ভিনেগার ব্যবহার করা। ঘরে মেয়োনিজ তৈরির সময় বা সালাদেও দিতে পারেন ভিনেগার। পানির সঙ্গে মিশিয়ে পানীয় হিসেবেও পান করা যেতে পারে এটি। যেমন, এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিলচামচ ৫-১০ মিলিলিটার আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। ওজন কমানো থেকে সুগার, পেটের জমে থাকা মেদ কমানো, একাধিক রোগের দাওয়াই এটি। শুধু শরীর নয় ত্বক ও চুলের যত্নেও কার্যকরী এই উপাদানটি। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ৩১ শতাংশ কমে যায়। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২৫০ মিলি জলে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খান, তাহলে উপকার পাবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার এর অপকারিতা
সকালে খালি পেটে শরীরচর্চার আগেও খেতে পারেন। তবে, এটির উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অপকারিতাও। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী-
- বেশি পরিমাণে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে দাঁত, ইসোফেগাস ও স্টমাক লাইনিং এর ক্ষতি হতে পারে। সেইসঙ্গে শরীরের পটাশিয়াম লেভেল কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, বদহজম এবং হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তবেই গ্রহণ করুন আপেল সিডার ভিনেগার।
- অনেকে সকালে উঠেই খালি পেটে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খান ওজন কমানোর জন্য। কিন্তু তারপর দীর্ঘক্ষণ অভুক্ত থাকেন। এটি করলে চলবে না। ঠিক খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে খেতে হবে এটি। তাহলে হজমশক্তিও বাড়বে এবং শরীরও ভালো থাকবে।
- কখনোই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার জল ছাড়া খাবেন না। হালকা গরম জলে মিশিয়ে খান। সেইসঙ্গে মেশাতে পারেন দারুচিনির গুঁড়ো ও লেবুর রস।
- অনেকেই ভাবেন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বেশি খেলেই ওজম দ্রুত কমবে। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। দিনে একবার ২৫০ মিলি জলে ১-২ টেবিল চামচ এটি মিশিয়ে নিন খান। একটানা দু’মাস খেলে ১৫ দিন বন্ধ রাখুন।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাবার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- কোনো কিছু সাথে না মিশিয়ে ডিরেক্ট খাওয়া যাবে না। ঠান্ডা বা গরম যেকোনো পানি হলেই হবে।
- এক দিনে ২ বারের বেশি ড্রিংক হিসেবে পান করা যাবে না। এর সাথে আদা কুচি,একটু লেবু দিলে খেতে ভালোই লাগে।
- একটি গ্লাসে এক চা চামচ৫ ml নিয়ে সেটা গুলে খেতে পারবেন।এর বেশি অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিক্স করে খাওয়া যাবে না।অনেক সময়,যাদের গন্ধ খুবই বাজে লাগে তারা First এ 1/2 করে শুরু করবেন।
- বেশি বেশি বা খুব ঘন ঘন পান করা যাবে না, করলে তাতে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে।অনেকে Straw বাবহার করেন।
- দীর্ঘ সময় ধরে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল।
আপেল সিডার ভিনেগার বেশি খেলে কি হয়
বেশি পরিমাণে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে দাঁত, ইসোফেগাস ও স্টমাক লাইনিং এর ক্ষতি হতে পারে। সেইসঙ্গে শরীরের পটাশিয়াম লেভেল কমে যাওয়া, ডায়রিয়া,
বদহজম এবং হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তবেই গ্রহণ করুন আপেল সিডার ভিনেগার।
কিভাবে আপেল সিডার ভিনেগার নির্বাচন করবেন
আনফিল্টারড এবং আনপাস্তুরাইজড: আপেল সিডার ভিনেগার বেছে নিন যা ফিল্টার করা এবং আনপাস্তুরাইজড নয় , কারণ এই জাতগুলি মা ধরে রাখে। কাঁচা এবং জৈব
কাঁচা এবং জৈব আপেল সিডার ভিনেগার নির্বাচন করার কথা বিবেচনা করুন, কারণ এটি সিন্থেটিক কীটনাশক বা সার ছাড়াই উত্পাদিত হয়।